somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ফিলিস্তিন সমস্যা" - সমাধান কোন পথে কত দূর? আমেরিকায় জো-বাইডেনের বিজয় এবং ট্রাম্পের হার ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান বা নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা আছে কি ? (আমেরিকার নির্বাচন পরবর্তী ফলোআপ পোস্ট - ৮ )।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সারা পৃথিবীতে গত ৭২ বছর যাবত যে সমস্যা সবচেয়ে বেশী এবং বহুল আলোচিত তা হলো মধ্যপ্রাচ্য তথা ফিলিস্তিন সম্পর্কিত । আমরা জানি যে, ফিলিস্তিন সমস্যা প্রশ্নে বিশ্ববাসীর চাওয়া কী এবং এর প্রতি বিশ্বের মানুষের কী বিপুল মাত্রার সমর্থন রয়েছে।বিশ্বজনমতের বিপুল সমর্থন নিয়ে পাস করা জাতিসংঘে ফিলিস্তিন সম্পর্কিত যত প্রস্তাব এখন পর্যন্ত পাস হয়েছে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ববাসীর এই প্রত্যাশার বিপরীতে কার্যক্ষেত্রে বারবার অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অবস্থান থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে, বহু আগেই ফিলিস্তিনে ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটত। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে দেখা যেতো ইসরাইল ও ফিলিস্তিন নামের দুই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রকে। যুক্তরাষ্ট্র কখনো নানা কূটচাল চালিয়ে ও কখনো ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগে ইসরাইলের প্রতি বারবার সমর্থন জানিয়ে এই ফিলিস্তিন সমস্যাকে জিইয়ে রেখেছে। সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইসরাইল পেয়েছে "অনন্য প্রাণসখা" হিসেবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেমন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন বহুল আলোচিত দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানসূত্র, তেমনি ইসরাইলকে সক্রিয় সহযোগিতা দিয়েছেন জেরুসালেমকে এককভাবে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে স্থানান্তর করে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি আরো সম্প্রসারণে প্ররোচিত করে। সেই সাথে সবশেষে তিনি উপস্থাপন করেছেন আরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইসরাইলের গিলে খাওয়ার লক্ষ্যে প্রণীত "ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি"। এই চুক্তি ঘোষণা দিয়ে তিনি সাথে সাথে এও ঘোষণা করেছেন, এটি হচ্ছে ফিলিস্তিনের জন্য শেষ সুযোগ, তাই তো বলা হচ্ছে- ট্রাম্প হচ্ছেন ইসরাইলের অকৃত্রিম প্রাণসখা।



এখন প্রশ্ন,আমেরিকায় জো-বাইডেনের বিজয় এবং ট্রাম্পের হার ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের কতটুকু সম্ভাবনা বা নতুন কিছু ঘটার সম্ভাবনা আছে কি ?

ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে একনজরে এ সমস্যার প্রেক্ষাপট দেখে নেয়া যাক -


১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালাফর ফিলিস্তিন ভূখন্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর ইউরোপ থেকে বিপুল সংখ্যক ইহুদি ফিলিস্তিনে এসে বসবাস শুরু করে।১৯১৯ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদির সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার। ১৯৩১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার হয়। ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদিদের সংখ্যা ছয় লাখে উন্নীত হয়।

১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিতকরণ সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনের ৪৫ শতাংশ ভূমি ফিলিস্তিনিদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদিদের দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।এভাবে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সামরিকভাবে ইসরায়েল অত্যন্ত শক্তিশালী।

ইসরায়েলের জন্ম, ইতিহাস ও রাজনীতি মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকেই ইসরায়েল প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়।



ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা কিভাবে হয় - ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা কিভাবে হয়েছে, এ বিষয়ে বলতে গেলে অনেক পেছনে চলে যেতে হয়। এখানে একটা কথা জেনে রাখা দরকার যে, ইসরায়েল রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয় কোনরুপ যুদ্ধবিগ্রহ করে নয় বরং জাতিসংঘের কন্সটিটিউশন এবং চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে।

ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। এটি ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব তীরে এবং লোহিত সাগরের উত্তর তীরে অবস্থিত। এর উত্তরে লেবানন, উত্তর পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্দান, পশ্চিমে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজার ভূখণ্ড এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশরের সাথে সীমানা রয়েছে।

ইহুদী বিজ্ঞানী " ডঃ কাইম অয়াইজম্যান " এসিটোন আবিস্কার করে এর ফর্মুলা ব্রিটিশদের কাছে প্রকাশ করেন যা গ্লিসারিন এর পরিবর্তে সমরাস্ত্র ঠিক রাখার কাজের ব্যাবহৃত হয় এবং বিনিময়ে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইহুদীদের জন্য আলাদা আবাসভূমির দাবি করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বর্তমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন অঞ্চল অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মুসলমান শাসকদের অদূরদর্শিতা এবং ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রের কারণে তুরস্কে মুসলিম খিলাফত ভেঙ্গে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ বাহিনী ১৯১৭ সালে ইরাক, সিনাই উপত্যকা,ফিলিস্তিন ও পবিত্র জেরুজালেম দখল করে নেয়। অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর বর্তমান ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন অঞ্চলগুলো ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের ম্যান্ডেটের অধীন চলে যায়। এই সময়েই জায়ানিস্ট সংঘের তৎপরতা বাড়তে থাকে এবং ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিদের আদিভূমি ফিলিস্তিন অঞ্চলে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন তীব্রতর হয়। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী "আর্থার জেমস" বালফোর ইহুদীবাদীদেরকে লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি করেন যা বেলফোর ঘোষণা নামে পরিচিত।

ব্রিটিশদের এই ঘোষণার কারণ হিসেবে দুইটি বিষয় মানা হয়,একেতো এসিটোন এর ফর্মুলা প্রদান করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অভাবনীয় সাফল্য পায় ব্রিটিশ বাহিনী,সেই সাহায্যের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এবং সেই সাথে ব্রিটিশরা চাইনি ইহুদীদের ইউরোপে জায়গা দিয়ে জঞ্জাল সৃষ্টি করতে। কারণ তারা জানতো ইহুদীরা ঐতিহ্যগতভাবেই ক্ষমতালিপ্সু, বেঈমান জাতি।তার জন্য যারপরনাই ইহুদীদের জন্য আলাদা রাস্ট্র প্রতিষ্ঠায় তারা আগ্রহী ছিল।ইহুদীদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ার পর বিপুল সংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে এসে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। দুর্বল শক্তির কারণে প্রথম পর্যায় থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান রাষ্ট্র সমূহ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আগমনকে বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়। ইহুদীরা ফিলিস্তিন আসা শুরু করলে ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা কয়েক হাজারে উন্নীত হয়। মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডটি একটি স্বাধীন ও একচ্ছত্র মুসলমানদের এলাকা হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিতকরা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ইহুদীদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়ে মার্কিন ও ব্রিটেনের চক্রান্তকে সফল করার উদ্দেশ্যে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের বিরোধিতাকেতোয়াক্কা না করে ফিলিস্তিনকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব পাশ করে। এই প্রস্তাব অনুসারে জাতিসংঘ মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনীদের প্রদান করে এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়। এভাবে ফিলিস্তিনের ভূমিকে জোর পূর্বক দখল করে গঠন করা হয় নতুন ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল। তারপর থেকে আরব-ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে ফিলিস্তিন ইস্যুতে তিনটি যুদ্ধ হয়। এতে ফিলিস্তিনের ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।

ইসরাইলী প্রশাসন আইন, মানবাধিকার এসবে বিশ্বাস করেনা। তারা টিকে থাকতে চায় শক্তি প্রয়োগ করেই। ষাটের দশকে দেশটি পারমাণবিক বোমার অধিকারী হয়। সে বছর মিসরসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যায়। যুদ্ধের শুরুতেই ইসরাইলের নেগেভ মরুভূমিতে পারমাণবিক প্রকল্প গুঁড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল মিসরীয় বাহিনীর। কিন্তু প্রেসিডেন্ট কর্নেল জামাল আবদুন নাসের পরিকল্পনাটি বাতিল করে দেন। বিশ্বের অনেক দেশ তাদের উন্নয়ন ও আধুনিকতার কারণে সারা পৃথিবীতে পরিচিত তবে ইসরাইল এমন একটি দেশ যে দেশটি বিশ্বে হত্যাযজ্ঞের কারণে পরিচিত।


