somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: মিথ্যা

১০ ই জুন, ২০০৯ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বীথির নকিয়াটা বাজল। সুমিত? বালিশের পাশে সেটটা পড়েছিল । সারাদিনই আজ অফ ছিল- এই কিছুক্ষণ আগে বীথি সেটটা অন্ করেছে। বীথি কাঁদছিল। কান্নাটা চেপে বীথি নীল বাটনটা প্রেস করে। হ্যালো ...এই বীথি, কী হইছে তোমার ? ফোন বন্ধ কেন? সকাল থেকে কতবার ফোন করলাম। আজ ক্লাসে আসো নাই কেন? । বীথি প্রথমে চুপ করে থাকে। তারপর কান্না ভেজা কন্ঠে বলল, আমাকে তুমি আর ফোন ক’রো না সুমিত। প্লিজ। মনে কর আমি মরে গেছি। বলে হু হু করে বীথি কাঁদতে থাকে। বীথির গলাটা কেমন ফ্যাসফ্যাসে শোনাল। এই বীথি ...কী হইছে তোমার ... কাঁদতেছ কেন...আহা, কী হইছে বলবা তো। না, বীথি বলতে পারে না। বলা যায় না। কী হইছে বল? বীথি চুপ করে থাকে। আমি জানতাম। সুমিত বলে। বীথি বলে-নাঃ, বিশ্বাস কর। ওসব না। তা হলে কী? বীথি চুপ করে থাকে। আমি তখনই জানতাম। সুমিত বলে। না। সে জন্য না। বিশ্বাস কর। বলে বীথি ফোনটা অফ দেয়। কারও সঙ্গে এখন কথা বলতে ভাল্ লাগছে না। সুমিত রাগ করলে করুক। বীথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জানালার দিকে তাকাল। জানালার ওপাশে অন্ধকার। কি কারণে আজ গলির আলোও নেই। নাকি আছে। ও টের পাচ্ছে না। এখন কত রাত কে জানে। ঘরে আবছা অন্ধকার; পারফিউমের মৃদু গন্ধ। ফ্যানটা ঘুরছে ফুল স্পীডে-সেই শব্দ। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমের ভিতরে বীথি স্বপ্ন দেখছিল: বড় একটা বাথরুম। মাঝখানে একটা বাথটাব। একপাশে দেওয়াল ঘেঁষে সোফা। কালো রঙের মনে হল। বাথরুমে সোফা কেন? টাইলসের মেঝে। সাদা রঙের মনে হল। বাথটাব ভর্তি পানি ... উপচে পড়ছে- না, না ... পানি না, পানি না; রক্ত। রক্ত। রক্ত। ঘুমের মধ্যেই শিউরে উঠেছিল ও। তারপর ঘুম ভাঙার পর থেকেই কাঁদছিল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। কিংবা ওর কান্না ফুরিয়ে গেছে। ও আর কাঁদতে পারছিল না। মাথার কাছে জানালাটা খোলা। সন্ধ্যের দিকে থেমে থেমে দু-তিন পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। গলির ডাস্টবিনের কাঁঠাল ভূতির টক টক কড়া অম্লগন্ধ উঠে এসে ঢুকেছে এ ঘরে। ...স্বপ্নদৃশ্যটা আবছা ফিরে আসে। সেই বাথরুম। ইমরান ভাই ঢুকল। খালি গায়ে পরনে কালো প্যান্ট। আশ্চর্য! সুমিত না। বাথটাব। মেঝেতে রক্ত। আর, মাথার ভিতরে নকিয়ার পরিচিত রিংটোনটা বাজছিল। সেই সঙ্গে পচা কাঁঠালভূতির অম্লগন্ধ। অনেক অনেক দিন একবার রাতে ওয়ারী থেকে ফেরার সময় বৃষ্টি হয়েছিল। ওরা সিএনজি পায়নি। গলিতে হাঁটতে হাঁটতে টিপু সুলতান রোডে উঠে এসেছিল। ... সেই রকম মাথার একপাশটা এখন কী রকম অবশ লাগছে। মুখে ঘাম। আজ সারাদিন খায়নি কিছু। আশ্চর্য! শরীর হালকা লাগছে। ইমরান ভাই? স্বপ্নে কতদিন পর? অন্ধকারে কত কথা গুনগুনিয়ে ওঠে-ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে ইমরান ভাইয়ের সঙ্গে বীথির ‘চোখের দেখার প্রেম’ ছিল। ইমরান ভাই আশরাফ দুলাভাইয়ের ফুপাতো ভাই। তো সেই ইমরান কী কারণে সি বিচে সানগ্লাস বেচতে ইটালি চলে গেল কে জানে। যাক। সেই ইমরান ভাই? স্বপ্নে কতদিন পর? ... ইউনিভারসিটি ভর্তি হয়েই বীথি শ্যামলা রঙের কোনও মিষ্টি চেহারার ছেলের সঙ্গে কঠিন এক প্রেম করবে বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল। প্রথম দিনই সুমিতকে দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিল। শ্যামলা রঙের চশমা পরা মিষ্টি মুখ; থুতনির কাছে ছোট্ট ভাঁজ। দেখতে অনেকটা এনটিভির রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী আবিদের মত। আশ্চর্য এই সুমিত চমৎবকার রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারে । একদিন ফাঁকা ক্লাসরুমে ভরাট গলায় গাইল-প্রিয়তম হে জাগ জাগ জাগ ... বীথির গায়ের কঁাঁটা দিয়ে উঠল। রীতিমতো পাগল হয়ে গেল। যে করেই হোক রবীন্দ্রনাথসহ সুমিতকে চাই। তবে সুমিত আরষ্ট ছিল। প্রথম কারণ সম্ভবত বীথি-যাকে বলে ক্লাসিক সুন্দরী; লম্বা, ফরসা, স্লিম আর পান পাতার গড়নের মিষ্টি মুখ। দ্বিতীয় কারণ-সুমিতরা ময়মনসিংহের উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ। অথচ, বীথির আবেগ এতসব দূরত্ব কই ভাসিয়ে নিয়ে গেল- ক্লাস শেষে ওরা বেরিয়ে পড়ত, বনানীর ফুটপাত ধরে হাঁটত। ওরা কখনও বনানীর কোনও ‘পশ’ রেস্তোঁরায় খায়নি বরং ভ্যানওয়ালাদের সঙ্গে ফুটপাতে বসে চা অর ভাপা