somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" ডারউইনের বিবর্তনবাদ " - কৌতুহল ও ফিরে দেখা - ২ । মানুষ কি এপ-প্রাইমেট (বানর) থেকে এসেছে বা পৃথিবীতে মানুষের শুরু কিভাবে হয়েছে? এ ব্যাপারে ধর্ম ও বিজ্ঞানেরই বা কি মত ?

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গ এবং যাদের কিছু মন্তব্যের সূত্র ধরে এই পোস্ট লেখার ইচছা - ব্লগার সাসুম ভাই ও ব্লগার এ আর ১৫ ভাই কে ।

প্রথম পর্বের লিংক - Click This Link


ছবি - ডারউইন ও তার বিবর্তনবাদের তত্ত্ব নিয়ে ফরাসী একটি ম্যাগাজিনে কার্টুন।

প্রথম পর্বের পর -

১৬২ বছর (১৮৫৯ - ২০২১) আগে যখন চার্লস ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে বলেছিলেন, তখনকার সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এর পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র তর্ক-বিতর্ক করেছিলেন এবং করছেন। খোদ চার্লস ডারউইনকেও তার বিবর্তনবাদের তত্ত্বকে নিয়ে কথা বলার জন্য নানা ভাবে ও নানা জায়গায় বিপদে পড়তে হয়েছিল, তাঁকে নিয়ে বানরের আদলে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকা হয়েছিল। আরও শুনতে হয়েছিল তার দাদা এবং দাদীর মধ্যে কে বানর ছিলেন?

তবে সময়ের সাথে সাথে এবং ধীরে ধীরে জীবাশ্মবিদ্যা, জেনেটিক্স, প্রাণীবিদ্যা, আণবিক জীববিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রের ব্যাপক প্রমাণ ধীরে ধীরে যুক্তিসঙ্গত ভাবে বিবর্তনের ধারনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজ বিবর্তনের সেই ধারনা বিজ্ঞানের প্রায় সর্বত্র জয়লাভ করেছে তবে একমাত্র সাধারন মানুষ তথা জনসাধারণের মন ছাড়া। এটা ঠিক যে,একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এবং বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ উৎকর্ষতার মাঝেও বিশ্বের সবচেয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে উন্নত জাতির মধ্যেও এ বিশ্বাস প্রবল যে সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং এখনও সকল সাধারন মানুষ ,এলিট, রাজনীতিবিদ, বিচারক তথা প্রায় সকল নাগরিকরা এটা বিশ্বাস করেন যে ,বিবর্তন একটি ত্রুটিপূর্ণ ধারনা এবং দুর্বলভাবে সমর্থিত কিছু মানুষের কল্পনা। এখনো বিজ্ঞানের ক্লাসরুমেও সচেতনভাবে বিবর্তনের বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া হয়।কারন,এটা একটা বিতর্কিত এবং অপ্রমাণীত বিষয়।

সাধারন মানুষের নিকট বিবর্তন তত্ত্বের বিরোধিতা একটি ধর্মীয় বিশ্বাসগত বিষয় অথবা বৈজ্ঞানিক অবস্থান, যাতে মানুষের উদ্ভবের ও বিকাশের বিবর্তন তত্ত্ব কে অস্বীকার করে। বিবর্তনবাদের ধারণা ঊনিশ শতকে দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর বিজ্ঞানী, ধর্মতত্ববিদ এবং সাধারণ মানুষ স্ব স্ব দৃষ্টিকোণ থেকে এ তত্ত্বের বিরোধিতা শুরু করে। অধিকাংশ মানুষ পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবকে ঈশ্বরের সিদ্ধান্ত ও অবদান বলে বিশ্বাস করে। এ বিশ্বাস দুনিয়ায় প্রচলিত সকল ধর্মগ্রন্থে সমর্থিত। বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের উদ্ভবের তত্ত্ব সাধারন মানুষের সাথে সাথে বৈজ্ঞানিকদের ও প্রবল বিরোধিতারও সম্মুখীন হয় কারণ বিবর্তনবাদের বয়ান যৌক্তিক প্রতীয়মান হলেও এ মতবাদ প্রমাণ করা কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না।

বিবর্তবাদের সমালোচনাকারীরা বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে শুধুমাত্র একটি থিওরী বা তত্ত্ব (বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হলো পর্যবেক্ষণ এবং বাস্তব বিষয়ের ফ্রেমওয়ার্ক। তত্ত্ব বদলে যেতে পারে বা যে পদ্ধতিতে তা ব্যাখ্যা করে তাও বদলে যেতে পারে।প্রতিটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব শুরু হয় একটি অনুমান হিসেবে। বর্তমান গ্রহণযোগ্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না এমন অব্যাখ্যাত ঘটনার প্রস্তাবিত সমাধানকে বলা হয় সায়েন্টিফিক হাইপোথিসিস বা বৈজ্ঞানকি অনুমান। অর্থাৎ অনুমান হলো এমন একটি ধারণা যা এখনো প্রমাণিত হয়নি। যদি কোনো অনুমানের স্বপক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগৃহীত হয় তাহলেই তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির পরের স্তরে প্রবেশ করে- বৈজ্ঞানিক থিওরি তা তত্ত্বে পরিণত হয়।) বলে দাবী করেন এবং তারা জোর দেন যে,এ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব কখনোই বাস্তবে সম্ভব নয়। এই তত্ত্ব বিভ্রান্তিকর এবং এটি কোনো প্রমাণ স্বাপেক্ষ না। তাই বিবর্তনবাদ ফ্যাক্ট নয়, শুধুই তত্ত্ব।

