আমার নামের পিছনে ছোট্ট একটা গল্প আছে। মজার কিনা জানিনা। তবে আমার কাছে ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হয়। কোনো এক সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী আমার জন্ম। সাল উল্লেখ্য করলাম না। সাধারনত মা,বাবা, নানা, নানী কিংবা দাদা, দাদী নাম রেখে থাকেন। আমার বেলায় সেরকম কিছুই হয় নি।
আমার চাচাত ভাই এম ওবায়দুর রহমান। বর্তমানে তিনি ATN বাংলায় সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে কর্মরত আছেন। তখনকার সময় ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মাথায় রেখে এক ভাষা শহীদের নামে নাম রাখেন বরকত উল্লাহ। যেহেতু ২১ শে ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা দিবস এবং আমার জন্মও এই দিনে অন্যদিকে ভাষার জন্য বরকত নামের একজন জীবন দিয়ে বাংলা ভাষা ছিনিয়ে এনেছেন। সে হিসেবে ওনি আমার নাম রাখেন বরকত উল্লাহ।
যখন অল্প অল্প বুঝতে শিখলাম তখন আমার নামটা আমার নিজের কাছেই পছন্দ হতো না। তার পিছনে কিছু কারনও ছিলো। প্রথম অবস্থায় কেউ যদি আমার নাম শুনে তাহলে নাম নিয়ে অনেকটা টিটকিরি মারে। যে বরকত ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ হয়েছে ওনিই তুমি নাকি? পূনর্জন্ম নিলা নাকি। তোমার নাম বরকত। আল্লাহ অনেক বরকত দিবে। ফ্রেন্ডদের মধ্যেও অনেকে টিটকিরি মেরেছে।
বর্তমান সময়ে এসে বুঝতে পেরেছি নাম রাখার মধ্যেও একটা সার্থকতা আছে। আমার নামের পিছনে একটা ইতিহাস আছে। যে ইতিহাস বাঙালির রক্তে মিশে আছে। যে বরকতদের বিনিময়ে আমরা আজ বাংলা ভাষায় কথা বলছি। অন্যদিকে ইসলামিক নাম। প্রত্যেক মুসলিমের উচিত তাদের ছেলে মেয়ের জন্য ইসলামিক নাম রাখা।
বরকত নামটা যখন কেউ উচ্চারন করে তখন তার মাথায় প্রথমে কি আসে? অবশ্যই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা। আমার নাম সেটাই মনে করিয়ে দেয় কারা এই ভাষার জন্য রাজপথে তাজা রক্ত দিয়েছিল। মনে করিয়ে দেয় তাদের বলিদানের কথা। মনে করিয়ে দেয় এক পাগল জাতি ভাষার জন্য নিজেদের উৎসর্গ দিতেও পিছ পা হননি। হ্যা এটাই আমার নামের সার্থকতা। মহান রাব্বুল আলামীন তাদের প্রত্যেককে জান্নাতের বাসিন্দা বানিয়ে দিক। আমীন।
পরিশেষে একটা কথা যে আমার এত সুন্দর একটা নাম রেখেছেন তাকে কোনোদিন ধন্যবাদ দেয়া হয়নি। অনেক অনেক ধন্যবাদ ওবায়দুর ভাইয়্যা। আল্লাহ আপনাকে সুস্থ রাখুক। অনেক অনেক বছর বাচার তৌফিক দান করুক।