এখন এই মাঝরাতে একতলার পাকা উঠানে মরাটে জোছনার ভিতর মেয়েকে দেখে সাপ দেখার মতো চমকে ওঠে শরীফুদ্দীন । ক্ষণিকের জন্য মাথায় চিন্তার জট পাকিয়ে যায় তার। চিন্তাস্রোত কিছু স্বচ্ছ হলে অস্বস্তিকর ভাবনা উঁকি দেয়। রুনু কি মুজাহিদ-এর ঘরে গেছিল? এত রাইতে? মুজাহিদ দোতলায় থাকে । রুনুর কি লজ্জ্বা শরম বইলা কিছু নাই? বাড়িওয়ালা সুলাইমান গাজী তিন তলায় থাকে । লোকটা ভালোই। বাসাভাড়া বাকি পড়ছে কয়েক মাসের। তারপরও কিছু কয়টয় না। তয় রুনুর ঘটনা লোকটার কানে গেলে কাল সকালেই হাতে নোটিশ ধরায়া দিব। মসজিদের ইমাম সাহেবরে ডাইকা সালিস বসাইব। তারপর ঘাড় ধাক্কা দিয়া বাইর কইরা দিব। এইটা পুরান ঢাকা।
শরীফুদ্দীন কেমন অবশ করে ফেলে।রুনু অন্ধকার বারান্দায় বাবাকে বসে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ায় । তারপর দ্রুত পায়ে বারান্দায় উঠে আসে, দরজার পাল্লা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে। আজকাল বাবাকে পাত্তা দেয় না রুনু। দিন দিন কেমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে মেয়েটা। শরীফুদ্দীন-এর পয়ষট্টি বছরের শরীরে দরদর ঘামস্রোত বইছে। শরীফুদ্দীন খালি গায়ে লুঙ্গি পরে বসেছিল। ঘুম আসছিল না। আজ রাতটা বেশ গুমোট। তা ছাড়া আজ সকালে পুরানা পল্টনে গিয়েছিল মোটর সাইকেলের দরদাম করতে। দাম শোনার পর থেকে শরীফুদ্দীনের মাথা ঘুরছে। রুনুর বিয়ার বয়স হইছে। এক পাত্রও পছন্দ হইছে। নতুন মোটরসাইকেল পাত্রপক্ষের দাবি। কিন্তু অত দাম দিয়া মোটরসাইকেল কেনা সম্ভব না।
শরীফুদ্দীন তো এখন প্রায় নিঃস্ব, পথে বসার উপক্রম।
বৃদ্ধ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। সব দোষ ওই আলতাফ- এর। তয় শরীফুদ্দীন- এর নিজেরও দোষ কম না। আলতাফ সিরাজগঞ্জের ছেলে, ছাব্বিশ-সাতাইশের মতন বয়স। ইসলামপুরের দিকে একটা মেসে থাকে। চাকরি-বাকরি নাই, বেকার। কী সব টালটি-বালটি কইরা বেড়ায়। সকালের দিকে কেল্লার মোড়ে হাফিজের চায়ের দোকানে বসে শরীফুদ্দীন । চাকরিজীবনে সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করত শরীফুদ্দীন । এখন অবসর জীবনে সময় আর কাটতে চায় না। হাফিজের চায়ের দোকানে নানা বয়েসি চা-খোরের আড্ডা বসে। মাঝেমধ্যে আলতাফও আসে । ছেলেটার সঙ্গে কথাবার্তা হয়। ছেলেটারে ভালোই মনে হয়। চাকরিবাকরি একখান থাকলে রুনুর লগে বিয়ার প্রস্তাব দিত। সেই আলতাফই একদিন ধরে বসল, ও কাহা ।
কি কইবা কও? বলে চায়ে চুমুক দেয় শরীফুদ্দীন ।
আপনে শেয়ার মারকেটে টাকা খাটান না কেন । দেখেন না সবাই দাও মারতেছে। আপনি বইসা থাকবেন ক্যান?
আলতাফ-এর পরামর্শে বিষম ভাবনায় পড়ে যায় শরীফুদ্দীন। সংসারে সচ্ছলতা সবাই চায়। সংসারে বাড়তি কিছু রোজগার হলে মন্দ কি। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়তেছে। আর শেয়ার বাজারে টাকা খাটাইয়া লোকজনের যে লাভ হচ্ছে না তা নয়। এই যেমন সাতক্ষীরার রফিকুল ইসলাম। টিপু সুলতান রোডে থাকে। এর-ওর কাছ থেকে ধারধেনা করে চলত। কয়েক মাস আগে ঝকঝকে একখান মোটরসাইকেল কিনল ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়া।
চায়ে চমুকু দিয়ে শরীফুদ্দীন বলে, শেয়ার মারকেটের হিসাবকিতাব আমি বুঝি না বাবা।
আলতাফ আন্তরিক সুরে বলল, আপননের বুঝতে হইব না। আপনি বিশ্বাস কইরা টাকাডা আপনার ছেলের হাতে তুইলা দিবেন। যা করার আমি করুম।
কথাটা শরীফুদ্দীন-এর ভালো লাগল। আল্লাহতালা তারে দুই মেয়ে দিলেও ছেলের কপাল দেন নাই। আলতাফের কথায় পরাণ জুড়াইয়া গেল। তা জমানো টাকা আছে বটে লাখ দুয়েকের মতো । রনুর বিয়ের টাকা। এখনও উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান না পাওয়াতে টাকাটা খরচ হয় নাই। তা ছাড়া চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতে অল্পবিস্তর সম্পত্তিও আছে। বড় ভাই আলিমুদ্দীন দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করতেছেন। সেই জমি বড় ভাইয়ের কাছে অর্ধেক দামে বেচে দিয়ে আর রুনুর বিয়ের দু লাখসহ মোট আট লাখ টাকা আলতাফের হাতে তুলে দিল গত বছর নভেম্বরের গোড়ায়। ব্যস। তারপরই শেয়ার বাজের ধস নামল। তারপরও আলতাফ খালি আশ্বাস দিয়ে বলত, অপেক্ষা করেন কাহা। দুর্যোগ কাইটা গেলে দেখবেন আপনের টাকা রাখার জায়গা থাকবেনা নে।
কই, সূচকের পতন তো আর থামছে না ।
এ বছরের গোড়ায় আলতাফ লাপাত্তা।
রুনুর মুখ গম্ভীর। কেবল একবার মুখ কালো করে গম্ভীরকন্ঠে বলেছিল, দুইতলার মুজাহিদ বাইয়ে শেয়ারের বিসনেস করে। তার লগে একবার পরামর্শ করলেন না? আপনার কাছে রাস্তার মানুষ বড় হইল?
শরীফুদ্দীন আর কি বলবে?
সেই মুজাহিদ- এর ঘরে রাইত-বিরাইতে যায় রুনু ...
মুজাহিদ- এর বাড়ি টাঙ্গাইল, বউ পোলাপান আছে; কি কারণে তাগো ঢাকা শহরে রাখে না সে। তারা থাকে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার । মুজাহিদ ঠিক কি কাম করে ঠিক বুঝা যায় না। বীমার দালালিসহ আরও কি সব ছুটা কাম সে নাকি করে । শেয়ার মার্কেটেও নাকি টাকা খাটাইছে। তয় পোলাডা শেয়ার মার্কেটে একেবারে ডুইবা যায় নাই। মুজাহিদে চালাক-চতুর আছে। টাইম মতন টান দিয়া পাড়ে মাছ তুলতে জানে। শরীফুদ্দীন কে প্রায়ই বলে, চাচামিঞা, আপনে অত চিন্তা কইরেন না। আমি আপনার ছেলের মতন। বলে কয়েকটা লাল রঙের হাজার টাকার নোট গুঁজে দেয় হাতে। মুজাহিদ- এর প্রতি কৃতজ্ঞ বোধ করে শরীফুদ্দীন।
তয় মুজাহিদ- এর লগে রুনু বিয়ার কথা ভাবা যায় না। তবে মাঝে-মাঝে এমন উত্তেজক ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে শরীফুদ্দীন ... যদি মুজাহিদ ওর বউরে তালাক দিত। না, অত নীচে নামতে পারে না শরীফুদ্দীন পাটারি (পাটোয়ারি)। চাঁদপুরের মতলব উপজেলার সম্ভ্রান্ত পাটারি বাড়ির সন্তান সে। পিতা আলহাজ কেরামত আলী পাটারি ছিলেন অত্যন্ত সৎ এবং পরহেজগার মানুষ। না, অত নীচে নামতে পারে না শরীফুদ্দীন পাটারি । মুজাহিদ ওর বউরে তালাক দিব ক্যান? মুজাহিদ-এর বউয়ে কি দোষ করছে?
