somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




** করোনা কি ** - ২০২০ সালে নতুন এক ভাইরাস পুরো পৃথিবীকে অস্থির করে তুলেছে। নতুন এ ভাইরাসকে বলা হচ্ছে সার্স-কোভিড-২। পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস-২। নাম অনেক বড় হলেও ভাইরাসটি কিন্তু অতিক্ষুদ্র। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১২০ ন্যানোমিটার অর্থাৎ ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ। সহজভাবে বলা যায়, একটি আলপিনের ডগায় ১০ কোটি এ ভাইরাস কণা অনায়াসে স্থান করে নিতে পারে। এর থেকে মাত্র কয়েক শ’ ভাইরাস কণা সংক্রমিত করতে যথেষ্ট। আর একবার সংক্রমিত হলে এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ওই রোগকেই বলা হয় "কোভিড-১৯"।

করোনার কারনে ২০২০ সাল পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেক অনেক দিন। এ সালে করোনা পুরো পৃথিবীতে রেখে যাচছে তার বিধ্বংসী ছাপ ।আর তাই এ বছরকে বলা চলে করোনা মহামারির বছর ।



ক্ষুদ্র এই ভাইরাস গত প্রায় একটি বছর মানুষের জীবনের স্বপ্ন ও পরিকল্পনার অনেক কিছুই চুরমার করে দিয়েছে। অনেক মানুষ চিরকালের জন্য তার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। অনেক মানুষ প্রিয়জনের সাহচর্য ছাড়া নিঃসঙ্গ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই করুণ অসহায় মৃত্যু যেমন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপজুড়ে, তেমনিও হয়েছে আমাদের বাংলাদেশ, প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বজুড়ে। যদি বলতে বলা হয় ২০২০ সালে পৃথিবীর বর্ষসেরা ঘটনা কোনটি কিংবা আলোচিত বিষয় বা চরিত্র কোনটি? তাহলে যে কেউই একবাক্যে বলবে করোনাভাইরাস মহামারী। বিবিসি, সিএনএনসহ বিশ্ব মিডিয়া খুললেই যে শব্দ কানে বাজে তা হচ্ছে, ‘করোনাভাইরাস প্যানডেমিক’।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশে দেশে চলেছে - চলছে লকডাউন। তাই মানুষকে থাকতে হয়েছে ঘরবন্দী। কোটি কোটি মানুষ কোয়ারেন্টিনে, আইসোলেশনে।প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও প্রাণঘাতী ভাইরাসটির থাবা শেষ হয়ে যায়নি। বরং নিত্যনতুন রূপ ধারণ করে নিজের বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে করোনাভাইরাস। ঘন ঘন রূপ বদলানো এ ভাইরাসের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। এর শত শত সাধারণ রূপান্তর ইতোমধ্যে ঘটেছে। এর মধ্যে মারাত্মক দু’টি ঘটেছে এই গত সপ্তাহে। একটি রূপান্তরের ধরন চিহ্নিত হয় যুক্তরাজ্যে, অন্যটি দক্ষিণ আফ্রিকায়। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি যুক্তরাজ্যেও চিহ্নিত হয়েছে। ফলে এ ভাইরাসের আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ কোনোভাবেই কাটছে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগ বিগত ১০০ বছরের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বড় ধরনের স্বাস্থ্যসঙ্কট।

** সারা বিশ্বে করোনার মহামারি -

করোনার কারনে ২০২০ সাল বিশ্বব্যাপী চিহ্নিত হয়েছে একটি বিধ্বংসী বছর হিসেবে। অতিক্ষুদ্র অদৃশ্য এই ভাইরাস বছরজুড়ে পুরো পৃথিবীকে অস্থির করে রেখেছে। এখনো যার ত্রাস অব্যাহত আছে। এই ভাইরাস বিশ্বের সাড়ে ১৭ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সেই সাথে আট কোটিরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত। মহামারীর প্রভাবে অর্থনৈতিক খাতে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, মহামারীতে কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ১০০ কোটিরও বেশি শিশু এ কারণে স্কুলে যেতে পারেনি প্রায় এক বছর।বিশ্বের ১৮৮টি দেশে করোনাভাইরাস তার বিস্তার ঘটিয়েছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট কোটি ছাড়িয়েছে। করোনায় মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১৭ লাখ।বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ভারতে করোনা রোগীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে দেড় লাখ মানুষ। ব্রাজিলে করোনা রোগীর সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু দুই লাখ ছুঁইছুঁই। করোনা রোগী ও মৃত্যু নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, রাশিয়া, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত প্রভৃতি দেশ।


