somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিক মিথ: ফেড্রা

০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গ্রিক মিথগুলি কি কেবলই কল্পনার বল্গা হরিণ? না, এর মধ্যে বাস্তব জীবনের সত্যাসত্য কিছু রয়েছে? প্রায়শ গ্রিক মিথের চরিত্রগুলির মধ্যে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আসলে গ্রিক মিথগুলিতে উদ্ভট দৃশ্য যাই থাকুক -কোনও কোনও চরিত্রে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি দেখে অবাক হতেই হয়। যেমন এথেন্সের রানী ফেড্রা। ফেড্রা তার এক সৎপুত্রর প্রেমে পড়েছিল। তবে প্রত্যাখাত হয়ে সেই সৎপুত্রটিকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল ...

এবার ফেড্রা উপাখ্যানটি বয়ান করি।
(আমাদের মনে রাখতে হবে ফেড্রা উপাখ্যানটির বেশ কয়েকটি ভার্সান রয়েছে। আমি এর মধ্যে একটি বেছে নিয়েছি। )



মানচিত্রে ক্রিট দ্বীপ।

ভূমধ্যসাগরের একটি দ্বীপের নাম ক্রিট । দ্বীপটির অবস্থান গ্রিসের মূলভূমির দক্ষিণে। ব্রোঞ্জ যুগে ক্রিট দ্বীপের রাজা ছিলেন মিনোস। সেই রাজা মিনোস এর কন্যা ছিল ফেড্রা । ফেড্রার মায়ের নাম রানী পাসিফা। ফেড্রার বড় বোনও ছিল; তার নাম আরিয়ানা। (গ্রিকরা বলে আরিয়াদানে)
আমার মনে হয়, আরিয়ানা গ্রিক উপকথায় সবচে দুঃখী মেয়ে।
যা হোক-



ক্রিট দ্বীপে মিনোয়ান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। মিনোয়ান সভ্যতা ছিল ব্রোঞ্জ যুগের এক অতুলনীয় সভ্যতা । সভ্যতাটির সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ২৭ থেকে ১৫ শতক। ক্রিট দ্বীপের রাজধানী ছিল নসস। মিনোয়ান সভ্যতা মূলত সামুদ্রিক সভ্যতা হওয়ায় এর কেন্দ্রে ছিল একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী ।


এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি।
এথেন্স নগরীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা থেসিয়াস । রাজার তরুণ বয়েসে ক্রিট দ্বীপে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটেছিল।
ক্রিটের রাজা মিনোস দুর্জয় নৌবাহিনী নিয়ে এথেন্সের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, এবং জয়ী হন। রাজা মিনোস যাতে এথেন্স পুরোপুরি ধ্বংস করে না দেন সে জন্য রাজা মিনোসের সঙ্গে এথেন্সবাসী রফা করে।
কি সেই রফা?
নয় বছর পর পর সাতজন এথেনিয় বালক সাতজন এথেনিয় বালিকা।
কেন?
কেননা, ক্রিট দ্বীপে ছিল বিখ্যাত মিনিয় স্থপতি ডেডেলাউস এর নির্মিত গোলকধাঁধা বা ল্যাবেরিন্থ । একটি অর্ধ-মানব, অর্ধ ষাঁড়াকৃতির পশু সে খানে বাস করে। সেই উদ্ভট পশুর নাম নাম মিনোটর। রাজা মিনোস মিনোটরের খাদ্য হিসেবে ঐ এথেনিয় বালক-বালিকাদের চাইলেন।



মিনেটর। আজও হলিউডি মুভিতে এ ধরনের উদ্ভট ক্রিয়েচার দেখা যায় ...
যা হোক মিনোতর ছিলো এক অর্থে মিনোসেরই পুত্র। পসাইদোন মিনোসের কাছে উৎসর্গ করার জন্যে একটা শাদা রূপবান ষাঁড় পাঠালে মিনোস ষাঁড়টি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলত পসাইদোন অপমানিত হোন এবং মিনোসের স্ত্রী প‌্যাসিফাইকে ষাঁড়টির প্রতি আসক্ত করে তোলে। এবং দেদালাস প‌্যাসিফাইকে একটি গাভীতে পরিণত করে। তারপর শাদাষাঁড়টি আর প‌্যাসিফাই সঙ্গমে লিপ্ত হয়। যার ফলে মিনোতরের জন্ম হয়।



