somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: শ্রীলেখার বুনোহাঁস। (প্রথম পর্ব)

৩০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা নারকেলের মালা,
তাতে জল তোলা ফেলা- করঙ্গ সে।
পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে। (লালন)

উৎসর্গ: আবহমান বাংলায় যাঁদের আজও বিশ্বাস রয়েছে।

ভূমিকা: অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম: পুন্ড্রনগর নিয়ে একটা লেখা দাঁড় করাব। যে লেখায় থাকবে পুন্ড্রনগরের ঘরদোর, পথঘাটের বর্ননা, ধর্ম-বিশেষ করে বৌদ্ধ ধর্মের সামান্য আবহ, অনিবার্যভাবে একজন দুঃখী নারী- জীবন যার কাছে অসহ্য ঠেকছে, একজন মাঝবয়েসী বৌদ্ধ ভিক্ষু-তার জীবনের গল্প ও লালনের একটি গান-লালন বাংলার শিকড়ে ও অন্তে বলেই .. তেমনই একটি লেখা দাঁড় করাতে পেরে আমার দীর্ঘ দিনের একটি ইচ্ছে পূরণ হল। এই ফাঁকে বলে রাখি: ‘পুন্ড্রনগর’ ছিল প্রাচীন বাংলার অন্যতম নগর। বগুড়া জেলার মহাস্থান গড়ের নাম আমরা তো শুনেছি- তারই আশেপাশের অঞ্চল নিয়েই ছিল খ্রিস্টপূর্ব যুগের সেই প্রাচীন পুন্ড্রনগর । যিশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫০০ আগে থেকেই গড়ে উঠছিল নগরটি। ‘পুন্ড্র’ শব্দটির মানে, ‘আখ’। তার মানে, এখনকার মতো সেকালেও আখের চাষ হত পুন্ড্রনগরের আশেপাশে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকেই পুন্ড্রনগরটি পরিনত হয়েছিল বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অন্যতম কেন্দ্র - যে কারণে নগরের বাইরে অনেকগুলো বৌদ্ধ বিহার (বিশ্ববিদ্যালয়) গড়ে উঠেছিল; শুধু তাই নয়- অনেকগুলি জৈন প্রার্থনাগৃহও নির্মিত হয়েছিল পুন্ড্রনগরে। বৌদ্ধ বিহারগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ভাসু বিহার। পুন্ড্রনগরে গৌতম বুদ্ধ অনেকবারই এসেছিলেন। বৌদ্ধ কখনও পুন্ড্রনগরে এলে ঐ ভাসুবিহারেরই থাকতেন। ‘ শ্রীলেখার বুনোহাঁস’ গল্পটির পটভূমি সেই রকমই একটি সময়ে।

বাঁ পাশের খোলা জানালাটি দিয়ে মধ্য আষাঢ়ের শেষবেলার ম্লান রোদ ঢুকেছে ভাসু বিহারের সভাঘরটি। সে হলুদাভ ম্লান আলোয় গৌতম বুদ্ধের শরীরটি অপূর্ব মনে হয়। লাল রঙের চীবর পরে মেঝের ওপর বসেছিলেন গৌতম বুদ্ধ । পদ্মাসনে। তাঁর স্থির ধ্যানস্থ শরীরটি হলুদাভ; মাথাটি মসৃনভাবে কামানো, গোলপানা মুখটির রংটিও হলুদাভ, দু-চোখের দৃষ্টি কোন্ সুদূরে। বুদ্ধ উচ্চারণ করলেন, মনোপুব্বঙ্গমা ধম্মা মনোসেট্া মনোময়া, মনসা চে পদুটেঠন্ ভাসন্তি বা করোতি বা, ততো নং দুক্খমন্বেতি চক্কং বা বহতো পদং। কন্ঠস্বর, জলদ, মধুর ও ইষৎ গম্ভীর।
আষাঢ় মাসের গোড়াতে পুন্ড্রনগর এসেছেন বুদ্ধ । বর্ষাকাল এ নগরেই কাটাবেন। তথাগত কখনও পুন্ড্রনগর এলে ভাসুবিহারেই থাকেন; যেহেতু, প্রসিদ্ধ এই বিহারটির সুনাম আর্যাবত্মের সর্বত্র। এবার কোশল রাজ্য থেকে এসেছেন তথাগত। প্রায় প্রতিদিনই দু-বেলা বিহারের শিক্ষার্থীদের সামনে ধর্ম ব্যাখ্যা করছেন। আজও। বুদ্ধের দু’পাশে বসে আছেন ভিক্ষু আনন্দ ও ভিক্ষু মৌগলায়ন । এরা দু’জনই বুদ্ধের প্রিয় শিষ্য। এদের দুজনকেও ধ্যানগম্ভীর ও স্থিরই দেখায়। ওদের পিছনে সভাগৃহটির সাদা রঙের অমসৃন দেওয়াল, দেওয়ালে লাল রঙের একটি পদ্ম ফুল আঁকা রয়েছে।
হঠাৎই সেদিকে চোখ গেলে পদ্মফুলের কাল্পনিক গন্ধ পায় ভিক্ষু সুমন্ত। তখন থেকেই ভিতরে ভিতরে চাপা চঞ্চলতা টের পাচ্ছিল সে। কেমন এক অস্বস্তি বোধ করছিল। তার চারপাশে ভিক্ষুরা অভিভূত হয়ে বুদ্ধের উপদেশ শুনছে। আশ্চর্য! আজ থেকে আমি এদের কেউ না! যেহেতু-ধর্মের চেয়ে প্রেম বড়। আর, এই কথাটা বুদ্ধের কানে পৌঁছলে তথাগতর হলুদাভ সৌম মুখটির অভিব্যাক্তি কেমন বিকৃত হয়ে যেতে পারে সে দৃশ্যটি অনুমান করে উদ্বেগ বোধ করে সে। তার পরনে লাল রঙের চীবর। কাল থেকেই শরীরে খসখসে এক অনুভূতি হচ্ছিল। সে বিব্রত চোখে বুদ্ধের দিকে তাকাল। বুদ্ধ বলছেন, যাহারা, অসার বস্তুকে সার বিবেচনা করে এবং সারকে অসার বিচেনা করে, মিথ্যাদৃষ্টির প্রশ্রয়দাতা-সেই ব্যাক্তি কখনও সার প্রাপ্ত হয় না। উসখুস করে উঠল ভিক্ষু সামন্ত। তা হলে? তা হলে শ্রীলেখা কি অসার? তা হলে ওকে দেখে কাল আমি কেঁপে উঠলাম কেন? আমি কি মিথ্যাদৃষ্টির প্রশ্রয়দাতা? তা হলে? তা হলে শ্রীলেখা কি মিথ্যা? আর আমি মিথ্যাদৃষ্টির প্রশ্রয়দাতা? তাহলে? সার কি? প্রেম কি সার নয়? শ্রী লেখা?। ধর্মের চেয়ে প্রেম বড়। আর আমি শ্রীলেখাকে ভালোবাসি।