আবার বিবর্তনবাদ নিয়ে সৃজনবাদীদের (সৃষ্টিবাদ বা সৃজনবাদ বা সৃষ্টিতত্ত্ব হল, ধর্মগ্রন্থের বিবরণ অনুযায়ী জীবন ও বিশ্বজগত সৃষ্টির ইতিহাসের উপর বিশ্বাস) একটা বক্তব্য হল, এটা বিতর্কিত (যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এমন,আলোচিত-অনুমিত-সন্দিগ্ধ বা সন্দেহজনক ) বিষয়।তারা বলতে শুরু করল, বিবর্তনবাদ যদিও বিতর্কিত তারপরেও তোমরা এটা শিখাও, তবে এই ব্যবস্থা করো যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছেমত বিবর্তনবাদ আর সৃজনবাদের মধ্যে বিষয় নির্বাচন করতে পারে।নব্য সৃজনবাদীদের বিবর্তন নিয়ে একটা প্রচলিত অভিযোগ হচ্ছে, "বিবর্তন বিজ্ঞানের ধারা অনুসরণ করে না,তাই এটি খাটি বিজ্ঞান নয় এবং একে বিজ্ঞানের শ্রেণিতে পাঠদান করা উচিত নয়"।

১৯৭৬ সালে দার্শনিক কার্ল পোপার বলেছিলেন "ডারউইনিজম কোনো পরীক্ষণীয় বৈজ্ঞানিক মতবাদ নয়, বরং আধ্যাত্মিক গবেষণার বিষয়।" পরবর্তীতে তিনি তার চিন্তাধারা পরিবর্তন করে বলেন," ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের এই মতবাদ পরীক্ষা করা কঠিন" যেভাবে উচ্চতর বিজ্ঞানের অনেক বিষয় পরীক্ষা করা যায় না।

একটা সময় পুর্বের তুলনায় বিবর্তনের বিরোধিতা আরো বেশি বেড়ে যায়। দাবী করা হয় বিবর্তন শুধু অবৈজ্ঞানিকই নয় অকল্পনীয় এবং এটা অসম্ভব। কারণ এটা প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক এবং এটা পৃথিবীতে বিদ্যমান জীববৈচিত্র্য তৈরী করতে পারবে না।বেঁচে থাকা প্রতিটা জীবন্ত যা কিছুর দিকেই দেখা হোক না কেন,তার রয়েছে আশ্চর্যজনক জটিলতা। এই জটিলতা তার শারীরিক বিন্যাসে, কোষীয় পর্যায়ে এবং এমনকি আণবিক পর্যায়েও দেখা যায়। এই জটিলতা যদি একটুও কম বা বেশী হত অথবা প্রাণে একটু এদিক সেদিক হত, তবে তা কখনোই কাজ করত না। এ থেকে একটাই সিদ্ধান্তে আসা যায়,"আর তা হলো এগুলো কোনো বুদ্ধিমান সত্তাই সৃষ্টি করেছে, বিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নি"।

এবার আসুন আমরা দেখি বিবর্তনবাদের প্রকৃত ঘটনা (FACT) সমুহ -

আমরা যদি বিজ্ঞানের সংজ্ঞার দিকে তাকাই তা হলে দেখব - বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। বিজ্ঞান শব্দটি ইংরেজি 'Science' শব্দের বাংলা অনুবাদ। Science শব্দটি আবার এসেছে ল্যাটিন শব্দ 'Scientia' থেকে, যার অর্থ জ্ঞান। বাংলায় বিজ্ঞান শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় বি+জ্ঞান, যার অর্থ দাঁড়ায় বিশেষ জ্ঞান। অর্থাৎ কোন বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান কে বলা হয় বিজ্ঞান। এখানে একটি প্রশ্ন যে এই "বিশেষ জ্ঞান" কি ? আসলে এই "বিশেষ জ্ঞান" ই হল কোন ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞান

অতএব, আমরা (মানুষ / বিজ্ঞানীরা) শুধুমাত্র যখন কোন বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা বা পরীক্ষা করে এবং সেই গবেষণা বা পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করে নিয়মতান্ত্রিক বা সুশৃঙ্খল জ্ঞান (ফলাফল) লাভ করে তখনই তাকে বিজ্ঞান বলে।আর তাই বিজ্ঞানের সংজ্ঞার আলোকেই বলা চলে -

