র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের পরিবেশ আইনজীবি রিজওয়ানা হাসান। এটা আমাদের জন্য একটা সুখবর। তিনি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প সহ অনেক বিষযে বলিষ্ঠ ভুমিকা রেখেছেন। এটা সর্বজন বিদিত। আমিও তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে একটা প্রশ্ন, যা আমার মাথায় সন্ধ্যা থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল হাড়ি যদি ফুটো হয় তাহলে ঐ হাড়িতে কি দুধ রাখা যায়? সবাই বলবেন (পাগল ছাড়া) অবশ্যই না।
আমাদের দেশের পরিবেশবিদদের অবস্থা হয়েছে ফুটো হাড়ির মধ্যে দুধ রাখা আর কি? বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তথাকথিত সিভিলিয়ানদের একটি প্রতিক হচ্ছেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন ছিলেন, ঠিক তারচেয়েও বেশি নিরব ছিলেন সিলেটে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে শেভরনের বন উজার করে গ্যাস অনুসন্ধান করা। শুধু তাই নয়, সেখানে শেভরন অনুসন্ধানশেষে কোন গ্যাস না পেলেও অনুসন্ধানে ব্যবহ্নত রাসায়নিক পদার্থ পানিতে ফেলায় ওই এলাকার অধিকাংশ ছড়া বা ছোট ছোট ঝর্ণার পানি দুষিত হয়ে পড়ে। এই দুষিত পানি খেয়ে েএকজন মারাও যান। এ বিষযে রিজওয়ানা হাসান কোন উচ্চবাচ্য করেননি। কারণ মার্কিন কোম্পানীর বিরুদ্ধে গেলে পিছে পুরস্কার হাতছাড়া হয়ে যায় !
সম্প্রতি চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ও খুলনার রামপালে কয়লাভিত্তিক দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিমার্ণের উদ্যো্গ নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন ধংব্স হওয়ার আশংকার কথা তিনি বললেও এ নিয়ে এরচেয়ে বেশি কোন উদ্যোগ তিনি নেননি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো খুলনার রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারতের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে নিমার্ণ হবে। ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানী (এনটিপিসি) ভারতের ভিতরেই সুন্দরবনের অন্তত ২শ কিলোমিটার দুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্য সরকারের অনুমতি চাইলে ভারত সরকার পরিবেশের কথা ভেবে সেই অনুমতি দেয়নি। রাষ্ট্রীয় কোম্পানী এনটিপিসি নিজ দেশে পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে না পেরে বাংলাদেশে প্রস্তাব দিয়েছে সুন্দরবনের কাছে করার জন্য। আর এই কাজে বাংলাদেশ সরকারের ভারতপ্রীতি আবারও প্রকাশ পেল। কিন্তু আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজ একবার এক বিবৃতিতে রামপালেরর বিদ্যুৎ কেন্দ্র না করার আহবান জানিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। রিজওয়ানা হাসানও সে বলয়ের একজন প্রতিনিধি।
এবার আসা যাক চট্টগ্রামের আনোয়ারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা। এই কেন্দ্রটি নিমার্ণে ইতিমধ্যে সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের বক্তব্য এই কেন্দ্রটি আনোয়ারায় করা হলে চারদিকে থাকা বিস্তীর্ন উদ্ভিদ, বনাঞ্চল সর্বোপরি সমুদ্র সংলগ্ন পরিবেশের ইকো সিস্টেমের ক্ষতি করবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ে বাতাস দুষিত হবে। সেই সঙ্গে ছাই ভাসতে থাকবে আকাশে। এর ফলে এই বন্দরে জাহাজ আগমনের হার আমংকাজনক হারে কমে যাবে। বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হলে তার চুল্লী হবে ৬০ থেকে ৭০মিটার। এতে করে বিমান চলাচলে বেশ অসুবিধা হবে। এছাড়া আরও অনেক সমস্যা রয়েছে তাতে। এজন্য অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আণোয়ারা থেকে কেন্দ্রটি সরিয়ে বাশঁখালী এলাকায় করতে। কিন্তু সরকারী দফতরের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও রিজওয়িানা হাসানরা কোন কথা বলছেন না। এমনকি সুশীল সমাজের ব্যাক্তিরাও না।
ডেসটিনি গাছ লাগানোর নামে চট্টগ্রামের বিভিণ্ন পাহাড়ে বিদেশী বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছে। যদিও এর আগেই আমাদের পাহাড়ে বিদেশী গাছ ইউকিলিপটাস গাছের আগম ঘটেছে। এই প্রজাতির গাছগুলো যে কিভাবে পাহাড়ের মাটি ও তার গুনাগুন নষ্ট করে দিয়ে তা এখনই বোঝা যাবে না। এখনই মানুষ অল্প অল্প করে বুঝতে শুরু করেছে সুন্দর সুন্দর বিদেশী গাছ লাগালে কি হতে পারে। যেমনটা ইউকিলপটাস গাছে যে ক্ষতি এখন তা মানুষ বুঝতে শুরু করেছে। কিন্তু রিজওয়ানা হাসান বা তার সমগোত্রীয় লোকজন এ নিয়ে জোরালো কোন বক্তব্য দেননি।
এই ধরনের আরও অসংখ্যা উদাহরণ দেয়া যাবে। যেখানে কাজ করলে প্রকৃত অর্থে এবং দীর্ঘ মেয়াদে ফলাফল মিলে। সেখানে তিনি কাজ করেন না। তিনি করেন স্বল্প মেয়াদের কাজ । যেখানে স্বল্প সময়ে একটা ফলাফল পাওয়া যাবে। সেই ফলাফলকে ফেরি করা যাবে সবখানে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




