somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিল্ড মার্শাল রোমেলঃ নেকড়ের পালে থাকা একজন মানুষ

১৩ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এরউইন জোহানেস ইউজিন রোমেল (১৮৯১-১৯৪৪) ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান নাৎসি বাহিনীর একজন ফিল্ড মার্শাল। ‘ডেজার্ট ফক্স’ নামে বহুল পরিচিত এই ফিল্ড মার্শাল এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে শুধু তার নিজের বাহিনী নয় যাদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন সেই মিত্র বাহিনীর কাছেও ছিলেন সম্মানিত।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনের জন্য Pour le Mérite পদক প্রাপ্ত রোমেল ১৯৪০ সালে ফ্রান্স আক্রমনের সময় ৭ পাঞ্জার ডিভিশন কমান্ডার হিসেবে নিজের সুচতুর রণকৌশলের স্বাক্ষর রাখেন। এরপরেই তাকে উত্তর আফ্রিকায় জার্মান ও ইতালী যৌথবাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করা হয়। উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন যুদ্ধের ফলাফল ও রণকৌশল এর কারণে রোমেল দুই বাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য কমান্ডার হিসাবে মর্যাদা লাভ করেন।মরুভূমি যুদ্ধে তার রণকৌশল কিংবদন্তীতুল্য এবং এখনও অনুসরণ করা হয়। এ কারণেই তাকে ‘ডেজার্ট ফক্স’ নামে ডাকা হয়।

ফিল্ড মার্শাল রোমেল এর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ তার রণকৌশল না, তিনি ছিলেন জার্মান আর্মির একমাত্র সেনানায়ক যার মধ্যে একই সাথে মানবিক গুণাবলী ও পেশাদারিত্ব বিদ্যমান ছিল।



কাদায় আটকে থাকা নিজের গাড়ী সরাচ্ছেন ফিল্ড মার্শাল রোমেল

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ওয়্যার ট্রাইবুন্যালে কখনই তার বা তার অধীনে থাকা বাহিনী ‘Africa Korps’ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপিত হয় নি। তার আফ্রিকা যুদ্ধাভিযানের সময আটককৃত মিত্র বাহিনীর সৈনিকদের সাথে মানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে পরবর্তীতে রিপোর্ট করা হয়েছিল। হিটলারের দেয়া ইহুদি সেনা, বেসামরিক নাগরিক ও কমান্ডোদের নির্বিচারে হত্যা করার আদেশ তিনি উপেক্ষা করেন।

১৯৪৪ সালের শুরুর দিকে তিনজন - কার্ল স্ট্রলিন, আলেকজান্ডার ভন ফালকেনহিউসেন এবং কার্ল হাইনরিখ ভন স্টুল্পনেগেল - হিটলারকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহন করেন। তারা এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে রোমেল কে আনতে চেষ্টা করেন। কারণ তারা জানতেন এই ষড়যন্ত্র কে জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য করতে হলে জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় সেনা কর্মকর্তার এর পক্ষে অবস্থান অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। নাৎসি বাহিনীর চীফ অব ষ্টাফ হান্স স্পাইডেল রোমেল ও ঐ তিনজনের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন করেন। আরও কিছুদিন যোগাযোগের পর ফেব্রুয়ারির কোন এক সময়ে রোমেল এই ষড়যন্ত্রে তার সমর্থন দিতে রাজি হন হিটলারকে হত্যা নয় উৎখাত করা হবে এই শর্তে। কারণ তিনি মনে করতেন হিটলারকে হত্যা করা হলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে এবং হিটলার একজন জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিতি পাবেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল হিটলারকে গ্রেপ্তার করা এবং বিচারের সম্মুখীন করা।


হিটলারের ঊপর ব্যর্থ বোমা হামলাঃ ২০ জুলাই ১৯৪৪

কিন্তু রোমেলের অগোচরে ২০ জুলাই ১৯৪৪ এ হিটলারকে হত্যার জন্য একটি ব্যর্থ বোমা হামলা চালানো হয়। এই বোমা হামলার পর পরই অনেক ষড়যন্ত্রকারী গ্রেফতার হতে থাকে। এদেরই মধ্যে কার্ল হাইন্রিখ ভন স্টুল্পনেগেল ক্রমাগত অত্যাচারের পর রোমেলের জড়িত থাকার কথা ফাঁস করে দেন।

জার্মানীর সাধারণ মানুষের কাছে রোমেল ছিলেন একজন জাতীয় বীর। এই ধরনের একজনকে প্রকাশ্য জনসমক্ষে ফাঁসী বা ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা ছিল হিটলারের জন্য একটি দুরহ কাজ। হিটলার জানতেন রোমেলের এ ধরনের মৃত্যু জনগণের মনোবল ভেঙে দেবে এবং তাঁর নিজের অবস্থান ও নড়বড়ে হয়ে যাবে। কাজটি অন্যভাবে সম্পন্ন করার জন্য হিটলার ও উইলহেম কিটেল একটি পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হিটলারের কাছের দুজন জেনারেল রোমেলের বাসায় গিয়ে তাঁর অপরাধ পড়ে শোনান এবং আত্মহত্যা ও সামরিক আদালতে বিচারের যে কোন একটিকে বেছে নিতে বলেন। তারা তাকে এটাও বলে দেন যদি তিনি বিচারের সম্মুখীন হতে চান তাহলে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অধনস্তদেরকেও গ্রেফতার ও হত্যা করা হবে এবং তাঁর পরিবারকে অত্যাচার করা হবে তাদের মৃত্যুদন্ডের আগ পর্যন্ত। আর তিনি যদি আত্মহত্যা করেন তাহলে তাঁর পরিবারকে তাঁর মৃত্যুর পর কোন অত্যাচার করা হবে না সেই নিশ্চয়তার দেয়া হয়। কিছুক্ষন পর রোমেল তাঁর পরিবারকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত জানান এবং একটি মাঠে গিয়ে আগে থেকেই নিয়ে আসা একটি সায়ানাইড ক্যাপস্যুল খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন।



এখানে বসেই সায়ানাইড ক্যাপস্যুল খেয়ে আত্মহত্যা করেন রোমেল।

তার মৃত্যুতে হিটলার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।



রোমেলের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয় যুদ্ধে পুরাতন ক্ষতের ইনফেকশন। যুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে রোমেলের স্ত্রী রোমেলের মৃত্যুর আসল কারণ বলেন। যদিও অনেকে তখন এটা অবিশ্বাস করেন। কিন্তু ১৯৫৯ নুর‍্যেম্বার্গ ট্রায়ালের সময় এই পরিকল্পনয়ায় হিটলারের মুল সাহায্যকারী উইলহেম কিটেল এই ঘটনার সত্যতা এবং বিস্তারিত জানান।

হিটলারের জেনারেলদের মধ্যে একমাত্র রোমেল এর নামে একটি যাদুঘর স্থাপন করা হয়। তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছেন যারা তারা যেমন গিয়েছেন, তেমনি গিয়েছেন যারা তাঁর বিপক্ষে যুদ্ধ করেছেন।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:৩১
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×