পিঠা খেয়েছে। ‘পশ’ রেস্তোঁরায় ঢুকলে বীথির কী রকম অস্বস্তি হয়; অস্বস্তি হয় লোকজন তাকালে-লাল রঙের কোনও ড্রেস পরলেও অস্বস্তি হয় । ওদের সবচে ভালো লাগে বৃষ্টির দিন। রিকশা করে শহরময় ঘুরতে ... সুমিত একদিন ওদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। সুমিতের বাবা-মা দুজনই দুজনেই ব্যাঙ্কার। ব্যাঙ্কার হলেও একেবারেই অন্যরকম; অন্যরকম মানে-উদার। সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। তারা একটা মুসলিম মেয়ের সঙ্গে আপন ছেলের বিয়েতে রাজী। বীথির পরিবারেও তাই। বীথির বড় আপার কোনও ‘সে’ নেই- আশরাফ দুলাভাই যা বলে। সুমিতের ব্যাপারটা বীথি আশরাফ ভাইকে আকারে ইঙ্গিতে বলেছে। আশরাফ ভাই বললেন, এই যুগে হিন্দু-মুসলমান আবার কী! আসল কথা হল কার ল্যান্ড আছে আর কার ল্যান্ড নাই। বীথি হাসে। আশরাফ ভাইয়ের মনে হয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মদ খায় তো। যারা মদ খায়-বীথি জানে-তাদের মাথা আসলেই খারাপ। আশরাফ ভাই জিজ্ঞেস করে, সুমিতদের জমি আছে রে? আছে। বীথি বলে। কোথায়? গাঙিনার পাড়। ধুরও। গাঙিনার পাড় কি ঢাকায়? শ্যামপুর হলেও কথা ছিল। না, গাঙিনার পাড় ময়মনসিংহে। বীথি ফিকফিক করে হাসে। ধুর, ওখানে ইনভেস্ট করে কে? হি হি। তো, সুমিতরা থাকে লালমাটিয়া। একদিন। ওদের বাড়ির সবাই ময়মনসিংহ। সুমিতের ঠাকুর্মা অসুস্থ; সবাই দেখতে গেছে। ফাঁকা বাড়ি। সুমিত মুডে ছিল। বীথি কতক্ষণ না না করল। ‘বিয়ের পর’ ‘প্লিজ না’ ইত্যাদি। চুমু খেল অবশ্য। মুড ছিল না বলে চুমু খেয়েও ভালো লাগেনি। খালি বুকটা কাঁপছিল। সুমিতও কেমন নার্ভাস ছিল। শক্ত করে বীথিকে জড়িয়ে ধরছিল না। যেম নরম মাটির তৈরি-পুতুল-ভেঙে যেতে পারে। বীথি অবশ্য ওর ফরসা বুকের তিল দেখাল; খয়েরি রঙের স্তনবৃন্ত দেখাল; দেখাল তুলতুলে সাদা স্তন-তার নীলাভ শিরা। এইসব নাকি প্রেম! শরীরে শরীর কি প্রেম? এইসব ছোঁওয়াছুয়ি কি প্রেম? প্রেম কি বনানীর ফুপপাত ধরে হাঁটা না? কিংবা বৃষ্টির দিনের রিক্সায়-রিক্সায় শহরময় ...? সেই দিনই সুমিত বলল কথাটা। আমি জানি বীথি তুমি একদিন আমাকে বলবে- সুমিত প্লিজ,আমাকে আর ফোন করো না প্লিজ। মনে কর মনে কর আমি মরে গেছি। -আমাদের ক্লাস মেলে না।
নাঃ! নাঃ!নাঃ! ক্লাসই কি সব? আমি ওরকম বলব না। তা ছাড়া আমার দুলাভাই তো রাজি।
কথাটা সুমিত বিশ্বাস করেছিল কি?
নীচের গলিতে গাড়ির হর্নের শব্দ। আশরাফ ভাই এলেন? বীথির শরীর কুঁকড়ে যায়। দারোয়ান গেট খুলছে। গেটটা খোলার সময় গরগর করে কর্কস শব্দ হয়। গতকাল দুপুরে আশরাফ ভাই ফোন করে বললেন, সন্ধ্যার পর বাইরে যাব। তৈরি থাকিস। বীথি অবাক হয়নি। ওরা প্রায়ই বের হয়- ইস্টার্ন প্লাজা কি বসুন্ধরা। পিজা হাটে খেয়ে তারপর বাড়ি ফেরা। সঙ্গে অবশ্য রুবেল থাকে। রুবেলের বয়স এখন আট। ভীষন দুষ্টু; সারাক্ষনই ছটফট করে। কাল কী মনে করে বীথি নীল রঙের কাতান শাড়িটা বার করে পরল। শাড়ি অবশ্য অকেশন ছাড়া বীথি খুব একটা পরে না । সুমিত বলে- বীথি শাড়ি পরলে বীথিকে নাকি গ্রামীন ফোনের রুবাবা দৌলার মতন লাগে। কথাটা শুনে বীথি ফিক করে হাসে। বলে, আমি কি ড্রিঙ্ক করি? গতকাল সন্ধ্যায় আশরাফ ভাই রুবেলকে সঙ্গে নিলেন না। রুবেল যাবে না? নাহ্ । বসের জন্মদিন। ফিরতে রাত হতে পারে। ও। বস মানে-হানিফ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ। ভদ্রলোক নাকি প্রথম জীবনে কনকর্ড রিয়েল স্টেটে চাকরি করতেন; পরে চাকরি ছেড়ে নিজের নামেই রিয়েল স্টেট ফার্ম দাঁড় করান। ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বিপত্মীক। দুই ছেলেমেয়ে-বাইরে থাকে; মেয়ের বিয়ে হয়েছে, ছেলে অষ্ট্রেলিয়ায় চাকরি করছে। এসবই বীথি আশরাফ ভাইয়ের মুখে শুনেছে। বীথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আজ একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে- ও ক্ষীণ অস্বস্তি বোধ করছিল । সামনের সিটে বীথি আশরাফ ভাইয়ের পাশে বসেছিল; তখন মদের গন্ধ পেয়েছিল। আশ্চর্য! চোখের সামনে আশরাফ ভাই কেমন বদলে গেলেন। গাড়ির জানালা খোলা। হুহু করে বাতাস আসছিল। কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাস ঠান্ডা। বীথির তলপেটে চিনচিনে ব্যথা। এই সময়টায় বেশ ব্যথা করে। আশরাফ ভাইয়ের সঙ্গে বেরুলে রিনা আপা আজকাল কেমন সন্দেহ করে। খালি বলে, আমি তো শেষ। তুই রুবেল আর ঐশীকে দেখিস। ওদের কোনওদিন ফেলে দিস না। ছিঃ, এসব তুমি কী বল না আপা! রিনা আপার ফ্যাকাসে মুখে কত কষ্ট। কত অজানা আশঙ্কার ছাপ। বীথির মন খারাপ হয়ে যায়। সুমিতের ব্যাপারটা জানে। তারপরও। জন্মের পর থেকেই দুই বোনের ভারি মিল। একই রাশি বলে নাকি? দু’জনেই কর্কট। আর এখন? এখন কী হয়ে গেল। বীথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ইমরান ভাই বিকেলের দিকে দিলু রোডের বাড়িতে আসত। ড্রইয়রুমে বসে থাকত। বীথি সেজেগুঁজে চা নাশতা নিয়ে আসত। বসে দু-একটা ফর্মাল কথা হত রিনা আপা মিটমিট করে হাসত। বলত, তুই সুন্দরী। তোকে আরও বড় ঘরে বেচব। বীথিও বলত-বেইচো। এসব কথা মনে করে বীথির এখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। রিনা আপা আর্ত স্বরে বলে, আমার এমন হইল কেন রে বীথি? আল্লার কাছে আমি কি পাপ করছিলাম? বীথি চুপ করে থাকে। শ্যামলী রায় নামে একজন এয়ারহোস্টেসের সঙ্গে জামিল ভাইয়ের মেলামেশার কথা উঠছে। বীথি ঠিক সিওর না। ভদ্রমহিলা নাকি ডির্ভোসি-উত্তরায় থাকেন। এসব কথা কেমন করে যেন ছড়িয়ে যায়। রিনা আপার কানের কথাটা যাওয়ার কথা না। রিনা আপা বলে, আব্বার এত আমল- আমার কেন প্যারালাইসিস হইল রে বীথি? বীথি চুপ করে থাকে। রিনা আপার ছোট মেয়ে ঐশি হওয়ার পর রিনা আপার বাঁ দিক অবশ হয়ে যায়। সারাদিন বিছানায় রিনা আপাকে শুয়ে থাকতে হয়-নয়তো হুইল চেয়ারে। সরলার মা নামে একজন বয়স্ক মহিলা দেখাশোনা করে। বীথিও দেখে-যতটা পারে। ঐশি অবশ্য সম্পূর্ন সুস্থ্য। ভীষন ফুটফুটে-এই যা শান্তনা। আশ্চর্য! সব মিথ্যা। রিনা আপা ফিসফিস করে বলে, আব্বার বেহেস্তের খুব লোভ ছিল। ঘন ঘন তিন চিল্লা দিত। চিল্লায় যাইতেছিলেন তাহলে গাড়ি উলটাইয়া মরল কেন আব্বা? আশ্চর্য! সব মিথ্যা।
গাড়ির হর্নে চমকে ওঠে বীথি। জামিল ভাই খুশি খুশি কন্ঠে বলল, বস, আমার ওপর দারুন হ্যাপী রে বীথি। আমাকে হানিফ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড -এর ২% শেয়ার দেবেন বলে ইঙ্গিতে বলেছেন। চিটাগাংয়ে একটা রি-রোলিং মিলের জন্য লোন অ্যাপ্লাই করেছেন বস। ব্যাঙ্ককে টাকা খাওয়াচ্ছে, আশা করি লোনটা স্যাংশন হয়ে যাবে। ওখানেও শেয়ার দেবেন। বিএসআরএম কোম্পানীর উন্নতি দেখেই রি-রোলিং মিল-এর কথা ভাবলেন বস ।
ও। বীথি আসন্ন বিপর্যয় টের পায়। আশরাফ ভাই বেশ এম্বিশ্যাস। দেশ সিরাজগঞ্জ। এস এস সি পাস করে ঢাকায় পড়তে আসেন। ইমরান ভাইয়ের মা জাহানারা ফুপুর ওয়ারীর বাড়িতে ওঠেন। আপন ফুপু; কিন্তু ভারি ঘিরিঙ্গি মহিলা- খাওয়ার কষ্ট দিতেন; ঘর ঝাড় দিতে বলতেন, চাকরবাকরের মতন আচরন করতেন। বাজার তো করাতই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আশরাফ ভাই অবশ্য হলে থাকতেন। জাহানারা ফুপুর ওয়ারীর জমিটা পরে ডেভেলাপারদের হাতে তুলে দিয়ে আশরাফ ভাই প্রতিশোধ নিয়েছিলেন । একদিন রাতের বেলা মদ খেতে খেতে বীথিকে বলেছিল। টাকাটা আসল না রে বীথি-আসল হল থ্রিল। জমি দিবে না-ট্রিকস অ্যাপ্লাই করতেই দিল- এসব হল থ্রিল।
হানিফ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড -এর সদ্য সমাপ্ত প্রোজেক্ট “গুলশান ছায়ানীড়” অবস্থিত গুলশান ২ নম্বরে; ৬ তলা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটবাড়ি। জামিল ভাই বলল, কাজ মাত্র শেষ হয়েছে। লোকজন এখনও ওঠেনি। লিফটে ছ’ তলা। বাদামী রঙের পুরু নকশাদার দরজা। একটা অল্পবয়েসি ছেলে দরজা খুলে দিল--ওরা ভিতরে যেতেই ছেলেটি বেরিয়ে গেল। মেন গেটের ওপাশে প্রশস্ত ফয়ের; পর পর তিনটে চেয়ার। মাথার ওপরে আলো জ্বলেছিল। সাদা মোজাইক টাইলসই বুঝিয়ে দেয় ফ্ল্যাটের মান। এক পাশে টব। টবে কী গাছ। অন্য পাশের দেওয়ালে আধুনিক কোনও শিল্পীর আঁকা কালো রঙের নারীমুখ। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। কান পাতলে এসির মৃদু গুঞ্জন শোনা যায়। বাতাসের সুগন্ধী গন্ধ। এয়ার ফ্রেশনার ¯েপ্র করেছে। সোফায় বসে বীথি এদিকওদিক তাকাল। জামিল ভাই বলেছিল- বসের জন্ম দিন। বীথি ভেবেছিল বড় পার্টি-অনেক লোক থাকবে। নাঃ, ফ্ল্যাট ফাঁকাই মনে হল। ফয়ের থেকে কয়েক ধাপ নীচে ড্রইংরুম। মৃদু আলো জ্বলেছিল। নীল কার্পেট, কাচের টেবিল ঘিরে কালো রঙের পুরু সোফা, জানালায় সাদা পর্দা। এককোণে ওয়াইড স্ক্রীনের এলসিডি টিভি। ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ ড্রইংরুমের সোফায় বসে ছিলেন। সাদারঙের পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ছোট ছোট করে ছাঁটা সাদা চুল -গত বছর নাকি হজ করেছেন। মাঝারি উচ্চতা, ফরসা। মুখ ভরর্তি চাপ দাড়ি-পাকা যদিও। ষাটের মতন বয়স। এই বয়েসেও স্বাস্থ্য ভালো। চোখে কালো চশমা। ভদ্রলোককে আগেই বীথি একবার দেখেছিল - রিহ্যাব ফেয়ারে। বৃদ্ধের দৃষ্টিতে পরম বিস্ময় টের পেল। বললেন, আমার এইজ যদি আইজ তিরিশ হইত তো-
