somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্কসবাদের ইতিহাস পড়তে পড়তে অনিবার্যভাবেই আমার লালনের কথা মনে পড়ে গেল

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে আমি ভাবি: সভ্যতার ইতিহাসে কে প্রথম বললেন যে, ঈশ্বর বাস করেন মানুষের ভিতর। কথাটা যে লালন বিশ্বাস করতেন তা আমরা জানি। কিন্তু, তার আগে? দ্বাদশ শতকের পারস্যের কোন কবি? নবম-দশম শতকের কোনও সুফীসাধক? ভাবলে অবাক লাগে ইউরোপও প্রগতিশীলেরাও ওই একই ধারণায় পৌঁছেছিল। কখন? কার্ল মার্কসের তরুন বয়েসে। জার্মানিতে।

১৮৩৬। কার্ল মার্কস বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলেন । এর ৫ বছর আগেই হেগেল মারা গেছেন। হেগেলের প্রভাব অবশ্য তখন সারা জার্মানীর শিক্ষিত সমাজে তুঙ্গে। মার্কসও তখন আইন পড়া বাদ দিয়ে রাতদিন হেগেল পড়ছেন। হেগেলের অনুসারীরা ততদিনে দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একদল রক্ষণশীল, গোঁড়া; অন্য দলটি র‌্যাডিকাল। হেগেলের র‌্যডিকাল অনুসারীরাই Young Hegelians নামে পরিচিত । মার্কস বলাবাহুল্য র‌্যাডিকাল Young Hegelians দের দলেই যোগ দিলেন।
হেগেলের কাছে ঈশ্বর ছিল Absolute বা পরম মন। বা যৌক্তিক সত্যের নিরঙ্কুশ সমগ্রতা। বা ধারণাগত যৌক্তিকতা। (দর্শনের ভাষা এমনই হবে, করার কিছুই নেই) হেগেল মনে করতেন যে- ঈশ্বরের অবস্থান মানুষের চেতনায়। অনত্র নয়।
ইতিহাসের গতিপথে ঈশ্বর প্রকাশিত হন সীমিত মানব মনে, সামাজিক প্রতিষ্ঠানে। T.Z .Livine লিখেছেন, "God exists only as He is revealed, manifested, externalized, and embodied in human consciousness, in finite minds, in social institutions, in the course of history." ( From Socrates to Sartre. page, 264)
তরুন হেগেলবাদীরা এই যুক্তিতে হয়ে উঠলেন নিরীশ্বরবাদী।
তাদের কথা হল, যে ঈশ্বর কেবলি মানুষের মনে বাস করে যে ঈশ্বরের অস্তিত্বই নেই।
মানুষ আছে তো ঈশ্বর আছে। নৈলে নাই। ক্ষুদ্র মানুষের ওপর নির্ভরশীল সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর।
Young Hegelians আরও একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিল। হেগেলের মতে ঈশ্বর বা পরম মনের বিকাশ হয় মানবীয় অভিজ্ঞতার মধ্যে। সেহেতু মানুষই ঈশ্বর। মানবসত্ত্বাই প্রকৃত স্বর্গীয়। মানুষই ঈশ্বর।
মানুষের পবিত্রতা; তার ঐশ্বিরিক সমমানতা এর আগে ( অন্তত ইউরোপে) অনুভূত হয়নি। কাজেই Young Hegeliansরা বলল, পৃথিবীতে মানুষ বাঁচবে ঈশ্বরের মতন। স্বাধীন। সর্বশক্তিমান হয়ে।
তারা আরও একধাপ এগিয়ে গেল।
তারা বলল, পৃথিবীকে মানুষ-ঈশ্বরের বাসযোগ্য করার জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিপ্লবের।
Ludwig Feuerbach (1804-72) ছিলেন Young Hegelians পাঠচক্রের এক প্রধান পুরুষ। মানুষই যে ঈশ্বর তা একটি বই লিখে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। বইয়ের নাম, The essence of Christianty. সে বইয়ে Feuerbach বললেন: মানুষের সারবস্তুই (essence) খ্রিস্টধর্মে ঈশ্বরে আরেপা করা হয়েছে। অবশ্যই যা ভ্রান্ত। এখন উচিত ঈশ্বরের essence মানুষে প্রযুক্ত করা। Feuerbach আরও বললেন যে, হেগেল আসলে ভাববাদী। কেননা, হেগেলের পরম মন বা Absoluteই হচ্ছে খ্রিষ্টান ঈশ্বরের ধারনা। হেগেলের মতে Absolute বা পরম হচ্ছে মানুষের ঐতিহাসিক অর্জন। ঈশ্বর সম্বন্ধে হেগেল যা বলেছেন এখন থেকে তা আমাদের ভাবতে হবে মানুষ সম্বন্ধে।



তখন বলছিলাম,কার্ল মার্কস বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলেন ১৮৩৬ সলে।
১৮৩৬ সালে লালনের বয়স কত?
প্রায় ৬২।
ততদিনে হয়তো-বা লিখে ফেলেছেন-

কে কথা কয় রে দেখা দেয় না
নড়েচড়ে হাতের কাছে খুঁজলে জনম-ভর মেলে না।

আপন দেহের ভিতর ঈশ্বরকে লালন এভাবেই খুঁজেছেন। বলেছেন,

হাতের কাছে হয় না খবর
কি দেখতে চাও দিল্লি-লাহোর?

প্রখ্যাত লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী লিখেছেন, “বাউলের সাধনা দেহকেন্দ্রিক। তাই চলতি কথায় বাউলের গানকে দেহতত্ত্বের গানও বলা হয়। এই দেহের মধ্যেই “পরম পুরুষ” “সহজ মানুষ” “রসের মানুষ” “অটল মানুষ” “অধর মানুষ” “ভাবের মানুষ” “মনের মানুষ” “অচিন পাখি” বা “সাঁই নিরঞ্জনের” গুপ্ত-অবস্থিতি।” (লালন সাঁইয়ের সন্ধানে। পৃষ্ঠা, ৩৯)
আমরা জানি, লালন বিশ্বাস করতেন যে মানুষের দেহের ভিতর ঈশ্বর বাস করেন।
আর Young Hegeliansরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে, মানুষই ঈশ্বর। পৃথিবীতে মানুষ বাঁচবে ঈশ্বরের মতন। স্বাধীন। সর্বশক্তিমান হয়ে। আর এর জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিপ্লবের।
লালন প্রাজ্ঞ বলেই বিশ্ববিপ্লবের ডাক দেন নাই।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩৯
১৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×