(শিকার এবং শিকারীর ছবিটা দিলাম শুধুমাত্র লিখাটির গুড়ুত্ব বোঝাতে। আর সাথে নায়িকা পারভীন ববির ছবি)
মুনিয়া ইস্যু নিয়ে চারপাশে অনলাইন অফলাইনে এতো বেশী লিখালিখি হচ্ছে যে নিজের আর লিখতে ইচ্ছে করছিলো না। তার চেয়েও বড় কথা, বুকের মাঝে খুব কষ্ট লাগছিল ছোট্ট একটি সুন্দর মুখের জন্য। আহারে, মেয়েটি হয়তো হতে পারতো একজন ডাক্তার কিংবা এ্কাউনটেন্ট বা একজন নায়িকা অথবা একজন চিত্র শিল্পী। কিন্তু সব ছাড়িয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে নিদারুন দু:খে আত্মহননের পথ বেছেঁ নিল মেয়েটি। ঘটনার আগে পিছে কে তা জানার চেয়ে এরকম একটি ফুটফুটে মেয়ে কেন এ পথে গেল তা জানা খুব জরুরী। এর জন্য দায়ী কে মেয়েটি নিজে? তার পরিবার? সমাজ? রাস্ট্র? কালচার? নারী স্বাধীনতা? পূঁজিবাদ? পুরুষতন্ত্র?
বলিউড বিশ্বের নামকরা জগত। সে জগতের ৭০ দশকে নামকরা অভিনেত্রী পারভীন ববি। যখন সে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে হঠাৎই একদিন উধাও হয়ে যায় সে। অনেক জল্পনা কল্পনা হয়েছিল তাকে নিয়ে। এবং তখন যতটুকু শোনা গিয়েছিল এক আরব শেখ তাকে কিনে নিয়েছিল ও একটি প্রাইভেট জেট করে তাকে রাতের মাঝেই উধাও করেছিল। এবং সে কেনা-বেচাঁয় জড়িত ছিল বলিউড জগতের মহারথীরা। যাদের সাথে প্রতিনিয়ত লেনদেন হয় আন্ডারওয়ার্ড এর সাথে। এ আরব শেখরা পেট্রোডলারের বিনিময়ে সারা বিশ্বের সুন্দরীদের হাজির করে। কখনো রাতের জন্য, কখনো তার চেয়েও বেশী দিনের জন্য। সবখানেই টাকার খেলা। তোমার টাকা আছে তো ক্ষমতা, আইন, সুন্দরী, গাড়ি, বাড়ি..... সবই তোমার। তোমার টাকা নেই? তাহলে প্লাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিচার ভিক্ষা করো। যদি কখনো রাস্ট্রের দয়া হয় তাহলে বিচার পেলেও পেতে পারো নতুবা বিচারের নামে একটা মেলোড্রামা হবে। যেখানে সাক্ষী গায়েব থাকবে ও সাক্ষীর অভাবে খুনি বেকুসুর খালাস পাবে। এখানে আইন আদালতের করার কি আছে? বুঝতে হবে যে সাক্ষীই যেখানে নেই সেখানে খুনের হিসাব আসবে কোথা থেকে?
যেটা বলছিলাম, লিখাটা লিখার আগে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে মুনিয়াকে নিয়ে যত খবর ছাপা হয়েছে, যত ভিডিও ইউটিউবে আছে তা প্রায় সবই দেখার চেস্টা করেছিলাম ঘটনার পুরো আবহ বুঝতে। তারপর নিজের মনেই বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি, একটি ছোট্ট মেয়েকে এতদূর আনার পিছনে কি কি আনুসঙ্গ কাজ করেছে! কেন মাত্র ২১ বছর বয়সে মেয়েটি এরকম কঠিন একটি পথ বেছেঁ নিল, বুক ভরা কি তার এতো দু:খ ছিল। তারপর একে একে সে প্রশ্নের উত্তর জোড়া লাগানোর চেস্টা করেছি নিজের মনেই।
বাবা-মাহীন এতিম মেয়েটির অভিভাবক বলতে এক বোন ছাড়া তেমন কেউ ছিল না। ভাই থাকলেও তার দায়িত্ব নেবার মতো মানসিকতা ছিল কিনা তা জানতে পারিনি বা অন্তত তার কোন হদিস চোখে পড়েনি। এরকম একটি অভিভাবকহীন টিনএজ অসম্ভব সুন্দরীর অনেক অনেক সমস্যা থাকে। পরিবারের ভীতরের চাপ, পাড়ার মাস্তানের চাপ, আত্মীয়-অনাত্মীয় এর চাপ, চারপাশের প্রশংসায় নিজেকে আলো মেলে ধরার চাপ, গ্লামার জগতের হাতছানীর চাপ, ভবিষ্যত নায়িকা হবার চাপ, ধনী হবার চাপ, চমৎকার সেজেগুজে নিজেকে উপস্থাপনের চাপ, দামী সাজগোজ ড্রেসআপ কেনার চাপ, সবচেয়ে বড় কথা সবকিছু সামাল দেবার জন্য অনেক টাকা আয়ের চাপ।
