ছবি - samakal.com
মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন ফেরেশতা হযরত জীবরাঈল (আঃ) এর কর্তৃক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মাধ্যমে পবিত্র হেরা গুহায় কুরআন শরীফ নাযিল করেছিলেন। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থের নাম আল কোরআন।আল কোরআন স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত এক কিতাব, যেখানে মানবজাতীর জন্য রয়েছে সংবিধান ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ বানী মানব জাতীর হেদায়েত স্বরুপ এবং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুর দিকনির্দেশনা আল কোরআনে রয়েছে।
আমদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ঊপর ফেরেশতা জীবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে ধাপে-ধাপে ,খণ্ডে-খণ্ডে দীর্ঘ ২৩ বছরে পরিপূর্ণতা পায় কোরআন।প্রথম আয়াত নাজিল হওয়ার পরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে এর আকর্ষণী ক্ষমতা। অশিক্ষিত বা জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষগুলো পায় আলোর সন্ধান। সেই আলোয় বদলাতে শুরু করে মানুষ এবং তখনকার সমাজ এবং প্রথম আয়াত নাজিল হওয়ার ৫০ বছরের মধ্যে কোরআনের অনুসারীরা তদানীন্তন পরাশক্তি রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যকে নিশ্চিহ্ন করে পরিণত হয় তখনকার একমাত্র পরাশক্তিতে।
ছবি - shadow.com.bd
মানুষের এক জীবনে যা দরকার, তার সবই সাজানো রয়েছে কোরআনের পরতে পরতে। সুস্থ সুন্দর সুখী পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে যা প্রয়োজন, আলকোরআনের পাতায় পাতায় রয়েছে তারই দিক-নির্দেশনা।
সবকিছু মিলিয়েই জীবন। তাই সমস্যা শরীরের হোক বা মনের, যৌন জীবনের জট হোক বা অর্থনৈতিক জটিলতা, পণ্যের আসক্তি হোক বা প্রবৃত্তির দাসত্ব, ব্যক্তির অসততা হোক বা সামাজিক অবিচার, পার্থিব সুখ হোক অথবা পরকালীন পরিত্রাণ, সব একই সূত্রে গাঁথা। আর এ সব কিছুকে একটাকে আরেকটা থেকে আলাদা করা যায় না। কোরআন এই চিরায়ত সত্যকেই প্রকাশ করেছে সুস্পষ্টভাবে।
"পড়ো! তোমার সৃষ্টিকর্তা প্রভুর নামে। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পড়ো!আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। আর শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না"।( সূরা আলাক,আয়াত - ১-৫) এই আয়াত দিয়েই কোরআন নাজিলের সূচনা।
শুরুতেই কোরআন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে পড়তে ও জানতে। কোরআন অজ্ঞতাকে অভিহিত করেছে মহাপাপ রূপে। মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে জ্ঞানের পথে, মুক্তবুদ্ধির পথে। এমনকি বিশ্বাসের স্তরে পৌঁছার জন্যেও মানুষের সহজাত বিচারবুদ্ধির প্রয়োগকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে কোরআন। বৈষয়িক ও আত্মিক জীবনকেও একই সূত্রে গেঁথেছে কোরআন। সুস্পষ্টভাবেই বলেছে, আল্লাহর বিধান অনুসরণ করো। দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি সম্মানিত হবে।
ছবি - sangbadchorcha.com
কোরআনের প্রথম আয়াত নাজিলের পর ২৩ তম বছরে নাজিল হওয়া সূরা বাকারার আয়াত - ২৮১ আল্লাহ বলেছেন, "তোমরা সেই দিন সম্পর্কে সচেতন হও, যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে আনা হবে এবং তারপর প্রত্যেককেই তার কর্মফল পুরোপুরি প্রদান করা হবে। কারো ওপর কোনো অন্যায় করা হবে না"।প্রথম আয়াতে যেভাবে মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার নিরহংকার অবস্থার বিবরণ দেয়া হয়েছে, শেষ দিকের আয়াতেও একইভাবে বলা হয়েছে, কর্মের স্বাধীনতা দেয়া হলেও মানুষ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। তার কর্মের যথাযথ ফল সে পাবে।
