somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

আপনি কতটুকু জানেন আপনার সন্তানকে?

২১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবির এ চমৎকার ছেলেটির নাম মিনহাজ জামান। কানাডার প্রথম সারির ইউনিভার্সিটি ইয়র্কের ইন্জিনিয়ারিং এর ছাত্র ছিল। এখানে বলে রাখা ভালো কানাডার কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া খুব সোজা ব্যাপার নয়। শুধু ভালো রেজাল্ট থাকলেই হবে না, তাকে হতে হবে সব কিছুতে চৈাকশ। এবং এর সব শর্ত পূরণ করেই ছেলেটি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ পায়। বাবা মা ছেলেটির ভর্তির সুযোগের পর বাসায় বিশাল পার্টির আয়োজন করে। তাদের আনন্দ সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল।

এক বোন আর সাথে দাদীকে নিয়ে চমৎকার একটি সুখী পরিবার। অভিবাসী পরিবারের সেকেন্ড জেনারেশানের সন্তান তাই বাবা মায়ের সকল স্ট্রাগলের কিংবা সকল কষ্টের সমাধান চেয়েছিল ছেলে মেয়েকে প্রতিষ্ঠার মাঝে। ছেলের এ সাফল্যে বরাবরেই গর্বিত ছিল বাবা মা। তাই যখনই নতুন কারো সাথে পরিচয় হতো গর্বভরে ছেলের সাফল্যের গল্প শোনাতো।

এ বছরই ছেলেটির ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশান করার কথা। বাবা মা অধীর আগ্রহে দিন গুনছে কবে তারা গ্রাজুয়েশান পার্টিতে যাবে আর ছেলের গ্রাজুয়েশান ইউনিফর্মের সাথে ছবি তুলবে। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর ছেলেটির মাঝে অনেক পরিবর্তন আসে। ছেলে একা একাই রুমে পড়াশুনা করতে চায় ডোর ক্লোজ করে। কোথাও যেতে চায় না, কারো সাথে মিশতে চায় না। তাই তারা কেউই ছেলেটিকে কোনভাবেই ডিস্টার্ব করে না। তাকে তার মতো থাকতে দেয়।

২৯ জুলাই, ২০১৯ কানাডার পুলিশের কাছে একটি অনলাইন গেইম পোর্টাল ( Discord forum “Perfect World Void”) থেকে কল আসে যে তাদের একজন এ্যাক্টভি প্লেয়ার বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছে তাদের পোর্টালে। সেখানে সে রক্তাক্ত ছুরি হাতে এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের খুন করেছে বলে দাবী করে। এবং তার নীচে ম্যাসেজে লিখে যে, “I don’t want my parents to feel the shame of having a son like me.”



কানাডা পুলিশ দ্রুত ছেলেটির এ্যাড্রেস বের করে বাসায় হানা দেয় এবং উদ্ধার করে বাবা মা বোন দাদীর রক্তাত লাশ। নিজেই হত্যার দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে মেহনাজ। কেন এমন করেছে তার উত্তরে সে জানায়;

গেমের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিল। যার ফলে প্রথম বর্ষেই ফেল করে সে। কিন্তু লজ্জায় বাবা মা সহ কাউকেই জানাতে পারেনি। এবং এর থেকে বের হবারও চেস্টা করেনি। তারপর দিনের পর দিন বাবা মাকে মিথ্যে বলে আসছিল। ক্লাসের কথা বলে শপিং মলে ঘুরে বেড়াতো আর গেইম খেলতো। কিন্তু যখন গ্রাজুয়েশানের সময় আসলো ও বাবা মা তার রেজাল্ট ও অনুষ্ঠানের ডেইট জানতে চাইলো তখন সে এ লজ্জার হাত থেকে বাচাঁর জন্য এ খুনের পরিকল্পনা করে।

-
-
-
এবার আমার পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলছি, এর থেকে আমরা বা আমি অনেক কিছু শিক্ষা নিয়েছি কি?

১) আমাদেরকে কি সন্তানদেরকে সবসময়ই নজরে রাখা উচিত নয় কি? ওরা কি করছে, কি পড়ছে, ওদের মানসিকতা, ওদের কষ্ট, দু:খ, ভালোলাগা, মন্দলাগার খোঁজ রাখি কি?

২) ওদেরকে স্বাধীনতা দেয়া উচিত, কিন্তু তা কতটুকু? তা নিয়ে হিসেব করা উচিত নয় কি?

৩) সন্তানের সাফল্য যেমন উদযাপন করা উচিত তেমনি ব্যার্থতাও মেনে নেয়া উচিত নয় কি? ওদের উপর নিজের প্রত্যাশার পাহাড় চাপানো উচিত কি?

৪) অনলাইন গেইম নামের এ অভিশাপ যেন আপনার আমার সন্তানকে গ্রাস না করে তার দিকে নজর দেয়া উচিত কি? (ব্যাক্তিগতভাবে আমি কোনভাবেই অনলাইন গেইম পছন্দ করি না। এটা আপনার জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে..... সে গল্প আরেকদিন)

৫) সন্তানের সাথে কঠোর টিচার নয়, শুধু অভিবাবক নয়, বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত; পরিবারই তার আশ্রয়ের স্থান হিসেবে গড়ে তোলা উচিত; তাই নয় কি?

৬) প্রতিদিনের কতটুকু সময় আমরা বরাদ্দ করি সন্তানদের জন্য, তার হিসেব রাখি কি?

-
-
প্রায় এক বছর হয়ে যাচ্ছে এ ঘটনার। এখনো আমি মনে করি সুন্দর মুখগুলি। আর ভীষন মন খারাপ করি। এ পরিবারটি বাস ছিল আমার বাসার খুব কাছে, যদিও ব্যাক্তিগতভাবে চিনতাম না। তারপর আর দশটা বাংলাদেশী পরিবারের মতোই পরিপূর্ণ পরিবার ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩২
৩৯টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×