মধ্যবয়েসী ভিক্ষু সুমন্ত কেঁপে উঠল।
বুদ্ধ অর্ধ-মাগধী ভাষায় বলছেন, সারঞ্চ সারতো ঞত্বা অসারঞ্চ অসারতো।
বুদ্ধের কথাগুলি ঠিকমতো কানে ঢুকছিল না ভিক্ষু সুমন্তর। ক্ষণে ক্ষণে শ্রীলেখার মধুর মুখোশ্রীটি মনে পড়ে যাচ্ছিল। শ্রীলেখার ঘন কালো চুল, গায়ের রংটি শ্যামলা, চোখ দুটি বড় বড়- আয়ত, মুখের ছাঁচটি ভারি মিষ্টি। আজই দুপুরে দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীলেখাকে দেখল ভিক্ষু সুমন্ত। তবে গতকালই শ্রীলেখাকে প্রথমবার দেখার পর থেকেই শ্রীলেখার মুখটি আর ভুলতে পারছে না সে। ভিক্ষু সুমন্ত মাঝবয়েসি; শ্রীলেখা তরুণি। তাতে কি? শরীর ও শরীরের ভিতরে রয়েছে যে এক অদৃশ্য অলীক মনতন্ত্রবীণা-ভিক্ষু সুমন্ত এখন জানে- সেই বীণাটি যে কোনও বয়েসেই ঈশ্বরের কারসাজিতে বেজে উঠতে পারে।
ভিক্ষের উদ্দেশে কাল দুপুরে পুন্ড্রনগরের হাঁটছিল ভিক্ষু সুমন্ত। জায়গাটি নিরিবিলি। লোকে বলে: ধান-মোহনী । একটি বৃহৎ পুস্করিণীর পাড়ে একটি জৈন মন্দির-আর একটি হরীতকী গাছ। এদিকটায় আগে তেমন আসা হয়নি। ভিক্ষু সুমন্ত পুন্ড্রনগরে এসেছে আষাঢ় মাসের গোড়ায়। এর আগে উজ্জ্বয়িনী নগরের উপান্তের একটি বৌদ্ধ সংঘে বাস করত ভিক্ষু সুমন্ত। সেই সংঘের প্রবীন অধ্যক্ষ ভিক্ষু ধর্মরক্ষিতকে গভীর শ্রদ্ধা করত সে। আটাত্তর বছর বয়েসে ভিক্ষু ধর্মরক্ষিত মৃত্যু বরণ করলে এক প্রবল শোকে আক্রান্ত হয় ভিক্ষু সুমন্ত। সে শোক প্রশমনের উদ্দেশ্যেই সে উজ্জ্বয়িনী নগর ত্যাগ করে পথে বেরিয়ে পড়েছিল। তারপর অযোধ্যা-রাজগৃহ প্রভৃতি নগর-উপনগর ঘুরে পুন্ড্রনগর এসে পৌঁছেছে সে বর্ষাকালের প্রারম্ভে। পুস্করীণির পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটি বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল ভিক্ষু সুমন্ত। সম্পন্ন কোনও শ্রেষ্ঠীর গৃহ হবে। বাইরের দেওয়ালটি গোবর লেপা;- শুকনো গোবরের গন্ধ ভাসছিল বাতাসে। দেয়ালের মাঝখানে কাঠের দরজা- কালো রঙ করা । দেওয়ালের ওধারে একটি বর্ষজীবি বেলগাছ-বেলপাতায় রোদের ঝিলিক। স্তব্দ দুপুর। চারপাশ কী নির্জন। কেবল বেলপাতার আড়ালে কাক ডাকছিল। এই সময়ে কে যেন তার ভিতর থেকে বলল, এই জীবন। কী লক্ষ তার?
আষাঢ়ের মধ্যদিনের বাতাসে ভেসে এসে কে যেন উত্তর দিল, পথে যেতে যেতে একটা আলোর মুখে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য।
আর?
আর কী।
সুমন্ত বিভ্রান্ত বোধ করে। একা হলেই কে যেন কথা কয়ে ওঠে তার ভিতরে। কে সে? কে?
রোদ খাঁ খাঁ । ভিতরে সাড়া শব্দ নেই। লোকজন নেই নাকি বাড়িতে? ভিক্ষুদের উচ্চস্বরে ভিখ্ চাইতে নেই। ভিক্ষু সুমন্ত কাশল। তারপর কাঠের দরজায় আলতো করে ধাক্কা মারতে যাবে- তার আগেই সহসা বাতাসের ঘূর্ণিতে দরজার একটি পাল্লা গেল খুলে । দৈব কি? ভিতরে উঠান। রোদ। দু-ধাপ সিঁড়ি;- উঠে গেছে প্রশস্ত একটি দাওয়ায়। হ্যাঁ, কোনও সম্পন্ন শ্রেষ্ঠীর গৃহই মনে হচ্ছে। একটি মেয়ে দ্রুত দাওয়া থেকে উঠানে নেমে আসছে। মেয়েটির হাতে লাল রঙের মাটির বাসন। এলো চুলের শ্যামলা মতন মেয়েটি হাঁটার ধরনে কী ছিল-নিমিষে মুগ্ধ হয়ে গেল ভিক্ষু সুমন্ত। এবং তাঁর এই মুগ্ধতা বিস্ময়ের সৃষ্টি করল।তার শরীর ও মনে ভিতরে এক ধরনের ভালো লাগা চোখের নিমিষে আশ্চর্য! আমি কি ভালোবেসে ফেললাম মেয়েটিকে?। অথচ অথচ আমি যে?মোহশূন্যতার সাধক। মেয়েটির মাঝারি উচ্চতা। কতই বা বয়স-এই পচিঁশ/ছাব্বিশ। যত কাছে আসছিল, বুকের ভিতরে বেজে উঠছিল মৃদঙ্গ। ভিক্ষু সুমন্ত তার শীর্ণ বুকের ভিতরে করতোয়ার উছল জলপ্লাবন টের পায়-এই মাঝ বয়েসেও। সদর দরজার কাছে এসে মেয়েটি মুখ তুলে তাকালো। রোদ। কালো পাথরে গড়া নিখুঁত মিষ্টি একটি মুখ। আয়ত চোখ। নাকে রুপোর নথ, ঠোঁটের বাঁ পাশে তিল। জবাকুসুম তেলের গন্ধ পেল ভিক্ষু সুমন্ত। তার শরীর অবশ হয়ে যেতে থাকে। মেয়েটিও থমকে গেল যে! মুখচোখে সামান্য বিস্ময় জমেছে যেন। দ্রুত সামলে নিল। তারপর বলল, শুনেছি, নগরে তথাগত এসেছেন ভিক্ষু?
