
ছবি - indianexpress.com
আমাজন প্রাইমে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ মুক্তি পেয়েছে দীপিকা পাড়ুকোন ও সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী অভিনীত সিনেমা " গেহরাইয়্যা "। পাশাপাশি একই দিনে ভূমি পেডনেকার এবং রাজকুমার রাও অভিনীত সিনেমা " বাধাই দো " মুক্তি পেয়েছে জি স্টুডিওস এর ব্যানারে। ছবি দুটি মুক্তির পর এর পক্ষে-বিপক্ষে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ এ দুটি ছবিকেই বলেছেন সাহসী কিংবা মাস্টারপিস আবার কেউ বলেছেন এ দুটি ছবিতেই নেই কোন গভীর দর্শন কিংবা শিক্ষার উপকরন। যা আছে তা হলো শরীর প্রদর্শন কিংবা অবাধ যৌনতা ও মূল ধারার সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে যায়না (লিভ ইন-পরকীয়া / লেসবিয়ান - গে যৌনসহবাস) এমন সব বিষয়।
চলচ্চিত্র একটি গণমুখী শিল্প। সহজে গণমানুষের কাছে এ শিল্পমাধ্যমে পৌঁছানো যায় এবং যে কোন বিষয়ে ব্যাপোক ভাবে মানুষের কাছে মেসেজ পৌছে দেওয়া যায় । আবার সুস্থ বিনোদন চর্চার মাধ্যম হিসেবেও এটি খুবই জনপ্রিয় এবং বেশিরভাগ সময়ই পরিবারের ছোট বড় সবাই একসাথে বসে তা উপভোগ করে। সেই শিল্প আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিতে আজ বিপন্নপ্রায় নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা,অসুস্থ কাহিনী কিংবা নগ্নতা-যৌনতার দাপটে। সমাজ নিয়ত পরিবর্তনশীল এটা ঠিক এবং সেই পরিবর্তন যে সবসময় ইতিবাচক হবে এমনও নয় । নানামুখী বিষয় এই সমাজ পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। নতুন কোনো বিষয় নিয়ে কিংবা চলচ্চিত্র মুক্তি পেলে মানুষ সেই সিনেমা দেখতে আগ্রহ বোধ করে । তবে এখন এমন অনেক বিষয় নিয়ে ছবি তৈরী হয় যাতে অনেক সময় আশা ভংগের বেদনাও পোহাতে হয় এবং সাথে সাথে অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় আপনজনদের সামনে। এটা ঠিক যে, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ মানুষের বিনোদনের রুচি বদলে দিচ্ছে এবং অনেক স্থূল বিষয়ের বিনোদনও এখন অনেক সহজলভ্য। যদিও চলচ্চিত্র আধুনিক, প্রগতিশীল, মানবিক ও উদার একটি সমাজ বিনির্মাণে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
আসুন দেখি কি আছে এ দুটি ছবিতে -
১। গেহরাইয়ান -
গত ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া " গেহরাইয়্যা " ছবিতে দীপিকা ছাড়াও আরও অভিনয় করেছেন অনন্যা পান্ডে, সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী, নাসিরুদ্দিন শাহ ও রজত কাপুর। ছবিটি পরিচালনা করেছেন শকুন বাত্রা। যার IMDb Ratings – 6.8 / 10 । দীপিকার মত প্রথম সারির একজন অভিনেত্রী যখন একটি ছবি করেন তখন সাধারন মানুষের আগ্রহ থাকে তুংগে এবং তা জনগণের মাঝেও রাখে ব্যাপোক প্রভাব।
গেহরাইয়ান এর বিষয়বস্তু ও সারমর্ম -
গেহরাইয়ানের নায়ক জেইন (সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী) , নায়িকা আলিশা (দীপিকা পাড়ুকোন) এবং আলিশার ছয় বছরের লিভ-ইন সম্পর্কে সঙ্গী করণ (ধৈর্য করওয়া) এবং আলিশার চাচাতো বোন টিয়া (অনন্যা পান্ডে) এবং তাদের চর্তুূভূজ সম্পর্কের ও পরকীয়ার বিষয় রয়েছে যেখানে তারা একে অপরের মাঝে সান্ত্বনা খুজে এবং কষ্টও পায়।
