somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে সব কারণে ক্যাথলিক চার্চ ইতালিও দার্শনিক জিওদার্নো ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল ...

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জিওদার্নো ব্রুনো।
বিজ্ঞানের পথটি কখনোই মসৃন ছিল না। এখনও কি মসৃন? এখনও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বিজ্ঞানের নানাবিধ সুবিধাদি ভোগ করলেও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহন করতে অনিচ্ছুক! যা হোক। দীর্ঘকাল ধরেই মানুষ জগৎ সম্বন্ধে অবৈজ্ঞানিক পৌরাণিক ধারণায় আচ্ছন্ন ছিল; সে আচ্ছনতা যারা যারা জীবনের বিনিময়ে হলেও দূর করতে চেয়েছেন ইতালিও দার্শনিক জিওদার্নো ব্রুনো তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে একটা কথা। আমরা যেন ব্রুনোকে পেশাদার জ্যোর্তিবিদ না ভাবি-আসলে ব্রুনো ছিলেন সৌখিন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর লেখক। তিনি তৎকালীন প্রচলিত জ্যোর্তিজ্ঞানের আলোয় মহাবিশ্ব সম্বন্ধে অনুমান করেছেন মাত্র, কোনওকিছু প্রমাণ করেননি, অবশ্য পরে তাঁর অনেক অনুমানই প্রমাণিত হয়ে। তাঁর উদ্দাম কল্পনাপ্রবনতার পিছনে ছিলেন কোপানিকাসের বৈজ্ঞানিক আবিস্কার ...



মানচিত্র ইটালির ক্যম্পেনিয়া প্রদেশে (লালচিহ্নিত অংশ)। এই প্রদেশেরই একটি শহরের নাম নোলা।

জিওদার্নো ব্রুনোর জন্ম ১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে ইটালির নোলা শহরে। অবশ্য ব্রুনোর
পরিবার প্রদত্ত নাম ছিল ফিলিপ্পো ব্রুনো। ব্রুনোর বাবার নাম গিওভান্নি ব্রুনো
-ছিলেন সৈনিক। মায়ের নাম ফ্রাওলিসা সাভোলিনো।



নোলা।



নোলা। এই পথে একদিন হেঁটে গিয়েছিলেন একজন স্বাধীনচিন্তাসম্পন্ন মানুষ

তৎকালীন রীতি অনুযায়ী ধর্মীয় পাঠ গ্রহনের উদ্দেশ্যে ১৫৬১ সালে সেন্ট ডোমেনিকো মঠে ভর্তি হন ব্রুনো।



সেন্ট ডোমেনিকো মঠ। এই মঠেই খ্রিস্টীয়সমাজের বিখ্যাত সাধু সেন্ট থমাস অ্যাকুইনাস অধ্যয়ন করেছিলেন।

সেন্ট ডোমেনিকো মঠে থাকাকালীন নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন গিওদার্নো ব্রুনো । যা হোক। পাঠ সমাপ্ত করে তিনি ডমিনিকান অর্ডারের যাজক হলেন। ১৩ শতকে ফ্রান্সের সেন্ট ডোমেনিক এই ক্যাথলিক সম্প্রদায়টি প্রতিষ্ঠা করেন।

আসলে ব্রুনো ছিলেন দার্শনিক। তাই তাঁর মঠের একঘেঁয়ে জীবন ভালো লাগেনি। তাছাড়া খ্রিস্টীয়শিক্ষা অনেক বিষয়ই পরখ না করে তাঁর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। কথাবার্তায় খোলামেলা ছিলেন ব্রুনো, কোনওরকম ভনিতা পছন্দ করতেন না। তাঁর সংশয়ের কথা বলতেনও সহকর্র্মীদের।



ব্রুনো

১৫৭৬ সালে তিনি মঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তারপর ইউরোপ ভ্রমন করেন; মেধাবী পন্ডিত ছিলেন-ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা বিষয়ে ভাষণ দেন। কীভাবে স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায়-সে ব্যাপারেও বক্তব্য রাখতেন। এ ব্যাপারে ফ্রান্সের ৩য় হেনরি ও ইংল্যান্ডের প্রথম এলিজাবেথ-এর দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলেন । “মনে রাখার কৌশল” বা “দ্য আর্ট অভ মেমরি” নামে একটি বইও লিখেছিলেন -যে বইটি বিস্মরণপ্রবণদের আজও কাজে লাগে।



ব্রুনোকে মানুষ যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে ...

আমি আগেই বলেছি, কথাবার্তায় খোলামেলা ছিলেন ব্রুনো, কোনওরকম ভনিতা পছন্দ করতেন না। লেখালেখিতেও তাই। ১৫৮৪ সাল। ‘অভ ইনফিনিটি, দ্য ইউনির্ভাস অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি বই লেখার পর তাঁর বিপদ ঘনিয়ে আসে।
কিন্তু, কি লিখেছেন সে বইতে?



মহাবিশ্ব। মানুষের বিস্ময়; তবে মানুষের প্রজ্ঞায় এর রহস্যজট খুলছে।

আমাদের এই সৌরজগৎটি সূর্যকেন্দ্রিক। মহাবিশ্ব অসীম। নক্ষত্রগুলি আসলে সূর্যর মতোই স্বাধীন ও স্বতন্ত্র মহাজাগতিক বস্তু-যাদের সংখ্যা কোটি কোটি। মহাবিশ্ব কেবল অসীম নয়-এর প্রবাহও অনন্ত। আর পৃথিবী বিশ্বজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত না-হলে আর দূরবর্তী নক্ষত্রগুলি সূর্যর মতো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলে মহাবিশ্বে আরও পৃথিবী (গ্রহ) আছে ...সেখানে আমাদের মতো প্রাণিও থাকতে পারে!
যা হোক। ব্রুনোর ধারণার সঙ্গে ক্যাথলিক বিশ্বাসের সঙ্গে খাপ খায়নি। তারা কাজ দেবে বলে রোমে ডেকে নিয়ে যায়। ব্রুনো রোমে পৌঁছলে তাঁকে ইনকুইজিশন (ধর্মীয় বিচার সংস্থা) এর কাছে ধর্মদ্রোহী হিসেবে হস্তান্তর করা হয়।



রোমের ক্যাসটেল সেন্ট অ্যাঞ্জেলো। এখানেই ৮ বছর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল স্বাধীন চিন্তার দার্শনিকটি । বিচার অনুষ্ঠিত না-হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত টর্চার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হত। তারপরও তিনি মাথা নত করেনি গন্ডমূর্খ মূঢ়দের কাছে। বলেছিলেন: “আমার মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা শোনার সময় আমার চেয়ে তোমরাই ভয় পেয়েছ বেশি!”

মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনার পরপরই ব্রুনোর চোয়ালে লোহার কপাট পরিয়ে দেওয়া হয়। লোহার শলাকা দিয়ে জিভ ফুটো করে দেওয়া হয়। ১৬০০। ফেব্রুয়ারি ১৯। স্বাধীন চিন্তার দার্শনিকটি রোমের রাস্তায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় ... অগ্নিমঞ্চের দিকে। তারপর ...নগ্ন করে আগুন ধরিয়ে দেয় ...



শিল্পীর তুলিতে ...ইতিহাসের সেই নৃশংসতম দৃশ্য




ভাস্কর্যশিল্পীর কল্পনা ও পরিশ্রমে ব্রুনোর প্রতি শ্রদ্ধা



১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×