ফিলিস্তিন সমস্যা ও বিশ্ব জনমত - সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘ বিপুল ভোটে ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এবং ১৯৬৭ সালের পর থেকে ইসরাইলের ফিলিস্তিন দখলের অবসান ঘটানো অনুমোদন করে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। গত ২৬/১১/২০২০ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটি এই প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। এই কমিটি কাজ করে থাকে মানবাধিকার ও মানবিক বিষয়াবলি নিয়ে। প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১৬৩টি দেশ। বিপক্ষে পাঁচটি দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া ও নাউরো। ভোট দানে বিরত ছিল ১০টি দেশ- অস্ট্রেলিয়া, ক্যামেরুন, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, কিরিবাতি, পালাউ, পাপুয়া নিউগিনি, রুয়ান্ডা, টোগো ও টোঙ্গা। এই প্রস্তাবে জোর তাগিদ রয়েছে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের অধিকারের প্রতি। জোর দেয়া হয়েছে অনতিবিলম্বে ইসরাইলি দখলের অবসান ঘটিয়ে ‘দুই-রাষ্ট্র’ কায়েমের মাধ্যমে ইসরাইলি বা উহুদি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে।

প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনের পক্ষে পাস করা ২০টি প্রস্তাবের প্যাকেজেরই একটি অংশ, যা জতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে প্রতি বছর পাস করা হয়। এর দুই দিন পর সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে আরেকটি প্রস্তাব পাস করে সব মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের স্বীকৃতি জানিয়ে। ৭১টি দেশের সৌজন্য সমর্থন নিয়ে পাকিস্তান এ প্রস্তাব উত্থাপন করলে ১৯৩ সদস্যের এই পরিষদে তা পাস হয় কোনো ভোটাভুটি ছাড়াই, সর্বসম্মতিক্রমে। ১৯৮১ সাল থেকে পাকিস্তান এই প্রস্তাব স্পন্সর করে আসছে। এতে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় কাশ্মির ও ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের সেই সব মানুষের প্রতি, যারা এখনো লড়ে চলেছে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এসব প্রস্তাব ও এই ভোটচিত্র নির্দেশ করে, বিশ্ববাসী কী চায়? এ ধরনের বিপুল বিশ্ব সমর্থন নিয়ে একের পর এক প্রস্তাব পাস হচ্ছে, কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না কেন- সে প্রশ্ন বিশ্বের প্রতিটি শান্তিকামী মানুষের। এর অন্তর্নিহিত কারণ বহু।

এর সত্যতা মিলে ইসরাইলের সাম্প্রতিক সময়ের অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনে ক্ষিপ্রতায়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও লিকুদ পার্টির সদস্য মিকি জোহার খ্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর পত্রিকাকে বলেছেন, "এই দিনগুলো হচ্ছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের ভূখণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অপ্রতিস্থাপনীয় সুযোগ"। তিনি আরো বলেন, "আমি নিশ্চিত, আমাদের বন্ধু পেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই সুযোগটা নেবেন"। সহজেই অনুমেয়, মিকি জোহার "এই দিনগুলো" বলতে ট্রাম্প প্রশাসনের অবশিষ্ট কয়েক সপ্তাহের কথাই বলেছেন। ট্রাম্পের পরাজয় ইতোমেধ্যেই ইসরাইলিদের মধ্যে এক ধরনের ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপারটি ইসরাইলি নেসেটেও আলোচিত হয়েছে। তাদের ধারণা- নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের অব্যাহত ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ নীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। এ কথা অনস্বীকার্য, ট্রাম্প তার আমলে ইসরাইলকে পুরনো ও নতুন ইহুদি বসতি সম্প্রসারণে সক্রিয় সহযোগিতা দিয়েছেন। এমন কথাও চালু আছে-" ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইসরাইলকে এই কাজটি জরুরি ভিত্তিতে করতে উৎসাহিত করেছেন"। সে জন্যই হয়তো ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ সময়ে ইসরাইল এই সম্প্রসারণ কর্মকাণ্ড আরো গতিশীল করে তুলেছে।
এদিকে খবর আসছে- ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে বেলজিয়াম। পশ্চিম তীরের অধিকৃত ফিলিস্তিন এলাকায় বেলজিয়ামের অর্থায়নে বেশ কিছু বাড়িঘর ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল। ইসরাইল সেগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। গত ৬ নভেম্বর বেলজিয়াম সরকার এই ধ্বংসের নিন্দা জানিয়েছে। এই অবাঞ্ছিত ধ্বংসযজ্ঞের জন্য বেলজিয়াম সরকার ক্ষতিপূরণ চায়। ইসরাইল দ্রুত তাতে ‘না’ বলে দেয়। এরপর দুর্বল কূটনৈতিক ফিসফিসানি হয়তো চলবে, কিন্তু ইসরাইল পশ্চিম তীরের এসব বাড়িঘর বা অবকাঠামো ভাঙা থামাবে না। বেলজিয়াম বা অন্য কোনো ইইউ দেশ ক্ষতিপূরণও পাবে না।

