ছবি-tazakhobor24.com
সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ এশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবেহ সাদিকের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।শেষ রাতের এ নামাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। যাকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ নামাজ সুন্নত।শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকে, তখন তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসায় নিদ্রা ত্যাগ করে জেগে ওঠে।
সব প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য, যিনি রাব্বুল আলআমিন। দরুদ ও সালাম প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যিনি মুমিনের ঈমান। তাঁর পরিবারবর্গ ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রা.), আল্লাহর নেককার বান্দাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষণ হোক অঝোর ধারায়। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবল মুত্তাকিদের জন্যই নির্ধারিত।
রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ হলো সুন্নাত, আল্লাহতায়ালার মাহবুব বান্দাদের অভ্যাস আর আল্লাহর সঙ্গে বান্দাদের গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা নৈকট্য ও সন্তোষ অর্জনের অন্যতম পন্থা। তাহাজ্জুদের ফজিলত প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, "রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ কায়েম করুন, এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়,শিগগিরই আল্লাহ আপনাকে উভয় জগতে বাঞ্ছিত মর্যাদায় ভূষিত করবেন " (সূরা বনি ইসরাইল ,আয়াত - ৭৯)।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে আরো বলেন, "তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশঙ্কার সঙ্গে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদের যে রুজি প্রদান করেছি, তা থেকে তারা দান করে।"(সূরা সিজদা : ১৬)।
ছবি-tazakhobor24.com
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে নিয়মিত এ নামাজ পড়তেন। এমনকি সাহাবায়ে কিরামকেও এ নামাজ নিয়মিত পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। আল কোরআনে তাহাজ্জুদ নামাজের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে তাহাজ্জুদ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করে। সত্যপথে অবিচল থাকতে পথ দেখায়। আল্লাহর নৈকট্যলাভে সহযোগিতা করে। তা ছাড়া যারা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, আল্লাহ তাদের তাঁর প্রিয় বান্দা বলেছেন। পাশাপাশি তাদের নেকি ও ঈমানদারির সাক্ষ্যও দিয়েছেন।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, "আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।"( সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৪)। পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে, "নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কোরআন পাঠ বা জিকির খুবই যথার্থ" (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত - ৬)।
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে এসেছে," ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সুন্নত ও নফল সব নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সবচেয়ে বেশি।" মিশকাত।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আমাদের প্রভু প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন; যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। এরপর তিনি বলতে থাকেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।" মুসলিম, মিশকাত।
বৈবাহিক জীবনেও এ নামাজের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে, যে ফজিলত আল্লাহ স্বামী ও স্ত্রীকে দান করবে, যদি তারা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ে একজন অন্যজনকে সহযোগিতা করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন।প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই দুই রাকাত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যেকোনো সূরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।তাই প্রতি বার ২ রাকাত ২ রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়াই ভালো।সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজও আদায় করা যায়। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম। তাও সম্ভব না হলে নূন্যতম ৪ রাকাত আদায় করলেও হয়।তবে তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো কাজা নেই এবং তা আদায় না করলে কোন গুনাহ নেই তবে পড়া উত্তম।মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।
আসুন, আমরা তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করি, মনকে পবিত্র করি, আল্লাহর প্রিয় বান্দা হই। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার তওফিক দান করুন। আমিন।
চলবে -
============================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
ঈমান ও আমল - ২ Click This Link
("শুক্রবার - পবিত্র জুমা"- মুসলমানদের জন্য এক মর্যাদা ও ফজিলত পূর্ণ দিন এবং জুমার দিনের কতিপয় আমল)।
ঈমান ও আমল - ১ Click This Link
(যেসব আমলে মানুষের অভাব দূর হয় ও জীবন সুখের হয়)।