বীথি হাসল। বীথি জানে নীল রঙের কাতান শাড়িতে ওকে অপূর্ব লাগছিল। ওরা দুজন বৃদ্ধের মুখোমুখি বসল।
কাঁচের টেবিলের ওপর একটা নীল রঙের ভেলভেটের বাক্স পড়েছিল। তার পাশে তিনটে খালি গ্লাস আর নন ডায়াবেটিক স্প্রাইট লেমনের একটা দেড় লিটারের সবুজ রঙের বোতল। একটা সাদা প্লেট। তাতে ম্যাকেনজি বিসকিটের খোলা প্যাকেট। ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ ইঙ্গিত বীথিকে করলেন স্প্রাইট ঢেলে দিতে। বীথি ঝুঁকল। ঘরটা এসি । ভালো লাগছে। স্প্রাইটে চুমুক দিতে দিতে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ আর আশরাফ ভাই ব্যাবসায়িক আলাপ শুরু করলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বললেন, আপনি একবার কাকরাইল যাবেন নাকি আশরাফ ?
কোথায়?
মোহসিনা বেগমের কাছে?
ওহ্ । যাই তাহলে।
বহুত গিরিঙ্গি মহিলা। কাঠা প্রতি ৯৫ লাখ চাচ্ছে।
হুঁ, জমিটা রাস্তার ওপরে বলেই এত হাই; গলির ভিতরে হলে দশ লাখ কমানো যেত। কাকরাইলে এখন-দেখা যাক কী হয়।
আপনি যান একবার । এইট্টি ফাইভ অলরাইট উইদ আস। তা না হলে লস হয়ে যাবে।
যাই -দেখি; মহিলার সঙ্গে কথা বলে কী হয়।
এই কথাগুলি বীথির কাছে একেবারে অপরিচিত নয়। বাড়িতে থাকলেও জামিল ভাই মোবাইলে এমনই কথা বলে। ওর চোখ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ আটকে গেল। ভদ্রলোক ঝুঁকে কাচের টেবিলের ওপর থেকে সেই নীল রঙের ভেলভেটে বক্সটা তুলে আশরাফ ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে বললেন, এটা নিন।
কী এটা?
গিফট । মোহসিনা বেগমের জন্য । বলে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ হেঃ হেঃ করে হেসে উঠলেন।
ও। আশরাফ ভাই বক্সটা নিল। তারপর খুলল। বীথির চোখ ঝলসে ওঠে। ভিতরে হীরের নেকলেস। বীথির বুকটা ধক করে উঠল। আশরাফ ভাই বলল, স্যার, একটা কথা বলি?
বলেন।
এই নেকলেস ছাড়াই যদি আমি মোহসিনা বেগমকে রাজী করাতে পারি তো?
তা হলে- তা হলে ... ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বীথির দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, তা হলে নেকলেসটা আপনের শালী বীথি পাবে।
বলে কী! বীথির দম আটকে আসে। আশরাফ ভাই বক্সটা বন্ধ করে বীথির দিকে এগিয়ে বলল, নে, এটা তোর। ধর।
আমার মানে? বীথি থতমত খায়।
আশরাফ ভাই বললেন, মানে, আমি নেকলেস ছাড়াই মোহসিনা বেগমের কাকরাইলের জমিটা কবজা করতে পারব ইনশাল্লা।
বীথির মাথা টলে ওঠে। শরীর অবশ অবশ ঠেকে। হাতের ধরা বাক্সটা পাথরের মতন ভারী ঠেকছে। ও, আল্লা! কী ঘটছে আজ সন্ধ্যার পর থেকে। আশরাফ ভাই উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, তুই বস বীথি। আমি কাকরাইল থেকে ঘুরে আসি। বেশি দেরি হবে না। বলে আশরাফ ভাই দ্রুত পা ফেলে ফয়েরের দিকে যেতে থাকে। বীথিও সঙ্গে সঙ্গে ‘অ্যাই, কী না’ বলে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ঝুঁকে ভেলভেটের বাক্সটা কাচের টেবিলেরওপর রেখে দ্রুত হেঁটে সিঁড়ি টপকে ফয়েরের কাছে চলে আসে। বীথি মদের গন্ধ পেল। ফিসফিস করে বলল, আশ্চর্য! আমি এখানে একা থাকব নাকি? আশরাফ ভাই চাপাস্বরে বলল, প্লিজ। বীথি। সিন ক্রিয়েট করিস না। উনি আমার বস্ । বয়স্ক মানুষ। আশরাফ ভাইয়ের কন্ঠস্বরে কী ছিল -বীথির শরীরের রক্তপ্রবাহ মুহূর্তেই জমে গেল। বীথি দাঁড়িয়ে আছে। ওর শরীর অবশ অবশ ঠেকে। কী হল আজ। এখন? আশরাফ ভাইয়ের মুখোশটা খুলে গেল! কেন? রি-রোলিং মিল কি? হানিফ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড -এর ২% শেয়ার মানে কি? বীথির শীত করতে থাকে; ভীষন শীত করতে থাকে। ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ একটু জোরে চেচিঁয়ে বললেন, এই বীথি, এদিকে এসো তো মা-একটু দ্যাখো তো কী ভাবে টিভিটা অন্ করা যায়। দ্যাখো একটু - চ্যানের আইয়ের খবরটা শুনি। আজ বিডিআরের তদন্ত রির্পোট দেওয়ার কথা। এইসব টিভি নতুন জিনিস। আমি ঠিক বুঝি না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বীথি ওর ভবিতব্যের দিকে পা বাড়ায়। ফয়ের থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে কাচের টেবিলের ওপর থেকে রিমোটটা তুলে নেয়। টিভিটা অন্ করে শব্দটা বাড়িয়ে দিতে সমস্যা হল না। বিসকিটের বিজ্ঞাপনে মমতাজের গান-কামড়ে কামড়ে খাইতে কী মজা ...