এখানে লক্ষণীয় যে - অন্যান্য দেশসহ ইইউ দেশগুলোর অদ্ভুত বিদেশ-নীতি রয়েছে ফিলিস্তিন প্রশ্নে, যা এক ধরনের দ্বিচারিতা। এখনো "দুই-রাষ্ট্র" ভিত্তিক সমাধানের ক্ষেত্রে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন। ইইউ প্রায় চার দশক ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তহবিল জুগিয়েছে ফিলিস্তিনি অবকাঠামোতে। এটি সবার জানা, ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলায় ওস্তাদ। দেশটি মানে না দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এবং সাড়া দেয় না- ফিলিস্তিনে সামরিক দখলদারিত্ব অবসানে যেকোনো ধরনের বাহ্যিক চাপের প্রতি। ইসরাইল তার পরিকল্পিত অবস্থানে পৌঁছার জন্য সক্রিয়ভাবে নিয়মিত ধ্বংস করে চলেছে ইইউ অর্থায়নে নির্মিত প্রকল্পগুলো। কারণ, ইসরাইলের লক্ষ্য ইউরোপিয়ানদের এই বার্তাটি দেয়া- ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র অর্জনে তাদের সমর্থন দেয়ার বিষয়টি ইসরাইল প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যান করে। "ইউরো-মেড মনিটর"-এর দেয়া তথ্য মতে- ইসরাইল শুধু ২০১৯ সালেই ২০৪টি ফিলিস্তিনি অবকাঠামো ধ্বংস করেছে দখল করা পূর্ব জেরুসালেমে। পশ্চিম তীরের ‘সি’ এলাকায় অনেক বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধ্বংস করেছে ইসরাইল।এগুলো ছাড়াও ধ্বংস করা হয়েছে ১২৭টি অবকাঠামো, যেগুলোর জন্য তহবিল জুগিয়েছে বেশির ভাগ ইইউভুক্ত দেশ। বছরের পর বছর ধরে ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে ইসরাইলের এই ক্র্যাশ কোর্স চালানোর পরও ইউরোপ এখনো ইসরাইলের এক নম্বর ট্রেড পার্টনার। আরো খারাপ দিক হলো- ইউরোপ হচ্ছে ইসরাইলের বড় বড় অস্ত্র সরবরাহকারীদের মধ্যে অন্যতম এবং ইরাইলের নিজস্ব অস্ত্রের একটি প্রধান বাজার হচ্ছে ইউরোপ। ইসরাইলের ‘কমব্যটি প্রোভেন’ সাফল্যের সাথে ব্যবহার করা হয় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে।

