পর্ব-১ ।। দৃশ্য-১:
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম। হলঘর লোকে লোকারণ্য। তিল ধারণের জায়গা নেই। মঞ্চে সুললিত কন্ঠে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করছেন শুশ্রুমন্ডিত এক ব্যক্তি। সবাই তার তেলাওয়াত মন দিয়ে শুনছে।
পর্ব-১ ।। দৃশ্য-২:
তেলাওয়াত শেষে মঞ্চে উপস্থাপকের পূনরায় আগমন। তেলাওয়াতকারীকে ধন্যবাদ দিয়ে বলে উঠলেন,
''প্রিয় দর্শকমন্ডলী, এতক্ষণ আপনারা পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও তরজমা শুনলেন। এবার আপনাদের সামনে বাউল গান পরিবেশন করবেন বাউল.....। আর এরপরেই ডিসকো গান নিয়ে আসছেন আজকের মূল আকর্ষণ, এ সময়ের মহাতারকা DJ.....।
-------------------------------------------------------------------
পর্ব-২ ।। দৃশ্য-১:
বাংলাদেশের জি্ততে চার রান দরকার। হাতে বল মাত্র একটি। দর্শকরা দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করছেন। প্রতিপক্ষ বোলার হাত ঘুরিয়ে বল করতেই, ব্যাটসম্যান সাকিব সপাটে ব্যাট চালালেন। সরকারি কর্মদিবসেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-অফিস ফাঁকা করে খেলা দেখতে আসা স্টেডি্য়াম ভর্তি ক্রিকেটপ্রেমীদের কানে তালা দেওয়া উল্লসিত চিৎকারের মাঝে বল সোজা আছড়ে পড়ে গ্যালারিতে। ছয়!
ফলাফল: বাংলাদেশের জয়।
খেলা দেখে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আগামীকাল কি করে অফিসের বসকে আজকের অনুপস্থিতির কারণ বোঝাবে, তার প্লান ভাজটে ভাজতে বাড়ির পথে পা বাড়ায় সাদেক।
পর্ব-২ ।। দৃশ্য-২:
খেলার পরের দিন। শিক্ষক গতকাল খেলার জন্য ক্লাস-এ না আসা ছাত্রদের দাঁড় করি্য়ে শুধালেন,
''সাকিব চার মারলে তোদের কি রে? শুধু খেলা দেখার জন্য দশ ঘন্টা সময় নষ্ট করলি? হায় রে ক্রিকেট খেলা!! এই দশ ঘন্টায় দেশের কত ক্ষতি হলো কেউ কি কখনো হিশেব করে দেখেছিস?!!! গতকাল খেলা দেখেছে কম করেও এক কোটি বাংলাদেশী। দশ ঘন্টার খেলায় মোট দশ কোটি ঘন্টা খরচ হয়েছে।
এখন, একজন রিকশাওয়ালা বর্তমানে ঘন্টায় পঞ্চাশ টাকা আয় করে। তাহলে এই দশ ঘন্টায় দেশের ইকোনমির কত টাকা ক্ষতি হয়েছে তোরা হিসেব কষে বলতো?''
একটু থেমে, ছাত্র-ছাত্রীদের নত মাথাগুলোর দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ শিক্ষক চিৎকার দিয়ে বললেন, ''পাঁচ'শ কোটি টাকা।''
'' ইংরেজরা দেশী মিরজাফরদের দিয়ে দু'শো বছর এজাতির উপর ছড়ি ঘুরিয়েছে। আর, যাওয়ার সময় এই ভুমির মানুষদের ক্রিকেট খেলা শিখিয়ে দিয়ে সারা জীবনের জন্য তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকার পথ করে গেছে। আর তোরা সেই ফাঁদে পাড়া দিয়ে সেই ব্যবস্থা আরো পাকাপোক্ত করছিস!!!''