বিবর্তনবাদ শুধুমাত্র একটি তত্ত্ব। এটি কোন প্রতিষ্ঠিত সত্য বা বৈজ্ঞানিক আইন নয় বা বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষিত কোন বিষয় নয়।

* ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (NAS) এর মতে, একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হল, "প্রাকৃতিক বিশ্বের কিছু দিকের একটি ভাল-প্রমাণিত ব্যাখ্যা যা সত্য, আইন, অনুমান এবং পরীক্ষিত অনুমানকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।" কোন বৈধতা একটি তত্ত্বকে একটি আইনে পরিবর্তন করে না, যা প্রকৃতি সম্পর্কে বর্ণনামূলক সাধারণীকরণ। সুতরাং বিজ্ঞানীরা যখন বিবর্তন তত্ত্ব বা পারমাণবিক তত্ত্ব বা আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা আলবার্ট আইনস্টাইন চিরায়ত বলবিদ্যা অনুযায়ী স্থান,কাল এবং ভরকে পরম বলে ধরা হয়। কিন্তু আলবার্ট আইনস্টাইন সর্বপ্রথম দাবী করেন যে পরমস্থান, পরমকাল এবং পরমভর বলতে কিছুই নেই। স্থান,কাল এবং ভর তিনটিকেই আপেক্ষিক ধরে তিনি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রস্তাব করেন । এর দুইটি রূপ আছে: বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ) সম্পর্কে কথা বলেন, তখন তারা এর সত্যতা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন না। বিবর্তনের তত্ত্ব ছাড়াও, পরিবর্তনের সাথে বংশোদ্ভূত ধারণা, বিবর্তনের বাস্তবতার কথাও বলা যেতে পারে। NAS একটি সত্যকে সংজ্ঞায়িত করে "একটি পর্যবেক্ষণ যা বারবার নিশ্চিত করা হয়েছে এবং সমস্ত ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে বিবর্তন 'সত্য' হিসাবে গৃহীত হয়েছে।" জীবাশ্ম রেকর্ড এবং প্রচুর অন্যান্য প্রমাণ সাক্ষ্য দেয় যে জীবগুলি সময়ের সাথে বিকশিত হয়েছে। যদিও কেউ সেই রূপান্তরগুলি পর্যবেক্ষণ করেনি।

** সমস্ত বিজ্ঞানই প্রায় পরোক্ষ প্রমাণের উপর নির্ভর করে। পদার্থ বিজ্ঞানীরা সরাসরি উপ-পারমাণবিক (পারমাণবিক তত্ত্ব বা পরমাণুবাদ হচ্ছে পদার্থের ধর্ম সম্পর্কিত একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা ) কণা দেখতে পান না।উদাহরণস্বরূপ, তারা তাদের অস্তিত্ব যাচাই করে ট্র্যাকগুলি দেখে যে কণাগুলি ক্লাউড চেম্বারে চলে যায়। সরাসরি পর্যবেক্ষণের অনুপস্থিতি পদার্থ বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্তকে কম নিশ্চিত করে না বা এমন প্রমাণ হয়না যে পদার্থ বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার ভূল।


বিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুসারে -

** বিবর্তনবিদ্যা অবৈজ্ঞানিক কারণ এটি পরীক্ষাযোগ্য বা মিথ্যা প্রতিপাদনযোগ্য নয়। এটি এমন ঘটনাবলি সম্পর্কে দাবি করে যা কখনও,কোথাও বা পরীক্ষাগারে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি এবং যা কখনও পুনরায় তৈরি করা যাবে না এবং কেউ কখনো চাক্ষুস এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেনি।ক্রমবর্ধমানভাবে, বিজ্ঞানীরা বিবর্তনের সত্যকে সন্দেহ করে। এমনকি যারা বিবর্তন সমর্থন করেন সেইসব জীববিজ্ঞানীদের নিজেদের মধ্যে বিতর্ক থেকেও বোঝা যায় যে, বিবর্তনবাদ আসলে ভুল, ডারউইনের তত্ত্বের কোন ভিত্তি নেই।তাছাড়া বিবর্তনবাদে কখনো বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না।আবার বিবর্তন তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রকে লংঘন করে এবং সর্বোপরী বেশিরভাগ লোক বিবর্তনে বিশ্বাস করে না।

বিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ

১। আজ পর্যন্ত বিবর্তনের পক্ষে কোন সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
২। বিবর্তনের পক্ষে সাক্ষ্য হিসেবে যে নিষ্ক্রিয় অংগগুলোর (নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বা Vestigial organs হল প্রচলিত ধারণায় সেসব অঙ্গ যেগুলো একসময় পূর্বপুরুষের দেহে সুগঠিত ও কার্যক্ষম ছিল, কিন্তু পরবর্তী বংশধরের দেহে গুরুত্বহীন, অগঠিত এবং অকার্যকর অবস্থায় রয়ে গেছে) কথা বলা হয় সেগুলো নিষ্ক্রিয় নয়, অতি সূক্ষ্ম কোন জৈবনিক কর্মকান্ড তারা করে থাকে যা এখনও বিজ্ঞানীরা বের করতে পারে নি। আবার মানবদেহে কোন নিষ্ক্রিয় অঙ্গের অস্তিত্ব নেই।
৩। প্রকৃতি জগতের কোথাও কোন অর্ধ বিকশিত বা অসম্পূর্ণ জীব দেখা যায় না । যাদের দেখা যায় তারা প্রত্যেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং পূর্ণ বিকশিত। কোন জীবেরই অর্ধবিকশিত বা ত্রুটিপূর্ণ কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখা যায় না।
৪। চার্লস ডারউইন চোখের বিবর্তন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন।আবার চোখের মত জটিল অঙ্গ বিবর্তনের মাধ্যমে কোন ভাবেই তৈরি হতে পারে না।
৫। নতুন কোন প্রজাতির উৎপত্তি পর্যবেক্ষিত (কোন ভাবেই এবং কোথাও হয়েছে এমন প্রমান নেই) হয়নি এবং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিবর্তন তত্ত্বের কোন ব্যবহারিক প্রয়োগ নেই।


ছবি - kmhb.wordpress.com

প্রাকৃতিক নির্বাচন, পরিব্যক্তি, প্রকারণ ও অন্যান্য FACT সমুহ -

১। বিবর্তনবিদ্যা অনুসারে,উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার জন্য জিরাফ যদি তার গলা লম্বা করে নিতে পারে, তবে আমরা কেনো উড়ার জন্য আমাদের ঘাঁড়ে দুইটা পাখা গজিয়ে নিতে পারি না?
২। প্রাকৃতিক নির্বাচন মাইক্রোবিবর্তন (মাইক্রো বিবর্তন একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একই প্রজাতির জনসংখ্যার মধ্যে দৃশ্যমান পরিবর্তন বোঝায়) ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু নতুন প্রজাতি এবং উঁচু শ্রেণীর প্রাণীর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে পারে না।
৩। প্রাকৃতিক নির্বাচন চক্রাকার যুক্তির উপর স্থাপিত। যারা বেঁচে থাকে তারা যোগ্যতম, আবার যোগ্যতমরাই বেঁচে থাকে।
৪। বেশিরভাগ পরিব্যক্তি বা মিউটেশনই ক্ষতিকর।
৫। বিবর্তন-প্রক্রিয়ার ফলে সকল প্রাণীকূল প্রতিনিয়তই উন্নত হচ্ছে।
৬। সাগর বা হ্রদের পানির নীচের মাছগুলো অত অপরূপ রঙীন হতে গেল কেন?
৭। মাইক্রোবিবর্তন এবং ম্যাক্রোবিবর্তন (ম্যাক্রো বিবর্তন বর্ণনা করে যে কিভাবে সরীসৃপ পাখি এবং নিম্ন প্রাইমেটদের মধ্যে উচ্চতর এবং পরে অবশেষে মানুষ হয়েছে ) সম্পূর্ণ আলাদা।


ছবি - wikipedia.org/wiki/Fossil

জীবাশ্মবিদ্যা ও ভুতত্ত্ববিদ্যার FACT সমুহ -

১। দু’চারটা আংশিক ফসিল (জীবাশ্ম বা Fossil বলতে প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয়েছে এমন ধরনের বস্তুকে বোঝায়।) বা পুরনো হাড়গোড় পেয়েই বিজ্ঞানীরা বিবর্তনের স্বপক্ষে বড় বড় সিদ্ধান্ত টেনে ফেলেন।আর সেগুলি যদি সত্যিই হবে তবে বা বিবর্তন যদি সঠিকই হবে তাহলে ফসিল রেকর্ডে এত গ্যাপ রয়েছে কেন?
২। বিবর্তনবাদীরা অর্ধেক সরীসৃপ অর্ধেক পাখি - এরকম কোন মধ্যবর্তী জীবাশ্ম দেখাতে পারে না।অথচ তাদের যুক্তি অনুসারেই এক প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে অন্য প্রাণী তৈরী হয়েছে।আর তা যদি আসলেই সত্যি হত তাহলে এরকম মধ্যবর্তী কোন প্রাণীর জীবাশ্ম অবশ্যই পাওয়া যেত।
৩। তেজস্ক্রিয় ডেটিং (তেজস্ক্রিয় অঙ্গার দ্বারা বয়স নির্ণয় (রেডিওকার্বন ডেটিং) অথবা সাধারণ ভাবে কার্বন ডেটিং হল তেজস্ক্রিয়মিতি দ্বারা বয়স নির্ণয়ের একটি প্রণালী ) দিয়ে কীভাবে ফসিলের সঠিক বয়স নির্ধারণ করা যায়?


