একদা এক পাহাড়ের পাদদেশে ক্য নামে এক লোক থাকত। গ্রীষ্মের এক প্রচন্ড গরমের দিনে সে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এমন সময় সৈনিকের পোষাক পরা এক লোক এসে হাজির হল। ইশারায় সে বোঝাল তার কাছে তার প্রভুর এক বার্তা আছে।
“তোমার প্রভু কে?” ক্য জিজ্ঞেস করল।
সৈনিক সরাসরি কিছু বলল না। সে তাকে তার সাথে যেতে বলল।
“উনি খুব বেশি দূরে থাকেন না”।
তারা একসাথে বেরোল। কিছুক্ষন যাবার পর সারি সারি অসংখ্য সাদা দালান দেখা গেল ঘন জঙ্গলের ভিতর। মনে হচ্ছে যেন একটা আরেকটাকে ছাড়িয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারুকার্য-খচিত রং-বেরঙ্গের অসংখ্য দরজার ভিতর দিয়ে তারা হাঁটতে লাগল। উৎসুক অনেক নতুন মুখ দেখা গেল। সবার মুখে এক কথা।
“ক্য কি এসেছে?”।
সৈনিকটি শুধু মৃদু হাস্যমুখে ক্যর দিকে তাকাল। সৈনিকটি তাকে বয়স্ক এক গুরু-গম্ভীর বৃদ্ধর কাছে নিয়ে গেল। বৃদ্ধ তাকে বিশাল প্রাসাদে নিয়ে গেল। ক্যকে কিছুটা ইতস্তত দেখাল।
“ আপনাদের সৌজন্যবোধ আমার কাছে খুব ভাল লাগছে। কিন্তু আপনাকে জানার খুব একটা সুযোগ আমার হয়নি। নিজেকে অযাচিত মনে হচ্ছে আমার। ” ক্য বলল।
“আমাদের রাজপুত্র” বৃদ্ধ জবার দিল, “অনেক দিন ধরে তোমার সততার গল্প অনেক শুনেছে। সে আপনার সাথে পরিচিত হবার জন্য উদগ্রীব”।
“ কিন্তু আপনার রাজপুত্র কে?” ক্য জিজ্ঞেস করল।
“ কিছুক্ষণের ভিতর আপনি তার দেখা পাবেন”।
দুদিক থেকে পরীর মত সুন্দরী দুই দাসী তাকে নিয়ে যাবার জন্য হাজির হল। তারা তাকে অসংখ্য দরজা আর হলরুমের ভিতর দিয়ে নিয়ে গেল। অবশেষে রাজপুত্রের দেখা পাওয়া গেল।
তাকে দেখা মাত্র রাজপুত্র তার সিংহাসন থেকে নিজেই নেমে এসে তাকে তার বসার জায়গায় নিয়ে গেল। রাজপুত্র হুকুম দিল ভোজের আয়োজন করার জন্য। ভোজে অসংখ্য সুস্বাদু খাবার আর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মদ পরিবেশন করা হল। ক্যর এখনো হতচকিত ভাব কাটাতে পারেনি। সে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। তার হতবুদ্ধি ভাব দেখে রাজপুত্র বলল, “ তোমাকে আমাদের মাঝে পাওয়ার সৌভাগ্য হওয়াতে আমরা উদ্বেলিত। আমাদের মাঝে বিদ্যমান সন্দেহ আর ভয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে আসুন আমরা এই মুহূর্তকে উপভোগ করি”।
এরপর তার মনে আর কোন দ্বিধা-দ্বন্দ রইল না। মদের ঘোরে তার মনে হল অনেক দূর থেকে সঙ্গীত ভেসে আসছে। সুরেলা কন্ঠ, বাদ্যযন্ত্র আর বাঁশির সুরে সে হারিয়ে গেল। তার কাছে মনে হল সে এই জগতে নেই। হারিয়ে গেছে অনেক দূরের কোন এক ঐশ্বরিক রাজ্যে।
হঠাৎ রাজপুত্র বলল, “ আমি কবিতার এক লাইন বলব। আপনারা এর পরের লাইন বলবেন। প্রতিভাবানরাই অগ্রগামী”।
