somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ ধর্ম

২৫ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রসঙ্গ ধর্ম
আমি যে ধর্মে জন্মেছি, তাতে নিজ ধর্মকে সত্য মানতেই হবে, প্রশ্ন তোলা যাবে না। ইসলামি অনুশাসনে এর শান্তি কাতেল বা শিরোচ্ছেদ। কিন্তু ধর্মের পুস্তকে যা দাবি করা হয়, তাতে এতই প্রশ্নে অবকাশ আছে, যে শিরোচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে প্রশ্ন থেকে ধর্মটিকে রক্ষা করা যায়নি। শির গেছে, কিন্তু প্রশ্ন থামেনি। এতে থেমেছে ইসলামের পার্থিব শক্তি ও জ্ঞানবিজ্ঞান।
মুতাজিলা থেকে আল রাজি, ইবনে সিনা, এমন কি সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খলদুন—কেউই ইসলামি মোল্লা ও শাসক শ্রেণীর ক্রোধরোষ থেকে রেহাই পাননি, কিন্তু প্রশ্ন তো থেমে থাকেনি। এক কোরানের রজ্জু-ধরা মুসলমানের তাই হয়েছে তেহাত্তুর দল। এর মধ্য মুসলমানের পরম কাঙ্ক্ষিত যে বেহেশত, তাতে যাবে মাত্র এক দল। অথচ প্রত্যেক দলই দাবি করে, তারাই সহি, তারাই যাবে জান্নাতে। এই দ্বন্দ্বে মুসলমানের আল্লার ঘরও হামলা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এমন কি মক্কার কাবাঘরও।
তো ইসলাম ধর্ম নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলছি না, কারণ আমি কোনো মেকি নামে ফেসবুক চালাই না। আমি কেন বিপদ ঘাড়ে নেব? প্রতিদিন ইসলামের বিরুদ্ধে শত প্রশ্ন যারা তুলছেন, তাদের অনেকের আইডি ফেইক।
আমি প্রশ্ন তুলছি অন্য ধর্ম দিয়ে, যাঁরা প্রশ্ন অপছন্ন করলেও কোপান না।
প্রথমে আসি বাইবেলে। ওল্ট নিউ উভয় টেস্টামেন্টে আছে হজরত আদম প্রথম মানুষ। তিনি ছিলেন ষাট হাত লম্বা, ফুটের হিসেবে নব্বই ফুট লম্বা। প্রশ্ন হচ্ছে মানুষটির ওজন কত টন ছিল? তাঁর অঙ্গ-প্রতঙ্গের সাইজই বা কি ছিল? সাধারণ সিমিট্রি অনুযায়ী তা এতই বড়ো ছিল, যা বাস্তব জগতের হাতি তিমি ডাইনোসার, এমন কি কল্প জগতের কোনো দানবকেও হার মানায়। অত বড়ো একজন মানুষের লিঙ্গটাই হওয়ার কথা বাঁচ ছ ফুট এবং মোটায় কলাগাছের মতো।
তো ধরে নেওয়া যায় ওনার ছেলে-মেয়েরাও আশি নব্বই ফুট লম্বা ও দানবাকার ছিলেন। তো ওনাদের বসবাসের জন্য বিশাল সাইজের বড়িঘর ছিল নিশ্চয়ই।
কেম্ব্রিজের ট্রিনিটি কলেজসহ খ্রিস্টান পণ্ডিতদের হিসাব মতে যিশুর জন্মের চার হাজার চার বছর আগে নবি আদম পৃথিবীতে আসেন। তা হলে ঠিক আজকের দিন পর্যন্ত আদমের বয়স ছ হাজার ছাব্বিশ বছর। তা হলে কোথায় গেল আদমের ঘর? কোথায় তাদের কবর? প্রত্ন খননে সাত হাজার বছর আগের স্থাপনা পাওয়া গেছে, ছ হাজার বছর আগের আদমের হাজার বছরের রাজত্বের, কৃতির কোনো চিহ্নই পাওয়া যাবে না? তিন কোটি বছর আগের ডাইনোসরাসের কঙ্কাল পাওয়া যায়, এত বড়ো দেহধারী আদমের বা তাঁর পুত্র কন্যার কঙ্কাল কই?