গেহরাইয়ান কাহিনী বিন্যাস -
আলিশা, একজন যোগ প্রশিক্ষক এবং জেইন একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, যারা তাদের দেখা হওয়ার মুহুর্ত থেকেই একে অপরের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়। যদিও জেইনের আলিশার চাচাতো বোন টিয়া (অনন্যা পান্ডে) র সাথে বাগদান হয়েছে আবার আলিশাও তার সঙ্গী করণের (ধৈর্য করওয়া) সাথে ছয় বছর ধরে লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছে। তাদের গোপন রোমান্স কি জীবনের জটিলতায় টিকে থাকতে পারবে সেটাই ছিল ছবির মূল বিষয়।
বিশ্বস্ততা যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূল বিষয় তা সে লিভ ইন-লিভ টুগেদার কিংবা বিয়ে-পরিবারে। আর এ পুরো ছবিতেই এবং কেউ সেই বিশ্বস্ততা পরিচয় দেখাতে পারেনি তাদের নিজ নিজ জায়গায়। গেহরাইয়ানের পরিচালক শকুন বাত্রা এমন একটি বিষয় তুলে ধরতে চেয়েছেন যা আমাদের উপমহাদেশের সমাজ-পরিবারের-সামাজিক মূল্যবোধের সাথে কোনভাবেই যায়না। পুরো ছবিতেই অবাধ যৌনতার সাথে সাথে আমাদের উপমহাদেশের সমাজ-পরিবারের-সামাজিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয়েরই ছবি প্রকাশ করেছে।
আলিশা তার জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন রয়েছে যেখানে তার অস্থির শৈশবের সাথে সাথে তার মায়ের আত্মহত্যার মত বিষয়ও আছে।যদিও পরিচালক এমন একটি গল্পের মাধ্যমে মানুষের জীবনের জটিল আচরণ এবং এর পরিণতিগুলিকে দেখানোর করার চেষ্টা করেন যা বর্ণনা করা আসলেই কঠিন। দীপিকা পাড়ুকোন নিজের চরিত্রের চিত্রায়নে সামজিকতার দিকে চোখ না রেখে কিছু সাহসী দৃশ্যে করেন। নায়ক সিদ্ধান্তও গভীর স্তরবিশিষ্ট এবং বিরোধপূর্ণ একটি চরিত্র রচনায় তার নিজেকে উজার করে দিয়েছেন। উভয়ই তাদের নিজ নিজ ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় করেছেন যা প্রশংসনীয়। আর এই ধরনের প্রেমের গল্পের জন্য এর চেয়ে ভাল কাস্টিং আর হতে পারে না এবং আমাদের সবাইকে এটি গভীর অন্ধকার জগতের দিকে আকৃষ্ট করে। এর চরিত্রগুলির টাইম বোমার মতোই মনে হয় যা যে কোন সময় ব্রাস্ট হয়ে ধ্বংস করে দিবে আশেপাশের সব কিছু এবং যা আমাদের উপলব্ধি করতে বাধ্য করবে এ জাতীয় কাজের পরিণতির জন্য। পাশাপাশি আধুনিক সমাজের এক অন্যতম অনুষংগ (লিভ ইন - পরকীয়া) এরকম একটা বিষয়বস্তুকে নিয়ে ভাবতেও বাধ্য করবে মানুষকে।
=====================

ছবি - indianexpress.com
২। বাধাই দো -
জি স্টুডিওসের ব্যানারে প্রেক্ষাগৃহে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ মুক্তি পাওয়া " বাধাই দো " - হল হিন্দি কমেডি ড্রামা ফিল্ম যা সুমন অধিকারী এবং অক্ষত ঘিলদিয়াল লিখেছেন এবং হর্ষবর্ধন কুলকার্নি পরিচালনা করছেন। জঙ্গলি পিকচার্স নির্মিত ছবিটি, যা ২০১৮ সালের " বাধাই হো " চলচ্চিত্রের আধ্যাত্মিক সিক্যুয়েল হিসাবে বিবেচিত। এতে সমকামী (গে-লেসবিয়ান) দম্পতি হিসেবে অভিনয় করেছেন রাজকুমার রাও এবং ভূমি পেডনেকর। বাধাই দো একটি সম্পূর্ণ পারিবারিক বিনোদনকারী ছবি যেটি সাহসীকতার সাথে সাথে একটি সামাজিক সমস্যাকেও সমাধান করে যার IMDb Ratings – 5 / 10,
বাধাই দো এর বিষয়বস্তু ও সারমর্ম
সুমি (ভূমি পেডনেকার ) এবং শার্দুল (রাজকুমার রাও) উভয়েই সমকামী এবং তারা সমকামী সম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠ সদস্য হয়েও সামাজিকভাবে স্বাভাবিক মানুষের মত জীবনযাপন করার চেষ্টা করেন। যখন তারা উভয়েই তাদের পরিবারকে খুশি করার জন্য নিজেদএর মাঝে আপস করে বিবাহের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় , তখন তারা ধরে নেয় যে এর ফল তারা যেমন তাদের পছন্দের মানুষদের সাথে থাকতে পারবে আবার পরিবারের বাকী সদস্যরাও খুশী থাকবে। তবে তারা শেষ পর্যন্ত এই সম্পর্কের দ্বারা কী অর্জন করে এবং কীভাবে এই পারিবারিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসে তার জন্য দেখতে হবে এই ছবি।
বাধাই দো এর কাহিনী বিন্যাস -
বিয়ে এক স্বর্গীয় বিষয় যার ফলে দুটি নর-নারীর একসাথে থাকার সামজিক ও আইনগত মাধ্যম ও সামজিক রীতি-নীতি -মূল্যবোধ দ্বারাও স্বীকৃত হয়। তবে এই স্বর্গীয় বিবাহই নানা কারনে ও জীবনের জটিলতার মাঝে পড়ে বিবাহিতদের একটি বড় সংখ্যাই অসুখী জীবন যাপন করে। যদিও সেই সব দম্পতিদের নিজেদের দ্বারা করা সমঝোতার কারণে বাইরে থেকে তাদেরকে চকচকে এবং উজ্জ্বল দেখায় যদিও ভিতরে থাকে নানা করুণ কাহিনী ও মতবিরোধ। বাধাই দো-তে, এই বৈবাহিক সমঝোতার একটি ভিন্ন ধরনের ছবি আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে , যেটির বিষয়ে (সমকামীতা)আমাদের সমাজে কখনোই কোন কথা বলতে চায়না না কিন্তু সব সময়ই আমাদের সমাজের মাঝে বিদ্যমান ছিল-আছে।
যারা বা যাদের জীবন এমন অপ্রত্যাশিত তাদের জন্য, এটাকে ল্যাভেন্ডার ম্যারেজ বলা হয় – যা দুই সমকামী ব্যক্তির মধ্যে একটি ভিন্নধর্মী বিয়ে, যারা সমাজে ফিট করার চেষ্টা করে সমাজে তাদের একক অবস্থান থেকে উদ্ভূত সামাজিক কলঙ্ক এড়ানোর জন্য এবং বিভিন্ন কারণে সুবিধার এই ব্যবস্থায় সম্মত হয় এবং তারা এটিকে ব্যবহার করে। এখানে এধরনের বিয়ে একটি সামাজিক আবরণ যাতে তারা তাদের স্বাধীনতার সাথে সাথে ও তাদের এ ধরনের নিয়ে চারিত্রিক স্বভাব নিয়েই সমাজের-পরিবারের বাকী সবার সাথে জীবনযাপন করতে পারে। ছবিটি সমাজে এমন একটি মেসেজ দেয়ার প্রয়াস যে, একজন মানুষকে বিচারে তার যৌন অভিমুখী হওয়া উচিত নয় এবং তা দিয়ে একজন ব্যক্তি কে তা সংজ্ঞায়িত ও করে না।
ছবিতে, নব-দম্পতি সুমি এবং শার্দুল (ভূমি পেডনেকার এবং রাজকুমার রাও) রুমমেটের মতো থাকেন। সুমি এবং শার্দুলের বিবাহের পরে যা ঘটে তা হল, তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তাদের জীবনের গোপনীয়তা বজায় রাখার এবং তারা কে তা ঢাকার চেষ্টা করা। আর এ প্রক্রিয়ায়, তারা নিজেদেরকে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে অন্য পরিস্থিতির দিকে ছুটে চলতে দেখতে পায়। শার্দুল এবং সুমি তাদের নিজ নিজ অংশীদারদের সাথে রোমান্টিক ইন্টারল্যুডগুলি যে ধরনের স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাচ্ছন্দ্য এবং অশান্তি নিয়ে চলে যা আমরা আমাদের সিনেমাগুলিতে অন্য কোনও দম্পতির মধ্যে দেখেছি - এটি একটি ইঙ্গিত যে চলচ্চিত্রটির উদ্দেশ্য সমকামী এবং লেসবিয়ান সম্প্রদায়কে স্টেরিওটাইপ করা নয়। কিন্তু মানসিকতা পরিবর্তন করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে কুসংস্কার দূর করা।
