somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন মিশরে নারী

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাচীন সভ্যতাসমূহের মধ্যে প্রাচীন মিশরে নারীর মর্যাদা ছিল সর্বাধিক। প্রাচীন মিশরীয় সমাজে নারীপুরুষের ঠিক সমানাধিকার না থাকলেও প্রাচীন বিশ্বের অন্যান্য সমাজের তুলনায় প্রাচীন মিশরে নারীর অধিকার ছিল বেশি। প্রাচীন বিশ্বের অন্যান্য সমাজে নারী ছিল পুরুষের ইচ্ছার অধীন, অথচ প্রাচীন মিশরে কোনও পুরুষ বিবাহের প্রস্তাব দিলে এক জন নারীর তা প্রত্যাখান করার অধিকার ছিল! কোনও প্রকার বল প্রয়োগ ছিল সেই যুগের মিশরীয় আইনের পরিপন্থি। নারীর, এমন কী, বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার পর্যন্ত ছিল। এসব কারণেই প্রাচীন মিশরে নারীর অবস্থান আমাদের বিস্মিত করে ...





প্রাচীন মিশরের মানচিত্র। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সূচনা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৫০০০ হাজার বছর আগে; তখন থেকেই ফারাওদের (মিশরের সম্রাটের পদবী) শাসন শুরু। ফারাওদের সময়কাল বি¯তৃত ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অবধি। ফারাওরা মিশরকে প্রাচীন বিশ্বে এক ধনী ও শক্তিশালী রাজ্যে পরিনত করেছিলেন, যা প্রাচীন বিশ্বের বিস্ময় ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিল। সাধারন মিশরীয়দের চোখে ফারাও ছিলেন ঈশ্বর-সরূপ। ফারাওদের স্ত্রীরাও সাধারন মানুষের কাছে দেবীতূল্য সম্মান পেতেন এবং তারা সম্পদের ভাগ পেতেন। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে একজন রানী ফারাও অবধি হতে পারতেন। এসব বৈশিষ্ট্যই প্রাচীন বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতা থেকে প্রাচীন মিশরকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে।

প্রাচীন মিশরের মানুষের বিশ্বাস ছিল- জীবনের উদ্দেশ্য হল পারিবারিক আনন্দ ও সুখ লাভ করা। এবং পরিবারের লোকজনই হল সে আনন্দের অন্যতম উৎস। যে পরিবার আলো করে রাখে একজন নারী। প্রাচীন মিশরের মানুষ সম্ভবত বাঙালিদের মতোই বিশ্বাস করত যে: “সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে।” তবে সংসারের সর্বময় কর্তা একজন পুরুষ হলেও সে সংসারে নারীর অনিবার্য উপস্থিতি প্রতি মুহূর্তেই অনুভূত হত। গৃহকর্তা যুদ্ধে কি ভিন রাজ্যে ব্যবসা করতে গেলে স্ত্রীকেই সংসারের হাল ধরতে হত। সে সময় গৃহের সমস্ত দায়দায়িত্বই তার।



প্রাচীন মিশরে মেয়েদের বিয়ে হত অল্প বয়েসে- এই বারো কি চৌদ্দয়। নববধূর অন্যতম লক্ষ ছিল ভালো স্ত্রী এবং একই সঙ্গে মা হওয়া-কেননা প্রাচীন মিশরীয় সমাজে সন্তানের বিষয়টি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন । যা হোক। এক জন নারীকে প্রতিদিন সংসারে অনেক কাজ করতে হত। সে সব কাজের ফিরিস্তি একটি উৎস থেকে জানা গেছে:

(ক) দিনে দু-বার পানি আনতে হত। বাড়ির আঙিনায় থাকত মাটির পিঁপে, সেই পিঁপে পানি দিয়ে ভরতে হত।
(খ) শণ দিয়ে সুতা তৈরি করতে হত, তারপর সেই সুতায় বুনতে হত কাপড় ।
(গ) মেয়েরা মাঠে কাজ করলেও তাদের (সম্ভবত কুসংস্কারবশত) ধারালো কিছু দেওয়া হত না, যে কারণে তারা ফসল কাটত না, বরং শস্য ঝাড়াই-বাছাই করত এবং পরে শস্য মাড়াই করত।
(ঘ) মেয়েরাই পানীয় (প্রধানত বিয়ার) তৈরি করত। এ জন্য বিভিন্ন লতাপাতা থেকে রস এবং বাদাম থেকে তেল বার করত।
(ঙ) তবে মেয়েরা ময়লা কাপড় ধুতো না! তার কারণ, নোংরা কাপড় (নীল) নদে ধুতে হত। আর নীল নদে ছিল কুমিরের ভয়।
(চ) আর সবচে মজার ব্যাপার হল- কখনও - কখনও মেয়েদের শোক মিছিলের জন্য ভাড়া করা হত । মাথায় ধুলো মেখে চিৎকার করে কাঁদার জন্য মেয়েরা নাকি ভালো পয়সা পেত। ক্রন্দররতা মেয়েদের পিছনে হাঁটত কর্মকর্তারা (সম্ভবত সরকারি) ও মৃতের পরিবারের সদস্যরা।



সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইচ্ছে করলে মেয়েরা বাড়ির বাইরে কাজ করতে পারত। তবে সে কাজ বিনামূল্যে ছিল না, কাজের জন্য মেয়েরা বেতন পেত। মেয়েরা, এমন কী, ব্যবসাবানিজ্যও করতে পারত। তবে সরকারি দপ্তরে তারা কোনও কাজ পেত না। তবে আইন সংক্রান্ত সমস্যা হলে মেয়েরা আদালতের শরণাপন্ন হতে
পারত। মনে রাখতে হবে- ফারাওদের সময়কালটায় (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব) ছিল পুরুষতন্ত্রের জয়জয়াকার। সে কারণেই, একজন ফারাও-এর নির্দেশ ছিল এরকম:“ মেয়েদের কখনও আদালতে নিও না, তাদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখ।” যে কারণে ধর্মীয় উপাসনালয়ে মেয়েদের কিছু ভূমিকা থাকলেও পুরুষই হত প্রধান পুরোহিত । তবে মেয়েরা সম্পত্তি ক্রয় করতে কিংবা বিক্রি করতে পারত। সে সম্পত্তির উইল করতে পারত, অর্থাৎ, ইচ্ছে অনুযায়ী যে কাউকে সম্পদ দিতে পারত। মেয়েদেরও দিতে পারত!



প্রাচীন মিশরের আইন অনুযায়ী নারীরা ছিল পূর্ণ নাগরিক। নারীরা নিজস্ব সম্পদের অধিকারী হতে পারত। যে সম্পদ বিয়ের পর স্বামীর কাছে স্থানান্তর করতে হত না। নারীর বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকারের কথা আগেই বলেছি। বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার থাকায় বিয়েতে অসুখি হলে নারী বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারত এবং বিবাহ বিচ্ছেদের পর একাকী জীবন যাপন করতে পারত। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতে যথাযথ কারণ দর্শাতে হত। যেহেতু বিচ্ছেদের পর সন্তানের অধিকার নারীই পেত, সে কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের পর নিজের এবং সন্তানের ভরণপোষনের জন্য নারী তার প্রাক্তন স্বামীর সম্পদের একাংশ দাবী করতে পারত । তৎকালীন আইন অনুযায়ী সন্তান পালনের জন্য স্বামীর সম্পদের এক-চতুর্থাংশ এবং বিয়ের সময় পাওয়া যৌতুক কিংবা এর সমপরিমান অর্থ সম্পদ পেত । অবশ্য প্রাচীন মিশরীয় সমাজে নারীর পাশাপাশি পুরুষেরও বিবাহ বিচ্ছেদ অধিকার ছিল, তবে সন্তানের ওপর অধিকার নারীরই থাকত এবং এ কারণে স্বামীর সম্পদের এক-চতুর্থাংশ নারীই পেত।



