somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে.............

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা ভাই বোনরা কোনকালেই খুব একটা খারাপ স্টুডেন্ট ছিলাম না। তারপরও প্রতিটা রিপোর্ট কার্ডের পর বাবা খুটায়ে খুটায়ে কম্পেয়ার করতেন হায়েস্ট মার্ক আর আমাদের প্রাপ্ত মার্ক। কারন রিপোর্ট কার্ডে এই দুইটা কলামই থাকতো। কিন্তু কানাডায় আসার পর ছেলে-মেয়ের রিপোর্ট কার্ডের কোথাও হায়েস্ট মার্ক খুজেঁ না পেয়ে অবাকই হয়েছিলাম। কারন সেখানে নিজের মার্কস এর সাথে ক্লাস এর গড় থাকে। যাতে গার্জিয়ান বুঝতে পারে তার ছেলে-মেয়ে ক্লাস এভারেজ থেকে নীচে নেমে গেছে কিনা।

তবে রিপোর্ট কার্ডের সবচেয়ে গুড়ুত্বপূর্ন অংশ হলো ছয়টি মূল এরিয়া, Responsibility, Organization, Independent work, Collaboration, Initiative, Self-Regulation। অর্থ্যাৎ একটা বাচ্চা পড়াশুনায় কতটা ভালো তা নিয়ে তারা চিন্তিত নয়, বাচ্চাটি কতটা দায়িত্বশীল, নিজে গুছিয়ে কাজ করতে পারে কিনা, একা একা কাজ করার ক্ষেত্রে কতটা সফল, সবার সাথে মিলেমিশে কাজতে করতে পারে কিনা, নিজে উদ্যোগী হয়ে কোন কাজ করে কিনা আর নিয়মানুবর্তী কিনা তা নিয়ে মার্কিং করে।

সেখানে চারটি ক্যাটাগরিতে মার্কিং হয়, Excellent, Good, Satisfactory, Needs Improvement। যদি কোন বাচ্চা Needs Improvement পায় তাহলে তাকে তার জন্য আলাদা সেশান নেয়া হয়। কোথাও রেজাল্ট নিয়ে মারামারি কাটাকাটি করে না। কেউ কোন বিষয়ে ভালো না হলে টিচার তার জন্য ক্লাসেই চেস্টা করে তবে আলাদা কোন টিচার দিয়ে নয়।

আর এডুকেশান সিন্টেমে সবচেয়ে জোর দেয়া হয় বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষায়। কারন একটি শিশুর নৈতিকতার ভিত তৈরী হয় ছোট থাকতে। একবার যদি তাদের মাথায় ভালোত্ব ঢুকে যায় তখন সে সহজে খারাপ হয় না। তাদের ভাষায় অংক ইংরেজী ভূগোল ইতিহাস বেশী বয়সে শিখতে পারবে কিন্তু নৈতিকতা তাকে শিখতে হবে একেবারেই জন্ম থেকে।

আর সে কারনেই বাচ্চাদের প্লেগ্রুপ থেকে মিডল ক্লাস মানে গ্রেড ৫ পর্যন্ত পড়াশুনা খুবই সামান্য করায়, দুই ঘরের যোগ বিয়োগ গুন ভাগ। কিন্তু নৈতিক শিক্ষা দেয় প্রতিটি মুহুর্তে। বাচ্চাদের মানবিক হতে বলে, মিথ্যা বলাটা বিশাল পাপ তা শেখায়, রাস্তায় হেটে পথ চলা শেখায়, বাজারে ঢুকে বাজার করা শেখায়। ওরা গান শুধু শুনেই না সে গানের বিশ্লেষন করার চেস্টা করে, ওরা কবিতা কখনই মুখস্থ করে না, কবিতার ভাব বোঝার চেস্টা করে। ওরা প্রতিদিন খেলাধুলা করে, প্রচন্ড বরফের মাঝে ছুটোছুটি করে, বৃস্টি কাঁদার মাঝে গড়াগড়ি করে। ওদের নিজেদের আত্ববিশ্বাস বাড়ানোর জন্য অনেক কিছু করায়। অন্যকে উপহাস করা, আঘাত করা, বুুলি করাকে বিশাল অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।

এবার আসি দেশের অভিজ্ঞতা...........

