somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তৈলাক্ত বাশেঁ বানরের সেই উঠানামার গল্প

১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাঁশের সন্ধানে বেরিয়েছিলাম। সেই তৈলাক্ত বাঁশটা। যে বাঁশে বানর লাফিয়ে উঠে আবার পিছলে পড়ে। যে বাঁশ আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। যার কারনে আমি এখন পথে পথে ঘুরি। কারণ অংকটা আমার হয়নি। ভুল হয়েছিল। আসলে অংকটাই ছিল ভুল। সেই অংকের কারনে আমি পাশ করতে পারিনি। পাশ করতে পারিনি বলে জীবনে কিছই করতে পারিনি। আমার সমস্ত রাগ শুধু বাঁশটার উপরই নয়। বানর, তেল এবং যিনি অংকটা তৈরী করেছিলেন তার উপরও। আমি জানি তিনি এখন পরপারে। হয়ত সেখানেও অংক জাতিয় কাজ নিয়ে ব্যস্থ আছেন। কিন্তু এই বাঁশের অংক তৈরি করে দিয়ে কত মানুষকে বাঁশ দিয়ে গেলেন তার হিসাব কে রাখে!

বাঁশ, বানর আর তেলের একটা সম্পর্ক আছে। বাঁশে লাফাতে না পারলে তেল দাও। কোনটাই না পারলে ফেল্টুদের স্থান নেই। কোথাও স্থান হল না। বেরিয়ে পড়লাম। কোথায় সেই বাঁশের সন্ধান পেতে পারি এই আশায় ঘুরছি। কত দেশ নগর বন্দর ঘুরলাম। নেই। এ জাতীয় বাঁশ কোথাও নেই। পবিত্র আরব দেশে গেলাম। সেখানে খেজুর গাছ। বাঁশ নেই। গ্রীস, সাইপ্রাস, ইতালী কোথাও বাঁশের সন্ধান মেলেনি। আমেরিকায় গেলাম। সেখানে বাঁশের বদলে আছে রয়েল পাম ট্রি। এই ট্রি তারা আরব দেশে গবাদের কাছে ছয়নয় বুঝিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে। একটা পাম ট্রি মাত্র এক লক্ষ আশি হাজার ডলারে বিক্রি করে। এ দিয়ে আমার কোন কাজ নেই। চলতে চলতে অনেক পন্ডিত ব্যক্তির সাথে মোলাকাত হয়েছে। কেউ সেই বাঁশের সন্ধান দিতে পারেনি। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, বিভ্রান্ত, পথ ভ্রান্ত ক্ষুধার্ত হয়ে এসে পৌছলাম কানাডায়। এখানেও বাঁশের কোন চিহ্ন পেলাম না। আমার এখন দৈন্য দশা। এতদিনে আমার পরনের কাপড় তেনা তেনা হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় তালি পড়েছে। জুতা ছিড়ে গিয়ে এখন শুধু ফিতাগুলো পায়ে লেগে আছে। আর চলতে পারি না। পথপাশে একটা গাছের নিচে বসলাম দু দন্ড জিড়িয়ে নিই।
হঠাৎ এক আলিসান গাড়ি এসে থামল আমার সামনে। টাই সুট পরা এক ভদ্রলোক নেমে এলেন। খুব দরদ দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, চেহারা দেখে তো মনে হয় বাঙালি!
বললাম, হা, আমি বাঙালি।
আমি ব্যারিষ্টার কামরুল। আপনার এ দশা কেন ভাইসাব?
মনে মনে ভাবলাম, ব্যারিষ্টার আর উকিল একই কথা। কোন্ উকালতি বুদ্বি নিয়ে এত দরদ দেখাতে তিনি এসেছেন কে জানে! তাদের তো কুরুইল্লা বুদ্বির অভাব নেই। মুখে বলালাম, বাঁশের কারনে।
বাঁশের কারনে! বলেন কী! কি জাতীয় কোন্ বাঁশ আপনার এ দশার জন্য দায়ি খুলে বলবেন কি?
সব খুলে বলার পর তিনি বললেন, আপনি ভুল জায়গায় বাঁশের সন্ধান করছেন। বাংলাদেশের বাইরে খুব কমই বাঁশ উৎপাদন হয়। তার ব্যবহার ও কম। আপনি যে বাঁশের কথা বলছেন তা বোধ হয় আলি আকবরের লেখা পাটিগণিতের অংকে যে বাঁশের কথা বলা হয়েছে তার কথা বলছেন।
বললাম, হা, হা ঠিক ধরেছেন। সে বইএ আরো অনেক অদ্ভুত অংক আছে।