ছবিঃ মানব বিবর্তনের ধারার আধুনিক ছবি (উৎস ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক)

মানব বিবর্তন বা মানুষের FACT সমুহ -

১। মানুষ যদি বানর (এপ-প্রাইমেট) থেকে এসে থাকে , তাহলে কেন এখনও বাকী বানরেরা এভাবে বানর হিসাবেই আছে এবং এখন কেন বানর থেকে পরিবর্তিত হয়ে মানুষ তৈরী হচছেনা ?
২। যদি বানর সদৃশ জীব থেকে একসময় মানুষের বিবর্তন ঘটে থাকে তাহলে তা এখনো ঘটার কথা বাস্তবে আমরা এমন কেনো ঘটনা ঘটতে দেখিনা কেন?
৩। আর্ডির সাম্প্রতিক ফসিল প্রমাণ করেছে যে বিবর্তনতত্ত্ব ভুল আবার বিজ্ঞানে মাইটোকণ্ড্রিয়াল ইভের অস্তিত্ব আবিস্কৃত হয়েছে ।এর ফলে এ ব্যাপারে বলা যায় - যদি মাইটোকণ্ড্রিয়াল ইভের অস্তিত্ব সত্যি হয় তবে ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আদম হাওয়ার কাহিনিও তাহলে সত্যি।

মানুষের যৌনতা, প্রবৃত্তি, নৈতিকতা ইত্যাদি FACT সমুহ -

১। বিবর্তন কোন ভাবেই মানুষের যৌনতা বা সেক্সের উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
২। বিবর্তন সমকামিতার অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
৩। বিবর্তন মানব-সমাজে নৈতিকতার উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
৪। বিবর্তনবাদ সামাজিক ডারউইনবাদ বা সোশাল ডারউইনিজম প্রমোট করে
৫। বিবর্তনবাদ ইউজেনিক্সের জন্ম দিয়েছে (অক্সফোর্ডের বিজ্ঞান অভিধান বলছে জেনেটিক্সের জ্ঞান খাটিয়ে কোন জনগোষ্ঠীকে “উন্নত” করার প্রক্রিয়াকেই ইউজেনিক্স বলে বা এটি এমন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং অনুশীলন, যাতে একজন মানুষ তার জন্য নির্বাচিত নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সঙ্গীর সাথে প্রজনন ঘটিয়ে একটি সুস্থ সবল ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করবে। এর মাধ্যমে মানবসমাজ থেকে তথাকথিত নানা রোগ, প্রতিবন্ধকতা, মানসিক সমস্যা, খারাপ বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি দূর করা যাবে)।
৬। বিবর্তন মানুষকে অজাচার (অজাচার হলো ঘনিষ্ঠ রক্তীয় সম্পর্ক আছে এমন আত্মীয়ের সঙ্গে যৌনকর্ম বা যৌনসঙ্গম। সাধারণত অজাচার তিনটি যৌনসম্পর্কে ইঙ্গিত করে। যথা - ১। কন্যার সঙ্গে পিতার ২। পুত্রের সঙ্গে মাতার ৩। বোনের সঙ্গে ভাইয়ের যৌনকর্ম বা যৌনসঙ্গম।) শিক্ষা দেয়

প্রাণের উৎপত্তি এবং অজৈবজনি (জীবনের উৎপত্তি বা Origin of life এবং অজৈবজনি Abiogenesis বলতে পৃথিবীপৃষ্ঠে নির্জীব পদার্থ থেকে কীভাবে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল, সে সম্পর্কিত গবেষণাকে বোঝায়) FACT সমুহ -

১।লুই পাস্তুর তার গবেষনায় প্রমাণ করেছিলেন যে, জড় থেকে কোন ভাবেই জীবের উদ্ভব হতে পারে না, শুধু জীব থেকেই জীবের উদ্ভব হয়।
২। সম্ভাবনার নিরিখে জড় থেকে প্রাণের উদ্ভব খুব বিরল ঘটনা।
৩। তর্কের খাতিরে, জড় পদার্থ থেকে প্রাথমিকভাবে জীবের উদ্ভব হলে তবে এখন তা হচ্ছে না কেন?
৪। বিবর্তন প্রাণের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে পারে না।
৫। অজৈবজনি ছাড়া বিবর্তন তত্ত্ব অচল।
৬। প্রথম কোষ কোন ভাবেই দৈব প্রক্রিয়ায় তৈরি হতে পারে না।
৭। এটার কোন ব্যাখ্যা বিবর্তনে নেই যে, পৃথিবীতে কেন কেবল কার্বন-ভিত্তিক প্রাণেরই উদ্ভব ঘটল, কেন সিলিকন-ভিত্তিক প্রাণ নয়?