রাজকীয় পরিবারের বাইরে সাধারণ নারীদের (অর্থাৎ যাদের নিয়ে আলোচনা করছি) তাদের পোশাক হত সাদাসিদে। শণ থেকে তৈরি সুতার কথা আগেই একবার উল্লেখ করেছি। মেয়েরা সে (লিনেন) কাপড়ের তৈরি পোশাক পরত। তবে, বলাবাহুল্য স্বচ্ছল নারী ও দুঃস্থ নারীর মধ্যে কাপড়ের পার্থক্য থাকত। অভিজাত মেয়েদের পোশাক হত মসৃন, মধ্যবিত্ত নারীর পোশাক হত খসখসে। কাপড়ের রং হত প্রধানত সাদা। মাড় দেওয়া কাপড়ের ভাঁজই ছিল পোশাকের একমাত্র অলংকার। কখনও আবার পোশাকে সুতার ঝালর ঝুলত। এই ছিল তখনকার যুগের মেয়েদের ফ্যাশন! শীতের সময় মেয়েরা শরীরে শাল জড়াত।



প্রাচীন মিশরের মেয়েদের মধ্যে জন্য রূপচর্চার (মেকআপ) প্রচলন ছিল। আর তারা বিচিত্র সব অলঙ্কার তো পরতই। মেকআপ-এর মধ্যে অন্যতম ছিল চোখে রং মাখা। রং মানে সবুজ ম্যালাকাইট গুঁড়ো এবং কালো সীসা চূর্ণ। এসব গুঁড়ো ব্যবহার করলে চোখের সংক্রামক দূর হয় - এমন বিশ্বাস ছিল সে যুগের মেয়েদের। অপদেবতার হাত থেকে রক্ষা পেতে মাদুলি এবং কবচও পরত- এবং সেসব বস্তু তারা অলঙ্কারের মতো সুন্দর করে নিয়েই পরত।



প্রাচীন মিশরের মেয়েরা সাজসজ্জ্বার উপকরণ মাটির পাত্র কিংবা অলংকৃত কাঁচের পাত্রের ভিতরে রাখত। সে যুগের মেয়েরা, এ যুগের মতোই, সুগন্ধী বড় পছন্দ করত। এবং মরুভূমির শুস্ক বাতাস থেকে রক্ষা পেতে সারা শরীরে মাখত সুগন্ধী তেল । চুলের প্রতি অশেষ যত্ন নিত। মেহেদি মাখত চুলে। কেউ-বা চুল ছোট করে ছাঁটত। অভিজাত মেয়েরা ভোজসভায় কিংবা অনুষ্ঠানে নকশাদার পরচুলো পরত।



আমাদের মনে রাখতে হবে - প্রাচীন মিশরের সমাজ ছিল পুরুষশাসিত সমাজ। যে কারণে বিয়ের আগে মেয়েদের বাবার এবং বিয়ের পর স্বামীর দেওয়া নাম গ্রহন করতে হত, যে নাম তাদের সামাজিক মর্যাদা নির্ধারন করে দিত। যে কারণে: “নারীকে জিজ্ঞেস কর স্বামীর সম্বন্ধে আর স্বামীকে জিজ্ঞেস কর পদ সর্ম্পকে।” - এমন একটি কথা প্রাচীন মিশরে প্রচলিত ছিল। তথাপি নারীর নিরাপত্তার জন্য সেই পুরুষশাসিত সমজ যথাযথ ব্যবস্থা করেছিল। যেমন, কোনও নারীকে ধর্ষন করা হলে ধর্ষনকারীকে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে নিবীর্য খোজায় পরিনত করা হত!

তথ্যসূত্র:

Click This Link
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×