এই বোকা মেয়েগুলা তোমাদেরই বলছি.....! পর্ব-১
ফেইসবুকে রঙ্গীন রঙ্গীন সেলফি পোস্ট করে, মুখ বাকায়ে ঠোটঁ বাকায়ে ছবি তুলে ভাবছো তোমরা সব ঐশ্বরিয়া হয়ে গেছো। তোমাদের মতো সুন্দরীদের বিয়ে করার জন্য পঙ্খীরাজ ছুটিয়ে সব রাজপুত্রেরা ছুটে আসবে। শোন, শুনতে খুব খারাপ লাগলেও সত্য কথাটি বলি। ওইসব ছবি দেখে রাজপুত্রেরা কেন, কোন কোঠালপুত্ররাও আসে না। আসবে রাজপুত্রের মুখোশে সব রাক্ষসরা। ওরা তোমাদের বন্দী করবে, মারবে, ধর্ষন করবে, তারপর তোমাদের চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না? তাকাও চারদিকে, পড়ো প্রতিদিনের খবরের কাগজ, খোঁজ নাও চারপাশে, সত্যটা জানতে চাও সবার কাছে.......। দেখবে তুমি আতঁকে উঠবে। তোমার বয়স কম, অভিজ্ঞতা নেই, যা দেখো তাই বিশ্বাস করো, তাই বাস্তবতা বুঝতে পারছো না। বাস্তবতা আড়াই ঘন্টার বাংলা বা হিন্দি মুভি নয়।
মুভি, ইউটিউব, ফেইসবুক, টুইটার দেখে জীবনটা খুব রঙ্গীন মনে হয়। সবকিছু মনে হয় ছবির মতো সুন্দর, সাজানো গোছানো, কোথাও এতটুকু অসামন্জস্য নেই। তাই তোমাদের ধারনা হয়েছে জীবনটা মনে হয় সম্পূর্ণ রঙ্গীন ছবি। এতে কোন কষ্ট নেই, ক্ষোভ নেই, দু:খ নেই.... শুধু আছে আনন্দ আর ভালোবাসা।
ভুল, তুমি চরম ভুলের রাজ্যে বাস করছো। ইউএন ওমেন এর স্ট্যাটিসটিক্সটা দেখো। বাংলাদেশের ৫৪.২% মেয়েই তার হাজবেন্ড বা সঙ্গীর দ্বারা নির্যাতীত হয়। আর হাজবেন্ড ছাড়া অন্যদেরটা যোগ করলে নির্যাতনের হিসেবটা মনে হয় ৯০% এর উপর হবে।
Global Database on Violence against Women
আমেরিকার রিপোর্টটা দেখো, প্রায় প্রতি ৩জন মেয়ের একজন নির্যাতনের স্বীকার।
Findings From the National Violence Against Women Survey
এখানে যে রিপোর্ট দেখছো তাহলো শুধুমাত্র অফিসিয়াল রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে স্ট্যাটিসটিক্সটা। বাস্তবতা এর চেয়েও চরম খারাপ। কারন খুব কম মেয়েই তার সংসার ছেড়ে আসতে চায় বা রিপোর্ট করতে চায়। এভাবে ইউরোপ, কানাডা, আফ্রিকা, এশিয়া......... সব দেশের চিত্র একটু চোখ মেলে দেখো। সবখানে একই চিত্র। একই নির্যাতন, একই অত্যাচার......... শুধু হয়তো ধরনটা কিছুটা ভিন্ন।
তোমরা ভাবছো আমি তোমাদের ভয় দিচ্ছি? না, আমি কোনভাবেই ভয় দেবার চেস্টা করছি না। আমি তোমাদের বোঝানোর চেস্টা করছি বাস্তবতা হিন্দি/বাংলা মুভি নয় যে কোন বিপদে পড়লা আর নায়ক এসে তোমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে বাস্তবতা, এখানে নায়ক খুব কম, চারপাশে শুধু ভিলেন আর ভিলেন। তুমি যাদের নায়ক ভাবছো তারাই হয়তো বড় ভিলেন। নায়কের মুখোশের আড়ালে হাত বাড়িয়েছে।
তাহলে, তোমরা কি করবে? সেলফি তোলা বন্ধ করে দিবে? সাজুগুজো বন্ধ করে দিবে? বন্ধু বানানো বন্ধ করে দিবে? প্রেম করবে না? বিয়ে করবে না?........... না আমি কোনভাবেই তা বলছি না। তাহলে কি করবে তোমরা? কিভাবে এর সমাধান হবে?