কী মধুর কন্ঠস্বর। বুদ্ধ যে পুন্ড্রনগরে এসেছেন- কথাটাটি পুরনো। তবে জিজ্ঞেস করল কেন, সচেতন হয়ে উঠল ভিক্ষু সামন্ত। ভিক্ষা পাত্রে অন্ন আর সেদ্ধ ওল নিতে নিতে সুমন্ত বলল, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন।
তথাগতর সঙ্গে দেখা হলে আমার প্রণাম জানাতে ভুলবেন না যেন।
বেশ। তা জানিয়ে দেব।
বেশ কিছু দিন থাকবেন বুঝি?
হ্যাঁ। বর্ষাকালটা তথাগত পুন্ড্রনগরেই কাটাবেন। আশ্চর্য! এই কথাগুলিও তো মেয়েটির জানার কথা। তা হলে জিজ্ঞেস করছে কেন? মেয়েটি কি আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়? কিন্তু, কেন? মেয়েটির চুল এলোমেলো। বসনও ইষৎ বিস্রস্ত। আর চোখ দুটি লাল। ফোলা ফোলা। কাঁদছিল কি? কেন? মেয়েটি সুখি নয়? ভূভারতে কেউ-ইবা সুখি। কিছু আমোদপ্রিয় পুরুষ হয়তো সুখি-মেয়েরা নয়। মেয়েটিকে সম্পন্ন গৃহিনী বলেই মনে হয়। স্বামী কি বণিক? কী এর কষ্টের রহস্য? ভিক্ষু সুমন্ত বলল, অন্নের জন্য কৃতজ্ঞতা।
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, সে থাক। বরং, অন্য কথা বলি।
কি?
আপনারাই সুখি।
কেন? এবার মেয়েটির চোখ স্থির হল ভিক্ষু সুমন্তর চোখের ওপর। সে চোখে রোদ। চোখের পল্লবগুলি বড় বড় -ঢেউ খেলানো। কালো রঙের মনি। কী প্রগাঢ়! মেয়েটি বলল, আপনারা কেমন মুক্ত, পাখির মতো, সংসারের দুঃখসুখ বইছেন না।
জন্মের গ্লানি তো বইছি। ভিক্ষু সুমন্ত বলল। অজান্তে তার চোখ দুটি মেয়েটি স্তন দুটির দিকে চলে যায়। আচঁল ঠিক করতে করতে মেয়েটি বলল, তা হলে আমরা দ্বিগুণ দুঃখ বইছি।
নারী বলে?
তাই তো। দীর্ঘশ্বাস ফেলল কি? সতর্কভাবে ভিক্ষু সুমন্ত শুধালো, সন্ন্যাসীনি হওয়ার কথা ভাবছেন কি?
সে রকম ভাবতেও তো পারি। কে না মুক্তি চায়। মেয়েটি বলল। চকিতে একবার ভিতরের উঠানের দিকে তাকাল।
সুমন্তর বুকটা ধক করে উঠল। পুন্ড্রনগরের বামন পাড়ায় একটি ভিক্ষুণী সংঘ রয়েছে। ইচ্ছে হচ্ছে-মেয়েটার হাত ধরে যোগীর ভিটার নারী সংঘে ভিতরে লুকিয়ে রাখতে । তারপর নিরালা কক্ষে বসে ধর্মের একান্ত পাঠ। মনোপুব্বঙ্গমা ধম্মা মনোসেট্া মনোময়া, মনসা চে পদুটেঠন্ ভাসন্তি বা করোতি বা, ততো নং দুক্খমন্বেতি চক্কং বা বহতো পদং।
আশ্চর্য! মধ্যবয়েসী মধুমেহগ্রস্থ ভিক্ষ সুমন্তর তো অনেক আগেই কাম মরে যাওয়ার কথা। সে কামবোধ মরে গিয়েছে সত্য-তবে ভালোবাসবার সুপ্ত আকাঙ্খা আজও মরে যায়নি। ভিতরে ভিতরে কেমন অসহায় বোধ করে সে।
এ পথে লোকের চলাচল আছে। তারা দেখছে। আর দাঁড়ানো ঠিক না। ভিক্ষু সুমন্ত ঘুরে দাঁড়াল।
আমি শ্রীলেখা। মেয়েটি পিছন থেকে বলল।
ওহ্। আমি ভিক্ষু সুমন্ত। অবশ্য সে ঘুরে দাঁড়াল না। কথাটা শ্রীলেখা শুনল কি না কে জানে। তবে বুকে এক নতুন আবেগ টের পাচ্ছিল সে। গতকালের রাতটি নির্ঘুম কেটেছিল। আজও সকাল থেকেই শ্রীলেখার দুটি চোখ টানছিল। দুপুর নাগাদ জৈন মন্দিরের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ভিক্ষু সুমন্ত। সেই পুস্করিণী, সেই হরীতকী গাছ। আজও শ্রীলেখা নিজেই এল অন্ন ভরা মৃৎপাত্র নিয়ে। আজও শ্রীলেখার হাঁটার ভঙ্গিটি ছিল শ্লথ। চোখ দুটিও কেমন রক্তিম আর কান্না ভেজা। ভিক্ষু সুমন্ত সে দৃশ্যে বিষাদ বোধ করে ভিক্ষু সুমন্ত। তারপর সে আবেগতাড়িত হয়ে জিজ্ঞেস করেই বলল, আপনি কাঁদছিলেন কি?
শ্রীলেখা ম্লান হেসে, নাক টেনে বলল, তা মাঝে মাঝে কাঁদতে হয় বৈ কী ভিক্ষু।
তা মানি।
কাঁদলে কী যে ভালো লাগে। বুকের পাষানটি কেমন গলে গলে নেমে যায়। তখন বড় শান্তি পাই। শ্রীলেখা যেন আপনমনে বলল।
হ্যাঁ, মায়ের কথা মনে করে আজও আমি কাঁদি।
সন্ন্যাসীরা কাঁদে? শ্রীলেখার শ্যামল মুখচোখে কপট বিস্ময় ফুটে ওঠে।
কেন সন্ন্যাসীরা কি øায়ূতন্ত্রের অধিকারী জীব নয়?
তা মানি। শ্রীলেখা ম্লান হাসল। তারপর ভিক্ষু সুমন্তর ভিক্ষাপাত্রে অন্ন আর এক মুঠো শুষণি শাক পরম যতেœ ঢেলে দিল।
এ পথে লোকের চলাচল আছে। তারা দেখছে। মিছিমিছি শ্রীলেখাকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে কী লাভ?
