somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

একজন কিরপিনের গল্প B-))

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিরপিন মা হাসান ভাই দেখি বহুদিন নিখোঁজ। বহুত টেনশানে আছি, কিরপিনগিরি করতে যাইয়া কই হারাইলো। আশা করি কিরপিনগিরির সানডে মানডে কইরা তাড়াতাড়িই ফিরা আসবেন। যাহোক, উনার অনুপস্থিতিতে কিরপিন পোস্ট মিস করছি তাই আমার দেখা কিছু কিরপিনের কিরপিনগিরি নিয়া আসলাম এবার :P

আমি তখন চাকরী করতাম একটা ইর্ন্টান্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে। আমার মাথার উপর ছিল একজন ইন্টারন্যাশানাল বস্। যিনি প্রতিবেশী দেশের একজন। তো সেই ভদ্রলোকের মাসিক বেতন ছিল প্রায় ১০ লাখ টাকা। জ্বী, হার্টফেল করার কোন কারন নাই ব্লগবাসী। বাংলাদেশে এরকম ১০ লাখ টাকা মাসিক বেতনে অনেক অপদার্থ পোষা হয়। প্রায় তিন বছর তার সাথে কাজ করেছিলাম। এ বছর তিনেকে সে আমার জীবন সহ প্রজেক্টের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছিল। যতদিন এ দেশে ছিল তাকে দেখেছি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের দেশের বদনাম করতে। আর আমাদের দেশের কিভাবে বাঁশ দেয়া যায় তা নিয়ে বিস্তর গবেষনা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে। যাহোক, তার কিছু দৈনন্দিন গাল-গপ্প নিয়ে আমার আজকের পোস্ট।

তার ফানি সব কাজের মাঝে আমার সবচেয়ে সবচেয়ে মজা লাগতো যখন পিয়নের সাথে ২ টাকা ৮০ পয়সা নিয়া আশি মিনিট ঝগড়া করতো। বিষয়টা এরকম, ভদ্রলোক প্রায় রিক্সা করে অফিসে এসে ভাংতি নাই অজুহাতে দাড়োয়ান পিয়ন সবার কাছ থেকে টাকা ধার নিতেন। তারপর সে টাকা দেবার কথা বেমালুম ভুলে যেতেন। যার কারনে উনাকে রিক্সা দিয়ে আসতে দেখলেই দাড়োয়ানরা গেইট ছেড়ে পালাতো। সে একটা দেখার মতো দৃশ্য হতো। আমার দোতালা জানালা বরাবর গেইট দেখা যেত। যখনই দেখতাম দায়োনরা ভো দৈাড় দিচ্ছে তখনই বুঝতাম বস আইসা পড়ছে।

দাড়োয়ানকে না পেলে ভদ্রলোক সোজা অফিসরুমে ঢুকেই বেল টিপে পিয়নকে বলতো রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিয়ে আসতো। প্রথম দিকে হয়তো কিছু দিতো বেচারা পিয়ন কিন্তু পরে সে চালাক হয়ে যায়। মুখের উপর টাকা নাই বলে দিব্বি দাড়িয়ে থাকতো। তখন বস সাহেব তার পকেট চেক করতে চাইতো। আর পিয়ন তার পকেটের সব খুচরা একসাথ করে টেবিলে রাখতো। আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি হিন্দি মিশিয়ে বলতে থাকতো "খুচরা নেহি হায়, নো টাকা পয়সা। সব খরচ হো গিয়া"। এ দৃশ্য ছিল এক দেখার মতো। আমি ফ্রি তে সিনেমা দেখতাম আর নিজের মতো করে হাসতাম।

যখন পিয়ন থেকে কিছু খসাতে পারতো না তখন বলতো, যাও অফিসের অন্য যাও কারো কাছ থেকে নিয়ে আসো। এর পর থেকে পিয়ন বেচারা আমাদের যাকেই সামনে পেতো তার থেকে টাকা চাইতো। এভাবে জনে জনে টাকা খোঁজা আর নীচ থেকে রিক্সাওয়ালার চেঁচামেচি....। আরেকটা নতুন দৃশ্যের স্যুটিং।

কিন্তু আমার দশ লাখ টাকা বেতনের বস সে টাকা শোধ দিতে বেমালুম ভুলে যেত। এবং এ নিয়ে তুমুল ঝগড়া চলতো তাদের মাঝে। পিয়ন সাহেবও ছেড়ে দেবার বান্দা ছিল না কোনভাবে! হিসাব নিকাশ নিয়ে বসে পড়তো। আর এ টাকার হিসাব রাখার জন্য সে রীতিমত নোটবই পকেটে নিয়ে ঘুরতো।

যাহোক, তো বস একবার আমারে বললো, তোমাদের দেশের কেকের স্বাদ এতো খারাপ। প্রতি কামড়ে বালি দাঁতে লাগে।

আমি খুব অবাক হলে বল্লাম, সারা বিশ্বের বেস্ট কেক আমরা বানাই। একবার খেলে নাম ভুলে যেতে হয়। তা তুমি কোথা থেকে কেক কিনেছো?

সে উত্তর দিলো, ওই যে রাস্তার পাশের ঠেলাওয়ালারা যে কেক নিয়ে বসে থাকে সেখান থেকে।

আমার হার্টফেল অবস্থা। অনেক কষ্টে সামলে বল্লাম, ওইখানেতো আমাদের রিক্সাওয়ালারা বসে চা সিগারেট আর কেক খায়। সেটা একান্তই তাদের উপযোগী করে সস্তায় বানানো। তুমি আর কোথাও থেকে কেক খাও নাই?

