somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাম’র ভাব বনাম ভাব’র নাম

১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাবনামা : ৬

ধরুন ‘ইসলাম’ যখন নাম, শুধুই নাম। সেই নামের ভাব হলো- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, মসজিদ, জায়নামাজ, দাড়ি, টুপি, পায়ের গুড়ালি পর্যন্ত যুব্বা, মাটির ঢিলা নিয়ে চল্লিশ কদম হাঁটা-হাটি, অযু, ফতোয়া আরো অনেক কিছু। শুধুই অনুষ্ঠান। এই সকল ভাব বহন করে একটি নাম আর সেটি হলো ‘ইসলাম’। অন্তত প্রচলিত, প্রতিষ্ঠিত ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধারণায়। এবং এই ‘ভাব’ই ইসলামের জনপ্রিয় চিহ্ন!

ফলে, ইসলাম এখন পণ্য, ইসলাম এখন বিজ্ঞাপন, ব্যবসা, শোষণের অস্ত্র, প্রতারণার হাতিয়ার, প্রাচুর্যের সিঁড়ি। অন্তত ইসলামিক ব্যাংক, ইসলামিক লাইফ ইন্সুরেন্স, ইসলামিক কোঃ অপারেটিভ মার্কেট, ইসলামিক টি.ভি, হালাল সাবান, হালাল ফ্রিজ ইতাদি। আবার কবে হয়তো দেখবো-- ইসলামিক জুতা, ইসলামিক মদ অথবা ইসলামিক বার। এত সবই সে কথায় প্রমাণ করে। এখানে কাজ নেই, নাম-ই কাফি...
অপর দিকে একটি ‘ভাব’ যে ভাবের নাম হলো ‘ইসলাম’ (শান্তি) আর সে ইসলামের চিহ্ন হলো-- রহমত, ইনসাফ, আনন্দ, জাত-পাত হীনতা, অ-সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ হীনতা, আশরাফ-আতরাফ বিলোপ, সম্পদের মালিকানাহীনতা, প্রাণীফুলের খলিফাত্ব, উপাস্য-উপাসকের ভেদহীনতা তথা ‘একক’ স্বরূপে উদ্ভাসিত অনন্ত-অসীম-অফুরন্ত স্বপ্ন...

এ চিহ্ন কাজ ব্যতিত বিরল। অত:পর কাজ হলো ‘সালাত’ যখন তা সুকর্ম করা অর্থে আর ‘জাকাত’ যখন তা পবিত্র হওয়া অর্থে আর ‘হজ্ব’ যখন তা পরিকল্পনা গ্রহণ নিমিত্তে একত্রিত হওয়া আর ‘সিয়াম’ যখন তা বে-ইনসাফ-এর কষাঘাত আত্মস্থ অর্থে আর ‘কলেমা’ যখন তা সেই উপলব্ধি শাশ্বত, একক, অনাদি, অখণ্ড এ জগত-প্রকৃতি।
অত:পর ‘কুরান’ যখন তা ‘পঠিত হয়’ অর্থে। পুনঃ পুনঃ যা পাঠ করলে সেই রস আস্বাদিত হয় যা অদমকে দেয় দায়-দায়িত্ব। এ দায়-দায়িত্ব আত্মস্থ সাপেক্ষে কর্মে রত না থাকলে রসুল জ্ঞানের দারোয়ান বলছেন-
“এমন এক সময় আসবে যখন লেখা-ছাড়া কুরানের আর কিছুই থাকবে না, শুধুমাত্র নাম ছাড়া ইসলামের আর কিছুই থাকবে না। সে সময় মসজিদগুলো ব্যস্ত থাকবে বড় বড় ইমারত নির্মাণের কাজে, কিন্তু তা পথ-নির্দেশ প্রদান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সেখানে যারা থাকবে তারা পৃথিবীতে সবার চেয়ে নগণ্য বলে গণ্য হবে। তাদের থেকে অপকর্ম সাধিত হবে এবং সব বিভ্রান্তি তাদের দিকে ফিরে যাবে। যদি কেউ অপকর্ম থেকে ফিরে আসে, তারা তাকে অপকর্মের মধ্যে ঠেলে দেবে। হাদীস-এ কুদসীতে বলা হয়েছে: ‘আমি আমার সত্তার কসম করে বলছি যে, আমি তাদের উপর এমন অমঙ্গল অপতিত করবো যাতে ধর্যশীলরা হতভম্ব হয়ে পড়বে।’ অবহেলার কারণে এহেন অবস্থায় পতিত হওয়া থেকে আমরা আল্লাহর ক্ষমতা প্রার্থনা করি।”
(নাহজুল বালাগা)

