বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন ও সাহিত্যসমাজ দেশে ক্রমবর্ধমান ইভটিজিং আর ধর্যন তথা যুবসমাজের সামাজিক অবক্ষয়ের জন্যে দায়ী কি? পুরোটা নাহলেও এর কিছু অংশ দায়ী তো বটেই। আশির দশকের 'চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হতে দোষ কি তাতে'' গানটির কথা মনে পড়ে? নায়িকা একাকি পথ চলছে আর ক্ষণে ক্ষণে তার আচল টেনে ধরে নায়কের সে কি উথাল-পাথাল গান। আরিব্বাস!
আর, নব্বই দশকের ''ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলা না, মীরাবাঈ'' কিংবা 'মন চাইলে মন পাবে, দেহ চাইলে দেহ' গান দু'টো তো এখন ইতিহাস। এইসব গানের পংক্তিগুলোর দিকে একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায়, এগুলো কেমন বেলেল্লাপনাকে পূঁজি করে লেখা হয়েছে যা আমাদের শত-কোটি যুবসমাজকে অন্ধকার পথে নিয়ে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট।
আর, কাজী আনোয়ার হোসেন, হুমায়ুন আজাদ বা ইমদাদুল হক মিলনের মত নামকরা লেখকগণ তাদের কিছু লেখাতে যেভাবে যৌনতার রগরগে বিবরণ তুলে ধরেছেন, সেগুলোকেও কেন দায়ী করা যাবে না সমাজিক অবক্ষয়ের জন্যে? সাহিত্যের নামে এই অশ্লীলতার প্রচার সমাজে কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে একটি গবেষণা হওয়া আসলেই খুব জরূরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু, তাই বলে কেউ যদি পুরো সাহিত্যসমাজ বা সঙ্গীতজগতের সবার উদ্দেশ্যে আঙুল তুলে, তা হবে সত্যিই একটা ভুল কাজ।
হঠাৎ এ নিয়ে লিখতে গেলাম কেন? তনু নামের এক মেয়েকে নিয়ে সম্প্রতি খুব বাজে একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে বাংলাদেশে। যারা এই কান্ডটি ঘটিয়েছে আর যেভাবে ঘটিয়েছে তা অমানবিকতার চূড়ান্ত এক উদাহরণ।
ইভটিজিং, ধর্ষন ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক পুরোনো একটি সমস্যা। ভারতে চলন্ত ট্রেনে বা বাসে ধর্ষণের ঘটনা পুরো বিশ্বকে আলোড়িত করেছিলো। বাংলাদেশেও গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি নারী অবমাননার ঘটনা ঘটে গিয়েছে। র্যাব-পুলিশ বাংলাদেশে তো কম নেই। তারপরও, কেন একের পর এক এমনতরো হীন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে? সামাজিক অবক্ষয়ই কি এর মূল কারণ?
যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে খুঁজে দেখা প্রয়োজন কিভাবে এর উৎপত্তি, কোথা থেকেই বা এর শুরু, কোথায় ঘূন-পোকা খেয়ে সব ছাড়খাড় করে দিচ্ছে। আর সবার মত দেশের সাহিত্য ও সঙ্গীতসমাজ এর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। ঘুনে ধরা কোন ক্ষত থেকে গিয়েছে কি সেখানে? থেকে গেলে সেগুলো খুঁজে বের করা জরুরী নয় কি? আর নাহলে বাংলার অখাদ্য সিনেমাগুলোর সঙ্গে পার্থক্য থাকলো কোথায়?