ব্লগার নূর আলম হিরণ বিয়ে করেছেন বলে ব্লগে পোস্ট করেছেন। শুভকামনা নূর আলম হিরণ। সেই সাথে উনি এও জানিয়েছেন যে একই দিনে তিনি আরেকটি মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলেন যদিও সেখানে উনার বিয়ে করার কোন সম্ভাবনা ছিল না।
এদিকে আমাদের রাজিব নূর ভাই ও জানিয়েছেন যে উনার ছোট কাকার জন্য কনে দেখতে যেয়ে দিব্যি ভুড়ি ভোজ করে এসেছেন বিয়ের সম্ভাবনা না থাকা স্বত্বেও। যাহোক, দু'টি ঘটনা পরপর আসাতে আমার নিজেরও পাত্রী দেখার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার লোভ হলো।
ঘটনাটা শশুড় বাড়ির এক আত্বীয়ার মেয়ের। আমার জীবনে এ ধরনের মেয়ে দেখানোর অভিজ্ঞতা এই প্রথম। যা বলছিলাম, মেয়েটি রুপে গুনে শিক্ষায় যথেস্ট ভালো। অবশ্য পাত্রপক্ষকেও ফেলনা নয়। বিআইটি থেকে পাশ করে এলজিআরডিতে জব করছিল। আর ছেলের বাড়ি থেকে নিজেদেরকে বিশাল শিক্ষিত ও উচ্চ পদস্থ বলে দাবী করে আসছিল। যাহোক সেবার ঈদে শশুড় বাড়ি যাবার কারনে আমার ডাক পড়লো মেয়েকে সাজগোজ থেকে সবকিছু দেখাশোনা করার।
সকাল থেকেই ছুটোছুটি হুলুস্থুল অবস্থা। অন্তত ১০ রকমের পিঠাই শুধু তৈরী করেছিল তারা। আর ডিনারের আয়োজনে হেন কিছু নাই মেয়েপক্ষ করে নাই। গরু মুরগী খাসিই শুধু না গলদা চিংড়িই ভুনা করেছিল প্রায় ৪ কেজি। সাথে কম করে ১৫/২০ ধরনের আইটেম। যদিও পাত্রপক্ষ বলেছিল ৬/৭ জন আসবে। কিন্তু তারপরও প্রায় ২৫/৩০ জনের আয়োজন করেছিল তারা।
যাহোক সন্ধ্যা ৭ টায় আসার কথা ছিল। এবং তার একটু আগে ফোনে পাত্রপক্ষ জানালো যে তারা অল্প কিছু সংক্ষক লোক বেশী আসবে। আমরা ওকে বলে কাজে মন দিলাম। কিন্তু রাত সাড়ে আটটায় যখন আসলো তখন তো আমাদের ভিমড়ি খাবার অবস্থা। কম করে ৩০/৩৫ জন আন্ডা বাচ্চা গুড়া বুড়া নিয়া হাজির। তাদের চেঁচামেচি হৈচৈ এ বাড়ি কঠিন গমগম অবস্থা।
যথা সময়ে মেয়েকে সাজিয়ে গুজিয়ে রেডি করে নিয়ে গেলাম ড্রয়িংরুমে। ১৫/২০ জন্য আত্বীয় মুরুব্বী বসেছিল চারপাশে ছেলে সহ। সাথে আবার ছেলের ৩/৪ জন বন্ধুও এসেছিল। মেয়েটাকে কোন রকমে বসাতে না বসাতেই শুরু করলো সবাই মিলে ইন্টারভিউ। কি করে, কোথায় পড়ে, কোন ইয়ারে, নামাজ পড়ে কিনা, ইংরেজী জানে কিনা, আরবী জানে কিনা, কোরআন পারে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়েটিও অতি ধীরে ধীরে সব প্রশ্নে উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল ধৈর্যের সাথে। কিন্তু সমস্যা হলো আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছিল।
এভাবে ৩০ মিনিট ইন্টারভিউ দেবার পর একজন মুরুব্বি বলে উঠলো মা, একটু হাটোতো। মেয়েটি উঠে একটু হেটে এসে বসলো। কিন্তু ততক্ষনে আমার মাথার বারুদ মোটামুটি আপ এ। মেয়েটি বসা মাত্রই ছেলের একটা বন্ধু বলে উঠলো, "দেখি আপনার চুল দেখানতো। শুনেছি আপনার চুল অনেক লম্বা।" বলা বাহুল্য মেয়েটির চুল ছিল হাটুর সমান লম্বা। আর তখনই শাশুড়ি শ্রেনীর একজন উঠে যেয়ে মেয়েটির মাথার ঘোমটা টেনে খুলে দিল। কিন্তু ততক্ষনে আমার মাথায় মোটামুটি বারুদ জ্বেলে উঠলো। আমি ঠাস করে ভদ্রমহিলার হাত চেপে ধরলাম সাটআপ বলে। এবং রাগে ঠেলায় মুখ দিয়ে ইংরেজীই আসছিল। কিছুতেই বাংলা শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না সেই সময়। তারপর মেয়েটিকে টানতে টানতে ভীতরে নিয়ে গেলাম।
মহিলা যেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেলো তেমনি উপস্থিত সবাই ও ভ্যাবাচ্যাকা খেল। সাথে আমিও ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম এই ভেবে যে এইটা কি করলাম। মেয়েও আমার না, ছেলেও আমার না কিন্তু মাঝখান থেকে আমার জন্য পুরো অনুষ্ঠান পন্ড হলো। যাহোক, বিয়েটা সেখানে হয়নি ঠিকই তবে আমার আত্বীয়ও আর ভুলেও আমাকে কখনই ডাকে নাই। এমন কি তার মেয়ের বিয়েতেও না।
তাই হিরণ সাহেবদের মতো যারা কনে দেখতে যাবেন তাদেরকে আরো সাবধান হতে হবে যেন আমার মতো উটকো কেউ না থাকে সেই মজলিশে।
সবাই ভালো থাকেন আর বেশী করে কনে দেখে ভুড়িভোজ করে বেড়ান ।
ছবি: গুগুলমামা
উৎসর্গ: সকল অবিবাহিত ব্লগার।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪০