somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টি. এস. এলিয়েট-এর "ওয়েস্টল্যান্ড"-এর অনুবাদ

২৩ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পোড়ো জমি
টি এস এলিয়েট
অনুবাদ: ভুল জন্ম (২০০৯)

“একবার আমি আমার নিজের চোখে একটি ঝুলন্ত খাঁচায় বন্দী কুম্যে’র সিবিলকে দেখেছিলাম, আর যখন ছেলেরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিল ‘সিবিল, তুমি কি চাও?’ সে উত্তরে বলেছিল, ‘আমি মরতে চাই।’”

শ্রেয়তর কারিগর এজরা পাউন্ডের উদ্দেশ্যে


১. মৃতের সৎকার

নিষ্ঠুরতম মাস এপ্রিল, মৃত
জমির বুকের ভেতর থেকে লাইলাকগুলোকে ফুটিয়ে তোলে, স্মৃতি
আর লালসাগুলোকে দেয় মিশিয়ে, ঘুমন্ত
শেকড়গুলোকে বসন্তের বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দেয় নেড়ে।
শীত আমাদেরকে রেখেছিল উষ্ণ, বিস্মৃতির
তুষারে ঢেকে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীটাকে, শুকনো
আলুর শেকড়ে জন্ম দিয়েছিল একটুখানি জীবনের।
এক পশলা বৃষ্টির ডানায় চড়ে স্টার্নবার্জারসী’র উপর দিয়ে উড়ে এসে
গ্রীষ্ম আমাদের চমকে দিয়েছিল, আমরা কলোনেড-এর ওখানটাতে থেমেছিলাম
আর সূর্যের আলোর ভেতর দিয়ে চলে এসেছিলাম হফগার্টেন-এ,
তারপর কফি খেয়েছিলাম আর ঘন্টাখানেক গল্পগুজবও করেছিলাম।
আমি মোটেই রাশিয়ান নই, আমি একজন সত্যিকারের জার্মান, এসেছি লিথুয়ানিয়া থেকে।
আমরা ছোটবেলায় যখন আমার মামাত ভাই আর্চডিউক-এর ওখানে থাকতাম
তখন সে একবার আমাকে স্লেজ-এ চড়িয়ে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল।
আমি ভয় পেয়েছিলাম। সে বলেছিল, মেরী,
মেরী, শক্ত করে ধরে থাক। আর আমরা নামছিলাম নিচে।
পাহাড়ের উপরে তোমার নিজেকে মুক্ত মনে হবে।
রাতের বেশিরভাগটাই আমি পড়ি, আর শীত এলে, চলে যাই দক্ষিণে।

এই পাথুরে জঞ্জালকে কোন শেকড় কি আকড়ে ধরতে পারে, কোন শাখা কি
জন্মে উঠতে পারে বেয়ে? হে মানব সন্তান,
তুমি না পারো কিছু বলতে, না পারো অনুমান করতে, কারণ
তুমি চেনো শুধু খণ্ডচিত্রের এক অসংলগ্ন স্তুপ, যেখানে সূর্যতাপ জ্বালিয়ে দেয় সব,
প্রাণহীন গাছগুলো পারে না দিতে কোন আশ্রয়, ঝিঝি পোকাগুলো পারে না দিতে কোন স্বস্তি,
শুষ্ক পাথরগুলোর গায়ে নেই কোন জলপ্রপাতের শব্দের চিহ্ন। শুধু
এই লোহিত প্রস্তরখণ্ডের নিচে ভীড় করে ছায়ারা,
(চলে এসো এই রক্তাভ প্রস্তরখণ্ডের ছায়ার ভেতর),
এই আমি তোমায় দেখাব একেবারেই ভিন্ন কিছু
যা ভিন্ন ভোরবেলায় তোমার পশ্চাদধাবমান ছায়ার থেকে
কিংবা যা ভিন্ন বিকেলবেলায় বেয়ে উঠে তোমার সাথে মিলনেচ্ছু তোমার ছায়ার থেকে;
একমুঠো ধূলোর ভেতর তোমায় আমি দেখিয়ে দেব ভয়ের চেহারা।
স্বদেশভূমি ছুঁয়ে এক সতেজ সমীর বয়ে আসে,
আমার আইরিশ সন্তান,
তুমি কোথায় অপেক্ষা করছো?
“তুমি আমায় এক বছর আগে প্রথম একটি হায়াসিন্থ দিয়েছিলে;
ওরা আমাকে হায়াসিন্থ কন্যা ডাকত।”
- তবু আমরা যখন ফিরে এলাম হায়াসিন্থ বাগান থেকে, দেরী হয়ে গিয়েছিল,
তোমার হাত ছিল পূর্ণ, তোমার চুল ছিল ভেজা, আমার
কথা আটকে গিয়েছিল, আমার চোখগুলো হয়েছিল ব্যর্থ, আমি না ছিলাম জীবিত
না মৃত, এবং, আমার মনে ছিল না কিছুই,
আলোর হৃদপিণ্ডের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম শুধুই এক শূণ্যতাকে।
নষ্ট আর বিরাণ এক সমুদ্র।

বিখ্যাত জ্যোতিষি মাদাম সসিস্ট্রিস-এর
বিচ্ছিরি ধরণের সর্দি লেগেছিল, তবুও, হাতে সেই চতুর তাসের গোছাটি থাকলে
সে ইউরোপের সবচেয়ে বিজ্ঞ নারী। সে বলেছিল,
এই নাও তোমার তাস, এই নাও
তোমার ডুবন্ত ফিনিশিয় নাবিককে,
(দ্যাখো! দ্যাখো! এই সেই মুক্তোগুলো যেগুলো ছিল তার চোখ!)
এই যে সেই বেলাডোনা, প্রস্তরের নারী,
ঘটনাচক্রের নারী।
তিনটে লাঠি হাতে এই সেই পুরুষ, আর এই যে এখানে রয়েছে চাকাটি,
আর এই দেখ সেই একচোখা সওদাগর, আর এই যে দেখছ খালি তাসটি
এটি সে তার পিঠে বয়ে নিয়ে বেড়ায়,
এবং, আমারও এটাকে দেখা নিষেধ আছে। ফাঁসিতে ঝোলানো
লোকটিকে তো খুঁজে পাচ্ছিনা। জলে ডুবে মৃত্যুকেও ভয় পাও।
মানুষের একটা দলকে আমি দেখতে পাচ্ছি, একটা চক্রের ভেতর হেঁটে বেড়াচ্ছে।
ধন্যবাদ তোমায়। যদি তোমার মিস্টার ইকুইটোনের সাথে দেখা হয়
তাহলে তাকে বোলো যে তার রাশিচক্র আমি নিজেই নিয়ে আসব:
আজকাল আবার সবাইকে খুব সাবধানে থাকতে হয় কিনা।

অবাস্তব নগরী,
শীতের ভোরের ধূসর কূয়াশার নিচে অবাস্তব নগরী,
মানুষের একটা ভীড় বয়ে যাচ্ছে লন্ডন ব্রিজের উপর দিয়ে, এত্তো মানুষ,
আমি ভাবতে পারিনি যে মৃত্যু এতোগুলো মানুষকে তুলে নিয়েছে।
কিছু দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো, ছোট ও অনিয়মিত কিছু দীর্ঘশ্বাস।
আর নিজের গোড়ালির উপর ভর করে ছোট পাহাড়টা পেরিয়ে কিং উইলিয়াম স্ট্রীট ধরে হেটে যাবার আগে
প্রত্যেকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল নিজেদের পায়ের দিকে,
আর পৌছে গেল সেখানে যেখানে সেইন্ট মেরী উলনথ
ন’টা বাজার শেষ প্রাণহীন ঘন্টারধ্বনির মাঝে আটকে রাখে প্রহরগুলোকে।
সেখানে এমন একজনকে দেখলাম যাকে আমি চিনি। তাকে থামিয়ে চিৎকার করে ডাকলাম, “স্টেটসন!
তুমিই তো ছিলে আমার সাথে মাইলি’র জাহাজে!
গতবার যে লাশটি তুমি পুঁতেছিলে তোমার বাড়ীর আঙ্গিনায়
তা কি মাথা তুলেছে? এবছর কি ফুল ফুটবে?
নাকি হঠাৎ শীতে মাটির কোন ক্ষতি হয়েছে?
মানুষের বন্ধু ওই কুকুরটাকে পারলে দূরেই রেখো
নয়তো নখ দিয়ে খুঁড়ে ওটাকে আবার তুলে আনতে পারে।
এই যে তুমি! প্রতারক পাঠক! - আমার জমজ - আমার ভাই!”