একটা দির্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে অজানার পানে তাকিয়ে রইলেন শিক্ষক।
--------------------------------------------------------------------
পর্ব-৩ ।। দৃশ্য-১:
১লা জানু্যারি, সকাল বেলা। স্থান রাজধানির এক অভিজাত এলাকা। পাশাপাশি তিনটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
প্রথমটি একটি মোবাইল কোম্পানির স্থানি্য় ডিলারের। আর দ্বিতিয়টি Archies ও Hallmark-এর। দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকই দোকান বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। মুখে তাদের তৃপ্তির হাসি। থার্টি ফাস্ট নাইট ও নিউ ইয়ার উপলক্ষে এবারে বেশ টুপাইস কামানো গি্যেছে। বোকা তরুণদের পকেট থেকে এভাবে মাল খসাতে কেন যে এরকম দিনগুলো বেশি বেশি আসে না তা ভেবে আফসোস হতে থাকে তাদের।
পর্ব-৩ ।। দৃশ্য-২:
ওদিকে তৃতী্য় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটির মালিকের দম ফেলার ফুরসত নাই। প্রতিষ্ঠানটি দেশের নাম করা একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্থানীয় শাখা। বৈধ/অবৈধ গর্ভপাতের ব্যাপারে এই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম এখন কিংবদন্তীতুল্য। মালিক ভদ্রলোক গলদঘর্ম হয়ে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। সকল কাজের তদারকি নিজে করছেন।
এটা ভি,আই,পি এলাকা। তার প্রতিষ্ঠানের খদ্দেররা স্থানিয় এলাকারই বেশি। থার্টি ফাস্ট নাইটের মত বিশেষ দিবসগুলোর বিশেষ ধাক্কা সামলাতে না পেরে এর পরবর্তী দিনগুলোতে এইসব এলাকার বাসিন্দাদের এখানেই আসতে হয় কি না! তাই, সব কিছুই ঠিকঠাক মত থাকা চাই। গর্ভনিরোধক বড়ি বা গর্ভ পরীক্ষার কার্ড কিংবা বিশেষ ওপারেশন (!!!), যেটাই হোক না কেন, সবই তাদের এক নম্বরটা চাই। আর এসব চাহিদা মত আছে কি না তা দেখার জন্যই মালিক বেচারার এত দৌড়াদৌড়ি।হাজার হলেও খদ্দের হলো দোকানের লক্ষী। তাকে কি নারাজ করা চলে!!!
ব্যস্তটার মাঝেও মালিক ভদ্রলোকের মনে একটা ভাবনার উদয় হলো। থার্টি ফাস্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইনস ডে, ফ্র্যান্ডশিপ ডে-র মত বিশেষ দিবসের কল্যাণেই তো তার প্রতিষ্ঠানের এত নামডাক! ইস, এইসব দিন গুলো যদি আর একটু বেশি বেশি হত! আফসোসে জিভে কামড় দেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিক।
--------------------------------------------------------------------
পর্ব ৪ ।। দৃশ্য-১:
তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির মিছিল। উপস্থিতিদের বেশিরভাগই দেশের বিভিন্ন কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থী। হাতে তাদের হাতুড়ে-কাস্তে খচিত লাল পতাকা। চারদিকে ঘিরে থাকা পুলিশের হঠাৎ লাঠিচার্জ। মিছিলকারীরা আহতাবস্থায় এদিক-সেদিক পড়ে আছেন। অনেকের মাথা থেকে রক্ত বইছে।
এর প্রতিবাদে সামুতে এই লেখার লেখকের ব্লগ লিখন। লেখকের প্রতিবাদে সাথী হয়ে উক্ত ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অন্যান্য ব্লগারদের কমেন্ট সেকশনে নিজ নিজ মন্তব্য প্রদান।[ View this link]
পর্ব ৪ ।। দৃশ্য-২:
উপরের ঘটনার দু'দিন পর।
একটি ইসলামী দলের মিছিল। মুসলমানদের এক বিশেষ দিনের স্মরণে সমবেত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। বেশির ভাগই বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাদের হাতে 'কালেমা' লেখা কালো ঝান্ডা। মিছিলের শুরুতেই হঠাৎ চারদিকে থেকে পুলিশের লাঠিচার্জ। আহতাবস্থায় পড়ে থাকা নেতা-কর্মীদের টেনে-হিচড়ে প্রিজন ভ্যেনে উত্তোলন।
প্রতিবাদে আবারো সামুতে এই লেখার লেখকের ব্লগ লিখন। তবে এবারে তার সাথী হয় সামুর বিশিষ্ট (!!!) ব্লগারদের টক-ঝাল অসাধারণ অমৃত গালিধারা!!!![ View this link]
--------------------------------------------------------------------
পর্ব ৫ ।। দৃশ্য-১:
রমজানের প্রথমদিন।
তারাবিহ-এর নামাজ পরতে রাস্তায় বের হয়েছে সাদেক। রমজানকে স্বাগত জানিয়ে রং-বেরং-এর পতাকা, পোস্টার চারদিকে। রাস্তাঘাট প্রায় ফাকা। খুশি হয় সে। নাহ, দেশের মানুষ তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
পর্ব ৫ ।। দৃশ্য-১:
২৮ রমজান।
তারাবিহ-এর নামাজ পরতে রাস্তায় বেরিয়ে থমকে দাড়ায় সাদেক। আসন্ন ঈদকে স্বাগত জানিয়ে রাস্তায় হরেক রকমের পোস্টার, ব্যানার। একটি পোস্টারের দিকে চোখ তার। চার রঙা কাগজে বড় বড় করে লিখা- ''ঈদের দিনের বিশেষ কনসার্ট ও ফ্যাশন শো। থাকবেন এসময়ের ক্রেজ....।''
আর পড়তে পারে না সাদেক। একটি দীর্ঘশ্বাস চেপে হাটা ধরে।
-------------------------------------------------------------------
পর্ব ৬ ।। দৃশ্য-১:
হিন্দি একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের মঞ্চ, যার উপস্থাপক 'কিং খান' অর্থাৎ শাহরুখ খান। উপস্থিত ও প্রোগ্রামটি দেখতে থাকা বাইরের দর্শকদের মাঝে টান টান উত্তেজনা। 'কি হয়, কি হয়' সিচুয়েশন। কারণ, এইমাত্র শাহরুখ খান আককের শো-র বিশেষ অতিথি এক বাঙ্গালি ভদ্রলোককে একটি কঠিন প্রশ্ন জিগ্যেস করেছেন। পারলে ৫০ লক্ষ টাকা, না পারলে পত্রপাঠ বিদায়।
প্রশ্নটি হচ্ছে- ''পৃথিবীর সবচেয়ে হিপোক্রেট জাতিগোষ্ঠী কারা?''