একালের শিল্পীর চোখে রাজা থেসিয়াস ।

একবার এক এথেনিয় তরুণ ক্রিট দ্বীপে আসে । সেই তরুণের নাম থেসিয়াস । রাজা মিনোসের বড় কন্যা আরিয়ানার কথা আগেই বলেছি। আরিয়ানা প্রথম দর্শনেই তরুণ থেসিয়াস-এর প্রেমে পড়ে যায়। সুন্দরী আরিয়ানা একটি সুতীক্ষ্ম তলোয়ার ও লাল রঙের সুতার বান্ডিল থেসিয়াস কে দেয়। থেসিয়াস গোলকধাঁধায় প্রবেশ করে মিনোটর কে হত্যা করে। এরপর থেসিয়াস আরিয়ানা কে নিয়ে ক্রিট থেকে পালিয়ে যায়। আরিয়ানার ছোট বোন ফেড্রাও তাদের সঙ্গে ছিল। কী কারণে থেসিয়াস আরিয়ানার ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এথেন্স ফেরার পথে আরিয়ানা কে একটি দ্বীপে ফেলে রেখে যায় থেসিয়াস । পরে অবশ্য ফেড্রা কে বিয়ে করে থেসিয়াস ।



সৃষ্টিছাড়া কল্পনার পাশাপাশি মানবিক আবেগ রয়েছে বলেই গ্রিকউপকথার প্রতি এত আগ্রহ বিশ্বজুড়ে ...

রাজা থেসিয়াস ও ফেড্রা এথেন্স ফিরে এলেন।
এদিকে রাজা থেসিয়াস এর একবার বিয়ে হয়েছিল। রাজার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধা রানী হিপ্পোলিটা। সেই ঘরে এক ছেলে ছিল। সেই ছেলের নাম হিপ্পোলাইটাস। যা হোক। প্রথম দেখার সময়ই ফেড্রা সৎপুত্র হিপ্পোলাইটাস এর প্রেমে পড়ে যায়। হিপ্পোলাইটাস - এর সঙ্গে প্রেম করার মতলব আঁটতে থাকে। এবং বিরহে পুড়তে থাকে।



এ কালের শিল্পীর তুলিতে ফেড্রার বিরহকাতর অবস্থার দৃশ্য।

রাজা থেসিয়াস একবার কী কারণে এথেন্স ছেড়ে বিদেশ গেলেন। ফেড্রা তখন এথেন্স নগরের স্টেডিয়ামের কাছে একটি ভবনে থাকত। হিপ্পোলাইটাস স্টেডিয়ামে নগ্ন হয়ে ব্যয়াম করত। বলিষ্ট গড়নের তরুণকে দেখে ফেড্রার তৃষ্ণা অত্যধিক বেড়ে যায়।
নিরূপায় হয়ে ফেড্রা হিপ্পোলাইটাস কে প্রেম নিবেদন করে। হিপ্পোলাইটাস বিরক্ত হয়ে বলে, ছিঃ, আমি অগম্য-গমন (ইনসেস্ট) করব না।
ফেড্রা চাপা স্বরে বলল, কেন? দেবতারাও অজাচার করে। করে না?
হিপ্পোলাইটাস চুপ করে থাকে।
দয়া কর!


হিপ্পোলাইটাস ফেড্রা কে প্রত্যাখান করে।

প্রত্যাখাত হয়ে ফেড্রা ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠে।
এবং রাজা থেসিয়াস এথেন্স ফিরে এলে স্বামীকে বলল লম্পট হিপ্পোলাইটাস আমায় ধর্ষন করেছে।
কী! রাজা থেসিয়াস অপরিমেয় ক্রোধে প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠলেন।
গ্রিক উপকথায় সমুদ্র দেবতা পোসাইদোন। তিনি রাজা থেসিয়াস কে তিনটি বর দিয়েছিলেন। সে সব কথা মনে পড়ল রাজা থেসিয়াস এর। তিনি হিপ্পোলাইটাস কে অভিশাপ দিলেন।
এরপর কি ঘটল?
সমুদ্রের পাড় দিয়ে হিপ্পোলাইটাস রথে করে যাচ্ছিল। তখনই সমুদ্র থেকে উঠে এল এক ভয়ালদর্শন সমুদ্রদৈত্য। দেখে এর রথের ঘোড়াগুলি ভয় পেল। ঘোড়াগুলি ভয়ে ভীষণ বেগে ছুটতে থাকে। ফলে রথটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
হিপ্পোলাইটাস মারা যায়।



একালের শিল্পীর চোখে হিপ্পোলাইটাস এর মৃত্যু। আসলে গ্রিক মিথ এর সম্যক জ্ঞান বাদে ইউরোপীয় আর্ট বোঝা সম্ভব নয় ...

হিপ্পোলাইটাস এর মৃত্যু সংবাদ এথেন্স নগরে আসে।
ফেড্রা মুহূর্তেই শোকে স্তব্দ হয়ে যায়।
ভীষণই অনুতপ্ত বোধ করে রানী।



অনুতপ্ত ফেড্রা

গভীর গ্লানিতে ভুগে ভুগে শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নেয় ফেড্রা ...

তথ্য ও ছবি: ইন্টারনেট ...
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:৩৪
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×