** বাংলাদেশে করোনাভাইরাস -



বছরের শুরুতেই মানুষকে হতবাক করে দেয় মহামারি করোনাভাইরাস।চীন থেকে শুরু হয়ে দেশে দেশে যখন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছিল তখন বাংলাদেশের মানুষ উৎকণ্ঠায় ছিল কবে বাংলাদেশে সনাক্তের খবর পাওয়া যাবে।মার্চের ৮ তারিখে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের নিয়মিত ব্রিফিং এর জানানো হয় বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর খবর।ইন্সটিটিউটের তৎকালীন পরিচালক মেহেরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান "এতদিন আপনাদের যা বলে এসেছি আজ আর তা বলতে পারছি না। বাংলাদেশে তিনজন সনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন পুরুষ, একজন নারী"।

এর পর শুরু মানুষের মনে ভয়, আতঙ্ক সঙ্গে বিভ্রান্তি। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।বেশি সংক্রমিত এলাকায় লকডাউন করা হয়। সব ধরণের পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করা হয় ।এরপরে দফায় দফায় পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের তরফ থেকে করণীয় সম্পর্কে ঘোষণা এসেছে।বেড়েছে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। মানুষের কাছে এই ভাইরাস বিরাট আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।



ইতিমধ্যে যদিও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা অনুমোদন পেয়েছে তারপরেও আরও কিছুদিন লাগবে তা আমদের দেশে আসতে।এদিকে বাংলাদেশ সরকার ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন আনার জন্য চুক্তি করছে ।যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। ওই টিকা কেনার জন্য বাংলাদেশ সরকার গত ১৩ ডিসেম্বর সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সাথে চুক্তি করে।এদিকে ভারত থেকে করোনার ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে স্পষ্টতই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে। যেখানে তারা জানিয়েছে ভারতের আভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকা কোভিড-১৯ টিকা রফতানি করবে।

টিকা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন, সিরামের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমাদের দেশ থেকে অনুমোদন পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে।আর তাই টিকা আবিষ্কার হলেও এখন পর্যন্ত তা বাংলাদেশে আসে নি।আর তাই মানুষের কাছে সাবধান থাকার জন্য বার বার হাত ধোয়া, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা আর মুখে মাস্ক পরা - এগুলোই এখন পর্যন্ত এ ভাইরাস প্রতিরোধে একমাত্র করণীয়।

দুনিয়ার সব কিছুরই যেমনকিছু ইতিবাচক প্রভাব থাকে তেমনি তার কিছু নেতিবাচক প্রভাবও থাকে ।ভাইরাস করোনা ও এর বাইরে নয়।আসুন দেখি সমাজে করোনার ফলে কি প্রভাব পড়েছে।

**করোনার ইতিবাচক প্রভাব**





করোনার আগে এবং করোনাকালীন সামাজিক মানুষের জীবনযাত্রার ছবি।

১। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে - করোনার কারণে মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছে। কারণ, দেখা গেছে, আগে থেকে বিভিন্ন রোগে ভোগা মানুষকেই করোনা ভাইরাস বেশি কাবু করতে পেরেছে। তাই সুস্থ জীবনযাপনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন জীবনযাপন করে। হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢাকে। দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, শহরের অলিগলি আগের চেয়ে বেশি পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হয়। আমার ধারণা, মানুষ এই পরিবর্তিত অভ্যাসগুলো অন্তত কয়েক বছর মেনে চলবে।

২।পৃথিবীর দূষন কমেছে - করোনার কারণে পৃথিবীটা আরো বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে কার্বন নিঃসরণ সাত ভাগ কমেছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নতুন রেকর্ড৷ মানুষের যাতায়াত, বিমানযাত্রা, পর্যটন ইত্যাদি বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে কার্বন নিঃসরণ কম হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বেশ কয়েকবছর ধরেই কথা হচ্ছে। কিন্তু অনেক উদ্যোগ নিয়েও যথেষ্ট ফল পাওয়া যাচ্ছিলো না। করোনার কারণে কিছুটা হলেও সেটা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া মানুষের সমাগম কম থাকায় শহরের রাস্তায় বন্যপ্রাণীর ঘোরাফেরা, কক্সবাজার সৈকতে কচ্ছপের দেখা পাওয়ার মতো মন ভালো করা খবর করোনার কারণেই পেয়েছি আমরা।