২. এক হাত দাবা

যে চেয়ারটায় সে বসেছিলো, সেটাকে লাগছিল বার্ণিশ করা একটি সিংহাসনের মত,
মর্মর পাথরের উপর জ্বলজ্বল করছিল সেটি, যেখানে আঙুরে ছাওয়া
কাণ্ডের উপর ছিল একটি কাঁচ আর সেখান থেকে উঁকি দিচ্ছিল একটি সুবর্ণ কিউপিডন
(আরেকটি তার চোখ ঢেকে রেখেছিল নিজের ডানায়)
সাতটি দানওয়ালা মোমদানীটিতে মোমের সংখ্যা দিগুণ করে দিয়েছিল সে,
টেবিলের উপর প্রতিফলিত হয়েছিল সেই মোমের আলো
আর গিয়ে মিশেছিল তার গহনার ঔজ্জ্বল্যের সাথে,
গহনাগুলো ছিল উপচে পড়া একটি সাটিনের বাক্সে।
তার উৎকট কৃত্রিম প্রসাধনের গন্ধ গজদন্ত আর রঙ্গিন কাঁচের উন্মুক্ত শিশির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে
দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল ঘরময়,
হোক তা আঁঠালো, গুড়ো গুড়ো, বা তরল - অনুভুতিগুলোকে কষ্ট দিয়ে আর সংশয়াচ্ছন্ন করে
ডুবিয়ে দিচ্ছিল ঘ্রাণের মাঝে; জানালা দিয়ে আসা
তাজা বাতাস ধোঁয়ার মতো উঠে যায় সোনার পাতে মোড়া ঘরের ছাদে, নাড়িয়ে দিয়ে যায়
মোমের আগুনের দীর্ঘকায় শিখাগুলোকে,
পাল্টে দেয় ছাদের আড়ে ফুটে ওঠা ছায়ার অবয়বকে।
তামার উপর নোনা-কাঠের বিশাল তক্তাগুলো জ্বলছিল সবুজ আর নীল রঙে,
আর সেই দুঃখি আলোয় রঙিন পাথরের কাঠমোতে
খোদাই করা দু'টো ডলফিন সাঁতার কাটছিল।
দুষপ্রাপ্য ম্যান্টেলপিস-এর উপর একটা জানালার মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছিল
আরণ্যক একটি দৃশ্যের উপর ফিলোমেল-এর বদলে যাওয়া, বর্বর সেই রাজা
যা জোর করে করেছিল। তবুও নাইটিংগেলটি
পুরো মরুভূমি ভরে দিয়েছিল অদম্য কন্ঠে
তারপরও সে কেঁদেছিল এবং তারপরও সারা পৃথিবী তার পিছনেই ছুটছে
আর নোংরা কানে শুনতে শুনতে ভাবছে যে সে ‘জাগ জাগ’ শব্দ করছে।
আর সময়ের অবশিষ্ট পরিশিষ্টগুলো আঁকা ছিল
দেয়ালের গায়ে; বদ্ধ ঘরটাকে চুপ করিয়ে দিচ্ছিল
ঝুঁকে অপলক তাকিয়ে থেকে।
তার চুলগুলো বুনো সৌন্দর্য নিয়ে স্থীর না থেকে
আগুনের আলোর নিচে, ব্রাশ-এর নিচে, ছড়িয়ে ছিল আর
অগ্নিদগ্ধ শব্দগুচ্ছের মত জ্বলজ্বল করছিল।