আর এ চাপ থেকে মুক্তি পেতে সর্টকাট এ ধনী হবার সহজ সমাধান মডেলিং বা নায়িকা হবার পথ খোঁজে। তাই মুনিরাও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে সর্টকাট পথের খোঁজে। কিন্তু মুনিরার মতো এ বাচ্চা মেয়েগুলো শুধু শোবিজ জগতের আলো ঝলমলে দিকটাই দেখে, তার পিছনের অন্ধকার দিকটা ওরা দেখতে পায় না। বা দেখতে দেয়া হয় না। ওরা জানে না এ শোবিজ জগতের টাকার খেলার পিছনে কাজ করে এক বিশাল অন্ধকার মাফিয়া জগত। সেখানে এরকম অল্পবয়সী সুন্দরীরা বিক্রি হয় কেজি দরে। একবার পা দিলে ওরা শুধুই হাত বদল হয় এক আনবীরের পর আরেক আনবীরের হাতে। দামী পোষাক, ঝলমলে আলো আধারের নেশার জগৎ, ভবিষ্যত জনপ্রিয়তার হাতছানি, কোটিপতি হবার নেশা.... তাদেরকে বন্দী করে রাখে এক লোভের জগতে।
এ জগতের সূতো কেটে খুব মেয়েই পারে ফিরে আসতে নিজের স্যাতস্যাতে ঘরে। বেশীর ভাগই হয়তো হারিয়ে যায় অন্ধকার জগতে। অল্পক'জন যারা চমৎকার খেলুড়ে সে অল্প ক'জনই হতে পারে লাস্যময়ী নায়িকা। তারা যখন জনপ্রিয় হয়ে যায় তখন তাদের জনপ্রিয়তাই সবাই দেখে, তার পিছনের উঠে আসার পিচ্ছিল গল্পটা ওরা কাউকে বলে না। তাই কেউই জানে না তার খবর। আর সে আলো ঝলমলে চেহারা দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুনিয়ার মতো বোকা সোকা মেয়েগুলো।
তারপর আছে রঙ্গীন নেট এর দুনিয়া। রঙ্গে ভঙ্গে ভরা ছবি ভর্তি ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, টুইটার.....। দামী পোষাক, দামী কসমেটিক্স, দামী রেস্টুরেন্ট, দামী বেড়ানোর স্পট এর শো-অফ চলে নির্লজ্জ ভাবে। এ ছোট ছোট বোকা মেয়েগুলো এসব ছবি দেখে স্বপ্নের জগতে চলে যায়। "ওর আছে, আমার কেন নেই"..... এই কেন এর উত্তর খুঁজতে আনবীরের মতো দামী গিফট্ দেয়া সুগার ড্যাডিদের খপ্পরে পড়ে। সেখানে নৈতিকতার কেউ ধার ধারে না, পরকীয়াকে কোন অপরাধ মনে করে না, শারীরিক সম্পর্ককে খুব খেলো মনে করে, ধর্মীয় অনুশাসন খুব হাস্যকর ঠেকে। শুধু থাকে স্বপ্নের পৃথিবীর লোভ, শুধুই লোভ। আর সে লোভের বলি হয় এ ছোট ছোট মুনিয়াগুলো।
আর আনবীরের মতো খেলোয়ারদের কাছে মুনিয়ার মতো স্বপ্নেবিভোর পাখীগুলো শুধুমাত্র স্বল্প থেকে সময়ের আনন্দ। ওরা কখনোই এক মুনিয়াকে বেশীদিন রাখে না, নেমে পড়ে নতুন মুনিয়ার খোঁজে। আর সেসব মুনিয়ার বয়স কিন্তু ১৮ থেকে ২১! এ বেশী নয় কিছুতেই! তারপরেই পাপোষের মতো ছুড়ে ফেলা হয় তাদের। কিন্তু এ ছোট্ট মুনিয়াগুলো বুঝে না এ জগতের খেলা, স্বপ্নেবিভোর মুনিয়াগুলো চোখে রঙ্গীন চশমা দিয়ে দেখেই যায় এ দুনিয়া। আর এক সময় যখন বুঝতে পারে তখন হয়তো ফেরার কোন উপায় থাকে না। কেউ বলি হয় অন্ধকার জগতে, কেউ স্বেচ্ছায় বেঁছে নেয় আত্ম হননের পথ। তারপরও ও ওরা জানে না আনবীরের মতো খেলোয়ারদের কাছে এসব সস্তা আবেগের কোনই মূল্য নেই। আর চলতে থাকে চক্রাকারে এ খেলা। এক মুনিয়া হারিয়ে যায় আরেক মুনিয়া সে স্থান দখল করে আনবীরদের কাছে।...........
ভালো থাকুক ওপারে মুনিয়া। আর সাবধান হোক বাকি মুনিয়ারা।
(দু'টো ছবিই গুগুল থেকে নেয়া।)
আগের লিখাগুলো যদি পড়তে চান........
এই বোকা মেয়েগুলাে তোমাদেরই বলছি............! পর্ব-২
এই বোকা মেয়েগুলাে তোমাদেরই বলছি............! পর্ব-1
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২১ সকাল ৮:৩২