সৃষ্টিবাদ, অনন্য (ইন্টেলিজেন্ট) ডিজাইন এবং আনুষঙ্গিক FACT সমুহ -

১। আদালতে বিবর্তন - কিটজ্মিলার বনাম ডোভার কেইস লিংক - https://blog.mukto-mona.com/2012/05/18/25744/

২। প্রখ্যাত ইসলামী গবেষক জাকির নায়েক তার বক্তৃতায় প্রমাণ করেছেন যে বিবর্তনবাদ ভুল ।( জাকির নায়েক ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে, বিবর্তন বিষয়ক তত্ত্ব হল একটি প্রস্তাব মাত্র, এবং এটি খুব বেশি অপ্রমাণিত একটি অনুমান।" তার মতে, বেশিরভাগ বিজ্ঞানী এটা সমর্থন করেন এই কারণে যে, এটা বাইবেলের বিরুদ্ধে যায়, এই কারণে নয় যে এটা সত্য"।জাকির নায়েক দাবি করেন যে, কুরআন বহু বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ভবিষৎবাণী করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালে তিনি বলেন যে, কুরআনের কিছু নির্দিষ্ট আয়াতে মাতৃগর্ভে নবজাতক-ভ্রুনের বৃদ্ধি ও ক্রমবিকাশের ধাপগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। জাকির নায়েক দাবি করেন যে, "ডারউইন যা বলেছিলেন তা শুধু একটি তত্ত্ব মাত্র"। এমন কোন বই নেই যা ‘বিবর্তন বিষয়কে ফ্যাক্ট’ বলে ।সকল বইই বলে বিবর্তন বিষয়ক তত্ত্ব। তিনি আরও বলেন, "পবিত্র কুরআনের এমন কোন কথা নেই, যা বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত মিথ্যা প্রমাণ করতে পেরেছে। প্রস্তাব এবং তত্ত্বসমূহ কুরআনের কুরআনের বিরুদ্ধে যায়। কুরআনে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক সত্যগুলোর মধ্যে এমন একটিও নেই, যা প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে গিয়েছে - সেটা হয়তো তত্ত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে থাকতে পারে।") ( Huffington Post (৭ জুলাই ২০১৬)। "10 Times Zakir Naik Proved That He Promoted Anything But Peace"। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৬। Attaullah, Munir. "View: The Muslim predicament II". Daily Times (Pakistan). 21 March 2007. Retrieved 21 July 2011. Quran and Modern Science – Conflict or Conciliation? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখে – Part Two – by Dr. Zakir Naik)

৩।ঘড়ি তৈরীতে যেমন কারিগর লাগে, তেমনি জটিল জীবজগত ও মহাবিশ্ব তৈরির পেছনেও কারিগর লাগবে।
৪। বিবর্তনবাদ অনুসারে, সরল অবস্থা থেকে এত জটিল জীবজগতের উদ্ভব ঘটা আর জাঙ্ক ইয়ার্ডে ফেলে রাখা জঞ্জাল থেকে এক ঘূর্নিঝড়ের মাধ্যমে এক বোয়িং বিমান তৈরি হয়ে যাওয়ার মতই অসম্ভব।
৫। কিছু জৈববৈজ্ঞানিক সিস্টেম অহ্রাসযোগ্য ও জটিল যা বিবর্তন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
৬। নূহের মহাপ্লাবনের পর কেমন করে নতুনভাবে জীব-বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হলো?
৭। মহাবিশ্বের সব কিছুই জীবনের জন্য সূক্ষ্ম-সুন্দর-সুনিপুণ ভাবে সমন্বিত। এই মহাবিশ্ব কিংবা আমদের জীবদেহ দেখলেই বোঝা যায় এগুলো কতটা নিখুঁতভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, এরা বিবর্তিত হয়নি।
৮। ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আর মানব মস্তিষ্ক স্রষ্টার নিখুঁত ডিজাইন, এর মধ্যে কোন ত্রুটি নেই।
৯। পদার্থের উৎপত্তি, শৃঙ্খলার সূচনা কিংবা মহাবিশ্বের উৎপত্তিকে পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞানের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায় না।
১০। সব কিছুর পেছনেই কারণ আছে এবং থাকে। মহাবিশ্বের উৎপত্তিরও একটি কারণ রয়েছে, আর সেই কারণটিই ঈশ্বর-স্রষ্টা -অদ্যৃশ্য কারিগর ।
১১। আল্লাহ-ঈশ্বর-স্রষ্টা -অদ্যৃশ্য কারিগর সব কিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন (মানব সৃষ্টির এ রহস্য সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে,"হে মানব মণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক সত্তা (আদম) হতে; আর তা হতে তৈরি করলেন তার জোড়া (হাওয়া) এবং এতদ্বয় হতে বিস্তৃত করলেন বহু পুরুষ ও নারী। (সূরা নিসা, আয়াত - ১)।তিনি আরো বলেন,"পবিত্র তিনি, যিনি সৃজন করেছেন সকল কিছু জোড়ায় জোড়ায় যা ভূমিতে উৎপন্ন হয় এবং তোমাদের নিজেদের মাঝেও আর তাতেও যা তোমরা জান না। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত - ৩৬)। আরো বলেন,"আর নিশ্চয় তিনি সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী"। (সূরা নাজম, আয়াত - ৪৫)। "হে মানবজাতি! নিশ্চয় আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে। (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩)। "আর আমি বানিয়েছি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় (পুরুষ ও নারী)। (সূরা নাবা, আয়াত: ৮)।