৩।পাপ কাজ এবং অপচয় কমেছে - সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এবং যানবাহন-বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রনের কারনে বিশ্বব্যাপী মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন প্রমোদ স্থান,বার-ক্লাব,পতিতালয়,সমুদ্র সৈকত বন্ধ বা ব্যবহার সীমিত করার কারনে মানুষের পাপ কাজের প্রবণতা এবং সুযোগ কমেছে এবং তার ফলে মানুষের অপচয় করার সুযোগ ও সীমিত হয়েছে ।অবশ্য এটাও ঠিক, জন - জীবন নিয়ন্ত্রনের ফলে অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে এবং মানুষদের আয় রোজগারও কমে গেছে।


**করোনার নেতিবাচক প্রভাব**

-করোনার নিষ্ঠুরতায় মানুষের মধ্যে হতাশা বেড়েছে বহুগুণ। বিচলিত মানুষ যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষকে বোকা ও অসচেতন করছে এ অদৃশ্য জীবাণুর ভয়াবহতা। এর ফলে স্বার্থপরতা বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মানুষের মাঝে। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ ক্রমান্বয়ে নানা কুসংস্কারে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া নির্দেশনা ও বিনা পয়সার অবাধ জ্ঞান বিতরণ প্রক্রিয়া এ কুসংস্কারকে আরও বেশি উসকে দিচ্ছে।

১।সারা দুনিয়ার প্রচলিত সব অবস্থা ও পরিস্থিতির লন্ডভন্ড - করোনা সারা দুনিয়ার সব কিছু লন্ডভন্ড করে ফেলছে। যে শহর কখনো ঘুমাত না সেই শহরকেও দীর্ঘমেয়াদে ঘুম পাড়িয়েছে,বিমান পরিবহন তথা সকল পরিবহন বন্ধ ,বছরব্যাপী স্কুল, কলেজ ,বিশ্ববিদ্যালয় তথা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,প্রমোদ প্রতিষ্ঠান এবং প্রমোদ এলাকা বন্ধ করে দিয়ে এক অন্যরকম দুনিয়া দেখিয়েছে করোনা আধুনিক যুগের মানুষকে।করোনা আরো দেখিয়েছে সুপার পাওয়ার তথা দুনিয়ায় প্রচলিত জ্ঞান,বিজ্ঞান,ক্ষমতা তথা মানুষ কত অসহায় এখনো প্রকৃতির কাছে।আর এসব কিছুই ভোগবাদী মানুষকে স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।



২।মানুষে মানুষে দূরত্ব ও অবিশ্বাস বাড়িয়েছে - বর্তমান সমাজে এমনিতেই মানুষের সাথে মানুষের মতের-মনের মিল ও বিশ্বাস কম ।আর এর মাঝে করোনা সে দূরত্ব ও অবিশ্বাস আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন স্বামী - স্ত্রী কে বাবা-ছেলেকে , মা-মেয়েকে মানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করছেনা ।সামান্য হাচি-কাশির উপসর্গ দেখা দিলেই সবাই তার সাথে দূরত্ব তৈরী করে ফেলছে ।করোনা আসলে হয়েছে কি হয়নি তাও ভেবে দেখার সময় নেই কারো।এ এক অসহ্যকর পরিবেশ ।কেউ কাউকে বিশ্বাস করেনা । এ যেন সবাই এক একজন বিচছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা।যেখানে মানুষে-মানুষের সহমর্মিতা ,সহযোগীতা একের বিপদে বা সুখে-দুখে অন্যের সহায়তা সহযোগীতা সব অনুপস্থিত ।

৩।সুখ এবং সুখের সংজ্ঞা পালটে দিয়েছে - করোনা আমাদেরকে সুখ এবং সুখের উপকরন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে।বর্তমান সমাজে মানুষ সবাই বৈধ অবৈধ যে কোন ভাবেই এবং যেভাবে সুখের পিছনে ছুটে চলেছিল তাতে করোনা যতি টেনে দিয়েছে।মানুষের নিকট এখন জগতের আর সব সুখ থেকে শারীরিক সুস্থতা যে স্রষ্টার পক্ষ থেকে কত বড় নেয়ামত বা কত প্রয়োজন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।কারন , একটু হাচি বা কাশি দিলেই চারিপাশের লোকজন তথা আপনজনেরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বা দেখাচছে তাতে মানুষ এখন পার্থিব ধন-সুখ-সম্পদ থেকে শারীরিক সুস্থতাই যে সবচেয়ে বেশী সুখের-সম্পদ তা উপলব্ধি করতে পেরেছে।সর্বোপরী করোনাকালে ধন-সম্পদ,টাকা-পয়সা কতটা মূল্যহীন তা হাসপাতালে থেকে হাসপাতালে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া,আপনজনদের আচরন সর্বোপরী সমাজের সবার প্রতিক্রিয়া তা শুধু করোনা রোগীর প্রতিই নয় স্বাস্থ্যসেবা খাতের সম্পর্কীয় মানুষদের সাথে বাকীদের ব্যবহার ও মানুষদেরকে সুখের উপায় ও উপকরন নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।



৪।** আপনজন এবং করোনা -

করোনা মানুষকে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশী ভাবতে বাধ্য করছে তা হলো মানুষে মানুষের সম্পর্ক তথা আপনজনদের সম্পর্কে। যে আপনজনদের জন্য আমরা ন্যায় অন্যায় ভূলে যে কোন অন্যায় এবং যে কোন উপায়ে তাদের সুখের জন্য যে কোন খারাপ কাজ করতে ভাবিনা সেই আপনজনরা ই বিপদে আপনার-আমার কতটা কাজে আসে তা নিয়ে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে করোনা।কারন করোনা হয়েছে বা তার উপসর্গ দেখা গেছে এ জানা মাত্রই যেভাবে আপনজনেরা তাদের ছুড়ে ফেলেছে বা ত্যাগ করেছে তাতে আপনজনদের নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ এনে দিয়েছে করোনা।

৫।করোনায় শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি - প্রাণঘাতী কোভিডের প্রার্দুভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থা। শিশুরা কীভাবে সংক্রমণের আশংকা এড়িয়ে স্কুলে যাবে?করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে।প্রায় এক বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবে খুলবে, তা কেউ জানে না। কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। লক্ষণও আশাব্যঞ্জক নয়।২০২০ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও সমমানের এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ । সব মিলিয়ে পড়াশোনা ও পরীক্ষা ছাড়াই এক শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়া হয়েছে। এর চেয়েও ভয়ের বিষয় হলো, শিক্ষার্থীদের একাংশ পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়তে পারে। বাল্যবিবাহের হারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তে পারে শিশুশ্রমও।

এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ক্লাস করিয়ে পুরো টিউশন ফি নিচ্ছে। অভিভাবকেরা তা দিতে রাজি নন। বিপরীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বেতন না পাওয়া ও চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বড় শহরের কিছুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস নিলেও সেগুলোর বেশির ভাগে পাঠদান শেষ পর্যন্ত মানসম্মত হয়নি।কারণ, এর আগে কারোরই এরকম বিষয়ের প্রস্তুতি ছিল না।সবশেষে বিদ্যালয় কবে খুলবে তা এখনো ঠিক হয়নি।

এদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুলের কার্যক্রম আরও এক বছর ব্যাহত হলে সে ক্ষতির ভার শিশুরা বইতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর। মঙ্গলবার(১২/০১/২০২১) এক বিবৃতিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

হেনরিয়েটা ফোর বলেন, "আমরা যেহেতু কোভিড-১৯ মহামারির দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করেছি এবং বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, তাই স্কুলগুলো খোলা রাখতে বা পুনরায় খোলার পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দিতে কোনো প্রচেষ্টাই বাদ দেওয়া উচিত হবে না"।ইউনিসেফ প্রধান জানান, শিশুদের ওপর স্কুল বন্ধের বিরূপ প্রভাবের বিষয়ে অভূতপূর্ব প্রমাণ এবং স্কুলগুলো মহামারির চালিকা শক্তি নয় বলে জোরালো নজির থাকা সত্ত্বেও অনেক দেশই স্কুলগুলো বন্ধ রেখেছে তাও প্রায় এক বছর ধরে।হেনরিয়েটা ফোর আরো উল্লেখ করেন যে - শিশুদের পড়া, লেখা ও প্রাথমিক গাণিতিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একবিংশ শতাব্দীর অর্থনীতিতে সাফল্য অর্জনে যে দক্ষতার প্রয়োজন তা হ্রাস পেয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য, বিকাশ, নিরাপত্তা এবং সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের ওপর ক্ষতির পরিমাণ হবে সর্বাধিক।

যদি আরও এক বছর শিশুদের স্কুল বন্ধ থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় তবে প্রজন্মান্তরে তার ফল ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেন হেনরিয়েটা ফোর।