আমার এক আত্বীয়ার মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। ক'দিন আগে একটা কাজে ওকে ফোনে চাইলাম তখন বাংলাদেশ সন্ধ্যা ৭ টা। আমার আত্বীয়া বললো ও কোচিং এ। তখন না পেয়ে আবার ফোন দিলাম সকাল তখন ৭টা। তখনো বললো কোচিং এ। আবার ফোন দিলাম রাত ১০ টায়। বললো, ও এখন টিচারের কাছে পড়ছে!! আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না সকাল বিকাল সন্ধ্যা রাত সারাক্ষনই সে হয় কোচিং এ নয় টিচারের কাছে। তাহলে নিজের সময় কোথায়? খাওয়া, ঘুম, রিলাক্স, খেলাধুলা, আড্ডা সেগুলো করে কখন, আত্বীয়ার কাছে জানতে চাইলাম। ও যা উত্তর দিলো তা শুনে আমার ভিমড়ি খাওয়ার অবস্থা। আমাদের কথোপকথোন তুলে ধরলাম....

সারাদিনই ওকে পাই নাই... হয় টিচারের কাছে নতুবা কোচিং এ থাকে, কতজন টিচার তার?

সব মিলিয়ে ১০ জন শিক্ষক বাসায় কিংবা কোচিং এ পড়ায়।

বলো কি? এতজন কেন?

আরে ওরতো মাত্র ১০ জন। ওর ক্লাসের সবার ১২-১৪ জন। প্রতিটি সাবজেক্টে আলাদা টিচার।

ও খায় কখন, ঘুমায় কখন, নিজে পড়ে কখন?

বাসায় ঢুকলেই আমি ওর পড়ার মাঝে মুখে খাবার তুলে দেই। আর কোচিং এর ফাঁকে ফাঁকে খায়। এখন রাত একটা দেড়টার দিকে ঘুমায় আর ৬টায় উঠে। কারন সকালে একটা কোচিং আছে। ওই স্যারকে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি। আর নিজের পড়া লাগে না, টিচাররাই পড়িয়ে দিয়ে যায়।

রিলাক্স, খেলাধুলা, আড্ডা সেগুলো করে কখন?

আরে ক'দিন পর এসএসসি। পরীক্ষার সময় আবার রিলাক্স, খেলাধুলা, আড্ডা কেন?...............

.............................

এই হলো আমাদের দেশের হাল আমলের রোবট সন্তানরা। আমরা আমাদের বাচ্চাদের মানুষ বানানোর নামে রোবট বানাচ্ছি। আমারা শুধু শিখাই দৈাড়াও দৈাড়াও দৈাড়াও। তোমাকে প্রথম হতে হবেই হবে। এছাড়া কোন স্থান নেই। কিন্তু আমরা ভুলে গেছি আদর্শ লিপির শিক্ষা দেবার কথা, মানবিকতা শেখানোর কথা সর্বোপরি মানুষ হবার কথা।

আমি কখনো বলি না যে কানাডার প্রতিটা বাচ্চাই আদর্শবান হয়ে উঠছে। কিন্তু বলবো মানবিক গুনগুলো তারা জন্ম থেকেই শেখানোর চেস্টা করে। আর আমরা জন্ম থেকেই তাদের টাকা উৎপাদনের মেশিন বানানোর চেস্টায় থাকি।

চলেন কিছু ছবি দেখি বাচ্চাদের স্কুলের......


ইয়ার শেষে স্কুলের অনুষ্ঠান। বাচ্চারা গান গেয়ে নেচে দারুন একটা অনুষ্ঠান উপহার দেয় বাবা-মায়েদের।




এগুলো আমার ছেলের ছবি। সে প্লেন চালিয়েছে, স্কি করেছে, হাইকিং করেছে অন্যসব বাচ্চাদের সাথে।

সবাই ভালো থাকেন। আর আগের শিশুদের নিয়ে পোস্ট পড়তে চাইলে ক্লিক করতে পারেন।

আসেন একটু কঠিন বিষয় নিয়া আলাপ আলোচনা করি.....
একটি বিজ্ঞান বক্স, শিশু শিক্ষার সেতুবন্ধন- স্বদেশ এবং বিদেশ
-
-

ও বাই দা ওয়ে, একটি সুসংবাদ আমার জন্য........ ব্লগে এই প্রথম কেউ আমাকে তার কমেন্টে ব্লক করেছে। আলহামদুলিল্লাহ। এমনিতেই সময়ের টানাটানিতে থাকি। তাই প্রিয় সবার লেখার মন্তব্য করে উঠতে পারি না। সেরকম একজন যদি আমার জন্য তার দরজা বন্ধ করে দেন তাহলে আমি কৃতার্থ, কিছুটা সময় বেচেঁ গেল।......... :P :P :P
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০৩
৪৪টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×