বাঙ্গালি ভদ্রলোকটি মাথা হেট করে দাড়িঁয়ে আছেন। দরদরিয়ে ঘামছেন বেচারা। ভাবছেন, এর কি উত্তর দিবেন তিনি? ওহ, ধরণী দ্বিধা হও।
শাহরুখ এবারে অভয়ের হাসি হেসে বললেন, ''ঠিক আছে, আমি আরো একটু সহজ করে দিচ্ছি। জাতিটির নাম 'ব' দিয়ে শুরু আর শেষ 'ল' দিয়ে। তারপরও না পারলে আপনি আপনার ক্লাসমেটদের নিকট থাকে 'চিট' বা 'কপি' করতে পারেন।''
উত্তরটি জানেন বাঙ্গালি ভদ্রলোক। তবু, চুপ করে থাকেন। ঘড়ির কাটায় সময় শেষ হয়ে আসে।
তবু, নিশ্চুপ ভদ্রলোক। নিচু মাথা আরো নিচু করে চোখের জলকণাগুলো লুকাতে সচেষ্ট হোন। মনে প্রশ্ন- কিছু কিছু মানুষের অকালকুষমন্ডতার দায়ভাগ কেন পুরো জাতি বয়ে বেড়াবে? কেন?
-------------------------------------------------------------------
শেষ পর্ব ।। শেষ- দৃশ্য:
এবারে একটি পুরোনো কৌতুক, তবে নতুন মোড়কে।
জাতির এই সময়ের ক্রেইজ ডিজুস জেনারেশনের দুই তরুণ চাপাবাজ হাটতে বের হয়েছে। চুলগুলো তাদের জেল দিয়ে এমন ভাবে খাড়া করা দেখলে মনে হয় স্টিল ভেঙ্গে যাবে (ঠিক স্যাটেলাইটে চ্যানেলের Set-Wet-এর Ad-এর মত)। পরনে বিখ্যাত 'যায় খুলে যায়' প্যান্ট'। এই প্যান্টের বিশেষত্ব হচ্ছে- এটির কোমর তিনজনের সমান হবে, আর সেই সাথে কোমর থেকে প্যান্ট এমন ভাবে খুলে খুলে পড়ে যেতে হবে আন্ডারপ্যান্টের পিছনদিক সবাই দেখতে পারে। আর জাঙ্গিয়া না থাকলে তো কথাই নেই।
ছেলে দু'টো বাংলিন্দ (বাংলা + ইংলিশ + হিন্দি) ভাষায় তাড়স্বরে একজন-আরেকজনের সঙ্গে চাপাবাজি করে চলেছে। চাপাবাজির সাবজেক্ট- ''দু-জনের কে কত জাতির জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে তা নিয়ে তাদের বস্যা। দু'জনেই নিজ নিজ অভিগ্যতা বর্ণনা করে নিজকে বেশি ত্যাগী বলে দাবী করছে।
তুমুল তর্কের এক পর্যায়ে তাদের একজন বলে বসল,
''তুমি জানো, Yesterday কেয়া হুয়া? হামারা nation-এর জন্য মে Yesterday যাহা করা, টুমি কখনো খরতে পারবে না, কাভি নেহি।''
দ্বিতীয় ছেলেটি এবারে একটু অবাক হয়ে শুধালো কি এমন কাজ সে করেছে যা সে কখনো করতে পারবে না!!!
প্রথম ছেলেটি উত্তরে বললো,
''Yesterday 'কৌন বনেগা ক্রোড়পতি-তে অমিতাভ বচ্চন আমাকে কোটি টাকা কো সাওয়াল পুছা। He asked me, ''এই পৃথিবীর সাবসে বড়া অভাগা country কৌন হায়?''
দ্বিতীয় ছেলেটি এবারে বেশ আগ্রহান্বিত স্বরে আবার শুধালো, ''তুই
ছেলেটি চোখ গোল গোল করে একটু থেমে ঠোট বাঁকা করে বলে,
''ঠুমি জানো হামি খি করেছি? হামি কোটি টাকা কো ছোড় দিয়া, but, নিজের country-র নামকো মিডিয়ার সামনে বলে, আখ্খা জাতির প্রেস্টিজকো ফালুদা নেহি বানায়া, you know?''
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৪:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