ফাইন। বোস। খবরটা দেখি।
বীথি বসল। বুকটা তখনও কাঁপছিল। আমার তো ভুলও হতে পারে। আমি মিছিমিছি কল্পনা করছি-যা ঘটবে না তার; আমি সুন্দরী তো -তাই। বিডিআরের তদন্ত রির্পোট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ রেপের প্রসঙ্গ তোলেন। আরষ্ট ভঙ্গিতে বীথি বসে থাকে। খবর দেখতে দেখতে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ ইঙ্গিত করলে বোতল থেকে স্প্রাইট
ঢেলে দেয়। খবর শেষ হতে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বললেন, দাও, অফ করে দাও। টিভি অফ্ করতে বলল কেন? এখন কী হবে? বীথি অফ করে দিল। ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বললেন, এই দ্যাখো না বীথি- আমার মোবাইল ফোন অফ হয়ে গেছে। অন্ হচ্ছে না। এত দামী সেট। সেদিন কিনলাম।
বীথির মুখে কথা ফুটল। দেখি। স্যামসঙ i900 Omnia. কী আশ্চর্য! সুমিতেরটাও অমনিয়া। সুমিত অবশ্য কিনে নি। গিফট। সুমিত হিসেবী আছে। বীথি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কে যেন গেয়ে উঠল-প্রিয়তম হে জাগ জাগ জাগ ... বীথি যা করার করল। এই নিন, ঠিক হয়ে গেছে। থ্যাঙ্কস। বীথি হাসল। বলল, আমি দেখেছি একসঙ্গে দুটো ফোন এলে ফোন অনেক সময় জ্যাম হয়ে যায়। ব্যাটারি খুলে আবার সেটা করে দিলেই ঠিক হয়ে যায়। ওমনিয়াও? সবই চাইনিজ। ও। স্মার্ট গার্ল। চল খেয়ে নিই। বলে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ উঠে দাঁড়ালেন। আমি একটু ভিতর থেকে আসছি। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বীথি বলল। ও, হ্যাঁ। যাও। করিডরের বাঁ পাশে। বীথি লজ্জ্বা পেল। দ্রুত ড্রইংরুম থেকে বেরিয়ে বীথি করিডরে ঢুকল। এ রকম লাক্সারি ফ্ল্যাটের বাথরুমে একবার একা হওয়া ইচ্ছে। আর কখন না কখন আসে। বাথরুমে ঢুকতেই সাবানের গন্ধ। ডোভ। অন্ধকার। সুইচ টিপে আলো জ্বালাতেই দেখল বাথরুমটা বেশ বড় । সাদা রঙের টাইলস মেঝে দেওয়ালে।মাঝখানে একটা কালে রঙের বাথটাব। একপাশে দেওয়াল ঘেঁষে কালো রঙের ডবল সোফা। মনে হল। বাথরুমে সোফা কেন? বাথরুমের শীতল কী রকম প্রশান্তি। বাঁ দিকে মেঝে থেকে সিলিং অবধি ঝকঝকে আয়না। নিজেকে দেখে বীথি মুগ্ধ। অবিকল রুবাবা দৌলা। হঠাৎই নগ্ন হতে ইচ্ছে করল। হীরার নেকলেসটা একবার পরে দেখার সুপ্ত ইচ্ছে। ওটা ড্রইংরুমের কাচের টেবিলের ওপর। বীথির নকিয়াটা বাজল। সুমিত। ধ্যাত। অফ করে দেয়। ইস্, সুমিত ফোন করল। সময় পেল না। এনটিভির পোগ্রামটা দেখতেই। রাসেলের আজ কণার একটা গানে বেজ বাজানোর কথা। রাসেল ওদের ক্লাসমেট; আবার সুমিতের ব্যান্ডের বেজিস্ট।
বাথরুম থেকে ফিরে এসে বীথি দেখল ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন । ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানো । সাদাসিদে আইটেম দেখে বীথি খানিকটা বিস্মিত। ভাত । ইলিশ মাছ ভাজা। মাছের ডিম দিয়ে পালং শাক। ডাল। কাঁচা মরিচ, নুন আর পেয়াজ কুচি। দই।
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বললেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই। আজ আমার জন্মদিন। ছেলেবেলায় আমার যা যা খেতে ভালো লাগত। জন্মদিনে সেসবই খাওয়ার চেস্টা করি। পদ্মাপাড়ে বাড়ি, ইলিশ ভাজা খেতে ভালো লাগে।
ও। বীথি এসব কিছুই খাবে না। খাবার নাড়াচারা করবে। যদি ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো থাকে! এইসব মেয়েলি ইঙ্কসটিংক্ট। দু-চামচ দই নিল। রংটা সাদা সাদা। রস-এর মনে হয়।
পরে যখন ঢাকায় এলাম-হ্যাবিট গেল বদলে। গ্রামের লোক তো আর অত পোলাও বিরিয়ানি খায় না। বলে, ক্ষাণিকক্ষণ চুপ থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বললেন, আমি পাবনার-আই মিন সাদুল্লাপুর। আমি ওখানেই একটা গ্রামে জন্মেছি।
ও। বীথি কেঁপে উঠল। বাবার কথা মনে পড়ল আব্বার বেহেস্তের খুব লোভ ছিল। ঘন ঘন তিন চিল্লা দিত। তাহলে মরল কেন ? চিল্লায় যাচ্ছিলেন। পাবনার সাদুল্লাপুর। হাঁড়িপাতিল নিয়ে ভাড়া করা নসিমনে ছিলেন। ... আশ্চর্য! সব মিথ্যা। ও ড্রইং রুমে চোখ বোলায়। মেন গেট থেকে কয়েক ধাপ নীচে ড্রইংরুম। মৃদু আলো জ্বলেছিল। নীল কার্পেট, কালো সোফা, সাদা পর্দা। এককোণে বিশাল এলসিডি টিভি। আশ্চর্য! সব মিথ্যা। আশরাফ ভাই কাকরাইলের কোন্ মহসিনা বেগমের কাছে গেলেন জমির জন্য। সেই জমিরও উপর ফ্ল্যাটবাড়ি হবে এইরকম ড্রইংরুম হবে। আশ্চর্য! সব মিথ্যা কি?
ততক্ষনে বীথি সহজ হয়ে উঠেছে। হাজার হোক, ভদ্রলোক তো আমাদের ওয়েল উইশার। আশরাফ ভাইকে রি-রোলিং মিল আর হানিফ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড -এর ২% শেয়ার দেবে। আশরাফ ভাইয়ের হাতে অনেক টাকা আসবে। রিনা আপার জন্য একজন সার্বক্ষণিক নার্স রাখা দরকার; সরলার মা (সেই বয়স্ক মহিলা) একা পারছে না, ট্রেইন্ড না তো। তা ছাড়া পড়াশোনার জন্য বীথি বড়’পাকে তেমন সময় দিতে পারে না। তাছাড়া, রুবেলের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার খরচ বাড়ছে। ঐশিও বড় হচ্ছে। আর, ...আর ... ভদ্রলোক সম্ভবত দুঃখি; দুঃখি এবং নিঃসঙ্গ। ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকে। কারও সঙ্গে কথা বলে মনের ভার নামাতে চাইছেন। আর আমি কী সব ছাতামাথা ভাবছি। ছিঃ। এখনও একবারও আড়চোখে বুকের দিকে তাকাননি।
খাওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বললেন, চল, ফ্ল্যাটটা তোমায় দেখাই। ৪০০০ স্কোয়ার ফুটের ওয়েল ফারনিশড ফ্ল্যাট। কী নেই। গ্লাস ডোর। কোণে কোণে মুর‌্যাল, দেয়ালে বাহারি রং, সুন্দর সুন্দর পেইটিংস ...কিচেন ক্যাবিনেট দেখে তো বীথি রীতিমতো থ। সেই বাথরুমে ঢোকার আগে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বীথির কাঁধে আলতো হাত ছুঁইয়ে বললেন, বাথরুম ফিটিংস সব বাইরের। বাথরুমে স্পা। স্পা? ওহ্, ওটা তাহলে বাথটাব না।
না। স্পা।
তারপর সেই কালো সোফা। তখনও বীথির তলপেটে চিনচিনে ব্যথা ছিল। এই সময়টায় ...ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বললেন, বাঙালিরা বাথরুমের মানে বুঝে না। ইউরোপের লোকেরা জানে। বাথরুম হচ্ছে নির্জন ঝরনাতলা। বস। বলে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ সেই কালো সোফায় বসলেন। বীথি বসল। পাশে। ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ বললেন, তুমি তো বি বি এ পড়তেছ না?
জ্বী, আঙ্কেল।
ইবার কও, পয়সাঅলা হইতে হইলে কি কি লাগে?
বীথি চুপ করে থাকে। মুখ টিপে হাসে। উত্তর দিয়ে ধরা খেয়ে লাভ নাই।
এক নম্বর হইল, ব্যাঙ্ক লোন। ২ নম্বর হইল ব্যাঙ্ক লোন পাওয়ার ক্ষমতা, মানে, পার্সোনালিটি। কেয়া গ্রুপের খালেক সাহেব রে সিটি ব্যাঙ্ক লোন দেয় নাই ইংরেজি পারে না বলে। আর এখন? তারপর ধর লোন পাইলা। তখন ? তখন হিসাব। হিসাব আর ম্যানেজমেন্ট। সবার আগে দরকার প্রজেক্ট। মাউন্টেন ডিউ নামাইয়া কোকোলা কোম্পানি ফ্লপ খাইল। আর, সানোয়ারা কর্পোরেশন কী সুন্দর আইসক্রিম বিক্রি কইরা লাল হইয়া যাইতেছে।
বীথি মাথা নাড়ে।
তবে এই দেশের পলিটিক্যাল সিচুয়েশন ঠিক না হইলে ব্যবসাপাতির কিস্যু হবে না। ব্যবসা করা ভারি ঝামেলার ব্যাপার বুচ্ছো। তাহলে লোকে ব্যবসা করে কেন? টাকার গন্ধের জন্য করে। একদল মানুষের বাল্ডিল বান্ডিল টাকার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে ভালো লাগে। সেই টাকা ব্যাঙ্কেরই হোক- আর নিজেরই হোক।
বীথি মাথা নাড়ে। এরপর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ আর দেরি করেননি। বীথির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। জীবনে প্রথম বলে বীথি রক্তাক্ত হয়েছিল ... সেই নীল রঙের ভেলভেটের বাক্সটা কাচের টেবিলের ওপর পড়েছিল। আশরাফ ভাই ওটা তুলে নিতে ভোলেননি। রাত এগারোটার দিকে আশরাফ ভাইই নিয়ে এসেছিল। যেন কিছুই হয়নি। কিছু হলে বীথিরই দোষ-নাভীর নিচে শাড়ি পরল কেন? (কিংবা, আরও মৌলিক প্রশ্ন-বীথি মেয়ে হয়ে জন্মাল কেন? মেয়ে যদিও হল-সুন্দরী হল কেন?) শাড়িই-বা পড়ল কেন? বস বুড়ো মানুষ। গত বছর হজ করেছেন। বিলাসবহুর ফ্ল্যাট দেখে বীথিরই মাথা খারপ হয়ে গেছে; বীথিই বসকে ফাঁসায় দিসে। মেয়েরা ভীষন পাজি হয়। দরকার হলেই বুকের আঁচল সরায়। হিন্দু ছেলের সঙ্গে প্রেম করে। ছিঃ! এসব বাঁধন ছিঁড়তে কতক্ষণ? গাড়িতে বীথি একটা কথাও বলেনি। অল্প অল্প কাঁপছিল। নকিয়াটা বাজাল। সুমিত। প্লিজ,আমাকে আর ফোন করো না প্লিজ। মনে কর মনে কর আমি মরে গেছি। বলে বীথি হুহু করে কাঁদতে থাকে। কি হয়েছে আমাকে বল? প্লিজ। না। প্লিজ । আমি বলতে পারব না। আমাকে তুমি জিজ্ঞেস করো না কিছু। আমাকে তুমি ভুলে যাও। আমি জানতাম বীথি। তখনই আমি জানতাম -আমাদের ক্লাস মেলে না। তুমি একদিন আমাকে বলবে- সুমিত প্লিজ,আমাকে আর ফোন করো না প্লিজ। মনে কর মনে কর আমি মরে গেছি। নাঃ! নাঃ!