সিনেমাটি সংবেদনশীলতার সাথে চিত্রিত করে অপরিমেয় একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি যা একজন সমকামী ব্যক্তি অনুভব করে, বিশেষ করে যখন তাদের পরিবারের সাথে খোলামেলা যোগাযোগ করার জন্য একটি সুযোগের অভাব থাকে এবং তারা নিজেরাই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে বাধ্য হয়। কীভাবে নায়করা একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার এবং তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তা দ্বিতীয়ার্ধে তুলে ধরা হয়েছে।
বাধাই দো সমকামী এবং সমকামী সম্প্রদায়ের বড় পর্দার চিত্র এবং তাদের রোমান্টিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। বিবাহের জটিলতা, মধ্যবিত্ত ঐতিহ্যবাহী পরিবার এবং ব্যক্তিদের কাছ থেকে তাদের দাবিগুলিও সংবেদনশীলতা এবং বাস্তবতার সাথে দেখানো হয়েছে। ছবির সৌন্দর্য এই সত্যের মধ্যে রয়েছে যে, কোনও বিচার নেই - চরিত্রগুলি সমকামী হওয়ার কারণে তাদের সাথে আলাদা আলাদা ভাবে আচরণ করা উচিত না।
শার্দুলের চরিত্রে রাজকুমার রাও অসাধারন এবং আবেগপূর্ণ মুহূর্তগুলিতে সুন্দর অভিনয় করেছেন । তিনি তার চরিত্রের সাথে একাত্ম হয়ে অভিনয় করেছেন। সুমির চরিত্রে ভূমি পেডনেকার সংবেদনশীল, সংক্ষিপ্ত এবং বিষয়ভিত্তিক। অস্থিরতা প্রকাশ করে, তিনি শব্দ ছাড়াই লড়াই করেন এমন এক আকর্ষণ যা তার প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এদিকে চুম দারাং এর বলিউডে একটি দুর্দান্ত অভিষেক হয় এমন একটি ভূমিকার মাধ্যমে যা একজন নবাগতের সাথে যেতে সাহস লাগে। উত্তর-পূর্বের একজন শিল্পীকে সমান্তরাল লিড হিসেবে কাস্ট করার জন্য নির্মাতাদের অবশ্যই প্রশংসা করতে হবে, যা হিন্দি সিনেমায় বিরল।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যখন ২০১৮ সালে সমকামিতাকে অপরাধমূলক ঘোষণা করে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় প্রয়াত বিচারপতি লীলা শেঠের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, "যে অধিকার আমাদের মানুষ করে তা হল ভালবাসার অধিকার। সেই অধিকারের প্রকাশকে অপরাধী করা নিষ্ঠুর এবং অমানবিক।" একটি দেশে যেখানে সম্মতিমূলক সমকামী যৌনতাকে অপরাধমুক্ত করতে কয়েক দশক সময় লেগেছে এবং যেখানে সমকামী বিবাহ এখনও আইন দ্বারা স্বীকৃত নয় বা সমাজ দ্বারা গৃহীত হয়নি, সেখানে "বাধাই দো" এর মতো চলচ্চিত্রগুলি গুরুত্বপূর্ণ। এটি গড় ভারতীয় পরিবারের জন্য বিষয়টিকে স্বাভাবিক করে এবং এ ব্যাপারে মানুষকে ভাবতে বাধ্য করবে। "বাধাই দো" সমাকামী মানুষ ও সমকামিতাকে নিয়েই আবর্তিত হয়েছে এবং এই চলচ্চিত্রটি বিশেষ করে ছোট শহরগুলিতে - পরিবারগুলিকে সামজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেওয়ার চেষ্টা করে ৷
