কানাডা বা আম্রিকার বা ইউরোপের মতো ঠান্ডার দেশে সমস্যা যে প্রতি সিজনেই ড্রেস কিনতে হয়। দেশের মতো এক ড্রেস দিয়ে জীবন পার করার কথা স্বপ্নেও ভাবি না। হালকা ঠান্ডা পড়ার সাথে সাথে ফল জ্যাকেট সহ মাঝারি ড্রেস, শীতের শুরুতে ভারী জ্যাকেট সহ ভারি ড্রেস। আবার সামার শুরু হলে কত পাতলা ড্রেস পরা যায় তার চেস্টা।
তাই এবার শুরুতেই বাচ্চাদের জন্য মার্কেটে যেয়ে মনটা খুশীতে ভরে উঠলো। প্রায় প্রতিটি বড় বড় শপিং মলেই "মেইড ইন বাংলাদেশ" লিখা ড্রেস বা জুতা। আমি সাধারনত যেখানেই যাই সবসময়ই নিজের মনের অজান্তে "মেইড ইন বাংলাদেশ" লিখাটা খুঁজতে থাকি সব কাপড়ের আনাচে কানাচে। বেশ ক'বছর এ ট্যাগ না পেলেও এবারের শীতের শুরুতে প্রায় শপিং মলের বড় বড় দোকানে "মেইড ইন বাংলাদেশ" ট্যাগটা দেখতে পাচ্ছি।
আমি বা আমার মতো সাধারন প্রবাসীর বেশীর ভাগই দেশে কোন পলিটিকেল পার্টি ক্ষমতায় আসছে তা নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই। আমাদের একটাই চাওয়া, "মেইড ইন বাংলাদেশ" লিখাটা যেন দেখতে পাই। আর গর্বভরে পাশের ভিন্নদেশী কাউকে দেখিয়ে বলতে পারি, লুক, দিস ইজ ফ্রম মাই কান্ট্রি। ইউ নো মাই কান্ট্রিস কোয়ালিটি ইজ দা বেস্ট।
হাঁ, একজন প্রবাসী হিসেবে এটাই আব্দার ক্ষমতাশীনদের কাছে। তাই এক মুঠো ভালোবাসার সাথে এক চিমটি প্রত্যাশার প্রবাসী ইশতেহার দিলাম। কেউ কি একটু তাকাবে এই দিকে??
- আমার দেশের মানুষগুলো যেন থাকে ডালে ভাতে।
- গার্মেন্টস্ সেক্টরগুলো যেন কাজ করতে পারে সুন্দরভাবে। কোন দেশী বিদেশী রাজনৈতিক কুটচালে যেন তা বন্ধ না হয়ে যায়।
- যে অসহায় মেয়েগুলো গ্রাম থেকে জীবনের তাগিদে এসে গার্মেন্টস্ এ কাজ করে যাচ্ছে দিনের পর দিন তারা যেন পলিটিক্স এর নোংড়ামীর স্বীকার হয়ে পোড়া লাশ না হয়ে যায়।
- যে মেয়েটি স্কুলের বই হাতে নিয়ে বের হয়েছে সে যেন স্কুল শেষ করে বাড়িই ফিরে যায়। মাঝপথে টিজিং এর স্বীকার হয়ে ঝুলন্ত লাশ না হয়ে যায়।
- যে ছেলেটি পড়তে বের হয়েছে সে যেন রাজিনীতিক মিছিলের বলির পাঠা না হয়ে যায়। পড়া শেষ করে মায়ের কাছেই ফিরে আসে।
- যে ছেলেমেয়েগুলো পড়া শেষ করে কাজের সন্ধানে বের হয়েছে তারা যেন বেকারত্বের অভিশাপের ঘানি টানতে না হয়। তাদের জীবনধারনের জন্য নূন্যতম কোন কাজ পায়।
- যে অসহায় বেকার ছেলেমেয়েগুলো কাজ না পেয়ে বিপথে যেতে বাধ্য হচ্ছে, তাদের জন্য একটু আলোর মুখ দেখানো।
- যে তরুনের হাতে নিজের লাভের জন্য নেশার দ্রব্য তুলে দিচ্ছেন তা বন্ধ করেন। একজন দু'জনের লাভের জন্য পুরো দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাচঁতে দিন।
- সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় আবার নিজের প্রিয় মানুষগুলোর কাছে ফিরে আসার নিশ্চয়তা চাই, জীবনের নিরপত্তা চাই।
- যে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমার ট্যাক্সের টাকায়স্যেুট টাই পরে বসে আছে তারা আমাকে নূন্যতম সেবা দিবে। আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবে না।
- দেশে রাজনীতি থাকবেই কিন্তু সেটা স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নয়, তার পরের লেভেলে্। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়তে দিন, ওদের মেধাকে কাজে লাগতে দিন। ওরাই দেশকে নিয়ে যাবে অনেক অনেক দূর।
- শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা দিন। ওরা যেন নিরাপদ থাকে ঘরে বা বাইরে, স্কুলে বা মাঠে, রাস্তায় বা উপসনালয়ে।
হাঁ, দেশে থাকলে হয়তো আরো অনেক কিছু নিয়ে ভাবতাম কিন্তু দেশের বাইরে আমাদের তেমন কিছু চাওয়া নেই, কিছু পাওয়া নেই। আমরা প্রবাসীরা সবসময়ই কিছু দেবার জন্য উন্মুখ। কি গভীর ভালোবাসা দেশের জন্য, এ অভাগা মানুষগুলোর জন্য বুকে ধারন করি তা কি কেউ জানে। ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
থাকুক একটু শান্তিতে দেশের মানুষগুলো, একটু নিরাপদে থাকুক আমার প্রিয় মুখগুলে, সামান্য ডালে ভাতে থাকুক সারাটি বছর.....।
-
-
-
-
কিছু নিবাচনী কার্টুন শেয়ার করলাম সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়ভাবে, তাই সঙ্গতকারনে ক্ষমা্প্রার্থী।
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন।
কার্টুন ক্রেডিট: গুগুল মামা!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৬