প্রিয় ব্লগার আদিল মাহমুদ অনেক শ্রম স্বীকার করে অ্যানথনি ম্যাসকারেনহাস এর ১৯৭১ নিয়ে প্রামান্য লেখা 'গণহত্যা' বইটি স্ক্যান করে ব্লগে দিয়েছিলেন। সেটা ডাউনলোড করে পড়েছি, পড়ার পর থেকেই পুরো বইটি পুনরায় টাইপ করে ধারাবাহিকভাবে ব্লগে দেওয়ার একটা ইচ্ছা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। পুরো বইটি ধারাবাহিকভাবে ব্লগে প্রকাশের পর এটিকে একটি ই-বুক হিসাবে প্রকাশের ইচ্ছে আছে। অন্যান্য কমিউনিটি ব্লগেও লেখাটি দেওয়া হবে।
লেখকের কথা
১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। বাংলাদেশের রক্তস্নাত বিজয় দিবস। আমি তখন ঢাকায়। নেতৃবর্গের সঙ্গে নানান আলাপ আলচনার সময় কথা উঠে আসে আমার ঐতিহাসিক ১৩ই জুন, ১৯৭১ এর রিপোর্ট খানা নিয়ে; যা লন্ডনের The SUNDAY TIMES পত্রিকায় সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। অনেকেই চেয়েছিলেন এই রিপোর্টটি ক্ষুদ্র পুস্তিকার আকারে বের হউক।
বন্ধুবর মেসবাহ্উদ্দীনকে বললাম প্রকাশ করতে। তিনি খুশী হয়ে রাজী হলেন/ বললেন, এই দলিলের একটা ঐতিহাসিক মুল্য রয়েছে যা প্রকাশনার দাবী রাখে। তিনি তার প্রেসিডেন্সী লাইব্রেরীর পক্ষ হতে আমার লেখা, THE RAPE OF BANGLADESH-ও অনুবাদ করে বাংলায় প্রকাশ করেছেন। সেজন্য তাঁকেই এই প্রকাশনার ভারও দিই।
পাকিস্থান সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে যে ধংশযজ্ঞ নিজের চোখে দেখেছি ও বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিচার করেছি, তাই লিখে গিয়েছি। এর এতোটুকুও অতিরঞ্জিত নয়। এটা একটা চাক্ষুস বর্ননাময় অভিজ্ঞতা এই দলিলখানা পাকিস্থানী নরপশুদের বিচারের সময়ও একটা প্রামান্য দলিল হিসাবে কাজ করবে।
তাছাড়াও বাঙ্গালী জাতির জীবনে অন্ধকারাচ্ছন্ন ন’মাসের খানিকটাও যদি এর মাধ্যমে তুলে ধরতে পেরে ত থাকি, তবে আমার সাংবাদিক জীবনের শ্রম ও দুঃসাহস অনেকটা সার্থক ও অর্থপুর্ণ হয়ে উঠবে।
এ রিপোর্টখানা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে হবে, নইলে আমার সাংবাদিক জীবনের কোন মুল্য নেই-শুধু এই মুল্যবোধটুকুর জন্যই পাকিস্থানে চাকরী, সহায় সম্পত্তি ও আত্মীয়-স্বজনকে ছেড়ে চিরবিদায় নিয়ে পাড়ি জমিয়েছি সুদুর সাগর পারে।
বাংলায় প্রকাশিত হয়ে আমার বইখানা প্রতিটি বাঙ্গালী ভাই-বোনদের কাছে পৌছে যাবে এর চেয়ে গর্বের ব্যাপার আমার আর কি থাকতে পারে।
১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭২ অ্যানথনি ম্যাসকারেনহাস
হোটেল ইন্টারকন ডাকা,
বাংলাদেশ
সম্পাদক ও প্রকাশকের কথা
অ্যানথনি ম্যাসকারেনহাস-এর “গণ-হত্যার গল্প” ১৯৭১ এর জুলাই মাসে চুরি করে পড়েছিলাম। কিন্তু একে ছেপে বের করার অদম্য স্পৃহা একান্তই সুপ্ত ছিলো এতদিন।
কিন্তু বিজয় দিবসে অ্যানথনির সঙ্গে ‘হোটেল ইন্টারকনে’ আলাপ হলে কথা দিতে বাধ্য হলাম তার “গণ-হত্যার গল্প” (Genocide stories) আমি ছেপে পুস্তিকার আকারে প্রকাশ করব। বিশেষ করে পাকিস্তানী নর-পিশাচদের বিচার যখন বাংলার মাটিতেই হবে তখন এই পুস্তিকার প্রয়োজন হতেই হবে। কাওরন এটা একটা ঐতিহাসিক প্রামান্য দলিল। গ্ণ-আদালতের সামনে এর চাইতে বড় প্রমান হয়তঃ খুব কমই পাওয়া যাবে।
মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম ও জঘন্যতম গণ-হত্যার চাক্ষুস ও জীবন্ত বর্ণনা বিশ্বের সামনে সর্বপ্রথম তুলে ধরার একমাত্র কৃ্তিত্ব রাখেন-লন্ডনের THE SUNDAY TIMES ও তার বিদ্রোহী, দেশ্ত্যাগী ও স্পষ্টভাষী সাংবাদিক ANTHONY MASCARENHAS.
সেই যুগান্ত সৃষ্টিকারী ও চাঞ্চল্যকর রিপোর্টের প্রাঞ্জল ও হুবহু বর্ণনাময় এ পুস্তিকার পেছনে দান রয়েছে আমার সাংবাদিক ও সাহিত্যিক বন্ধু সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমানের।
খুবই অল্প সময় নিয়ে বইখানা বের করলাম। সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয়নি বুঝতে পারছি। তবু যে উদ্দেশ্য নিয়ে এ প্রচেষ্টা, তা যদি কিছুটাও সফল হয়ে থাকে তবে শ্রম সার্থক হয়েছে মনে করবো।
এই পুস্তিকাটি বের করতে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাহায্যও কৃ্তজ্ঞতার সাথে স্মরন করছি।
ছবিগুলোর জন্য ‘বাংলার বানী’র কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম।
৩৭, বাংলাবাজার ঢাকা, মেসবাহ্উদ্দীন আহমদ
বাংলাদেশ
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:০৩