ভিক্ষে নেওয়া তো শেষ। তা হলে আর দাঁড়িয়ে থাকা কেন? এখন আমি যাই। ভালো থাকবেন। ভিক্ষু সুমন্ত বলল। বলে ঘুরে দাঁড়াল। প্রায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভিক্ষু সুমন্ত, ঠিক তখনই পিছন থেকে ডাকল শ্রীলেখা, একটু শুনবেন?
ভিক্ষু সুমন্ত আবার ঘুরে দাঁড়াল। ইষৎ বিস্মিত। আজ্ঞে, বলেন।
আপনি কি অনেক দেশ ঘুরেছেন?
হ্যাঁ।
ও। বলে একটু থেমে নরম সুরে শ্রীলেখা বলল, আপনি কি কখনও শ্রাবস্তী গিয়েছেন?
হ্যাঁ। গত মাঘে আমি তো সে নগরেই ছিলাম।
কেমন সে নগর?
প্রশ্নটা শুনে ভিক্ষু সুমন্ত কী যেন ভাবল। তারপর মুচকি হেসে বলল, সে কথা জানতে হলে তো পথে নামতে হবে।
তা হলে আমি পথেই নামব ভিক্ষু। শ্রীলেখা বলল। কন্ঠস্বর দৃঢ়।
কথাটা শুনে অবাক হয়নি ভিক্ষু সুমন্ত। এ নগরেই প্রায় দুশোর মতন নারী ভিক্ষু রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহনের পূর্বেই এরা প্রত্যেকেই ছিল দুঃখী, নির্যাতিতা। তারা ভিক্ষু হওয়ার আগে তো পথেই নেমেছিল। শ্রীলেখাও নিশ্চয়ই সুখি নয়। নৈলে ও কাঁদছিল কেন? নৈলে ও পথে নামতে চাইছে কেন। ভিক্ষু সুমন্ত শুধালো, পথে নামবেন বললেন। কেন? ভিক্ষুণী হবেন কি?
না।
কেন?
এমনি। ভিক্ষুণী হব কেন। কী হয় চীবর পরে?
তাই তো। ভিক্ষু সুমন্ত ভাবল। আমি তো ভিক্ষু হলাম। তাতে কী লাভ হল। শ্রীলেখা আমার কুড়ি বছরের সমস্ত নিষ্কাম সাধনা চূর্ণ করে আমাকে কেমন মায়ার ঘোরে বেধে ফেলল আজ! সত্যিই তো-কী হয় চীবর পরে।
শ্রীলেখা বলল, আমি সত্যিই পথে নামতে চাই ভিক্ষু। এবং আজই।
আপনার স্বামী? ভিক্ষু সুমন্তকে সামান্য উৎকন্ঠিত দেখায়।
স্বামী? শ্রীলেখার কন্ঠস্বরে শ্লেষ। বলল, আমার স্বামীর নাম শ্রেষ্ঠী অনন্ত-এ নগরে সবাই তাকে চেনে। বলে শ্রীলেখা চকিতে একবার উঠানের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, আমি সুখি হইনি ভিক্ষু।
তিনি কি বাড়িতে নেই? ভিক্ষু সুমন্তর কন্ঠস্বর গম্ভীর।
না। আমার স্বামী বৈশাখ মাসের শেষে বানিজ্যে গেছে। এখন কোথায় আছে জানি না। কোশল রাজ্যে যাওয়ার কথা, ফেরার কথা শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি। আমি ... আমি আজই আপনার সঙ্গে চলে যেতে চাই। আপনি আমায় সঙ্গে নেবেন না?
নেব। ভিক্ষু সুমন্তর বুক কাঁপছে। বলল, তবে অবশ্য এখনই না।
না। আমিও এখন যেতে চাইনা। শ্রীলেখা দ্রুত বলল। আগে রাত নামুক। আজ রাতে আমি ... আমি ঐ পুস্করিণীর পাশে হরীতকী গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকব। আপনি মাঝরাতে আসবেন।
আচ্ছা। তাই হবে। চাপা স্বরে বলল। বলে শ্রীলেখার আয়ত গভীর চোখের দিকে তাকালো ভিক্ষু সুমন্ত। রোদ। কালো পাথরে গড়া নিখুঁত মিষ্টি একটি মুখ। আয়ত চোখ। নাকে রুপোর নথ, ঠোঁটের বাঁ পাশে তিল। জবাকুসুম তেলের গন্ধ পেল ভিক্ষু সুমন্ত। তার শরীর অবশ হয়ে যেতে থাকে।
ভিক্ষু সুমন্ত মাঝবয়েসি; শ্রীলেখা তরুণি। তাতে কি? শরীর ও শরীরের ভিতরে রয়েছে যে এক অদৃশ্য অলীক মনতন্ত্রবীণা-ভিক্ষু সুমন্ত এখন জানে- সেই বীণাটি যে কোনও বয়েসেই ঈশ্বরের কারসাজিতে বেজে উঠতে পারে।
সে কথা ভেবে এখন ভিক্ষু সুমন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
আশ্চর্য! আজ থেকে তা হলে আমি ভিক্ষু সংঘের কেউ নই? তা হলে? তা হলে ধর্মের চেয়ে প্রেমই বড়? আর আমি শ্রীলেখাকে ভালোবাসি। শ্রীলেখাই সার। আর, বাকি সব অসার। এই ভাবনায়-পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই ভিক্ষু সুমন্ত সামান্য বিমূঢ় বোধ করে।
জানালার বাইরে কখন যে শেষ বিকেলের রোদ মুছে গেছে। জানলায় সান্ধ্যকালীন জ্যোøার ফ্যাকাসে আলো। সভাঘরের অন্ধকার জমে উঠছিল। ভিক্ষুরা প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে। রেড়ির তেলের গন্ধ ভাসছিল বাতাসে। বুদ্ধ তখনও উপদেশ দিয়ে চলেছেন। প্রদীপের ম্লান আলোতেও তাঁকে মহিমান্বিত বোধ হয়। সুমন্ত সহসা সচেতন হয়ে উঠল। সভা ঘরের দরজার কাছেই বসেছিল সে; সন্তপর্নে সভাঘর থেকে বেরিয়ে এল। দরজার ওপাশে দু’পাশ ঢাকা দীর্ঘ এক ইটের অলিন্দ। বাঁ পাশে ভিক্ষুদের সার সার কক্ষ । একটি কক্ষে ঢুকল সুমন্ত। ফাঁকা কক্ষ। অন্ধকার জমে ছিল। শ্রীলেখার জন্য অতিরিক্ত একটি চীবর চাই। মেঝের এককোণে কতগুলি পাট করে রাখা চীবর পড়েছিল। উবু হয়ে তারই একটি তুলে নিল সুমন্ত। চীবরটি কার কে জানে। চুরি করলাম? চুরিই তো। আর কী। গতকাল শ্রীলেখাকে দেখার পর থেকেই ভিক্ষু জীবনের পাট চুকেছে। আর, আজ পরের দ্রব্য হরণ করতে হল! দীর্ঘশ্বাস ফেলে দ্রুত পায়ে ঘরটি থেকে বেরিয়ে এল সুমন্ত। অলিন্দে অন্ধকার। প্রাঙ্গনে নেমে যাওয়ার সিঁড়ির ওপর জ্যোøা। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘন হয়ে উঠেছে। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি। আকাশে পরিপূর্ন গোল একখানি পূর্ণিমার চাঁদ। প্রাঙ্গনটি জ্যোøালোকিত। জ্যোøালোকিত ও নির্জন। প্রাঙ্গনের ঠিক মাঝখানে একটি বয়স্ক অশথ গাছ। যে কারণে প্রাঙ্গনের ওপর অজস্র শুকনো পাতা ছড়িয়ে। আষাঢ়ি সন্ধ্যার বাতাসের টানে পাতাগুলি সরসর করে ওঠে।
দ্রুত পা ফেলে ভাসু বিহার থেকে বেরিয়ে যায় সুমন্ত ।
আর আমি ভাসু বিহারে ফিরে আসব না। তার দীর্ঘশ্বাস পড়ল।



ভাসু বিহারটি পুন্ড্রনগরের পশ্চিমে। ও কিছু বাইরে।
শ্রীলেখার মুখটি স্মরণ করে নগরমুখি হল সুমন্ত। দিন কয়েক বৃষ্টি হয়নি। নগরমুখি এ পথটায় গো শকটের চাকার গভীর দাগ। সান্ধ্য জ্যোøায় অনেকটাই স্পষ্ট। পথের দু’পাশে ঘন ঝোপজঙ্গল, কচুবন। তারই ফাঁকে ফাকে ফুটি ফুটি জ্বোনাকি। ঝিঁঝিরা তারস্বরে ডাকছিল। দূরবর্তী শেয়ালের আর্তনাদও কানে আসে।
সুমন্ত দ্রুত হাঁটে।
পথের দু’পাশে এখন জ্যোøার প্রান্তর, আখের ক্ষেত। আখ বর্ষজীবি উদ্ভিদ। আখ পাতার ওপর বয়ে যাওয়া আষাঢ়ি সন্ধ্যার বাতাসের ঘর্ষনে সৃষ্ট মৃদু সরসরানির শব্দ সুমন্তকে কেমন আনমনা করে দেয়। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পথের ওপর তার ছায়াটিও চলমান। সে অভিভূত হয়ে যেতে থাকে। এই সময়ে কে যেন তার ভিতর থেকে বলল, এই জীবন। কী লক্ষ তার?
পথে যেতে যেতে একটা আলোর মুখে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য। কে যেন আজ সান্ধ্যকালীন জ্যোøার বাতাসে ভেসে এসে উত্তর দিল।
আর?
আর কী।
সুমন্ত বিভ্রান্ত বোধ করে। একা হলেই কে যেন কথা কয়ে ওঠে তার ভিতরে। কে সে? কে?
আখের খেত শেষ হলে তারপর আমবনের শুরু। আষাঢ় মাসজুড়ে আমবনে এক ধরনের কষায় গন্ধ থাকে। সুমন্ত সে কষায় গন্ধ পায়। সন্ধ্যা অতিক্রান্ত বলেই এপথটিতে এখন লোক চলাচল কম। এ পথে এখন কেবলি জ্যোøা ও গাঢ় নির্জনতা । সুমন্ত গুনগুন করে ওঠে: পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে। আশ্চর্য! বুদ্ধ সঙ্গীত নিষিদ্ধ করেছেন বহু আগেই। মুচকি হাসে সুমন্ত। ধর্মের চেয়ে সঙ্গীত বড়। সে দ্রুত হাঁটতে থাকে। বাতাসের গন্ধ সহসা বদলে যায়। ডান পাশে একটা বিস্তীর্ণ বিল। কালিদহ বিল। বিলের জলের রং তরল রুপার মতোই দেখায়। সামনেই একটা হাট। মেছো হাট। মাছের আঁষটে গন্ধ টের পায় বাতাসে। মানুষের কন্ঠস্বরের গুঞ্জন। পথের দুপাশে অনেকগুলি কূপি জ্বলে ছিল। ডুলো নিয়ে বসেছে মেছোরা। মাছ বিক্রি করেই তবে বাড়ি ফিরবে। আঁষটে গন্ধটা ভালো লাগে না সুমন্ত। জায়গাটি সে দ্রুত হেঁটে পেরিয়ে যেতে চায়। দীর্ঘকাল মাছ খায় না সুমন্ত। দীর্ঘকাল কেবল অন্ন আর কন্দ খেয়ে বেঁচে রয়েছে সুমন্ত। মাঝেমধ্যে অবশ্য শাকও খায়। একটা সময় ছিল-যখন সুমন্ত মাছমাংস খেত; তখনও ভিক্ষু হয়ে যায়নি সে। তা, সুমন্তর মা মহামায়া রাঁধতেন ভালো। সুমন্তর বউটিও-সেই সাবিত্রীরও রান্নার হাত ছিল চমৎকার। মাছ কাছিম ছাগ ও কবুতরের মাংস-কত কী যে রাঁধত সাবিত্রী। সুমন্তর আদিবাড়ি ছিল সমতট রাজ্যের দেবপবর্ত নগরের কাছে ক্ষিরোদা নদীর পাড়ের ময়নার টিলা গ্রামে। ক্ষিরোদা নদীটি ছিল নানাবিধ মৎসে পরিপূর্ন; বিশেষ করে, তিলাশোল। সুমন্তর বউ সাবিত্রী ছিল পাশের শ্মাশনগাছা গ্রামের মেয়ে। সুমন্তর বাবা জয়ন্ত ঘোষ যখন সাবিত্রীকে ছেলের বউ করে ঘরে আনল- সাবিত্রীর বয়স তখন সবে তেরো। বিখ্যাত ময়রা জয়ন্ত ঘোষ ছিল সমতটের প্রসিদ্ধ দই প্রস্তুতকারক। দেবপর্বত নগরের ময়নামতিতে জয়ন্ত ঘোষের দইয়ের বিপনী ছিল। তো, বউকে ভারি ভালো বাসত সুমন্ত। কত রকম পদ যে সাবিত্রী রেধে খাওয়াত; বিশেষ করে টাকি মাছের ভর্তা। হায়, তিন বছরও ঘর করা হল না- কী রোগে মরল সাবিত্রী। বউয়ের মৃত্যুর পর সুমন্তকে উদাসী রোগে ধরল। সে রাতদিন ক্ষিরোদা নদীর পড়ে বসে থাকত। সাবিত্রীর শোক দিনদিন বাড়ছিল। দিশেহারা সুমন্ত শোক প্রশমনের জন্য পথে বেরুল। সমতটের পূর্ব-দক্ষিণের ছিল ঘন অরণ্যে। সেখানে গেল। দক্ষিণের সমুদ্রের পাড়ে গেল, পশ্চিমের জমজমাট সব নগরে গেল। এভাবে শোক কিছু প্রশমিত হল বটে। বহু বছর পথে ঘুরতে ঘুরতে একদিন সে পৌঁছল আর্যাবর্ত্মের উজ্জয়িনী নগর। সে নগরের উপান্তে ভিক্ষু ধর্মরক্ষিতের সঙ্গে অনেকটা আকস্মিকভাবেই দেখা হয়ে গেল। ভিক্ষু ধর্মরক্ষিত মগধের রাজগৃহ নগরে স্বয়ং বুদ্ধদেবের কাছে ধর্মান্তিত হয়েছেন। বুদ্ধদেবই তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন নগর উজ্জ্বয়িনীতে একটি বৌদ্ধসংঘ নির্মান করতে। কুড়ি বছর উজ্জ্বয়িনীর সংঘে ছিল সুমন্ত । ভিক্ষু ধর্মরক্ষিতের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল গভীর সখ্য । গত বছর মধ্য শ্রাবণে ভিক্ষু ধর্মরক্ষিতের মৃত্যু হল। সে সময় গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল সুমন্ত। শোক প্রশমনের উদ্দেশ্যে সে আবার পথে বেরিয়ে পড়েছিল। জীবন এমন-পুন্ড্রনগরে এসে গতকাল শ্রীলেখার মুখটি দেখে সাবিত্রী ও ধর্মরক্ষিতের মুখ সম্পূর্ন ভুলতে বসেছে সুমন্ত। আশ্চর্য! শ্রীলেখার সঙ্গে মৃতা সাবিত্রীর মুখোশ্রীর এত মিল!
পুন্ড্রনগরের পশ্চিমের নগর তোড়ণটিরর প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে সমন্ত। কড়–ই গাছের সমান উচুঁ ইটের তৈরি তোরণ- অর্ধবৃত্তাকার অবয়বটা জ্যোøায় কেমন ভৌতিক দেখাচ্ছে। তোরণের ছায়ায়, ভিতরে, আশেপাশে সশস্ত্র সৈন্যরা দাঁড়িয়ে। ক’জন অশ্বারোহী সৈন্যও রয়েছে। একটি মেয়েকেও দেখল।
সুমন্ত ভিক্ষ বলেই কেউই তাঁকে আটকালো না।
নগর তোরণের ওপাশে একটি সোজা প্রশস্ত ইট বাঁধানো সড়ক। জ্যোøায় উজ্জ্বল। পথের দু-পাশে কিছু দ্বিতল ভবন রয়েছে। সুমন্ত জানে-ভবনগুলি অধিকাংশই প্রশাসনিক । বাঁ পাশে একটি বড় দিঘি। সুমন্ত জানে-পুন্ড্রনগরের লোকেরা দিঘিটিতে বড় দিঘিই বলে। দিঘি পেরুলে আবার সড়কের দু-পাশে কিছু দ্বিতল ভবন রয়েছে। এই ভবনগুলি প্রশাসনিক নয়-নগরের সম্পন্ন শ্রেষ্ঠীদের বাস। সড়কের পাশে প্রাচীর। প্রাচীরের ভাঙ্গা একটি রথ। রথটির তলায় একটি আশ্রয় পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। কূপী জ্বলেছিল। আর্যাবত্মজুড়েই এরকম হতশ্রী দৃশ্য বিরল নয়। কেন যে জগতে একদল মানুষ অহেতুক কষ্ট ভোগ করে। সুমন্ত হাটার গতি বাড়িয়ে দিল। সড়কটা শেষ হয়েছে বৃত্তাকার একটি ইটের প্রাঙ্গনে। জায়গাটির নাম রাজর্ষী: এটিই পুন্ড্রনগরের প্রধান নগরকেন্দ্র। রাজর্ষী চত্তরের ঠিক মাঝখানে বিশাল একটি পাখা মেলা ধবল রাজহাঁসের মূর্তি। শ্বেত পাথরের তৈরি। মধ্য আষাঢ়ের জ্যোøায় স্পস্ট ধবল দেখায়। মগধের সম্রাট বিম্বিসার একবার এসেছিলেন পুন্ড্রনগর। তখন তাঁরই সম্মানে নির্মিত করেছেন পুন্ড্রনগরের নগরপিতারা ।
কী মনে করে আকাশে মুখ তুলল সুমন্ত।
আশ্চর্য! জ্যোøার আকাশে এক ঝাঁক বুনো হাঁস হারের মতন উড়ে যাচ্ছে দক্ষিণ দিকে।
সুমন্ত তার শরীরে ক্ষীণ শিহরন টের পেল।
রাজর্ষী চত্ত্বর ঘিরে চারটি পথ চারদিকে চলে গেছে। পথগুলির ফাঁকে ফাঁকে সরু সরু গলির মুখ। পূর্বদিকের একটা গলির মুখে একটি মিস্টান্নের আপণ। পুন্ড্রনগরের বিখ্যাত মধু ময়রার ‘শ্রীপর্ণা দধিভান্ডার।’ আপণে আলো জ্বলে আছে। ভিতরে বাইরে লোকজনের জটলা। এখানে এলেই মৃত বাবার কথা মনে পড়ে যায় সুমন্তর। কত শখ করে সাবিত্রীকে ছেলের বউ করে ঘরে তুলেছিল বাবা। বাবা এখন কই? দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরু গলিতে ঢুকল সুমন্ত। এই গলির নাম নবান্নের গলি। সুমন্ত জানে । গলিটা বেশ সরু। কোনও মতে দুটি রথ যেতে পারে। দুপাশে এক মানুষ সমান উচু প্রাচীর। প্রাচীরের ওপাশে মানুষের ঘরবাড়ি। কারা যেন খড়ি পুড়িয়েছে। ধোঁওয়া দেখা না গেলেও øায়ূ উতল করা সেই গন্ধ পেল সুমন্ত। শিশুর কান্না। কুকুরের ডাক। পুরুষকন্ঠের তীক্ষ্ম চিৎকার: ‘তুই, মরতে পারিস না!’ দ্রুত পায়ে হাঁটছে সুমন্ত। গলিটা এ জায়গায় বাঁক নিয়েছে। বাঁকের মুখে একটা ছাড়া-ষাঁড়। কাদের কে জানে। অনেকদিন হল এ নগরে শৈব আর বিষ্ণপন্থি উপাসকদের প্রতাপ। বলির জন্য ষাঁড় অপরিহার্য। ষাঁড় বলি দিলে সার্থবাহের পশুর সঙ্কট। আর্যাবত্মজুড়ে ষোড়শ জনপদ গড়ে উঠেছে। পন্য নিয়ে দূরবর্তী নগরে যেতে গো-শকট অপরিহার্য। ওদিকে বুদ্ধ অসিংহধর্ম প্রচার করছেন-তিনি পশুবলির বিপক্ষে। এজন্যই কি বনিকেরা বুদ্ধের পৃষ্টপোষকতা করছেন? সুমন্ত মুচকি হাসে। বুদ্ধ যখন ব্যবহৃত হচ্ছেন-তা হলে আমি ধর্মের চেয়ে সঙ্গীত ও শ্রীলেখাকে বড় বললে আমার দোষ কোথায়? কথাটা ভাবতে ভাবতে হাড়ি পাড়ায় চলে এল সুমন্ত। হাড়ি পাড়ায় হাড়ি ছাড়াও ডোমদের বাস। এরা, শৈব আর বিষ্ণপন্থি উপাসকদের চোখে অচ্ছুত। সুমন্ত মুচকি হাসে। আরও কিছুটা হাঁটলে যৌবন বিক্রেতাদের পল্লি। সে কারণেই বাতাসের গন্ধও কেমন বদলে যায়। গলিতে নানাবয়েসী পুরুষের ভিড়। দু’পাশে আলোজ্বলা বাড়ি। বাতাসে মাংসপোড়া গন্ধ, ধেনো মদের গন্ধ। আলো। খিলখিল হাসি। গম্ভীরস্বরে ভর্ৎসনা। বিচিত্র সুরের গান। একজন নেশাসক্ত পুরুষকন্ঠের গান কানে এল সুমন্তর।

তুমি আর আমি সখা, তুমি আর আমি।
ভালোবাসি ভালোবাসি জানে অর্ন্তযামী।

অর্ন্তযামী মানে কি ঈশ্বর? ভিক্ষুজীবনে কি ঈশ্বর মানত সুমন্ত? বুদ্ধ তো নিরেশ্বরবাদী। তা হলে?
আহ্। পুন্ড্রনগর। তুমি সস্তা আর সুলভ নারীদের বুকে নিয়ে আজও সংশয়বাদী। তুমি শ্রীলেখার নগর। আমায় তুমি বদলে দিলে হে পুন্ড্রগনের মহৎ নগর। কেননা, ধর্মের চেয়ে প্রেম বড়। ঘোরের মধ্যে হাঁটে সুমন্ত। বেশিদিন হয়নি সে এ নগরে এসেছে । প্রথম থেকেই অসম্ভব ভাল লাগছিল তার নগরটি। এ নগরেই কোথাও যদি শ্রীলেখার সঙ্গে বাস করা যেত-ধরা যাক এই নবান্নের গলিতে-হাড়িপাড়ার খুব কাছে । হায়। নাঃ, তা সম্ভব নয়। শ্রীলেখার স্বামী জীবিত। শ্রীলেখাকে নিয়ে পুন্ড্রনগর ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আজই। শ্রীলেখা শ্রাবস্তী নগরে যেতে চায়। যদিও শ্রাবস্তী যাওয়া অনুচিত হবে। শ্রাবস্তী নগরটি কোসল রাজ্যে। তখন শ্রীলেখা বলল, ওর স্বামী কোসল রাজ্যে গিয়েছে। জৈন মন্দিরের পাশে সেই হরীতকী গাছের নীচে শ্রীলেখার দাঁড়িয়ে থাকার কথা । দাঁড়িয়ে থাকবে তো? সুমন্তর বুকে ঝড়। ধর্মের চেয়ে প্রেম বড়। আর আমি শ্রীলেখাকে ভালোবাসি। আশা ও সংশয়ের দোলায় দুলতে দুলতে ধানমোহনীর জৈন মন্দিরের দিকে হাঁটতে থাকে সুমন্ত।



শ্রীলেখা। অনেকক্ষণ হল জৈন মন্দিরের পাশে হরীতকী গাছটির নীচে দাঁড়িয়ে আছে । এখন রাত্রির কত প্রহর কে জানে। ভিক্ষু এখনও আসছে না । আসবে না? না আমাকে ঠকালো? সবাই আমাকে ঠকায়। আমার বাবা, জয়ন্ত, আমার স্বামী । শ্রীলেখা অসহ্য অভিমান টের পেল বুকের ভিতর। মশারা বিন বিন করছিল পায়ের কাছে। রক্ত শুষে নিচ্ছে। নিক। আমি তো মরতেই চাই। কত আর সহ্য হয়? স্বামী ঘরে না থাকলে দাসী মল্লিকা চোখে চোখে রাখে। অসহ্য। আজ রাতে দাসী মল্লিকা মাধবের ঘরে ঢুকে দোর দেওয়ার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেই তবে সন্তপর্ণে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে শ্রীলেখা। তখন মোটেও বুক কাঁপেনি। তবে মুক্তির আনন্দও টের পাচ্ছিল না শ্রীলেখা। কেবল ক্ষীণ এক উদ্বেগ টের পাচ্ছিল- দাসী মল্লিকা যদি জেগে ওঠে। দাসী মল্লিকা সাংঘাতিক কুটনি। স্বামীর চর। মাঝেমধ্যে মধ্যরাত্তিরে মল্লিকার ঘরে যান পতিদেবতাটি। পরের দিন দাসী মল্লিকার হাসি হাসি মুখ দেখে সর্বাঙ্গ জ্বলে যায় শ্রীলেখার।
তবে শ্রীলেখার স্বেচ্ছানির্বাসনের কারণ এইটুকুমাত্র নয়।