নাঃ! সুমিত ফোন অফ করে দেয়। এক সুগভীর অন্ধকার বীথিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আজ সারাদিনই বীথি অনেক কেঁদেছে। শরীরে কলুষ বোধ করায় কেঁদেছে। তারপরও ওর কান্না শুকিয়ে যায়নি। কান্নার কারণও আছে। সুমিত কি জানে- আজ দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ ফোন করেছিলেন; সরাসরিই বললেন- বিয়ে করতে চান। গুলশানের ফ্ল্যাটটা লিখে দেবেন। বীথি ওখানেই থাকবে। তিনদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত চেয়েছেন। বিয়ের পর মালয়েশিয়ায় দুই সপ্তাহের হানিমুন । বীথি কাঁদতেই থাকে। ও স্ত্রী আর রক্ষিতার পার্থক্য বীথি বোঝে। আশরাফ ভাই সত্যিই বুদ্ধিমান। বসকে এই খেলায় টেনে আনতে পেরেছেন। কী সুন্দর নেকলেস-নেকলেস খেলাটা খেললেন। আশরাফ ভাইয়ের হানিফ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড -এর ২% শেয়ার চাই। হানিফ রি-রোলিং মিলের শেয়ার চাই। রিনা আপাকে এ বাড়িতে রেখে আরেকটা বিয়ে করবেন। শ্যামলী মুখার্জী নামে একজন এয়ারহোস্টেসের সঙ্গে মেলামেশা করছেন। কাকতালীয়ভাবে শ্যামলী মুখার্জী সুমিতদের আত্বীয়। ভদ্রমহিলা উত্তরা থাকে। বীথি জানে আশরাফ ভাই রিনা আপাকে ফেলবে না। জাস্ট, আলাদা রাখবে। কিংবা -দুটো বাড়িতেই থাকবে। এখন তো বাংলাদেশে আশরাফ ভাইরাই রাজা। আশরাফ ভাই-কী আশ্চর্য! এই তো সেদিন- বাংলার নোটবই লিখতেন ... মীরপুর বাংলা কলেজে পড়াতেন । আশরাফ ভাইয়ের দূর সম্পর্কের এক বিধবা ফুপু (এই ফুপুর একমাত্র ছেলে ইমরানের সঙ্গেই বীথির ‘চোখের দেখার প্রেম’ হয়েছিল) থাকতেন ওয়ারীতে- ওয়ারীর সেই বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতেন প্রায়ই। অনেক অনেক দিন একবার রাতে ওয়ারী থেকে ফেরার সময় বৃষ্টি হয়েছিল। ওরা সিএনজি পায়নি। গলিতে হাঁটতে হাঁটতে টিপু সুলতান রোডে উঠে এসেছিল। তখন গলির ডাস্টবিনের কাঁঠাল ভূতির টক টক কড়া অম্লগন্ধ পেয়েছিল ... তারপর বড় আপার ছেলে হল: রুবেল ...বড় আপা, মানে, রিনা আপার বিয়ের সময় বীথি পড়ত ক্লাস সিক্সে । মা মারা যাওয়ার সময় বীথি পড়ত ক্লাস টু-এ । রিনা আপাই সংসার সামলাত। আব্বা ইসলামপুরে কাটা-কাপড়ের ব্যবসা করতেন- ভয়ানক উদাসী টাইপের ছিলেন; মন সংসারে একেবারেই ছিল না, তাবলীগ জামাত করতেন, প্রায়-প্রায়ই নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন। বিশ্বাস করতেন-তিন চিল্লা দিলে নাকি বেহেস্ত যাওয়া যায়। বুধবার-বুধবার পাইকপাড়ায় গাস্ত করতেন; কাকরাইল মসজিদে যেতেন। পাইকপাড়ার মসজিদে জামাত এলে ঘরেই রান্নাবান্না করে (রুই মাছ ও আলু দিয়ে মুরগীর তড়কারি ছিল কমন আইটেম) মসজিদে পাঠাতেন। একবার চাইনিজ রাঁধতে বললেন। কোন্ মেজর জেনারেল আসছেন-তিনি নাকি রাত্রে ফ্রায়েড রাইস খান। তো, আশরাফ ভাইরা থাকতেন বীথিদের পাইকপাড়ার ভাড়া বাড়ির পাশের একটা মেসে; বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের তরুণ প্রভাষক- দুই বোনের অসহায় অবস্থা ঠিক টের পেয়েছিল; প্রায়ই বাজার করে দিতেন। রিনা আপাও প্রায়ই এটা-ওটা রান্না করে বীথিকে দিয়ে পাঠাত। সে সময় কী স্লিম ছিল রিনা আপা। ববিতার প্রথম দিকের সাদাকালো ছবির মতো। (ববিতার স্লিম ফিগারের ছবি বীথি অবশ্য অনেক পরে দেখেছে।) ... আব্বা চিল্লায় যাওয়াতে বাড়ি প্রায়ই ফাঁকা থাকত । তখন আশরাফ ভাই আর রিনা আপা দরজা বন্ধ করে কী যেন করত। পাশের ঘরে বীথি বসে থাকত- তখন বীথি পড়ত ক্লাস ফাইভে; ওই বয়েসে আর কী বুঝে । আশরাফ ভাই চলে গেলে রিনা আপা ওর গাল টিপে বলত, “তুই বড় হইলে তোরেও সুযোগ করে দিব।” বলে রিনা আপা বাথরুমে চলে যেত। বীথি কী বুঝত কে