সে বললো, না। আমি বাংলাদেশ থেকে কিছু কিনি না। দুই মাসে একবার ইন্ডিয়া যাই আর আসার সময় চাল ডাল তেল পেয়াজ আদা রসুন থেকে শুরু করে তার যাবতীয় দুই মাসের বাজার করে আনি। কিন্তু নাস্তার আইটেম শেষ হয়ে যাওয়াতে বাধ্য হয়ে কেক কিনলাম।

শুনে আমার আবেগে দু'চোখে পানি এসে গেল। আহারে, এমন গরীব মানুষ, দশ লাখ টাকা বেতনেও তার হয় না। ফুটপাথ থেইকা কেক কিনে খায়।

যাক ভাবলাম ব্যটা আমার দেশের এভাবে বদনাম হয়ে যাচ্ছে তাই তারে ভালো কিছু কেক খাওয়াই। তাই একদিন কুপার ও মি: বেকার থেকে কিছু কেক কিনে তার জন্য নিয়ে গেলাম। সেটা খেয়ে খুব অবাক হয়ে বললো, আরে এতো দেখি অসাধারন! কেমন দাম নিলো?

কেকের দাম শুনে তার এবার হার্টফেইল করার অবস্থা। বললো, ও নো, ইটস্ ভেরী এক্সপেন্সিভ। আই কেন্ট বিয়ার!

আমি ভাষা হারায়ে ফেল্লাম তার গরীবানা শুইনা।

যতদিন আমাদের সাথে ছিল কোনদিনই তাকে একটা পয়সাও দেশে খরচ করতে দেখি নাই। অফিসের কোন প্রোগ্রামে চাঁদা দেবার কথা শুনলে সে পালিয়ে বেড়াতো। কিন্তু খাবার সময় ঠিকই হাজির হতো। এবং অনুষ্ঠান শেষে কোন খাবার বাঁচলো কিনা তার হিসাব নিয়ে প্যাকেট করতো। তার এ হামলে পরার দৃশ্য ছিল দেখার মতো।

সে যে এ দেশে একটা টাকাও খরচ করে না তা নিয়ে বেশ গর্ব করে বলতো।

একবার তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন সে এরকম বাজার মাথায় করে আনে ইন্ডিয়া থেকে। সে উল্টা অবাক হয়ে আমাকে হিসাব দিলো এ দুই মাসে সে কত টাকা সেইভ করেছে বাংলাদেশে বাজার না করে। তারউপর সে টাকা নিজের দেশেই খরচ করতে চায় অন্য দেশে নয়।

তবে আমি সবচেয়ে অবাক হতাম যে প্রায় আমার দেশে বসে আমার দেশের বদনাম করতো সে অথচ কিছু চামচা হা হা হি হি বলে তার সাথে যোগ দিতো। কাউকে তেমনভাবে প্রতিবাদ করতে দেখিনি। দেশের মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট সে বন্ধের সুপারিশ করে। সমস্ত ফান্ড বন্ধ করে দেয়।

একবার আমি প্রচন্ড রাগে ও বিরক্ত হয়ে তার কাছে কৈফিয়ত চাইলাম, এ প্রজেক্ট তোমার ভাত রুটির বন্দোবস্ত করছে আর তুমি তা বন্ধের সুপারিশ করছো কেন?

সে খুব সহজে উত্তর দিলো, দেখো আমি আমার স্বার্থই দেখবো সবসময়। ইন্টারন্যাশানাল কনসালটেন্ট হিসেবে আমার সর্বোচ্চ মেয়াদ ৩ বছর। আর ছয় মাস পরেই আমার কন্ট্রাক্ট ক্লোজ হয়ে যাবে। তারপর বাংলাদেশে আমি আর চাকরী করতে পারবো না। এখন এ প্রজেক্ট বাংলাদেশ না পেলে ইন্ডিয়া অথবা আফ্রিকা পাবে। আর ইন্ডিয়া বা আফ্রিকা পেলেই আমার সেখানে জব হবে। কারন বাংলাদেশে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা দিয়ে সহজেই সেখানে কন্ট্রাক্ট পাবো। বাংলাদেশ প্রজেক্টটা পেলেতো সে সুযোগ আমার থাকবে না।

তারপর তার সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করেকিভাবে প্রজেক্টটা উদ্ধার করেছিলাম তার গল্প আরেকদিন হবে।

যাইহোক, এ জীবনে যত কিরপিনের দেখা পেয়েছি সবই বলতে গেলে ছিল প্রতিবেশী রাস্ট্রের। এখন কানাডায় বসেও আমার এক কলিগ আছে। প্রতিদিন তার কাজ-কর্ম দেখে নিজেই হাসতে হাসতে অজ্ঞান হ্ই। সেই গল্পও আরেকদিন হবে।

সবাই ভালো থাকেন। আর পারলে দয়া করে কিরপিন মা হাসান ভাই আর শেরশাহ ভাইরে যেখান থেকে পারেন ধইরা আনেন। উনাদেরকে ছাড়া ব্লগ মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। এদিকে কাভা ভাইও দুইদিন পর পর কান্নাকাটি কইরা পোস্ট দেয় উনাদের খরায় :P

ও ভালো কথা, আমি কিন্তু এখন টিন এইজে। মানে ১৩ তে পা দিলাম। তাই বুইঝা শু্ইনা কথা কইয়েন। টিন এইজরে সামাল দেয়া কিন্তু বহুত কঠিন B:-/

ছবি: গুগুল মামা!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:৪৮
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×