১২। বিবর্তন এবং নাস্তিকতা সমার্থক কারন এতে আল্লাহ-ঈশ্বর-স্রষ্টাকে অস্বীকার করা হয়।
১৩। পরম করুণাময় আল্লাহ-ঈশ্বর-স্রষ্টা-অদ্যৃশ্য কারিগরের নিখুঁত সৃষ্টিতে কোন ধরণের নিষ্ঠুরতা নেই এবং তার সব সৃষ্টি মানবিক (মানবীয় মর্যাদার বিভিন্ন দিক আছে। প্রথমত - যে আকার-আকৃতি ও সামঞ্জস্যপূর্ণ শারীরিক কাঠামো মহান আল্লাহ মানুষকে দান করেছেন, তা অন্য কোনো সৃষ্টবস্তুকে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত - যে জ্ঞান মানুষকে দেওয়া হয়েছে, যার দ্বারা তারা নিজেদের জীবন গতিশীল করার জন্য নিত্যনতুন বস্তু আবিষ্কার করেছে, অন্য কোনো সৃষ্টবস্তুকে তা দেওয়া হয়নি। তৃতীয়ত - মানুষকে আসমানি ওহি দেওয়া হয়েছে। এই জ্ঞান দিয়ে তারা কল্যাণ-অকল্যাণ, উপকারী-অপকারী ও ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম। চতুর্থত - মানুষকে একধরনের বিশেষ জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে সে আল্লাহর অন্য সৃষ্টবস্তু থেকে উপকৃত হতে ও বশে রাখতে সক্ষম। আল্লাহর কিছু সৃষ্টবস্তু এমন আছে, যেগুলোর শক্তিমত্তার কথা ভেবেও মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অথচ মহান আল্লাহ সেগুলোও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। যেমন—চাঁদ, সূর্য, বাতাস, পানি মানুষের বশে নেই, কিন্তু দিব্যি এগুলো মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত।)।
১৪। বিজ্ঞান ও ধর্ম সাংঘর্ষিক নয় বরং একে অপরের পরিপূরক।


আরও কিছু FACT

১। বিবর্তনের কোথাও এ ব্যাখ্যা নেই বা বিবর্তন ব্যাখ্যা করতেও পারে না যে, " কিভাবে পৃথিবীতে প্রথম জীবন-প্রাণ দেখা দিল"।
২। এটা অকল্পনীয় যে, প্রোটিনের মতো জটিল কিছু, জীবন্ত কোষ বা মানুষ ঘটনাক্রমে উদ্ভূত হতে পারে।
৩। থার্মোডাইনামিক্সের দ্বিতীয় আইন বলে যে সিস্টেমগুলি সময়ের সাথে আরও বিশৃঙ্খল হয়ে উঠতে হবে। অতএব জীবিত কোষগুলি নির্জীব রাসায়নিক থেকে বিবর্তিত হতে পারত না এবং বহুকোষী জীবন প্রোটোজোয়া থেকে বিবর্তিত হতে পারত না।
৪। বিবর্তন তত্ত্বের জন্য মিউটেশন অপরিহার্য, কিন্তু মিউটেশন শুধুমাত্র বৈশিষ্ট্য দূর করতে পারে। তারা নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে না।
৫। প্রাকৃতিক নির্বাচন মাইক্রো -বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু এটি নতুন প্রজাতির উৎপত্তি এবং জীবনের উচ্চতর আদেশ ব্যাখ্যা করতে পারে না।
৬।কেউ কখনও নতুন প্রজাতি বিবর্তিত (এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি তৈরী) হতে দেখেনি। যদি এটা সত্যি হত তাহলে এ দুনিয়াতে এবং কোন না কোন পর্যায়ে কেউ না কেউ বিবর্তিত প্রাণীকে দেখতে পেত।
৭। জীবজগতের যে সব জটিল বৈশিষ্ট্য আছে - শারীরবৃত্তীয়, সেলুলার এবং আণবিক স্তরে - যেগুলি কম জটিল বা অত্যাধুনিক হলে কাজ করতে পারে না। একমাত্র বিচক্ষণ উপসংহার হল যে এগুলি বুদ্ধিমান ডিজাইনের পণ্য, বিবর্তন নয়।
৮। সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলি প্রমাণ করে যে, এমনকি মাইক্রোস্কোপিক স্তরেও জীবনের জটিলতার এমন একটি গুণ রয়েছে যা বিবর্তনের মাধ্যমে আসতে পারে না বা কোন ভাবেই তা সম্ভব না।