আরে সে বাঁশ তো আসলে তার বিকৃত মস্তিক্সের কর্ম। আলি আকবরের বাবার অনেক টাকা ছিল বোধ হয়। তার কোন কাজ ছিলনা তাই বসে বসে এসব বিদঘুটে অংক তৈরি করেছিল। একবার ভাবলেই বুঝতে পারবেন। বাঁশে কেন তেল দিল তা উল্লেখ করেনি, বাঁশে আইক্কা ছিল কিনা তাও বলেনি। বানর যখন লাফ দেয় প্রথম লাফ দিয়েছে মাটিতে দাঁড়িয়ে এবং দশ ফুট উপরে উঠে তিন ফুট পিছলে সাত ফুটের মাথায় এসে দাড়াল। প্রশ্ন হল কিসে দাড়াল? বাঁশে তো তেল। তাও না হয় মেনে নিলাম সাত ফুটের মাথায় দাড়াল। আবার যখন লাফ দিবে তখন আর দশ ফুট উঠতে পারবে না। কারন মাটিতে দাড়িয়ে যে শক্তি পেয়েছিল তৈলাক্ত বাঁশে দাড়িয়ে সে শক্তি পাবেনা। এটা সম্পুর্ন ভুল অংক। আর একটা অংক আছে। চুরি বিদ্যা শিক্ষা দেয়। যেমন পাঁচ সের দুধে দু সের পানি মিশিয়ে কম দামে বিক্রী করলে কত লাভ হবে তা বের করতে হবে। তার মানে স্কুলেই চুরি বিদ্যাটা আয়ত্ব করা আর কি! বাদ দেন ওসব অংকের কথা আর বাঁশের কথা। এভাবে পথে পথে ঘুরলে বেশিদিন বাচবেন না। উঠুন, গাড়ীতে উঠুন।

মনে মনে ভাবলাম, ভদ্রলোকের কথার সাথে তো আমার ধারনার অনেক মিল। নিশ্চয়ই এ অন্যজাতের ব্যারিষ্টার। কুরুইল্লা বুদ্বির কোনা আলামত দেখা যায় না। তাকে বিশ্বাস করা যায়। উঠে পড়লাম গাড়িতে।

তার বাড়িতে নিয়ে গেল। খাওয়াদাওয়ার পর বলল, আপনি বাঁশের উপর এত ক্ষেপলেন কেন? বাঁশ তো আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অপরিহার্য! আমার জন্মের আগেই আঁতুর ঘর তৈরি হয়েছিল বাঁশ দিয়ে। আমার মৃত্যুর পর এই বাঁশ দিয়ে চাটাই তৈরি হবে, তাতে আমাকে শুইয়ে বরাক বাঁশে করেই নিয়ে যাওয়া হবে কবরে। এই বাঁশ না থাকলে আমাদের দেশের গরীব মানুষ কি দিয়ে তাদের কুড়েঘর তৈরি করত! বাঁশের প্রয়োজনের কথা বলে শেষ করা যাবে না! আপনি দেশে চলে যান। সেখানে আলি আকবরের বাঁশটা পেলেও পেতে পারেন। আমি আপনার টিকেটের ব্যবস্থা করে দিই। এখানে থাকলে আপনি মারা যাবেন।

আমার আলি আকবরের কথা মনে হল। অংকটা সে লিখতেই ভুল করেছিল। অনেক প্রয়োজনীয় কথা সে লেখেনি। যেমন বাঁশে ঘি দেয়া যাবে কিনা, আইক্কা থাকবে কিনা, বাঁশটার সাইজ কি হবে, কোন্ জাতের কোন ঝাড়ের বাঁশ এসব কিছুই উল্লেখ করেনি। সবচেয়ে ভুল করেছে সে সাবধান বানী উল্লেখ না করে। বাঁশ যে ঢুকেও যেতে পারে সে কথা উল্লেখ করেনি। ব্যারিষ্টার কামরুলের কথাই বোধ হয় ঠিক, এটা আলি আকবরের অলস মস্তিক্সের কর্ম। কাল্পনিক। আসলে সামনে যা দেখছি তাই বাস্তব। স্থির করলাম বাঁশের চিন্তাটা মাথা থেকে বাদ দিতে হবে।

======================================
যখন বানর তৈলাক্ত বাশের মাথায় নির্দিষ্ট সময় উঠে এবং নির্দিষ্ট সময়ে নামে তখন- প্রয়োজনীয় সময়={(মোট দৈর্ঘ্য-নির্দিষ্ট সময়
যতটুকু উঠে)÷(নির্দিষ্ট সময় যতটুকু উঠে -)} *২+১

উদাহারনঃ একটি বানর ৯২ ফুট উচু একটা তৈলাক্ত বাশ বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। বানরটি প্রথম মিনিটে ১২ ফুট ওঠে, কিন্তু দ্বিতীয় মিনিটে ৮ ফুট নেমে যায়। বাশের মাথায় উঠতে বানরটির কত মিনিট সময় লাগে?

শর্টটেকনিক:

প্রয়োজনীয় সময়={(মোট দৈর্ঘ্য-নির্দিষ্ট সময় যতটুকু উঠে)÷(নির্দিষ্ট সময় যতটুকু উঠে -)}*২+১
={(৯২-১২)÷(১২-৮)}*২+১=(৮০/৪)*২+১
=৪১মিনিট

এসো নিজে করি:

একটি বানর একটি পিচ্ছিল বাঁশে উঠতে ১ম সেকেন্ডে ৩ মিটার উঠে এবং ২য় সেকেন্ডে ১ মিটার নেমে যায়। যদি বাঁশের উচ্চতা ১৫ মিটার হয় তবে বাঁশের মাথায় উঠতে বানরের কত সময় লাগবে.?

ব্লগের পুরনো পোষ্ট তৈলাক্ত বাঁশে বানরের উঠানামা - একটি জটিল অংকের সমাধান

নাসরুল্লাহ এর লেখা থেকে সংকলিত
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:০১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×