আমি একজন সৎ কর্মকর্তা। আমি কিন্তু অন্যদের চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। দূর্নীতিপ্রবণ এই দেশে সৎ কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া আসলেই আজ অমাবস্যার চাঁদ।
কি বললেন? আমি কেন অফিসে দেরিতে আসি? জানেনই তো ঢাকা শহরের যা অবস্থা!! ঘন্টার পর ঘন্টা অহেতুক জ্যাম। ফার্মগেট থেকে শাহবাগে আসতেই এক ঘন্টা লাগে। আর আমার অফিস তো মতিঝিলে। আসলে কিছু অকর্মা ডিপার্টমেন্ট আছে যারা এর জন্য দায়ী। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, ওয়াসা, পিডিবি আর কুম্ভকোর্ণ এল,জি,ই,ডি এইগুলাই মূলত জ্যামের জন্য দায়ী। (যাক বাঁচা গেল! আমার ডিপার্টমেন্ট নাই)।
আপনাকে আরেকটা জিনিস জানিয়ে রাখি। আমি কিন্তু সারাজীবন পরিচ্ছন্ন চাকুরি করেছি। পরিকল্পনা বিভাগ, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অফিস, স্টাফ ডেভেলপমেন্ট অফিস, ডিজাইন অফিস ইত্যাদি। (প্লিজ! প্লিজ! আমি কেন ২টার পর অফিসে থাকি না এটা যেন জিজ্ঞেস না করে।) এই যে ফ্ল্যাট এইটা সম্পূর্ণ সৎ টাকায় কেনা। আমি কোনদিন ওই ফিল্ড অফিসে পোস্টিং নিইনি আর নিবোওনা।
কন্সালটেন্সী কতদিন ধরে করি? এই ধরেন জইন করার পরপরই। কিন্তু মনে করবেন না যে আমি অফিসের কাজ বাদ দিয়ে শুধু কন্সালটেন্সী করি। নেভার। আগে অফিস পরে কন্সালটেন্সী। (হায়! হায়! ব্যাটা তো আমার নাড়ি-নক্ষত্র সব জেনে যাচ্ছে!!)
শেয়ার বিজনেস কেন করি? জানেনই তো সরকার যা বেতন দেয় তাতে সংসার চলে না। তাই কিছু বাড়তি আয়-রোজগারের জন্য টুক-টাক কিছু করি আরকি। কিন্তু আমি কোনদিন অফিসের কাজ ছাড়া অন্যকাজে অফিসের কম্পিউটার ব্যবহার করিনি। (ব্যাটা দেখি সব জানে!!)
প্রতি বছর বাঁধ কেন ভেঙ্গে যায়? এইক্ষেত্রে আমি সবার আগে বলব ওই ফিল্ড অফিসের দূর্নীতির কথা। আমাদের ডিজাইন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী তারা কখনোই কাজ করে না। ডিজাইন অনুযায়ী করলে কখনই এইটা হবার কথা না।
(যাক! ব্যাটা জানে না ডিজাইন তো আমি করি না , করে আমার সাব-অর্ডিনেটরা। শুধু স্বাক্ষরটা আমি করি। এতো ডিজাইন চেক করার সময় কই? কন্সালটেন্সী আর টুক-টাক করে কুলাইতে পারি না আবার ডিজাইন!!!!)
দূর্নীতি দূর হবে কিভাবে? যেইদিন এইদেশে সব ফিল্ড অফিসের দূর্নীতি দূর হবে সেইদিন বাংলার মাটি থেকে দূর্নীতি দূর হবে। সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে। যে মা ও মাটিকে ভালবাসেনা তারা এদেশের কুলাঙ্গার সন্তান। তাদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দিতে হবে। শাস্তির মাধ্যমে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত।
(যাক ভাষণটা ভালই হইছে!!)
ওহ! একটা সুখবর আপনাকে দিই। আগামী মাসে আমি লিয়েনে স্বনামধন্য এক প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে যাচ্ছি। ওখানে ওরা হাই স্যালারী দিচ্ছে। চিন্তা করতাছি রিটায়ারমেন্টের আগ-পর্য্যন্ত ওখানে থেকেই মা ও মাতৃকার সেবায় নিজেকে বিলীন করে দিব।
(হে! হে! হে! একঢিলে দুই পাখি বুঝলি বলদ? এখানকার বেতনও পাবো। রিটায়ারমেন্টের পর পেনশনও পাবো।)
আমি কেন ফিল্ড অফিসে পোস্টিং নিয়ে নিজেই দূর্নীতি দূর করছিনা? পরের প্রশ্নে যান না ভাই।
(বনানীর এত সুন্দর বাসা ছেড়ে আমি কেন জঙ্গলে যাব? আর আমার তো আয়-রোজগারেরও কোন কমতি নেই। সব হোয়াইট মানি। তোর দরকার থাকলে তুই যা।)
ফিল্ড অফিস চলবে কিভাবে? আরে দূর্নীতিবাজ লোকজন আছে না? ওরাই চালাবে। আমি বাপু দূর্নীতি থেকে ১০০ হাত দূরে থাকি। আমার মা-বাবা আমাকে দূর্নীতি করার শিক্ষা দেননি। বুঝলেন?
(এই লেখাটা যারা ফিল্ড অফিসে না এসে ঘরে বসে দূর্নীতি দূর করার দাওয়াই দেন এবং বড় বড় বুলি আওড়ান তাদের জন্য। )
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