ছুটা বাতাসে দরজার পাল্লায় শব্দ হয়। শরীফুদ্দীন চমকে উঠে। তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। শরীরের গাঁটে গাঁটে ব্যাথা। মাথার তালু ভিজা ভিজা ঠেকে। পায়ের পাতায় জ্বালাপোড়া করে। পাল্লা ঠেলে ঘরে ঢোকে শরীফুদ্দীন । এইটাই বসার ঘর। মেহমান আইলে বসে।
বসার ঘর আর কী। পুরনো বেতের সোফা ছাড়াও আস্ত একখান খাটও আছে। শরীফুদ্দীন এখন এই ঘরেই শোয় । আজকাল ঘরখানা আউলাঝাউলা হইয়া থাকে। রুনুর বিয়ের টাকা শেয়ার মারকেটে ‘লস’ হওয়ার পর থেকে রুনুর আর ঘরসংসারে মন নাই! মাঝে-মাঝে রান্নাও করে না রুনু। তখন শরীফুদ্দীন কে কিল্লার মোড়ের নূরী হোটেলে খেতে যেতে হয়। এসব দুঃখে অন্ধকারে বসে কাঁদে বৃদ্ধ। সান্ত¦না দেবার কেউ নেই। ... শরীফুদ্দীন ঘরের আবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকে। তার চুয়া ঢেকুর উঠতেছে। মাথার মধ্যে চিন্তার জট পাকাইলে শরীফুদ্দীন- এর এই রকম চুয়া ঢেকুর ওঠে। ধীরে ধীরে বেতের সোফার ওপর বসে শরীফুদ্দীন । বসার পর পায়ের কাছে কি সের যেন স্পর্শ পেল । নরম। বিলাই। রুনুর মা আফিয়া মরার পর থেইকা বিলাইটা এ বাড়িতে আসছে। রুনু বিলাইডারে আদর-মায়া করে। দুধ কিন্না খাইতে দেয়।
শরীফুদ্দীন আজ বিলাইটারে লাত্থি মারে।
মিঞাও!
অন্ধকারে ছিটকে যায় বিলাইডা।
লাথি মারার পর শরীর থরথর করে কাঁপছে। সেই সঙ্গে কেমন অস্থির বোধ করে। কামডা কি ঠিক হইল। রুনুয়ে টের পাইলে? বাথরুমে পানি ঢালার আওয়াজ ভেসে আসে। রুনু গোছল করতে ভাতরুমে ঢুকছে। মাইয়াডা আইজ পানি একটু বেশি জোরে জোরেই ঢালতে আছে। বাপরে আর আগের মতন শ্রদ্ধাভক্তি করে না। বুড়া বাপের মরণ চায়। একে তো রুনুর বিয়ার টাকা শেয়ারে খাটাইয়া ধরা খাইছে। তার উপর জগন্নাথে পড়ার সময় এক কেস হইছিল। জসিম নামে জিঞ্জিরার এক পোলার লগে প্রেম করছিল রুনু। দুই জনরে একত্রে গুলিস্তানের মোবাইল মার্কেটে দেইখা মাথায় রক্ত উঠে গেছিল শরীফুদ্দীন-এর । রুনুয়ে বাসায় ফিরলে বেল্ট দিয়া পিটাইছিল। আফিয়া বাধা না দিলে রুনু সেই দিনে মইরাই যাইত। আফিয়ার সম্ভবত রুনুর প্রেমে সায় ছিল। মাইয়া মানুষের চরিত্র বোঝা দায়। যাই হউক। রুনু অখন বুড়া বাপের প্রতিশোধ নিতেছে। কি আর করা ...
চক্ষে আন্ধার দেখে শরীফুদ্দীন ...
