" জুলহাস মান্নানের সাথে তার যে বন্ধুকে খুন করা হয়েছে, সেই মাহবুব রাব্বির সাথে তার বন্ধুত্ব ছাড়া আর কোন সম্পর্ক ছিল না বলেও উল্লেখ করছিলেন তিনি।"(বন্ধু)
তার মানে জুলহাস মান্নানের সাথে নিহত তার বন্ধুর 'অনৈতিক' সম্পর্ক ছিলো কিনা এ নিয়েও সন্দেহ,সংশয় তৈরী হয়েছিলো বা প্রশ্ন উঠেছিলো?
প্রতিদিনের সংবাদ ডট কমে প্রকাশিত সংবাদটিঃ
২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে
রীতিমতো একটি অসাধ্য কাজ করে
ফেলেন একদল মানুষ। তারা
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো
এমন একটি পত্রিকা প্রকাশ করে
বসেন যেটির উদ্দেশ্য সমকামীদের
পক্ষে কথা বলা। বাংলা ভাষার এই
পত্রিকাটির নাম রূপবান।
এর আগে বাংলাদেশের
সমকামীরা কখনো এমনভাবে
প্রকাশ্য হয়নি, নিজেদের
অধিকারের কথা তাদেরকে কখনো
বলতেও শোনা যায়নি। তখন
রূপবানের সম্পাদকীয় বোর্ডের
একজন সদস্য ছিলেন জুলহাস মান্নান।
আর সোমবার আততায়ীদের হাতে
নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত রূপবানের
সম্পাদনার দায়িত্ব ছিল
জুলহাস মান্নানের হাতেই।
২০১৫ সালে রূপবানের প্রথম বর্ষপূর্তি
উপলক্ষে বিবিসি বাংলাকে
একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন
জুলহাস মান্নান। সেখানে তিনি
বলেছিলেন, রূপবান সমকাম নয় বরং
সমপ্রেমে বিশ্বাসী মানুষের
ভালবাসার অধিকারের বিষয়টি
তুল ধরতে চায়। সমপ্রেমে বিশ্বাস
করে এমন মানুষদের জীবনধারা,
ভালোলাগা ও দু:খ কষ্টের বিষয়টি
তুলে ধরে রূপবান। বাংলাদেশে
সমকামীরা অদৃশ্য জীবনযাপন করে
কিন্তু আমরা জানাতে চাই যে এই
সমাজেই আমরা আছি এবং আমরা
আপনাদের পরিবারেই সদস্য।
বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল
সমাজে এ ধরণের পত্রিকা প্রকাশ
নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে
পরবর্তী দিনগুলোতে নানা বিতর্ক
হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে
জুলহাস মান্নান বলেছিলেন,
এদেশের রক্ষণশীল সমাজে সমপ্রেম
নিয়ে পত্রিকা বের করতে
গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে তাদের বেশ
কৌশলী হতে হয়। এটা একটা বাড়তি
চাপ। মোটে দুটি সংখ্যা বের
হয়েছিল রূপবানের।
জুলহাস মান্নানের ঘনিষ্টরা
বলছেন, প্রথম সংখ্যাটি ভালভাবে
বের করা গেলেও দ্বিতীয় সংখ্যা
বের করতে গিয়েই সমস্যায় পড়েন
তারা। যে প্রিন্টিং প্রেসে
ছাপা হচ্ছিল রূপবান, তারা আর
ছাপতে রাজী হচ্ছিল না। এক
পর্যায়ে রূপবান ছাপা বন্ধ করে দেয়
তারা, পরে আর কোনও প্রেসই
ছাপতে রাজী হয়নি। ফলে দ্বিতীয়
সংখ্যায় রূপবান বেরিয়েছিল
মোটে অল্প কয়েকটি কপি।
রূপবানের এই দুটিমাত্র সংখ্যাই
বিস্তর বিতর্ক তুলেছে। এমনকি
জুলহাস মান্নানের মৃত্যুর পরেও
দেখা যাচ্ছে এই বিতর্ক চলছে।
অনেকে নাম পরিচয় প্রকাশ না
করবার শর্তে কথা বলেছেন, এবং
সবাই একবাক্যে বলেছেন,
জুলহাস মান্নান ছিলেন একজন
মাটির মানুষ, তিনি কারো সাথে
কোন ঝামেলায় জড়াতেন না,
ঝগড়া করতেন না, এমনকি খুনসুটিও নয়।
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল
কলেজের ছাত্র ছিলেন
জুলহাস মান্নান। সেখানে তার
শৈশবের একজন সহপাঠী বলেছেন ,
‘জুলহাস ছিল খুব মেধাবী, খুব পড়ুয়া
এবং খুবই বন্ধু অন্ত:প্রাণ। তিনি সবার
সাথেই মিশতে পারতেন। তিনি
সমকামী ছিলেন কিনা সেটা
জানতাম না। তবে তিনি আমাদের
থেকে কিছুটা আলাদা সেটা
বুঝতাম। কিন্তু এটা আমাদের বন্ধুত্বে
কখনো কোন প্রভাব ফেলেনি।
পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে
পড়াশোনা করেছেন এবং সেখানে
তাকে যারা চিনতেন তারা
বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে
জুলহাস ছিলেন জনপ্রিয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে
জুলহাস মান্নানের সহপাঠী, বন্ধু
এবং এখন একসাথেই কাজ করছেন, এমন
একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে
বিবিসির, যার বর্ণনায়,
জুলহাস ছিলেন একজন বিশাল হৃদয়
মানুষ। যে কারো বিপদে ঝাঁপিয়ে
পড়তেন। এজন্য তাকে অনেক
সমস্যায়ও পড়তে হয়েছে। প্রথম
থেকেই আমি জানতাম যে সে
সমকামী, বলছিলেন
জুলহাস মান্নানের এই বন্ধু, কিন্তু
সেটা আমাদের বন্ধুত্বের জন্য
কখনো কোন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি।
সে ছিল একজন স্বাভাবিক মানুষ।
জুলহাস মান্নানের সাথে তার যে
বন্ধুকে খুন করা হয়েছে, সেই মাহবুব
রাব্বির সাথে তার বন্ধুত্ব ছাড়া
আর কোন সম্পর্ক ছিল না বলেও
উল্লেখ করছিলেন তিনি।
কলাবাগানের ওই বাড়িতে
জুলহাস মান্নানের সঙ্গে থাকতেন
তার মা এবং একজন গৃহকর্মী। বহু বছর
ধরে তারা ওই বাড়িটিতে
রয়েছেন।
চাকরিজীবনেও সফল ও জনপ্রিয়
ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন
জুলহাস মান্নান, সেটা বোঝা যায়
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র
জন কিরবির বক্তব্যে। কিরবি
বলেছেন, তিনি ছিলেন মার্কিন
দূতাবাসের প্রিয় কর্মী।
ফেসবুকে জুলহাস মান্নানের
পাতাটিকে এরই মধ্যে
‘রিমেম্বারিং’ হিসেবে সংরক্ষণ
করা হয়েছে। অনেকেই সেখানে
তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
নেদারল্যান্ডস থেকে লারিসা
করপোরাল নামে একজন লিখেছেন,
আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি এখন
কাঁদছি কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না
উম্মাদ মানুষেরা কেন তোমার
মতো মিষ্টি একটি মানুষের এমন
ক্ষতি করবে।
সূত্র : বিবিসি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