ওয়েল, আমার মতে এর একমাত্র সমাধান নিজেকে তৈরী করা। হাঁ, নিজেকে তৈরী করাই এর একমাত্র সমাধান। শিক্ষিত হও, আত্মবিশ্বাসী হও, সেল্ফ ডিগনিটি বাড়াও, নিজেকে এমন জায়গায় দাঁড় করাও যেখানে থেকে তোমাকে কেউ ছুঁতেও ভয় পায়।
তুমি কি ভেবেছো স্বামী শাশুড়ির কথায় পড়াশুনো ছেড়ে দিয়ে, চাকরী ছেড়ে দিয়ে ঘর সংসার করলে ওরা তোমাকে মাথায় তুলে নাচবে? না কেউই তোমাকে ঘিরে নাচবে না বোকা মেয়েগুলো। যারা এ ধরনের আবদার করে তাদের মানসিকতা নিয়ে আমার বরাবরেই সন্দেহ। কারন এ ধরনের মানুষগুলোই তোমাকে দাস বানাতে চায়, আজ্ঞাবাহী পুতুল বানাতে চায়, ওরা নাটাই হাতে রেখে তোমাকে ঘুড়ির মতো উড়াতে চায়, যেমন খুশি তেমন করতে চায়। তোমার আত্মমর্যাদা বাড়লে, শিক্ষিত হলে তোমাকে দাস বানাতে পারবে না। তাই তোমাকে কোনভাবেই শিক্ষিত হতে দিতে চায় না, আত্মবিশ্বাসী হতে দেখতে চায় না, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন কোন নারীকে ওরা কোনভাবেই চায় না।
একমাত্র শিক্ষাই পারে তোমাকে ওদের হাতে পুতুল হওয়া থেকে বাচাঁতে। শিক্ষাই পারে তোমাকে আত্মমর্যাদাশীল করতে, তোমার মাঝে আত্মবিশ্বাস বেড়ে তুলতে। তুমি কেন অত্যাচারিত হবে? কেন ওদের ঘুড়ির নাটাই হবে? কেন তোমাদের জীবনের ডিসিশান তাদের হাতে থাকবে? কেন তোমার ভালোলাগা মন্দলাগাও ওরা ঠিক করে দিবে?
তোমার জীবন তোমার, তোমার জীবনের ডিসিশান তোমার, তোমার ভালোলাগা মন্দলাগা ও তোমার। তুমি শুধু ওদের সাথে পরামর্শ করতে পারো কিন্তু বাকি সব কিছু তোমার ইচ্ছে অনিচ্ছাই হবে। আর এ শক্তি অর্জনের জন্য তোমাকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, আত্মমর্যাদাশীল হতে হবে।
এই বোকামেয়েগুলো তোমাদেরই বলছি, পারবে না তোমরা নিজের পায়ে দাড়াঁতে? পারবে না অন্যের হাতের নাটাই ছিড়েঁ আকাশে উড়তে? পারবে না দাস নয় আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটা নারীতে পরিনত হতে?.................!
অবশ্যই পারবে, শুধু একবার নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে ভাবো, ভাবো, আরো ভাবো ........ তুমি কার জন্য বাঁচতে চাও নিজের জন্য নাকি অন্য কারো জন্য।
ছবি: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:২১