ছবি - shadow.com.bd
পৃথিবী নামক এই গ্রহে মানুষের মুক্তি ও কল্যানের জন্য আল্লাহ তায়ালা একটি গ্রন্থ নাজিল করেছেন। তিনি এ গ্রন্থটির নাম রেখেছেন- "আল-কোরআন"।আল্লাহ তাআলা মানুষের হিদায়াত বা পথনির্দেশনার জন্য যুগে যুগে কিতাব নাজিল করেছেন। মানবসভ্যতার উন্নতিতে আসমানি কিতাবের ভূমিকা অনন্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রধান ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ নবী ও রাসুলদের (সাঃ) কাছে পাঠানো বাণী হলো আসমানি কিতাব।
পবিত্র কোরআন ছাড়াও যুগে যুগে পৃথিবীর বুকে আরো একশ তিনটি আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন আল্লাহতায়ালা। এগুলোর মধ্যে ৪টি কিতাব অর্থাৎ বড় গ্রন্থ ।বড় চারটি কিতাব হলো তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কোরআন।এই চার বড় গ্রন্থ নাজিল হয়েছে বিশিষ্ট চারজন নবী ও রাসুলের প্রতি। যেমন -
১। তাওরাত হজরত মুসা (আঃ) এর প্রতি ইবরানি বা হিব্রু ভাষায়।
২। জাবুর হজরত দাউদ (আঃ) এর প্রতি ইউনানি বা আরমাইক ভাষায়।
৩। ইঞ্জিল হজরত ঈসা (আঃ) এর প্রতি সুরিয়ানি ভাষায় ।
৪। কোরআন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়।
এরমধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী গ্রন্থ হলো আল কোরআন।
আল কোরআন স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত এক কিতাব, যেখানে মানবজাতীর জন্য রয়েছে সংবিধান ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ বানী মানবজাতীর হেদায়েত স্বরুপ এবং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুর দিকনির্দেশনা আল কোরআনে রয়েছে।মানুষের এক জীবনে যা দরকার, তার সবই সাজানো রয়েছে কোরআনের পরতে পরতে। সুস্থ সুন্দর সুখী পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে যা প্রয়োজন, আল কোরআনের পাতায় পাতায় রয়েছে তারই দিক-নির্দেশনা।
ছবি - sangbadchorcha.com
পবিত্র কোরআনে মানব জীবনের সব দিকনির্দেশনার বর্ণনার পাশাপাশি মানবজাতীর প্রতি উপদেশ স্বরুপ বেশ কিছু আয়াত আছে।আসুন আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানি -
১। অঙ্গীকার পূরণ কর এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কোরো না।
"হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ন কর। তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, যা তোমাদের কাছে বিবৃত হবে তা ব্যতীত। কিন্তু এহরাম বাধাঁ অবস্থায় শিকারকে হালাল মনে করো না! নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা যা ইচ্ছা করেন, নির্দেশ দেন"।(সুরা মায়েদা - আয়াত - ১)
"পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোই সৎকর্ম নয়, কিন্তু সৎকর্ম হলো যে ব্যক্তি আল্লাহ্, শেষ দিবস, ফেরেশ্তাগণ, কিতাবসমূহ ও নবীগণের প্রতি ঈমান আনবে। আর সম্পদ দান করবে তার ভালবাসায় আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করবে । অর্থ-সংকটে, দুঃখ-কষ্টে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করবে। তারাই সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী"। (সুরা বাকারা - আয়াত - ১৭৭) ।
২। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভোগ করবে না।
"আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ করো না"।(সুরা বাকারা - আয়াত - ১৮৮) ।
৩। সীমা লঙ্ঘন করোনা,যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে শুধু তাদের সংগে লড়াই করো।
"আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ,তোমরাও আল্লাহ্র পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর কিন্তু সীমালংঘন করো না । নিশ্চয় আল্লাহ্ সীমালংঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না"। (সুরা বাকারা - আয়াত - ১৯০)।
৪।লড়াইয়ে বিধি মেনে চলো ।
"আর তাদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে এবং যে স্থান থেকে তারা তোমাদেরকে বহিষ্কার করেছে তোমরাও সে স্থান থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করবে। আর ফেত্না হত্যার চেয়েও গুরুতর । আর মসজিদুল হারামের কাছে তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে না যে পর্যন্ত না তারা সেখানে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। অতঃপর যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তবে তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে, এটাই কাফেরদের পরিণাম"।(সুরা বাকারা - আয়াত - ১৯১)।
৫।এতিমদের / অনাথদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করো।
"দুনিয়া ও আখেরাতের ব্যাপারে। আর লোকেরা আপনাকে ইয়াতীমদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে; বলুন, ‘তাদের জন্য সুব্যাবস্থা করা উত্তম’। তোমরা যদি তাদের সাথে একত্রে থাক তবে তারা তো তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ জানেন কে উপকারকারী এবং কে অনিষ্টকারী । আর আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে এ বিষয়ে তোমাদেরকে অবশ্যই কষ্টে ফেলতে পারতেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ প্রবল পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়"।(সুরা বাকারা - আয়াত - ২২০) ।
ছবি - samakal.com
কোরআন হলো কালামুল্লাহ । কালাম অর্থ শব্দ, বাক্য, কথা। কালামুল্লাহ হলো আল্লাহর বাণী। কোরআন পাঠ করা মানে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা। কিতাব অর্থ লিপি বা লেখা,গ্রন্থ বা গ্রন্থিত বই। রিসালাত অর্থ চিঠি, পত্রপত্রিকা, পুস্তিকা বা ছোট বই। সহিফা অর্থ পাতা, পৃষ্ঠা, মুদ্রিত বা খোদাইকৃত। কোরআন অর্থ পাঠ, পঠিত, পাঠযোগ্য ও যা বারবার পাঠ করা হয় এবং যা আল্লাহর নিকটে নিয়ে যায়। কোরআন স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যম ।
কোরআন সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ এবং হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালের মুক্তির জন্য কোরআনের দর্শন ও নির্দেশনা এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুপম আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণ করতে হবে। কিতাব অনুসরণের জন্য চাই নিঃশর্ত বিশ্বাস। হিদায়াত লাভের শর্ত হলো তাকওয়াবান বা মুত্তাকি হওয়া। মুত্তাকি হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে যে পাঁচটি বিষয় মানতে হবে তার অন্যতম হলো কিতাবে বিশ্বাস স্থাপন করা। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, " আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে , আর যারা আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী" ।(সুরা বাকারা, আয়াত - ৪)।
আমরা কেন মেনে চলব ,বিশ্বাস করব কোরআন আল্লাহর কালাম? আল কোরআনকে আমরা বিশ্বাস করবো,কারন - কোরআন সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে। আর তাইতো আল্লাহ পাক আল কোরআনে ইরশাদ করেন, "এই কিতাব বিশ্ব পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই "।(সুরা সাজদা, আয়াত - ২)।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে আল কোরআন জানার-বুঝার এবং আল কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার তওফিক দান করুন
চলবে -
===============================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ২ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ১ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৪৭