কোরআন নিঃসন্দেহে আল্লাহর কালাম। নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়। এর শব্দবিন্যাস, এর ছন্দ, এর সৌন্দর্য, এর ব্যঞ্জনা, এর অন্তর্নিহিত শক্তি, এর গভীরতা অতুলনীয়। তাই আজ পর্যন্ত এর একটি ছোট্ট সূরার সমকক্ষ সূরা কেউ রচনা করতে পারে নি। কোরআন যেহেতু আল্লাহ সরাসরি আরবি ভাষায় নাজিল করেছেন, তাই অন্য কোনো ভাষায় এর মহিমাকে অক্ষুণ্ন রেখে অনুবাদ করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে আন্তরিকতা নিয়ে এর মর্মবাণী অনুধাবন করতে চাইলে যে-কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষেই তা সম্ভব। কারণ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের হেদায়েতের জন্যেই কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহতে সমর্পিত একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আত্মনিমগ্ন হয়ে ধ্যানের স্তরে তাঁর কালামের মর্মবাণী উপলব্ধি করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়।
ছবি - alokitoislam360.blogspot.com
কোরআন শতাব্দীর পর শতাব্দী জীবন ও জগৎ সম্পর্কে কোটি কোটি মানুষের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে, বদলে দিয়েছে তাদের ভেতর থেকে, খুলে দিয়েছে তাদের সম্ভাবনার দ্বার, দিয়েছে প্রশান্ত ও পরিতৃপ্ত জীবন। তাই আল্লাহর কালামের মর্মবাণীতে আন্তরিকভাবে নিমগ্ন হলে, বার বার পড়লে, বুঝার চেষ্টা করলে বাক্যের গভীরে,কোরআনই কথা বলবে আমাদের সাথে এবং আমি- আপনিও বদলাতে শুরু করব ভেতর থেকে। ধর্মের মানবিকতার জ্ঞানে জ্ঞানী এক আলোকিত মানুষ হব আমরা । প্রথম যুগের কোরআন অনুসারীদের মতো আমরাও দুনিয়ায় সফল ও সম্মানিত হবো। আর আখেরাতের সম্মান তো শুধু স্রষ্টায় সমর্পিত সৎকর্মশীল মানুষদের জন্যেই। পরম করুণাময়ের করুণায় তারাই থাকবেন অনন্ত আনন্দলোকে।
পবিত্র কোরআনে মানব জীবনের সব দিকনির্দেশনার বর্ণনার পাশাপাশি মানবজাতীর প্রতি উপদেশ স্বরুপ বেশ কিছু আয়াত আছে।আসুন আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানি -
আল কোরআনের উপদেশাবলী
১। প্রত্যেক জীবিত বস্তুই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে ।
"প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়"। (সূরা আল ইমরান ,আয়াত ১৮৫) ।
২।আল্লাহর অনুগ্রহ রোধ করার কেউ নেই ।
"আল্লাহ মানুষের জন্য অনুগ্রহের মধ্য থেকে যা খুলে দেন, তা ফেরাবার কেউ নেই এবং তিনি যা ফিরিয়ে নেন, তা তিনি ব্যতিত কেউ খুলে দিতে পারে না। তিনি মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়"।(সুরা ফাতির, আয়াত - ২)।
৩।আল্লাহর অনুগ্রহ স্বীকার করো।
"হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া কি কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদেরকে আসমানসমূহ ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? "(সুরা ফাতির, আয়াত - ৩)।
ছবি - shadow.com.bd
৪।নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের শত্রু ।
"নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; কাজেই তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ কর। সে তো তার দলবলকে ডাকে শুধু এজন্যে যে, তারা যেন প্রজ্জলিত আগুনের অধিবাসী হয়"।(সুরা ফাতির, আয়াত - ৬)।
৫। আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য।
"বলো, তিনিই আল্লাহ, একক ও অদ্বিতীয়।আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তার মুখাপেক্ষী। তার কোন সন্তান-সন্ততি নেই, আর তিনিও কারো সন্তান নন এবং তার সমতুল্য কেউই নেই"।(সুরা ইখলাস,আয়াত - ১-৪)।
=========================================
চলবে -
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:৪৭