১৪০০ বছর পূর্বের এ ভবিষ্যৎবাণী আজও আমাদের রপ্ত হয়নি। আমরা হয়তো রত আছি লোক দেখানো অনুষ্ঠান পালন আর নাম ধারনে। আমরা নৈতিকতার বয়ান বহনে ভারী আনন্দিত অথচ মোটেও আনন্দ পাই না সত্য কাজে। আমরা যতটা সতর্ক বেদনার কারণ হিসেবে নৈতিকতার অভাবকে হাজির করতে ঠিক ততটা সতর্ক নই নৈতিকতা হীনতার আসল বুনিয়াদি কারণ অনুসন্ধানে। আমরা ফেরকার মধ্যে ফাঁক খুঁজি প্রাচুর্যের তথা সম্পত্তির মালিক হওয়ার। অথচ পাঠ করি না, ‘আত্ তাকাসুর’ অথবা ‘আল হোমাযা’। আমরা মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বার বার স্মরণ করিয়ে দিই না-

“আধিক্য লাভের পরস্পর প্রতিযোগিতা তোমাদিগকে উদাসীন করিয়া দেয়,
যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা কবরে পৌঁছ।
কখনও নহে, অচিরেই তোমরা জানিতে পারিবে।
পুনরায় বলিতেছি! কখনও নহে, অচিরেই তোমরা জানিতে পারিবে।
কখনও নহে, হায়! যদি তোমরা জ্ঞান-ভিত্তিক বিশ্বাস মূলে জানিতে;
নিশ্চয় তোমরা (এই পার্থিব জীবনে) জাহান্নামকে দেখিবে।
(আত্ তাকাসুর)
আর আমরা ব্যাখ্যা করিনা-
“ধনার্জনের অদম্য পিপাসা এবং অর্থ, প্রতিপত্তি ও সম্মান বৃদ্ধিতে একে অন্যকে ছাড়াইয়া যাইবার জন্য পারস্পারিক তীব্র প্রতিযোগিতা মানুষের সকল অনিষ্টের মূল করণ। কেননা ইহা মানুষের উচ্চ মূল্যবোধ সমূহকে নিষ্পেষিত করে কিম্বা অবহেলার মধ্যে ফেলিয়া দেয়। মানুষের জন্য ইহা একটি দুর্ভাগ্য যে, পার্থিব বস্তু সমূহ আহরণের উগ্র বাসনার কোন সীমা নাই। যতই পাওয়া যায়, বাসনা ততই তীব্রতর হয়, কখনও চরিতার্থ হয় না।...

আমরা জন সম্মুখে বার বার ভাষণে স্মরণ করে দিই না-
“আফসোস সেই সব কুৎসা রটনাকারীদের প্রতি যাহারা মানুষের পশ্চাতে কুৎসা রটনা করে আর সম্মুখে অপবাদ দেয়,
আর আফসোস তাদের প্রতি যাহারা ধন-সম্পদ আহরণ করে, পুঞ্জিভুত করে, আর গুণে গুণে দেখে।
আর ভরসা করে যে, এই সম্পদ তাহাকে অমর করবে,
ককখ্নো নহে, বরং সে হুতামায় নিক্ষিপ্ত হইবে,
জান, হুতামা কি?
হুতামা সেই প্রজ্বরিত আগুন
যাহা তোমার অন্তর সমূহের গভীরে গিয়ে পৌঁছিবে।
এবং নিশ্চয় সে আগুনকে তোমাদের উপর চতুর্দিক হইতে বন্ধ করিয়া দেওয়া হইবে,
সুদীর্ঘ স্তম্ভ সমুহে।
(আল হোমাযা)
আমরা খুৎবায় দাঁড়িয়ে পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিয়ে দিই না প্রাচুর্য ও জ্ঞানের নিয়তি সম্বন্ধ-

অর্থাৎ, ‘দুই ধরনের লোভ দুনিয়ায় অতৃপ্ত থাকে
এক. সম্পদের লোভ
দুই. জ্ঞানের লোভ
যে সম্পদের পেছনে ছোটে সে সম্পদের পাহারাদার হয় আর যে জ্ঞানের পেছনে দৌঁড়ায় জ্ঞান তার পাহারাদার হয়।’

হে মানুষ! কোন পথ তুমি গ্রহণ করবে?

২৯ সেপ্টেম্বর’০৯
যশোর।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×