একটি দেশের চলচ্চিত্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে সে দেশের সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ। যে সংস্কৃতিতে বা দেশে তা নির্মিত হয় তাকেই প্রতিনিধিত্ব করে সেই চলচ্চিত্রটি। সিনেমা শিল্পকলার একটি প্রভাবশালী মাধ্যম, শক্তিশালী বিনোদন মাধ্যম এবং শিক্ষার অন্যতম সেরা উপকরণ হিসেবে দুনিয়াব্যাপী খ্যাতি রয়েছে চলচ্চিত্রের। সিনেমার সাথে ভিজ্যুয়াল বিশ্বের সমন্বয় থাকায় সাধারণ মানুষের সাথে সবচেয়ে ভাল যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। অন্য কোন শিল্পমাধ্যম সাধারণের সাথে এতোটা যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম নয়। আর তাই সিনেমা সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐক্য ও সংহতির সাথে সাথে সামাজিক রীতি-নীতি-মূল্যবোধের সাথে সাথে সামাজিক সমস্যার সমাধানেও রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তবে অনেকের মতেই এ ধরনের বিষয়বস্তুর ছবি সমাজে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সাথে সাথে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা বাড়াবে। বাড়বে পরিণামে মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা ও ভ্রষ্ঠাচার। কমবে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে এরকম অনৈতিক কজের চর্চা। কমে মানুষের মাঝে ন্যায় চিন্তার , প্রসার হবে হবে অসামজিক কাজের। যদিও আবার অনেকেই এ দুটি ছবিকেই সমাজ-সামজিকতার অংশ বলেই ভাবতে চান এবং আধুনিক ও মুক্তমনাদের মতে তা জরূরী । তারপরও এ জাতীয় বিষয় কি সামগ্রিক ভাবে আমাদের পরিবার-সমাজের সাথে যায় বা তা সৃষ্টিশীল? কি শিখবে মানুষ এ দুটি ছবি দেখে?
সভ্যতার উন্নয়ন ও বিকাশের সাথে সাথে মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও যৌথ পরিবারের ভাংগণ ও একক পরিবার বৃদ্ধি এবং নানা ধরনের অপার্থিব বিষয়ের হাতছানি ও নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি কৌতুহলের সাথে সংগদোষে বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে নানা রকমের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। আর এরকম অনৈতিক কর্মকাণ্ডকেই যখন মূলধারার বিনোদন মাধ্যমে প্রচার করা হয় তখন তা সমাজে ছড়িয়ে পড়বে মহামারীর মত । যার ফলে ধ্বংস হবে সমাজ ও সামাজিকতার প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলির যা কখনোই দেশ-জাতির জন্য ভাল ফল বয়ে আনবেনা । চলচ্চিত্র শুধু নিছক বিনোদন নয়, তা হোক সমাজ পরিবর্তনের সহায়ক ও অন্যতম হাতিয়ার এবং যা আমাদের রীতি-নীতি-মূল্যবোধের সাথে মানানসই সে রকম বিষয়ই হোক প্রচার।
=================================================
প্রাসংগিক একটি পোস্ট - লিংক - Click This Link
(আসুন দেখি - " Criminal Justice : Behind Closed Door " মুভি।)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