ইউরোপের এই বৈপরীত্যের শেষ এখানেই নয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে "ইউরাপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস" রুল জারি করে- ইইউভুক্ত দেশগুলোকে অবৈধ ইহুদি বসতিতে যেসব অবৈধ পণ্য উৎপাদিত হয় সেগুলোর ল্যাবেল চিহ্নিত করতে হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দেখানো হয়, ইসরাইলকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের জন্য জবাবদিহি করাতে চায়। আরো অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যেসব ইউরোপীয় সক্রিয়বাদী ইসরাইলি পণ্য বয়কটের প্রচার চালাচ্ছিল, ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের ইউরোপীয় কোর্টে বিচার করা হয়। এ ধরনের বয়কটকে অ্যান্টি-সেমিটিজম গণ্য করে এই বিচার চলে। ফ্রান্স, জার্মানি ও অন্যান্য দেশ বারবার তাদের বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে ইসরাইলের দখলের বিরুদ্ধে বৈধ বয়কটকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

ইউরোপের বৈপরীত্য ও দ্বান্দ্বিক নীতি আরো সুস্পষ্ট ধরা পড়ে গত সেপ্টেম্বরে। তখন জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও অন্যান্য ইইউভুক্ত দেশ জাতিসঙ্ঘে সুদৃঢ়ভাবে কথা বলে ইসরাইলের এই অবকাঠামো ধ্বংস করার নীতির বিরুদ্ধে। বিবৃতিতে ইইউ দেশগুলো বলে- ২০২০ সালে মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গত বছরে সবচেয়ে অধিক মাত্রায় এই ধ্বংসকর্ম চলেছে। ফিলিস্তিন ফ্রন্টে ইউরোপের অ্যাকশনের অভাবে এমনটি ঘটেছে। বেলজিয়াম প্রতিবাদ জানিয়েছে শুধু তাদের অর্থায়নে হেবরনের (আল-খালিল) কাছাকাছি আল-রাখিজ গ্রামে নির্মিত কাঠামো ধ্বংসের ব্যাপারে। এই অতিপ্রয়োজনীয় অবকাঠামোটি নির্মিত হয়েছিল বেলজিয়ামের অর্থায়নে; পশ্চিম তীরে মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে। ‘ওয়েস্ট ব্যাংক প্রটেকশন কনসোর্টিয়াম’ এটি বাস্তবায়ন করেছে। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র দফতর এর জন্য ক্ষতিপূরণ কিংবা পুনর্নির্মাণ দাবি করেছে।

ইউরোপ ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। এসব আইন-কানুন বলে, জাতিসঙ্ঘের সদস্য দেশগুলোর দায়িত্ব একটি দখল করা ভূখণ্ড দখলমুক্ত করে এর জনগণের কাছে ফেরত দেয়া এবং সেখানে তাদের ইচ্ছামতো একটি স্বাধীন দেশ গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়া। এর উল্টোদিকে ইসরাইল ফিলিস্তিন প্রশ্নে প্রতিটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতি, জাতিসঙ্ঘের অসংখ্য প্রস্তাব লঙ্ঘন করে চলেছে। জাতিসঙ্ঘের সেসব প্রস্তাব কেন বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব জাতিসঙ্ঘের ও সেই সাথে সুপার পাওয়ারগুলোর। এ ব্যর্থতার দায়ভার অবশ্যই জাতিসঙ্ঘকে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সমাজেরই দায়িত্ব ছিল কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে জাতিসঙ্ঘে পাস হওয়া ফিলিস্তিন-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের। ‘ডুবে ডুবে জল খাওয়া’ চলেছে দীর্ঘ দিন- দশকের পর দশক। এখন এর ইতি টানার সময়।

জাতিসঙ্ঘে পাস হওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করতে হবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের যাবতীয় প্রক্রিয়া। নামতে হবে দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া নিয়ে। অবসান ঘটাতে হবে ইসরাইলের ফিলিস্তিন দখলের। থামাতে হবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইসরাইলের অন্তর্ভুক্তির অপপ্রকল্প। ইসরাইলকে আনতে হবে আন্তর্জাতিক জবাবদিহির আওতায়। এ ক্ষেত্রে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অবশ্যই হতে হবে ইতিবাচক। আন্তর্জাতিক সমাজকে মনে রাখতে হবে- আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের বিষয়টি জাতিসঙ্ঘ সনদে স্বীকৃত। জাতিসঙ্ঘের সনদ বাস্তবায়ন না করে ডজন ডজন প্রস্তাব পাস করা মূল্যহীন। জাতিসঙ্ঘে প্রস্তাব পাস করা কোনো সমস্যা নয়; সমস্যা হচ্ছে প্রস্তাবের বাস্তবায়ন।

১৯৬৭-পূর্ব সময়ের সীমান্ত অনুযায়ী একটি ‘দুই-রাষ্ট্র’ভিত্তিক সমাধান হচ্ছে ইসরাইলের সাথে শান্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসরাইল সে পথে না হাঁটলে প্রতিটি রাষ্ট্রের উচিত ইসরাইলের প্রতি যাবতীয় সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কথিত ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি ঘোষণা করেছেন তা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।



কিন্তু তেমনটি ঘটবে এমন আশাবাদের সুযোগ কোথায়? সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরাইল কূটনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দু’টি দেশ আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সাথে। এই আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে দালালির কাজটি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে তথাকথিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা, যা তাৎক্ষণিকভাবে মুসলিম দেশগুলোর প্রবল সমলোচনার মুখে পড়ে।
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, মুসলিম দেশগুলো সাধারণত "দুই-রাষ্ট্র"ভিত্তিক সমাধানের পক্ষে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে এর পুরো ভূখণ্ড নিয়ে, যার কিছু অংশ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরাইলের দখলে রয়েছে। সেই সাথে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলিম দেশগুলো এর সাথে কঠোর বিরূপ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে স্পষ্টতই এমনটি নয় যে, মুসলিম দেশগুলোর সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। আসলে বেশ কিছু মুসলিম দেশ, বিশেষত মিসর ও জর্দান ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে যথাক্রমে ১৯৭৯ ও ১৯৯৪ সালে এবং ২০২০ সালে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক চুক্তির আগে সেই ২০১৫ সাল থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন রিপোর্ট মতে- কিছু উপসাগরীয় আরব দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোপনে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।

এই প্রেক্ষাপটে আমিরাত ও জর্দান ইসরাইলের সাথে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে- তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ২০০২ সালে স্বাক্ষরিত "আরব পিস ইনিশিয়েটিভ"-এ স্বাক্ষরকারী দেশগুলো ধর্মীয় ও নৈতিকভাবে অবস্থান নেয়, ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে শুধু তখনই স্বীকার করে নেয়া যাবে, যখন ইসরাইল ঐতিহাসিক "ছয় দিনের যুদ্ধ"- পূর্ব সীমানা অনুযায়ী গঠিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সাথে শান্তি স্থাপন করবে। কিন্তু এরই মধ্যে একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে- মুসলিম দেশগুলোর সাথে আরব দেশগুলোর এই কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন কি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে? মুসলিম দেশগুলো চাইলে তেমন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। ২০২০ সালের আরব আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যকার চুক্তিতে স্পষ্ট বলা আছে, এসব পক্ষের সাথে ইসরাইল প্রতিশ্রুত ইসরাইল-ফিলিস্তিন সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান প্রশ্নে সমঝোতা করতে হবে।

সৌদি আরব ইসরাইলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক করতে তার আরব মিত্রদের সামনে ঠেলে দিলেও নিজে যে পিছিয়ে যাচ্ছে সেই ইঙ্গিত দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে।গত কিছুদিনে সৌদি রাজপরিবারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্যের মুখে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে যা শোনা গেছে তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ইসরাইলি নেতারা।সৌদি আরব পিছিয়ে গেলে বাকি আরব দেশগুলোর সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে তা নিয়েও তাদের মনে উদ্বেগ ঢুকছে সন্দেহ নেই।গত মাসে সৌদি আরবের নিওম শহরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমানের মধ্যে গোপন এক বৈঠকের পর পর্যবেক্ষকরা বলতে শুরু করেন যে সৌদি আরব-ইসরাইল কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।যদিও সৌদি আরব ওই বৈঠক হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে, কিন্তু ইসরাইল সরকারের মৌনতা ও পশ্চিমা গোয়েন্দাদের ইঙ্গিতের ভিত্তিতে প্রায় সবাই নিশ্চিত যে বৈঠকটি হয়েছিল।