সভার সবাই যখন পরের লাইনের চিন্তায় মগ্ন তখন ক্য বলে উঠল, “ ফেরারী বাতাসের সুরভিত লিলির মত.........।”
“ আরে এতো খুবই আশ্চর্যের বিষয়”, মনে মনে তার প্রশংসা না করে পারলো না রাজপুত্র। “ আমার মেয়ের নাম লিলি। তার সাথে তোমার তাইলে তো দেখা হওয়া দরকার। ”
সে রাজকন্যাকে আনার হুকুম দিল। কিছুক্ষণের ভিতর নূপূরের রিনিঝিনি আওয়াজ পাওয়া গেল। বাতাসে সুরভিত সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ল। বোঝা গেল রাজকন্যা হাজির। সাথে এল তার দুই সহচরী। তার বয়স বড়জোর সতের থেকে আঠারো বছর। তার সৌন্দর্যে ক্য বাকহারা হয়ে গেল। তার মনে হল সমগ্র পৃথিবী স্থবীর হয়ে গেছে এক জায়গায় এসে। রাজকন্যা তাকে হাটুগেড়ে কূর্নিশ করল। তাকে রাজপ্রাসাদে আসার জন্য অভিবাদন জানানোর পর রাজকন্যা সহচরী নিয়ে অন্দরমহলে চলে গেল।
রাজপুত্র তার আকস্মিক এই পরিবর্তন খেয়াল করলো। সে বলতে শুরু করল যে রাজ্য চালানোর জন্য যোগ্য ব্যক্তির খোঁজে কিভাবে সে হন্যে হয়ে খুঁজেছে। কিন্তু ক্যর মাথায় কোন কিছুই ঢুকলনা। সে তখন বিস্মৃতির রাজ্যে এক যাযাবর। পাশের এক সভাসদ তাকে হাতে খোঁচা দেবার পর তার খেয়াল হল যে রাজপুত্র তাকে ইশারায় কি যেন বলছেন। ক্য কথা বলতে গিয়ে খেয়াল করল যে সে তোতলাচ্ছে। সে তার অমনোযোগীতার জন্য যারপরনাই ক্ষমা চাইল।
“ আপনার মত একজনকে আমাদের মাঝে পেয়ে আমরা উদ্বেলিত” রাজপুত্র বলতে লাগল, “ খুবই খারাপ লাগছে যে আপনার উপস্থিতি ক্ষণকালের জন্য। আশা করি আপনাকে আমাদের মাঝে আমরা আবারো পাব ”।
ক্যকে নিয়ে যাবার জন্য ঘোড়া হাজির করা হল। এক রাজসভাসদ তাকে জিজ্ঞেস করলো সে কেন কোন কিছু বললো না যখন রাজপুত্র তাকে রাজকন্যা লিলিকে বিয়ে করতে বলল। ক্য এখন বুঝতে পারল কি ভুলটাই না সে করেছে। সারারাত তার চোখে এক ফোঁটা ঘুম এলোনা। দিন গড়িয়ে বিকেল হল। কিন্তু তার মাথা থেকে রাজকন্যাকে সে কিছুতেই মুছতে পারলো না। নিজেকে ভৎসনা করা ছাড়া তার কিছুই করার থাকলো না। মনের দুঃখে সে তার এক বন্ধুর বাড়িতে গেল। কাঁদতে কাঁদতে সে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায়নি। মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কে যেন তাকে সজোড়ে ঢাক্কা দিচ্ছে। আরো একবার তাকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হল। রাজপুত্রকে দেখা মাত্র সে মাটিতে শুয়ে পড়ে প্রণাম করল।
তাকে দেখা মাত্রই রাজপুত্রের বুঝতে বাকি রইলোনা যে সে তার কন্যার প্রেমে পড়েছে। সে তাকে প্রস্তাব দিল যে সে যদি রাজি থাকে তবে বিয়ের যাবতীয় আয়োজন করবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