মাঝে কিছু তাকিয়াবাজ (যারা মিথ্যাচারে গোয়েবলসকেও হার মানান, চাঁদের মধ্যেও বিচারধীন আসামীর মুখ দেখান) ফটো শপিং করে মরুভূমি থেকে লম্বা লম্বা কিছু কঙ্কাল দেখিয়ে ছিলেন, যা হজরত আদমের নয় অবশ্য, অত বড়ো নয়।—তা নাকি আদ ও সামুদ জাতির যাদের কথা কোরানে উল্লেখ আছে। খারাপ কাজের জন্য নাকি আল্লা ওই দুই জাতিকে ধ্বংস করে দেয়। (এখন যেন কোনো জাতি খারাপ কাজ করছে না, আমেরিকা, রাশিয়া চীন খুব ভালো কাজ করছে, ইসলাম মেনে চলছে?)। কিন্তু ওটা ছিল মিথ্যাচার, পৃথিবীর কোনো আর্কিওলজিস্ট বা ফসিলবিদরা এর কিছুই জানেন না।
এখন কথা হচ্ছে, খ্রিস্টান-ইহুদিরা আদম নিয়ে বা ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুললে আগে প্রশ্নকারীদের মেরে ফেললেও এখন তারা গা-ই করে না, কারণ তারা জানে আদম-ধর্ম এ সব অবৈজ্ঞানিক। তাদের গির্জা এখন পরিত্যক্ত। গিরিগিটি, ইঁদুর বাদুর বাস করে। কিছু মুসলমান ক্রয় করে মসজিদ বানায়। কিছু গির্জা এখনো চলে টিমটিমিয়ে, তবে পাদরিদের দাঁত নখ আর অবশিষ্ট নেই।
কিন্তু মুসলমান প্রশ্ন মেনে নেয় না। তারা বিজ্ঞান মানে না, হিসাব মানে না, ইতিহাস মানে না, প্রত্নতত্ত্ব মানে না, যদি তাঁদের ধর্মগ্রন্থের বাইরে যায়। এ ধর্মের কঠোর নির্দেশ, ইসলামের নবির কোনো সমালোচনা করলে মেরে ফেলতে হবে। রুশদি কোপ খাইছে এ জন্য, নুপুর শর্মাও কোপ খাবেন, কত বছর সাবধানে থাকবেন?
কিন্তু প্রশ্ন আসার সময় হয়েছে মুসলমান কত জনকে কোপাবে? এই বাকস্বাধীনতার বিশ্বে, বিজ্ঞানপ্রভাবিত বিশ্বে, আবার ধর্মান্ধ বিশ্বে প্রশ্ন কি ঠেকানো যাবে? প্রশ্নগুলো কি অসত্যের উপর দাঁড়িয়ে করা হচ্ছে না? নবি করিম ছ বছরের মেয়ে বিয়ে করে ন বছরে বিছানায় নিয়েছিলেন—এটা শত সহি সূত্রে প্রমাণিত। তো এ প্রশ্ন তুললে রাগ করতে হবে? এ তো হুজুররা ওয়াজেও বলেন শত মুখে। আবার নবির মুখে যে শয়তান একটা আয়াত ঢুকিয়ে দেয়, পরে তা তুলে নেওয়া হয়—এও তো প্রমানিত সত্য। রুশদি বা অন্য কেউ এ নিয়ে ব্যঙ্গ কেন করবেন ন? আল্লার এত ঘনিষ্ট বন্ধু, যাকে পয়দা না করলে দুনিয়া পয়দা করতেন না আল্লা—তাঁর মুখে শয়তান আয়াত ঢুকিয়ে দেয় কী ভাবে? তা হলে বলা হয় কেন, অন্যের স্বপ্নে শয়তান ঢুকলেও নবির স্বপ্নে শয়তান ঢুকতে পারে না?
বিজ্ঞান তো প্রমাণ করে দেখিয়েছে, স্বপ্ন কেন হয়, কী ভাবে হয়—সেখানে শয়তানের কোনো অস্তিত্বই নেই। স্বপ্ন পুরাটাই হয় বৈজ্ঞানিক নিয়মে—সে কচুঁ চোরের স্বপ্ন হোক, আর কোনো মহামানবের স্বপ্ন হোক। এছাড়া ওহি টহি ও যে মানবচিন্তন-কল্পনার ফসল, তাও মনোসমীক্ষণ পদ্ধতিতে প্রমাণ করা সম্ভব। কেন রামকৃষ্ণের হাত থেকে, মা কালি ভোগ খায়, কেমন সাধুবাবা মা-মালিকে দেখে, শিব ঠাকুরকে দেখে—বিজ্ঞান তা বলে দিতে পারে। কেন মুসলমান জিন দেখে, হিন্দু দেখে না, কেন হিন্দু জাতিস্মর হয়, মুসলমান হয় না—এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। তো এ যুগে এ সব প্রশ্ন তো উঠবে। মুসলমানের উচিৎ ইহুদি খ্রিস্টানের মতো প্রশ্ন মেনে নেওয়া। না হলে মুসলমানের ক্ষতি হবে দু দিক থেকে :