সাধারনভাবে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব অনুসারে, মাঙ্কি থেকে আমরা বিবর্তিত না হলেও বানরজাতীয় সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আমাদের মানুষ প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে এটাই তাদের মূল কথা। সাধারণ পূর্বপুরুষ নাম দেয়া হোক আর যাই দেয়া হোক - তারা যে আসলে বানর সদৃশ জীবই ছিলো তাতে কোন সন্দেহ নেই, কারণ, আমরা সবাই সার্বিকভাবে প্রাইমেটদেরই গোত্রভুক্ত ।বিবর্তনবাদের কৈফিয়তদাতারা (সমর্থনকারীরা) খুব জোরালোভাবে আরো বলে থাকেন যে, কোন জীবিত এপ-প্রাইমেট (বানর) থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি। এটি প্রায় নির্বোধের মত কথা। এর অর্থ এই যে, মানুষ কোন প্রকার বানর বা এপ থেকে উদ্ভুত হয়নি, বরং একটি কমন পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়েছে। ব্যাপারটা ভুল নয়। কিন্তু তারপরেও বাস্তবতা হল - কেউ যদি আজ সেই ‘কমন পূর্বপুরুষ’কে দেখতে পেত তাহলে (দৈহিক এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট বিচার করে) অবশ্যই তাকে এপ বা বানর নামেই অভিহিত করতো।


পরিশেষ -

একবার অক্সফোর্ডে ব্রিটিশ এসোসিয়েশনের সম্মেলনে বিবর্তনের তীব্র বিরোধিতাকারী খ্রিষ্টান ধর্ম বিশপ স্যামুয়েল উইলবারফোর্স ডারউইনের তত্ত্বকে ঈশ্বরবিরোধী ব্যক্তিগত মতামত বলে আক্রমণ করেন। তখনই তিনি হঠাৎ করে সভায় উপস্থিত বিজ্ঞানী হাক্সলিকে উদ্দেশ্য করে জানতে চান তার দাদা এবং দাদীর মধ্যে কে আসলে বানর ছিলেন। তারই উত্তরে হাক্সলি বিবর্তনবাদের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন এবং বক্তৃতার শেষে এসে তিনি এও বলেন যে,"যে ব্যক্তি তার মেধা, বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জন ও বাগ্মিতাকে কুসংস্কার ও মিথ্যার পদতলে বলি দিয়ে বৌদ্ধিক বেশ্যাবৃত্তি করে, তার উত্তরসুরী না হয়ে আমি বরং সেইসব নিরীহ প্রাণীদের উত্তরসুরী হতে চাইবো যারা গাছে গাছে বাস করে, যারা কিচিরমিচির করে ডাল থেকে ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়।'

আর বিজ্ঞানী হাক্সলির কথার সূত্র ধরে আমিও বলতে চাই,যে যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ত্বকে স্বীকার না করে শুধু আল্লাহ-ঈশ্বর-স্রষ্টা -অদ্যৃশ্য কারিগর তথা সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করার জন্য এবং নিজেকে নাস্তিক প্রমাণ করার জন্য তার মেধা, বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জন ও শ্রেষ্ঠত্ত্বকে মিথ্যার পদতলে বলি দিয়ে বৌদ্ধিক বেশ্যাবৃত্তি করে নিজেদেরকে সেইসব প্রাণীদের উত্তরসুরী করতে চাইছে যারা গাছে গাছে বাস করে, যারা কিচিরমিচির করে ডাল থেকে ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায় আমি তাদের উত্তরসুরী না হয়ে বরং না দেখা আল্লাহ-ঈশ্বর-স্রষ্টা -অদ্যৃশ্য কারিগরের আদেশের অনুসারী হতে এবং তার নির্দেশিত পথে চলতেই স্বাচছন্দ্য বোধ করব। দয়াময় আল্লাহ আমাদের সকলকে সকল বিষয়ে সঠিক ভাবে জানার ও বুঝার তওফিক দান করুন।

শেষ।
=================================================
তথ্যসূত্র ও সহযোগীতায় -

*আলকোরআন,
** বিবর্তনের পথ ধরে, বন্যা আহমেদ, অবসর, ২০০৭ (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত ২০০৮)।
*** Stringer, C and Andrews, P, The complete Wrold of Human Evolution, Thames and Hudson Ltd, London, 2005।
**** ড. ম. আখতারুজ্জামান, বিবর্তনবিদ্যা, বাংলা একাডেমী (১৯৯৮), ২য় সংস্করণ, হাসান বুক হাউস (২০০৪)।
**** Mark Isaak, The Counter-Creationism Handbook, University of California Press, 2007।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:১৩
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×