জানে। ঘরে তো টেলিভিশন নাই। আগে ছিল। আব্বা একবার চিল্লা থেকে ফিরে ‘নামাজ নাই, কালাম নাই’ বলে রাগের চোটে খাওয়ার ঘরের চেয়ার তুলে আছার মেরে ‘শয়তানের বাক্সটা’ ভেঙ্গে ফেলল। ততদিনে রিনা আপার কথায় আশরাফ ভাই ওঠে আর বসে। এক বিকেলে ওয়ারী থেকে ইমরানের মা এলেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে । আব্বা রাজী- তবে ৩টা শর্ত আছে। ১/ বিবাহে ধুমধাম হবে না। ২/ বিবাহ অনুষ্ঠিত হইবে কাকরাইল মসজিদে। ৩/ আশরাফ বাবাজীকে ঘরজামাই থাকিতে হইবে। আশরাফ ভাই-মানে রিনা আপা রাজী। বিয়ের ঠিক এক বছর পর বাবা মারা গেল। পাবনার সাদুল্লাপুরে গেছিলেন চিল্লায় ... হাঁড়িপাতিল নিয়ে ভাড়া করা নসিমনে ছিলেন ... ব্রেক ফেল করে অবৈধ যানটি রাস্তার পাশে খালে পড়ে যায় ...বড় আপার প্রথমটা ছেলে; রুবেল। খরচ বাড়ল। কলেজে কী এমন বেতন! আশরাফ ভাই টিউশনী করত। ... ক্লাস টেনের কথা। পাড়ার এক ছেলে খুব জ্বালাত। টনি। টনিরই বা কী দোষ। দিন দিন বীথি ক্লাসিক সুন্দরী-স্কুলড্রেসে ভীষন মানায় । কী ভাবে আশরাফ ভাইয়ের কানে গেল -টনিকে হকি স্টিক দিয়ে পিটালেন। এমন ডিপ ফিলিংস। তারপর ধীরে ধীরে অবস্থা বদলাতে লাগল। বাংলাবাজারে আশরাফ ভাইয়ের কলেজ জীবনের এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা। দু’জনে চা খেতে ঢুকল। আশরাফ ভাইয়ের সেই বন্ধুটি হাসান অ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস নামে একটি রিয়েল স্টেট ফার্মে চাকরি করত। কথায় কথায় সেই বন্ধুটি আশরাফ ভাইয়ের বিধবা ফুপুর (ইমরানের মার) ওয়ারীতে সাত কাটা জমির কথা জানতে পারে । বন্ধুটি জমিটা হাসান অ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস কে পাইয়ে দিতে আশরাফ ভাইকে ধরে বসল। তারপর কী হল-নগদ পাঁচ লাখ টাকা ব্রিফকেসে নিয়ে অতি সুকৌশলে জাহানারা ফুপুকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে জমিটা আশরাফ ভাই হাসান অ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসকে পাইয়ে দেয়। আশরাফ ভাই হ্যান্ডসাম দেখতে -তার ওপর কথাবার্তায় ভীষন স্মার্ট- হাসান অ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর রীতিমতো মুগ্ধ- তিনি আশরাফ ভাই কে লুফে নেন। যারা ইমোশনাল কারণে জমি বিক্রি করে না, তাদের কাছে সৈয়দ আশরাফ হোসেনকে পাঠালে কাজ হয়। আশরাফ ভাই আগে সিগারেট খেত না - নতুন ফার্মে জয়েন করার পর সিগারেট ধরল। বীথিরা এরপর মীরপুরের পাইকপাড়া থেকে দিলু রোডের একটা ফ্ল্যাটবাড়িতে চলে আসে। আশরাফ ভাই বছর তিনেকের মত হাসান অ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসে ছিলেন । তারপর একদিন হানিফ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হানিফ ফোন করলেন; বললেন, আমরা আপনার কথা অনেক শুনেছি। আপনাকে আমাদের চাই। সেলারি নিয়ে ভাববেন না। আশরাফ ভাই সেই দিনই হানিফ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেডএ- জয়েন করেন। এর কিছুদিন পরই আশরাফ ভাই মদ খাওয়া ধরলেন। বলে, এই কাজে এত টেনশান রে বীথি! অবশ্য থ্রিলও আছে। ... কী করে যে বীথির চোখের সামনে বদলে গেল আড়ংয়ের পাঞ্জাবি পরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সেই তরুণ প্রভাষাক। আশরাফ ভাই-কী আশ্চর্য! এই তো সেদিন- বাংলার নোটবই লিখতেন ... পড়াতেন মীরপুর বাংলা কলেজে । প্রায়ই বাংলাবাজারে যেতেন- প্রকাশকদের কাছ থেকে টাকা পেলে কত কী বাজার করে আনতেন। সাতাশ হাজার টাকা দিয়ে ‘তোশিবা’ ফ্রিজ কিনলেন। কত কত জায়গায় যে সে সময় বেড়াতে নিয়ে যেতেন বড় আপা আর বীথিকে নিয়ে: ছুটির দিনে আহসান মঞ্জিল, শীতের বিকেলে বুড়িগঙ্গায় নৌকাভ্রমন, বিকেলের নরম রৌদ্দুরে রমনা পার্ক, যাদুঘর। বলাকা সিনেমাহলে বাংলা ছবি দেখে সিএনজি করে অনেক রাতে মীরপুরের সেই পাইকপাড়ার বাসায় ফেরা। ...কী আশ্চর্য! এসবই মিথ্যা!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:৪৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×