ছবি - gettyimages.ae
বাংলাদেশের জন্য বিশেষ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তার ঘোষণাটি বুধবার (২৪ মে) রাতে মার্কিন পররাষ্ট্র প্রকাশ করা হয়েছে। এতে তিনি বলেন -
আজ আমি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন দিয়ে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারা ২১২(এ)(৩)(সি) (“৩সি”) এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এ নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তারা, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্যরা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও এই নতুন ভিসা নীতির আওতায় পড়বেন।
গত ৩রা মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানায় বলে তিনি বলেন। ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা-এসকল কাজকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বাধা হিসেবে বিবেচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, আইনশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, নাগরিক সমাজ এবং মিডিয়া-প্রত্যেকেরই দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে যারা এগিয়ে নিতে চান, তাদের সমর্থন দিতেই যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি ঘোষণা করছে।
ছবি - ইত্তেফাক
নতুন ভিসা নীতি নিয়ে ৭ প্রশ্নের জবাব দিল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (২৪ মে) রাতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক টুইট বার্তায় এ ঘোষণা দেন। ভিসা নীতি ঘোষণার পরপরই এ বিষয়ে কিছু প্রশ্নের জট খোলাসা করেছে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস।
১। এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার জন্য প্রযোজ্য হবে?
উত্তর - এই নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা, সরকারি সমর্থক এবং বিরোধী দলীয় সদস্যরা রয়েছেন। এই ব্যক্তিদের পরিবারের নিকটতম সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
২। নীতিমালার আওতায় এখন কি কোনও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে?
উত্তর - না। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারকে আমরা স্বাগত জানাই।
৩। এই ভিসা বিধিনিষেধ কি সরকার বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে?
উত্তর - না, যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এই নতুন নীতির অধীনে বিধিনিষেধগুলো এমন আচরণের ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে, যারা সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে।
৪। যাদের ভিসা বাতিল হবে, তাদের কি বিষয়টি অবহিত করা হবে?
উত্তর - যাদের ভিসা বাতিল করা হবে বা হয়েছে তাদের অবহিত করা একটি সাধারণ অনুশীলন।
৫। উচ্চ স্তরের আদেশ অনুসরণ করার পরে যারা অপরাধ করে, তাদের জন্য ভিসা বিধিনিষেধ কীভাবে প্রযোজ্য হবে? উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের আদেশ পালনকারীদের সঙ্গে যুক্ত করা, সেটি যদি কঠিন হয় তবে কী হবে?
উত্তর - বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য যারা দায়ী বা জড়িত তাদের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য।
৬। গত ১৪ মে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ ঘোষণা দেওয়া হলো কি না?
উত্তর - বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গত ৩ মে এই নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করেছি।
৭। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কেন এত চিন্তিত?
উত্তর - যুক্তরাষ্ট্র সব জায়গায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করার অঙ্গীকার করেছে। এই নীতিটি সেই প্রচেষ্টা ও বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করার জন্য প্রণীত হয়েছে, যাতে তারা তাদের নেতা বেছে নেওয়ার জন্য নির্বাচন করতে পারে।
আমেরিকার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে ভিসা নীতির যে ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে ব্লিঙ্কেন, স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক তথা সর্বমহলে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সচেতন মহলেও এটি এখন আলোচনার মুখ্য বিষয়। এ নিয়ে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশটির সুশীল সমাজ।
বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় -
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের নজরে এসেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে সর্বস্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকারের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে এই ঘোষণাটিকে দেখছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিবৃতিটি প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নিয়মিত নির্বাচন আয়োজিত হয়ে আসছে। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে এটা স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশের জনগণের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়েছে। ২০০৬ সালে যেখানে ৪১.৫ শতাংশ দারিদ্র্য ছিল দেশে, ২০২২ সালে তা কমে ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একইসঙ্গে চরম দারিদ্র্য ২৫.১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিবৃতিতে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে বর্ণনা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে আরও বলা হয়, গত চৌদ্দ বছরে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ এত কিছু অর্জন করতে পেরেছে। নিজেদের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকার কোনো নজির নেই। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকারকে রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা হিসেবে বিবেচনা করে। এমনকি জনগণের ভোটাধিকারের জন্য এ সরকারের নিরলস সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য গণজমায়েতের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয় সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সামনের নির্বাচনগুলো যাতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয় তা নিশ্চিতে যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বেআইনি আচরণ বা হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ ও মোকাবেলার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দ্বারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে।
বিবৃতির শেষে বলা হয়, কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দেশের উন্নয়নের অর্জনকে ধারণ করা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণের নিজস্ব বিষয়। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে তার পাশে রয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ দেয়া হয় ওই বিবৃতিতে। ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণ অনেক বেশি সচেতন।
১। নিষেধাজ্ঞায় সরকার চিন্তিত না, এটি সকলের জন্য সতর্কবার্তা - কৃষিমন্ত্রী
সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেই বিষয়ে সরকার ভীত ও চিন্তিত না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘এটি সকলের জন্য সতর্কবার্তা। এটা আলাদা কোনো দল বা ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা নয়।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আব্দুর রাজ্জাক এ কথা বলেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তন সব নাগরিকের জন্য সমান। আমার মনে হয় ভিসা প্রক্রিয়ার এই পরিবর্তন বিএনপির জন্যও প্রযোজ্য। তারা মানুষ পুড়িয়েছে, গণপরিবহনে আগুন দিয়েছে ও গর্ভবতী মায়ের অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখেছে। এগুলোর কারণে তাদের ভিসা প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তনে সরকার চাপ অনুভব করছে না।’
২। এই পদক্ষেপকে 'সঠিক পথে অগ্রসর হওয়া' বলে বর্ণনা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেপুটি চিফ অফ মিশন এবং দেশটি থেকে প্রকাশিত মাসিক প্রকাশনা ‘সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভস’-এর এডিটর এ্যাট লার্জ জন এফ ড্যানিলোভিজ। তবে, 'ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা একটি মূল চ্যালেঞ্জ হবে' সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে করা এক মন্তব্যে এমনটি স্বীকার করে নিয়ে জন লিখেছেন, ওদের নামকরণে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। উক্ত বিধিনিষেধ ওইসব ব্যক্তিদের পরিবারের নিকটস্থ সদস্যদের জন্যও প্রযোজ্য হবে উল্লেখ করে আরেকটি মন্তব্যে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য সমমনা দেশগুলোও একই ধরনের পন্থা অনুসরণ করে অনুরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করবে।
৩। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এর এশিয়া এবং বাংলাদেশ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড লিখেছেন, - (এই পদক্ষেপ) বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপ। স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করেছে যে এটি "বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত" যেকোনো বাংলাদেশির উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করবে। গত ৩রা মে (এই সিদ্ধান্ত) বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
৪। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটন ডিসির থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান উড্রো উইলসন সেন্টার এর সিনিয়র পলিসি স্কলার এবং সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভস-এর এডিটর উইলিয়াম বি মাইলামের নেতৃত্বাধীন, ওয়াশিংটন ভিত্তিক অধিকার সংগঠন রাইট টু ফ্রিডম এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নতুন ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে,- যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চাইছেন তাদের প্রতি সমর্থন জানাতে এবং দেশটিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সেক্রেটারি অফ স্টেট এন্টনি ব্লিঙ্কেন যে রকম ঘোষণা দিয়েছেন সে রকম প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করি। বাংলাদেশের অনেক বন্ধুদের মতো আমরাও ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সাথে এটা লক্ষ্য করেছি যে ঢাকার বর্তমান সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
৫। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি আন্তরাষ্ট্রীয় বিষয় - নির্বাচন কমিশনার আলমগীর
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নীতিকে আন্তরাষ্ট্রীয় বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু নির্বাচন করা। আর এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তাঁরা তা করবেন।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর এসব কথা বলেন।
গতকাল বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, কে বাধা দিয়েছে, তা কমিশনের অংশ না। সে বিষয়ে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারের সঙ্গে তাদের কী বোঝাপড়া আছে বা কী হবে, তা তারা বলতে পারবে।
তবে - যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগকে যদি ইতিবাচকভাবে নেয়া হয় তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর সেটা না মানলে দেশের ভিতরে যেমন রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা থেকে যায়, সেই সাথে আন্তর্জাতিক ও গণতান্ত্রিকভাবেও বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি তা হুমকির মুখে পড়বে। এদিকে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। আবার সকল ব্যবসা কিংবা অন্য অনেক কিছুতেই আমাদের দেশের কমবেশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আছে এবং তাদের উপর নির্ভরশীল। তাই আমেরিকাকে বা তাদের চাওয়াকে গুরুত্ব না দেয়াটা শেষ বিচারে আমাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে।
এত সব আলোচনা-মন্তব্য থেকে এ কথা বলা যায় যে, এর ফলে বাংলাদেশের সরকারী দল ও বিরোধী দল উভয়েরই রাজনৈতিক বিষয়ে আরও দায়িত্বপূর্ণ আচরন ও কার্যকর কিছু করার সুযোগ রয়েছে এবং করার চেষ্টা করতে হবে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে । আর তা করতে হবে তাদের দেশ-জাতি ও নিজেদের মংগলের স্বার্থেই । এখানে - সরকার পক্ষকে যেমন বিরোধীদলকে আস্থায় আনতে হবে নির্বাচন নিয়ে তাদের তাদের করণীয় কাজের স্বচছতার ব্যাপারে, তেমনি বিরোধী দলকেও আরো দায়িত্বপূর্ণ আচরন করতে হবে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের ব্যাপারে। উভয়কেই উভয়ের জায়গা থেকে ছাড় দেয়ার মানষিকতার সাথে সাথে সকল সমস্যার সমাধানের জন্য খোলা মন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে এবং পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি,অভিযোগ-অনুযোগ বন্ধ করতে হবে। আর এসবের ফলেই হয়ত উভয়ে উভয়ের নিকট গ্রহনযোগ্যতা পাবে এবং দেশ এগিয়ে যেতে পারবে উন্নয়ন- অগ্রগতির পথে এবং বিকশিত হবে সহনশীল রাজনৈতিক আচরনের। এই প্রত্যাশাই আমাদের।
তথ্যসূত্র -
১। বাংলাদেশের বিষয়ে ব্লিঙ্কেনের পুরো বিবৃতি - Click This Link
২। মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে যা বলছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় - Click This Link
৩। বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া - Click This Link
৪। নিষেধাজ্ঞায় সরকার চিন্তিত না, এটি সকলের জন্য সতর্কবার্তা - কৃষিমন্ত্রী - Click This Link
৫। US visa curb: Govt won't let polls be compromised, says foreign ministry - Click This Link
৬। Bangladesh says it will take steps to address election meddling after visa threat from US - Click This Link
৭। Bangladeshis responsible for ‘undermining democratic election process’ will face US visa curbs: Blinken - https://bdnews24.com/politics/cf8yj6s7gi
৮। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে সহায়তা করতেই নতুন ভিসা নীতি : যুক্তরাষ্ট্র - https://mybangla24.com/newspapers/naya-diganta
৯। বাংলাদেশের নির্বাচনে অনিয়ম করলে মার্কিন ভিসা বন্ধ - ব্লিংকেন - https://mybangla24.com/newspapers/naya-diganta
১০। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে বিএনপির চিন্তার কারণ আছে - শাহরিয়ার আলম - Click This Link
১১। নতুন মার্কিন ভিসানীতি সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক হতে পারে: মোমেন - Click This Link
১২। ভিসা নীতি নিয়ে ৭ প্রশ্নের জবাব দিল মার্কিন দূতাবাস - https://www.ittefaq.com.bd/645436
১৩। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে যা বললেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু - https://mybangla24.com/newspapers/naya-diganta
১৪। নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের প্রতিহত করব - কাদের - https://mybangla24.com/newspapers/naya-diganta