প্রসঙ্গঃ রোহিঙ্গা........ ‘দরিয়া কিনারে আজ দুঃখ অথৈ’
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক কভারেজ পাওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব মোড়লেরা বার্মার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি। বাংলাদেশ সরকারও আশ্রয় দেয়া থেকে বিরত থেকেছে যা ধর্মীয়, সামাজিক, মানবিক সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই অগ্রহণযোগ্য।
সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি, চুলচেড়া বিশ্লেষণ চলছে, অসংখ্য কলাম আসছে। চিহ্নিত কলামিস্টদের বিশ্লেষণে সরকারের প্রতিক্রিয়ার স্বপক্ষে উল্লেখযোগ্য কোন মন্তব্যই পাওয়া যাচ্ছেনা। মোটামুটি বলা চলে জনমতের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই সরকার তার একরোখা সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে ভার্চুয়াল মিডিয়ায় সুশীল সমাজের মধ্যেও বিরুপ মনোভাব দেখা যাচ্ছে। স্পষ্টত তারাও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছেন। কিছু অংশ তাদের স্বাভাবিক ইসলাম বিদ্বেষের দৃষ্টি থেকে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন আর কিছু অংশ মানবতার স্বার্থে হলেও তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার পক্ষে মতামত দিচ্ছেন।
বেশ কিছু ব্লগারকে দেখা যাচ্ছে পূর্ণউদ্যমে সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গাইছেন কোন প্রকার গ্রহণযোগ্য যুক্তি ছাড়াই। তারা যেসব যুক্তি পেশ করছেন সেসব যুক্তি তর্কের খাতিরেও ন্যুনতম গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেনা। অপ্রকাশ্যে তাদের সমস্ত কথার আড়ালে 'রোহিঙ্গারা মুসলিম ধর্মাবলম্বী' এই কথাটাই মুল ভুমিকা রাখছে। সরকার ও এই কথাটাই তাদের পর্যবেক্ষণে বড় করেই দেখছে, এই প্রসঙ্গে স্পষ্ট বলা হয়েছে 'বাংলাদেশ মুসলিম দেশ নয়, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ।
এক্ষণে উল্লেখ্য 'রোহিঙ্গারা বাংলাভাষী' বিষয়টা মোটেই আমলে আসছেনা।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ এর লেখা কলামটি আজ বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
তাঁর লেখা ‘দরিয়া কিনারে আজ দুঃখ অথৈ’ কলামে একটা লাইন আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তিনি লিখেছেন 'প্রাচীন সমৃদ্ধ আরাকানের বিপর্যয়ের শুরু মূলত ১০৪৪-১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দে বার্মিজ রাজা আনাওরথার আগ্রাসনের সময় থেকে। তিনি হাজার হাজার স্থানীয় রোসাং, রোহাং এবং রেকং বা রাখাইনদের হত্যা করেন; দেশত্যাগী হয় লাখ লাখ আরাকানি। ঐতিহাসিকেরা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, চট্টগ্রামে বসবাসকারী চাকমা, রাখাইন, মারমাসহ অনেক জনগোষ্ঠী সে সময়ই দেশত্যাগী হয়ে বাংলাদেশে বসত করে।
এ প্রসঙ্গে আমার ব্যাখ্যাঃ
এই চাকমা, মারমা, রাখাইনেরা বাঙ্গালিও না মুসলিম ও না, (হিন্দুও না), ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিসত্তা, সব বিবেচনায় তারা ভিন্ন এবং এদেশে কয়েক শতকের শরণার্থী। ৭১ এ চাকমা রাজা মার্কিন তাঁবেদারি আর পাকিস্তান সরকারের আনুগত্য থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন। স্বাধীনতার পরপরই আবার এই উপজাতীয় রাজারা ভারত সরকারের সাথে তাঁবেদারি করে শেখ মুজিব সরকারের কাছে আদিবাসী স্বীকৃতি পাওয়ার দাবী পেশ করে যার গ্রহণযোগ্যতা না থায়ায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বস্তুত পরিত্যক্ত হয়। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ভিন্ন সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিয়ে দেশের মুল জনগোষ্ঠীর সাথে মিলিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। মূলত বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসবাসকারী সকল নাগরিক যাতে একই জাতীয় পরিচয়ে পরিচিত হয় এটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।
জনাব ফারুক ওয়াসিফ আরেক মন্তব্যে বলেন পঞ্চাশের দশক থেকে সামরিক সরকার বার্মার জনগণকে উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতায় উত্তেজিত করে বিভক্তির শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক দাঙ্গার পেছনেও পাওয়া যাচ্ছে এক তরুণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে। আফগানিস্তানের তরুণ তালেবান মৌলবাদীদের অনুকরণে তাঁকে বলা হচ্ছে ‘তালেবান সন্ন্যাসী’। বার্মার সরকারি ও বিরোধী দলও মুসলমান ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকজনের বিরুদ্ধে এককাট্টা। তাই আজ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে জাতিগত গণহত্যা চলছে, অচিরেই সেটা অন্যান্য ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বিরুদ্ধে যে হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
বাংলা ভাষী এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী হওয়ার অজুহাতে যদি রোহিঙ্গাদেরকে বার্মা ছাড়তে হয় তবে বার্মাকেই তাদের পূর্ব বিতাড়িত নিজ নৃগোষ্ঠীকে (চাকমা, মারমা, রাখাইন) ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে পার্বত্য চটগ্রামে অভিবাসিত করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। (যদিও অনেকেই আমার এই বক্তব্যকে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বলে নাক সিটকাতে পারেন)
আমার পোস্ট আমার মতামতঃ যে কারো মতের সাথেই দ্বিমত হতে পারে।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন