
বইঃ দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস
মূল লেখকঃ জন বয়েন
অনুবাদকঃ সালমান হক
প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৪০ টাকা
-
দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস; দ্য গার্ডিয়ান এর চোখে "ছোট্ট কিন্তু বিস্ময়কর একটি বই"
-
ব্রুনো নয় বছরের এক ছোট্ট বালক,যুদ্ধকালীন নির্মমতা আর বাস্তবতাগুলো তার শিশু সুলভ চোখে তখনও ধরা পড়া শিখেনি।বরং তার চোখে ভাসতো অভিযানের স্বপ্ন,ছিল আবিস্কারের নেশা।এক বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে ব্রুনো দেখল-তার সব জিনিসপত্র প্যাক করা হচ্ছে।সে ভাবলো- হয়তো তার কোন অপরাধের জন্য তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে! কিন্তু না,বরং মা,বাবা আর বড় বোন গ্রেটেলকেও চলে যেতে হচ্ছে প্রিয় শহর বার্লিন ছেড়ে।পেছনে ফেলে যেতে হচ্ছে, ব্রুনোর তিন প্রিয় বন্ধুর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো।
বার্লিনের অভিজাত এলাকার সেই বাড়িটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে "আউট-উইথ" ক্যাম্পে।ফিউরি সাহেব(এডলফ হিটলার) তাদের বাড়িতে ডিনারের আমন্ত্রনে আসার পরই ব্রুনোর বাবা প্রমোশন লাভ করে।আউট-উইথ ক্যাম্পের কমান্ড্যান্টের দ্বায়িত্ব লাভ করে সে।
এবার বই থেকে একটু সিনেমার জগত থেকে ঘুরে আসি! Schindlers List দেখেছেন? কিংবা The Pianist, অথবা মনে পড়ে পড়ে Life is beautiful এর সেই ছোট্ট শিশু আর তার বাবাকে?মুভিগুলোর কথা কেন বললাম,কারন এই মুভিগুলো দেখা থাকলে, ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নাৎসী ক্যাম্পগুলো আর এর ভেতরের চিত্র সম্পর্কে ভালো একটা ধারনা থাকবে আপনার।তেমনি একটা ক্যাম্প এই "আউট-উইথ"।
যাই হোক,আবার বইয়ের পাতায় চলে আসি।বার্লিন ছেড়ে আউট-উইথে আসার পর ব্রুনোর কাছে সবকিছু যেন দুঃস্বপ্নের মত মনে হল!আগের বাসার সম্পূর্ন বিপরীত এটা,আর রাস্তা থেকে আশেপাশে কোন বাড়িও দেখা যায় না।মনে হচ্ছে,এই বাসাটা বোধহয় পৃথিবীর নিঃসঙ্গ জায়গা গুলোর একটি।এমন একটা জায়গায় কিভাবে থাকবে সে,কার সাথে সময় কাটাবে এই ভাবনায় তাকে অধীর করে তুললো।
কিন্তু, তাদের বাড়িটা কি সত্যিই নিঃসঙ্গ হয়ে দাড়িয়ে আছে?জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই ব্রুনো দেখলো,একটা উচু কাটাতারের বেড়া তাদের বাড়িটাকে আলাদা করে রেখেছে।শুধু বাড়িটাকেই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত এই কাটাতারের বেড়া বিস্তৃত।আর সারি সারি খাম্বাগুলো সাপোর্ট হিসেবে দাড়িয়ে আছে।আর বেড়ার ওপাশে কিছু কুঁড়েঘর আর চারকোনা বাসা।বাসাগুলো থেকে ধোয়ার কুন্ডলী উপরে উঠে যাচ্ছে।নানা বয়সের কিছু পুরুষ মানুষকেও দেখা যাচ্ছে সেখানে।সবাই কেমন যেন নির্জীব, ছন্নছাড়া ভবঘুরের মত!সবার পরনে একই ধরনের পোশাক।ধূসর ডোরাকাটা পায়জামা আর মাথায় একই ধরনের ধূসর ডোরাকাটা ক্যাপ!
ঘরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত,বিরক্ত হয়ে উঠছিল ব্রুনো।আবিস্কারের নেশা আর অভিযানের ভূত আবারো মাথায় চাপে তার।সে লক্ষ্যেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে সে।এগুতে থেকে কাটাতারের বেড়া ধরে।কিন্তু জনশূন্য এ এলাকায় যেন কোথাও কেউ নেই।কিন্তু না,শেষ পর্যন্ত নিরাশ হতে হলো না তাকে।কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।কাছে আসতেই তারই বয়সের এক ছেলের দেখা মিলল।ছেলেটা বেড়ার ওপারের বাসিন্দা,তার পরনেও সেই পোশাক,স্ট্রাইপড পায়জামা।
ছেলেটার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে উঠে তার।প্রায় প্রতিদিনই তার সাথে দেখা করে ব্রুনো,যাওয়ার সময় খাওয়ার জন্য এটা-সেটা নিয়ে যায়।কাটাতারের বেড়াকে মাঝখানে রেখে গল্প জুড়ে দু'জন।এই বন্ধুত্বের শেষ পরিনতি কি, ভাবতে পারেন?
সালমান হক এর অনুবাদের মান নিয়ে কোন কথা হবে না।হেনরি বিনস সিরিজ পড়ার পরই তার অনুবাদের ভক্ত হয়ে গেছি। এই বইটিতেও তেমন সরল-সাবলীল অনুবাদ করা হয়েছে।অনুবাদক কে ধন্যবাদ, বিশ্বের ৫১ টি ভাষায় অনূদিত বেস্টসেলার এ বইটিকে আমাদের মাঝে উপহার দেওয়ার জন্য।
সবশেষে,আপনাকে বলছি!হ্যা,যারা রিভিউয়ের প্রথম থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত চলে এসেছেন।যুদ্ধ,নৃশংসতা আর আবেগ ছুয়ে যাওয়া এই গল্পটি পড়ার আমন্ত্রন জানাচ্ছি আপনাকে।হ্যাপি রিডিং!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