কিন্তু বাহরাইনের রাজধানী মানামায় মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিয়ে এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সল বিন ফারহান বার্তা সংস্থা এফপির সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে যেসব কথা বলেন, তাতে সৌদি মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।প্রিন্স ফয়সল বলেন , " স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হলে ইসরাইলের সাথে সৌদি আরবের স্বাভাবিক সম্পর্ক হবেনা"। তিনি আরো বলেন, "এ ব্যাপারে সৌদি অবস্থান শক্ত"।

সৌদি আরব এ নিয়ে খুব স্পষ্ট যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলে ফিলিস্তিন বিরোধ সমাধান করতে হবে, ২০০২ সালে আরব শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাধীন টেকসই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে হবে।কারণ, সৌদি মন্ত্রী বলেন, "ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের বিরোধ না মিটলে এই অঞ্চলে সত্যিকারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে না"।

২০০২ সালে সৌদি উদ্যোগে ওই শান্তি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে - "১৯৬৭ সালের যুদ্ধে অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূমি ইসরাইলকে ছেড়ে দিতে হবে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে"। ইসরাইল সবসময় এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের যুক্তি এতে তাদের নিরাপত্তা দারুণভাবে বিঘ্নিত হবে।




সৌদি এই অবস্থানের ফলে তো ইসরাইলের সাথে অদূর ভবিষ্যতে স্বাভাবিক সম্পর্কের সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যাবে? এই প্রশ্নে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,"ফিলিস্তিন বিরোধের সমাধানের ব্যাপারে আমি আশাবাদী"।
বাহরাইনে ওই সম্মেলনে আরো আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন সৌদি সাবেক গোয়েন্দা প্রধান এবং রাজপরিবারে প্রভাবশালী সদস্য প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সল যিনি সৌদি প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন।সরাসরি ইসরাইলের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ইসরাইল সবসময় নিজেদেরকে দেখায় যে তারা ছোট একটি দেশ আর চারদিকে শত্রু সব দেশ সবসময় তাদের ধ্বংস চায় কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ইসরাইল নিজে একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।"

প্রিন্স তুর্কি, যিনি সৌদি বাদশাহ সালমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, বলেন, "এখনো ইসরাইল জবরদস্তি করে ফিলিস্তিনিদের ঘরছাড়া করছে, তাদের গ্রাম ধ্বংস করছে। “আব্রাহাম চুক্তি (ইসরাইলের সাথে ইউএই এবং বাহরাইনের চুক্তি) ঐশ্বরিক কোনো দলিল নয়। শরীরের ঘা থাকলে তা ব্যথার ওষুধ দিয়ে সারানো যায়না"।

এদিকে, এরই মধ্যে ইসরাইল বাতিল করেছে পশ্চিম তীরের দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত করার কর্মসূচি। আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অবশ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করায় আমিরাত ও বাহরাইন চুক্তি অনুযায়ী শান্তি প্রক্রিয়া উন্নয়নের ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারবে ইসরাইলের ওপর। তবে তা কতটুকু কার্যকর ফল বয়ে আনবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

কারণ এর আগে মিসর ও জর্দানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ফলে ইসরাইল-পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং অবনতি ঘটেছে। তাই ফিলিস্তিন সম্পর্কিত সাম্প্রতিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার প্রভাব কী হবে তা নিয়ে মন্তব্য করার সময় ও সুযোগ আসেনি। তবে একটি কথা বলা যায়- আমিরাত ও বাহরাইনের সাথে ইসরাইলের চুক্তি ফিলিস্তিনের জন্য যা-ই হোক, ইসরাইলের জন্য এটি ল্যান্ডমার্ক অ্যাচিভমেন্ট। অন্যদিকে বাইডেনের বিজয়, ফিলিস্তিনিদের জন্য কতটুকু ফল বয়ে আনে সেটাও এখন দেখার অপেক্ষায়।





পূর্ববর্তী পোস্ট - আমেরিকায় জো-বাইডেনের বিজয় এবং ট্রাম্পের হার মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতির নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা আছে কি? Click This Link

তথ্যসূত্র - উইকেডপেডিয়া,সিএনএন, সংবাদপত্র, নিবন্ধ ,সম্পদকীয় এবং ছবি - গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৩
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×