ভিক্ষু এখনও আসছে না । ইস্। মশারা ছেকে ধরেছে। ধরুক। লাল রঙের চীবর পরা মধ্যবয়েসী শ্যামবর্ণের ভিক্ষুটি আমায় গতকাল দেখামাত্রই ভালোবেসে ফেলেছে। ইস্। লোকটা যদি জানত সবটা! কেন আজও মধ্যআষাঢ়ের পূর্ণিমার রাতে পুন্ড্রনগরের আকাশ দিয়ে উড়ে যায় এক ঝাঁক বুনোহাঁস! থাক। সে সব কথা এখন থাক। তবে মধ্যবয়েসী ভিক্ষুর ওপর নিশ্চয়ই বিশ্বাস রাখাই যায়। একেই কি দৈব বলে না? নইলে আমার স্বামীই-বা কেন ঠিক এই সময়ে কোশল থাকবে? নইলে আজও দুপুরে কেন বাড়ির পিছনের পুস্করিনীতে গা ধুতে যাবে দাসী মল্লিকা - যখন ভিক্ষু এল। কালও তো তাইই হল। ভাগিস্য। আজ থেকে আর আমার পাষন্ড লোকটার মুখটা দেখতে হবে না। কেন যে ঐ চন্ড লোকটা সঙ্গে বিয়ে হল। বিয়ের পরপরই এক ছেলে হয়ে মরে গিয়েছিল শ্রীলেখার-সে ও ছ’-সাত বছর আগের কথা; পুন্ডনগরের প্রবীন কবিরাজ রাজনাথ শ্রীলেখার জন্মপথে কীসব ঢুকিয়ে কী করেছিলেন-তারপর থেকে আর প্রশব বেদনা সইতে হয়নি শ্রীলেখাকে। ভাগ্যিস। সেবার ছেলে হওয়ার সময় শ্রীলেখা বাপের বাড়ি ছিল। শ্রীলেখার বাপের বাড়ি ছিল রাজর্ষী প্রাঙ্গনের পুবে, নবান্নের গলিতে- হাড়ি পাড়ার খুব কাছেই। শ্রীলেখার পিতা ছিলেন প্রসিদ্ধ বৈদিক পন্ডিত-গতবছর দেহরক্ষা করেছেন রামদেব । শ্রীলেখাদের বংশটি বড়ই সম্ভ্রান্ত। দেব পরিবারই তো বংশপরম্পরায় বৈদিক মত প্রতিষ্ঠা করেছে আর্যাবর্তের পূর্বের এই প্রান্তে। তার আগে পুন্ড্রবর্ধনের জনমানুষ পূজা করত প্রকৃতির এবং লৌকিক দেবদেবীর। বৈদিকেরা পুন্ড্রবর্ধনে আসার আগে স্থানীয় লোকজ ডোম-হাড়ি-বাগদির বৈদিক যাগজজ্ঞের ধারনাই ছিল না। নবান্নের গলির হাড়িপাড়ার ক’ঘর মানুষ আজও লৌকিক দেবদেবীর উপাসনা করে। হাড়ি পাড়ার জয়ন্তকে ভালোবাসত শ্রীলেখা। পরিবারের বৈদিক আবহ, বৈদিক শিক্ষা তুচ্ছ করেছিল শ্রীলেখা। ওর শরীরে তখন রক্তের বদলে করতোয়ার জল ঢুকে গেছে- নিত্য ঝড়জল-প্লাবন টের পায়। হাড়িপাড়ার শ্যামবর্ণের তরুণ জয়ন্ত যে দেখতে খুব একটা সুদর্শন ছিল তাও কিন্তু নয় -তবে চলনসই ছিল- শ্রীলেখা কিন্তু রুপ নিয়েও ভাবত না। চৌদ্দ বছর তিন মাস বয়েসে শ্রীলেখা প্রথম জয়ন্তকে দেখেছিল করতোয়ার পূর্ব পাড়ের রুপহাটির মেলায় বৈশাখের প্রথম দিনের রৌদ্রমূখর অপরাহ্নে । রসিক ময়রার মিস্টান্নর আপণের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল জয়ন্ত। শ্রীলেখা তো ওকে দেখামাত্র থ। শিরার রক্তে প্লাবন; বুকে ঝড়জল। সে ঝড় বাহিরের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল কি? নইলে আচমকা ঝড়ই বা উঠবে কেন। সহসা বোশেখের ঘূর্ণি বাতাসে কে কোথায় ছিটকে গেল। মুহূর্তেই সমস্ত মেলা লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। রুপহাটির উত্তরে যে বিস্তীর্ণ আখক্ষেত আছে-সেখানেই নিজের বুকে শক্ত করে শ্রীলেখাকে আঁকড়ে রেখেছিল জয়ন্ত। সন্ধ্যে অবধি। তারপর থেকে জয়ন্তর সঙ্গে নিত্য দেখা হতে লাগল শ্রীলেখার: লুকিয়ে অবশ্যই। শ্রীলেখার বাবা আচার্য রামদেব ছিলেন যেমন রক্ষণশীল-তেমনি চন্ড প্রকৃতির। রামদেব অবশ্য তার কন্যাটিকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। কন্যাটিও- ‘নবান্নের গলির ধোঁওয়ায় মাথা ধরে আছে। নদীর পাড়ে যাচ্ছি’ বলে রথে উঠে বসত। কন্যার কথা শুনে রামদেব মিটমিট হাসতেন। সঙ্গে নবীন তো রয়েছে-চিন্তা কী। বয়সে প্রবীন হলেও নবীন দেবপরিবারের বিশ্বাসী সারথী। তাছাড়া রামদেবের কন্যাকে উক্তত্য করে এমন স্পর্ধা কার আছে এ নগরে। তো, পুন্ড্রনগরের বাগদি পাড়ার কাছেই শালবন। শালবনের ওপাশে চন্দ্রদিঘি। সে দিঘির নিরালা পাড়ে অপেক্ষা করত জয়ন্ত। অপরাহ্নের আলো মুছে না যাওয়া অবধি দুজনের কত কথা, চুম্বন-প্রনয়। কিশোরী শ্রীলেখার শরীরে তখন রক্তের বদলে করতোয়ার জল ঢুকে যেত। যে জলে ঝড়জল-প্লাবন। জয়ন্তের গানের গলা ছিল দরদী। যখন সে এতদ্বঞ্চলের একটি লোকপ্রিয় গান ধরত-

তুমি আর আমি সখা, তুমি আর আমি।
ভালোবাসি ভালোবাসি জানে অর্ন্তযামী।

তখন ...তখন, শ্রীলেখার মনে হত চন্দ্রদিঘির কালো জলে সন্তরণশীল বুনোহাঁসেরা গানের টানে পাড়ের দিকেই এগিয়ে আসছে। চন্দ্রদিঘির পাড় ঘিরে দীঘল দীঘল শিলকড়–ই গাছ, কচু বন, আমরাঙা গাছ। সেসব গাছের গভীর ছায়া । পাড়ে উঠে এলেও বুনোহাঁসেদের আমাদের খুঁজে পেতে সমস্যা হবে-শ্রীলেখা তেমনই ভাবত। শেষ বেলার আলোয় অজস্র চুম্বনের পর বড় রাস্তার পাড়ে অপেক্ষমান রথের কাছে ফিরত শ্রীলেখা। রথের বুড়ো সারথী নবীন খুড়ো শ্রীলেখাকে ভারি ভালোবাসত।
ক্রমশ ...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩২
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×