ঘরটায় আগরবাতির মৃদু গন্ধ। পীরের নির্দেশে শরীফুদ্দীন আজকাল সন্ধ্যার পর আগরবাতি জ্বালায় । মাস তিনেক হইল টঙ্গির বাদশা শাহ বাগদাদী পীরের মুরিদ হইছে শরীফুদ্দীন। তুরাগ নদীর ওপর তক্তার পাটাতনের উপর পীরের খানকা। চারপাশে দরমার বেড়া। খানকার লগে বড় একখান নৌকাও আছে। পীর ছাহেব বেশির ভাগ সময় নৌকায় থাকেন। লোকে কয়, বাদশা শাহ বাগদাদী বড় বুর্জুগ পীর নাকি, পীরের ইচ্ছায় সব মুশকিল আসান হইয়া যায়।
বিদুষবার বিকালে ফুলবাড়িয়া থেকে টঙ্গির বাসে ওঠে শরীফুদ্দীন । প্রথম সাক্ষাতে পীর ছাহেব নগদ ১৪৫৬ টাকা, তিন লিটার খাঁটি সরিষার তেল, আট হালি ডিম আর পাঁচ প্যাকেট মোমবাতি গ্রহন করেছেন। বাদশা শাহ বাগদাদী পীরের এক মুরিদের কাছে শরীফুদ্দীন শুনছিল- হুজুরে নাকি আপেল খাইতে ভালোবাসেন। কাজেই ৫ কেজি আপেলও কিনতে হল। বাদশা শাহ বাগদাদী শরীফুদ্দীন-এর আদম সুরত দেইখা বললেন, মুশকিল আসান হইয়া যাইব। চিন্তা করিস না। শরীফুদ্দীন আশ্চর্য হইয়া যায়! মুশকিল আসান হইয়া যাইব কি করে? সমস্যার কথা তো পীর ছাহেবকে বলাই হয়নি! পীর ছাহেব জানলেন কি করে? এও এক রহস্য।
বিছানার উপর বালিসের চিপায় বিড়ির প্যাকেট আর ম্যাচের বাকশো আছে। শরীফুদ্দীন উঠে আবছা অন্ধকারে বিছানার কাছে আসে। তারপর বিড়ির প্যাকেট বের করে আধো অন্ধকারে একটা বিড়ি ধরায় । এই অভ্যাসটাও নতুন। আলতাফে গায়েব হওয়ার পর ধরছে। তা ছাড়া ঘরে একলা একলা লাগে, ঘরের বাইরেও একলা একলা লাগে। মনে হয় পৃথিবীতে তার জন্য কেউ নাই। বিড়ি খাইলে মনে হয় আমার কলিজা পুইড়া যাইতেছে। যাক পুইড়া। আমার আর বাঁচনের কী দরকার।
আফিয়া বাঁইচা থাকলে বিড়ি খাওন দেখলে ম্যালা চিল্লামিল্লি করত। জিদ্দে বাপের লগে কথা কয় না রুনু । বাপে অখন বিষ খাইলেও রুনুয়ে কিছু কইব না। শরীফুদ্দীন পাটারির একলা একলা লাগে। আফিয়ার লগে কত কথা হইত। রান্নাঘরে মোড়ার উপর বইসা চা খাইতে খাইতে ... রুনু কই মাছ খাইতে পছন্দ করত। তখন রুনু ক্লাস সিক্সে পড়ে। শ্যামবাজার থেকে মাছ কিনত শরীফুদ্দীন । রুনু বলত, আব্বা, আমার জন্য ফ্রিজ আনবা। আমার খালি ঠান্ডা পানি খাইতে ইচ্ছা করে। ধারদেনা করে ফ্রিজ কিনছিল শরীফুদ্দীন । কি সুখের দিন ছিল তখন। তখন কে ভাবছিল শেষ জীবনে এমন দুযোর্গ ঘনাইয়া আসবে।
এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখে শরীফুদ্দীন ।
এই পাঁচ-সাত বছর আগেও আত্মীয়স্বজনে ঘরবাড়ি গমগম করত। তখন আফিয়া বেঁচে ছিল। এখন আর কেউ আসে না। শরীফুদ্দীন বড় মেয়ে ঝুনুর বিয়া হইছে ফরিদগঞ্জে। মেয়ের লগে সম্পর্ক নাই পাঁচ বছর হইল। পাঁচ বছর আগে বড় জামাই সৌদি যাওনের সময় সাড়ে তিন লাখ টাকা চাইছিল। শরীফুদ্দীন দিতে পারে নাই। দেশের এক কানি ধানী জমি বিক্রি করে টাকা দিতে পারত। পৈত্রিক সম্পত্তির উপর মায়া আর বড় ভাই সে জমি ভোগ করতেছে বলে সে জমি বিক্রি করতে পারেনি শরীফুদ্দীন। টাকা না-পেয়ে ঝুনু আর বাপের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখে নাই। তার আগে বাড়ি এসে যা তা কথা শুনায় গেছিল ঝুনু।
ঝুনুরে হারাইয়া রুনুরে আঁকড়াইয়া ধরছিল শরীফুদ্দীন ...
এখন রুনুরে মুজাহিদ- এ গিলা খাইতেছে। এই কথাটা পীর ছাহেবরে বলা হয় নাই। কিন্তু পীর ছাহেব জানলেন ক্যামনে?