১. মুসলমানের ছেলে-মেয়ে ইসলাম ত্যাগ করবে। করেছেও অসংখ্য। রাষ্ট্র আর সমাজ মিলে পাহারা না দিলে দেখা যেত দেড় শ কোটি মুসলমান পরিসংখ্যানে আছে, বাস্তবে নাই।
২. মুসলমান ধর্মান্ধ অন্যান্য জাতির আক্রমনের শিকার হবে। যেমন হয়েছে মিয়ানমারে। আগামীতে হবে ভারতে। হবেই, হতেই হবে। দুই ধর্মান্ধের মধ্যে যার শক্তি কম, সে টিকতে পারবে না।
এই যে গতকাল তেলঙ্গনার বিজেপি বিধায়ক রাজা সিংকে গ্রেপ্তারের পরেও তিনি বলেছেন, আমি জেল থেকে বেরয়েই আবার নবি মোহাম্মদের সমালোচনা শুরু করব (প্রথম আলো ২৪.০৮.২০২২)। মোদি সরকার তাঁর নবিবিরোধী ভিডিও সরিয়ে ফেলেছে, হায়দারাবাদে মুসলমানদের অসন্তোষের মুখে। কিন্তু ওই এমপির বিরুদ্ধে কত শক্ত অবস্থানে যেতে পারবে মোদি সরকার? তাঁকে বেশি দিন জেলে রাখলেই ইসলামের খবর হয়ে যাবে। ওই এমপির তাঁর লাখ লাখ ফলোয়ারই শুধু নয়, সারা ভারতের বর্ধিষ্ণু ইসলামবিদ্বেষী শক্তি নবির বিরুদ্ধে সমালোচনা আপলোড করবে, তখন?
মুসলমানের যে সুতমার্গ, নবির সমালোচনা করলেই আন্দোলন, এর পরিণতি চীন মিয়ানমারের বাইরেও প্রবলভাবে ফিল করেছে, ফরাসি মুসলমান। নবির কার্টুন দেখানোর অপরাধে এক মুসলিম এক শিক্ষককে খুন করে। পরিণতিতে মুসলমান ফ্রান্স থেকে ভিটেছাড়া হবার জোগাড়। চলে গেছে অনেকে। অনেকে আপোশ করে টিকে আছে। অসংখ্য মসজিদ ও ইসলামি সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে মাখো সরকার।
ভারতে কি সে রকম হবে না মনে হয়? ভারতের সেকুলার শক্তি মুসলিম তোষণের দায়ে দিন দিন হীন হচ্ছে। দিন দিন বিজয়রথ এগোচ্ছে বিজেপির। কেন? নুপুর শর্মা নাটকের পর রাজা সিং নাটক। এ রকম শত নাটক অপেক্ষা করছে আগামীতে। পরিণতি?
২৪.০৮,২০২২
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কতভাগ ব্লগার মহা-ডাকাত তারেককে সরকারে দেখতে চায়?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১২



জিয়া মিথ্যা হ্যাঁ/না ভোটে সামরিক এডমিনিষ্ট্রেটর থেকে আইয়ুবের নতো দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলো, ৫% ভোটকে মিথ্যুকেরা ৯৮% বলেছিলো ; আওয়ামী লীগ বাধা দিতে পারেনি। জিয়ার মৃত্যুর পর, বেগম জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৯

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক
দায়হীন সরকারের শাসনে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে?


দিপু চন্দ্র দাস মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন—
“আমি নবীকে নিয়ে কিছু বলিনি, আমাকে মারবেন না।”
রাষ্ট্র তখন কোথায় ছিল?

আগুনে পুড়তে পুড়তে ছোট্ট আয়েশা চিৎকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×