৬।** দাফন-কাফন তথা লাশ সৎকারে সমাজ এবং আপনজনদের বাধা প্রদান -

করোনার ভয়ে মৃতদেহ দাফন বা সৎকারের ছবি আত্মীয়রা ভার্চুয়াল জানাজা পড়ছেন ঠিক আছে; কিন্তু মৃতদেহ রেলস্টেশনে, হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছেন কেন? চলতি পথে গাড়িতে কোনো যাত্রী মারা গেলে তাকে রাস্তার পাশে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে যেতে হবে- এমন পৈশাচিক অবস্থা তৈরির জন্য করোনাকে দায়ী করা হলেও দায়ী হচ্ছে সেইসব মানুষ, যারা স্বার্থপরতার চরম অবস্থানে চলে গেছে। এমনকি মারা যায়নি অথচ করোনা হয়েছে ভেবে এক মাকেও সন্তান ও জামাই মিলে জঙ্গলে ফেলে আসার অমানবিক সংবাদ জানা গেছে।

বেহুঁশ মানুষ নিজে বাঁচার জন্য জীবন-জীবিকাকে সমার্থক ভাবতে গিয়ে মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে বনের পশুর পর্যায়ে চলে গেছে। ভোগবাদী মানুষ শুধু দুনিয়ার খেয়াল নিয়ে মত্ত থাকার ফলে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি কখনও নেয় না। ফলে মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে বাস্তবতা বুঝতে পেরে সবকিছুতে হুঁশ হারিয়ে ফেলে। ভোগবাদীরা জীবনটাকে ভোগ-বিলাসে মত্ত রাখায় সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত নির্দিষ্ট পথে অবস্থান করে না। ফলে শুধু দুনিয়ার খেয়াল তাদের অন্ধ ও বেশি স্বার্থপর করে তোলে। মৃত্যুভয় তাদের বেশি আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। নিজে বাঁচার জন্য তারা বেশি তৎপর হয়ে ওঠে।





করোনার আগে এবং করোনাকালীন লাশ দাফনের ছবি।

করোনা বিপর্যয় শুরু হওয়ার পর এ রোগে মৃতদের দাফন করা নিয়ে নানা ঘটনা জানা গেছে। রাজধানী ঢাকায় কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যান, তাদের কোন কবরস্থানে দাফন করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনেকের মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে এলাকাবাসী লাশ গাড়ি থেকে মাটিতে নামাতে দেয়নি। এ জন্য ঝগড়া-বিবাদ, রাজনীতি, কুসংস্কার, ভয়ভীতিসহ নানা বিষয় হাজির করে তালগোল পাকানো হয়েছে।পাশাপাশি সারাদেশে লাশ দাফন নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক খবর সহ লাশের গোসল- দাফনে কাউকে না পাওয়া, লাশ ঘরে রেখে আপনজনদের পালিয়ে যাওয়া,কবরস্থানে লাশ দাফনে বাধা দেওয়া সহ নানা রকম নেতিবাচক খবর সারা দেশ জুড়ে পাওয়া গেছে।আর তাতে করে দুনিয়া মানুষের এক পরিবর্তিত রুপ দেখতে পেয়েছে। আগে যেখানে একজন মানুষ মারা গেলে পাড়া-প্রতিবেশী সহ প্রায় সবাই এবং স্বেচ্ছায় তার দাফন-কাফনে বা সৎকারে অংশ নিত এখন আর তা কেউ করতে চাচছেনা। এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা ।


একটি লাশ যদি একজন করোনাক্রান্ত রোগীর হয়েই থাকে, তাহলেও তাকে কোনো এলাকার মাটিতে দাফন করতে বা সৎকার করতে বাধা দেয়ার যুক্তি কী? আসুন, করোনার এ ভয়াবহ সময়ে দুর্ভাগ্যবশত যারা আমাদের ছেড়ে আমাদের আগে পরপারে চলে যাচ্ছেন, তাদের মরদেহ দাফনে বাধা না দিয়ে বরং সাধ্য অনুযায়ী সম্মান দেখাই। সব মানুষই এ নশ্বর পৃথিবী থেকে চলে যাবে- কেউ আজ, কেউ বা আগামীকাল। সুতরাং শুধু সন্দেহবশত লাশ দাফন নিয়ে এত ভয় ও নিষ্ঠুরতা কেন?

তথ্যসূত্র - সংবাদপত্র,সম্পাদকীয়,চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল এবং ছবি - গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×