সেদিন মুজাহিদ আইসা বলল, চাচাজান, রুনু চোখে কম দেখতেছে। ওরে ডাকতারের কাছে নিয়া যাই।
শরীফুদ্দীন অখন রুনুরে বেল্ট দিয়া পিটাইতে পারে না। তার কারণ, গত মাসের বাড়ি ভাড়া মুজাহিদই দিল। শেয়ারে নাকি মুজাহিদের ভালোই লাভ হইছে। তয় মুজাহিদের গতিক সুবিধার না। রুনুর কথায় উঠে বসে। মুজাহিদ- এর বউয়ের এইবার কপাল পুড়ব। পোলাপান বাপছাড়া হইব। রুনুর চোখেও রং লাগছে। নিত্য নতুন রঙিলা শাড়ি পড়ে। এত শাড়ি পাইল কই। আফিয়ার তো এত শাড়ি ছিল না। শেয়ারে মুজাহিদের কত লাভ হইছে? রুনু কি মুজাহিদ- এর লগে পলাইয়া যাইতে পারে?
এই ভাবনায় কাতর শরীফুদ্দীন ...
সন্ধার পর পাড়ার হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আলী বখতের মারজান ফর্মেসিতে মাঝে-মাঝে যায় শরীফুদ্দীন । আড্ডা মারে। সুখদুঃখের আলাপ হয়। ডাক্তার বখতে ঘটকালীও করেন। কয়েক দিন আগে এক পাত্রের খবর দিলেন। ভালো পাত্র। ৫ বছর কুরিয়া ছিল। অখন উয়ারির রোজি প্লাজায় মোবাইলের দোকান দিসে । তয় সিদ্দিকুর রহমান মোটর সাইকেল চায়। আজ পুরানা পল্টনে সাইকেলের দরদাম করে শরীফুদ্দীন মাথা ঘুরে উঠল। দেশের জমাজমি আর নাই যে সে জমি বিক্রি করে টাকা আনতে পারে।
শরীফুদ্দীন অন্ধকারে বিড়িতে টান দেয়। আতরের গন্ধের সঙ্গে বিড়ির গন্ধ মিশে। দেশের বাড়ি চলে যাওয়ার কথা ভাবে। চাঁদপুরের ধনাগদা নদীর পাড়ে উত্তর নায়ের গাঁয়ের এক গ্রামে তার জন্ম হয়েছিল স্বাধীনের আগে। গতবছর জমি বিক্রি করার পর জমিজমা নাই আর। দরকার হলে পাটারি বাড়ির কাচারি বাড়িতে থাকবে শরীফুদ্দীন । ভাইয়ের ছেলেরা কাচারি বাড়িতে থাকতে না দিলে পুবপাড়ার মসজিদে থাকবে । কয় দিনই আর বাঁচুম? অন্ধকারে বিড়িতে টান দিল শরীফুদ্দীন। আজকাল এমনও ভাবে সে- ঢাকা শহরে আসার কি দরকার ছিল? বাপদাদার জমিতে ক্ষেতি কাজ করলে কি এমন হইত। চাঁদপুর কলেজ থেকে বিএ পাস করল। একদিন লঞ্চে উঠে সদরঘাটে নামল। কি দরকার ছিল?
রুনু বাথরুম থেকে বাইর হইছে । এখন রুনু কাঁদব। অনেক ক্ষণ ধইরা ...এই কান্নাই সহ্য হয় না শরীফুদ্দীন । সান্ত¦না দিতে গেলে গালাগালি করে। মুখে যা আসে তাই বলে। তখন মনে হয় মেয়েটা আস্ত একটা খানকি, জগন্নাথ কলেজে পড়ে নাই ...আলতাফ শুয়োরের বাচ্চারে অভিশাপ দেয় শরীফুদ্দীন । নিজেরেও গালমন্দ করে ...রুনু মুজাহিদ- এর হাত ধইরা ভাইগা গেলে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাবে শরীফুদ্দীন । দিঘীর পাড়ে বাঁশঝাড়ে বাপ-মায়ের কবর। কবরের উপর উপুর হয়ে পড়ে কাঁদবে। কানতে কানতে বলবে, ঢাকা শহরে আইসা পাপ করছি, তোমরা আমারে ক্ষমা কর।
এতে যদি মৃত্যুর আগে জ্বালাযন্ত্রণা জুড়ায় ...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