“আমার স্নায়ূগুলোর অবস্থা আজ ভাল নয়। হ্যাঁ, একদমই ভাল নয়। আমার সাথে থাকো
কথা বলো আমার সাথে। তুমি কেন কখনো কথা বলো না। কথা বলো।
কি ভাবছো তুমি? কি ভাবনা? কি?
আমি কখনো জানতে পারি না তুমি কি ভাবছো। ভাবো।”

আমার মনে হয় আমরা ইঁদুর গলিতে পৌছে গেছি
যেখানে মৃত মানুষেরা নিজেদের হাড়গোড়গুলো হারিয়ে ফেলেছিল।

“ওটা কিসের শব্দ?”
কিছু না, দরজার নিচে বাতাসের শব্দ।
“এখন এটা আবার কিসের শব্দ? এখন বাতাস কি করছে?”
কিছু নয়, কিছু না, কিছুই না।
“তুমি
কি কিছু জানো? তুমি কি কিছু দ্যাখো? তুমি কি কিছু মনে রাখো?”

আমি মনে রাখি
ওগুলো হল সেই মুক্তো যা ছিল তার চোখ।
“তুমি কি জীবিত আছো নাকি না? তোমার মাথায় কি কিছুই নেই?”
কিন্তু
ও ও ও ও শেক্সপিয়ারের সেই র‌্যাগ -
কি দারুণ
কি বুদ্ধিদিপ্ত
“আমি এখন কি করবো? কি করবো আমি?”
“আমি যেমন আছি সেভাবেই দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে যাব, আর মাথার চুল
নিচের দিকে দিয়ে হেটে যাব রাস্তা ধরে, সুতরাং। কাল আমরা কি করবো?
আমাদের সবসময়ই আসলে কি করা উচিৎ?”
দশটা’র সময় গরম জল।
আর যদি বৃষ্টি হয় তবে চারটা’র সময় দরোজা-বন্ধ একটি গাড়ী।
এরপর আমরা একহাত দাবা খেলবো।
পাতাহীন চোখগুলো চেপে ধরে দরোজায় কড়া নাড়ার অপেক্ষায়।

লিল-এর স্বামীকে যখন সেনাবাহীনি থেকে বের করে দেয়া হয় আমি বলেছিলাম -
আমি কোন কথা বাদ দেইনি, নিজেই তাকে বলেছিলাম,
তাড়াতাড়ি করো, সময় হয়ে গেছে
এ্যালবার্ট এখন ফিরে আসছে, নিজেকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নাও।
সে নিশ্চয়ই জানতে চাইবে যে দাঁত ঠিক করার জন্য যে টাকাটা সে তোমাকে দিয়েছিল
সেই টাকাটা দিয়ে তুমি কি করেছো। সে তাই করলো, আমি সেখানেই ছিলাম।
সবগুলো ফেলে দিয়ে নতুন এক পাটি বাঁধিয়ে নাও লিল,
সে বলেছিল, আমি কসম খেয়ে বলছি যে আমি তোমার দিকে তাকাতে পারছি না।
আমিই তাকাতে পারছি না, বললাম আমি, তবে একবার বেচারা এ্যালবার্ট-এর কথাটা ভাবো,
চার বছর ধরে সে সেনাবাহিনীতে আছে, সে এখন একটু ভাল সময় কাটাতে চায়,
তাই তুমি যদি তাকে তা না দিতে পারো তাহলে অন্য যারা আছে তারাই তাকে তা দেবে, আমি বললাম।
ওহ, আসলেই কি অন্য কেউ আছে নাকি, সে বলল। এরকমই কিছু একটা, আমি বললাম।
সেক্ষেত্রে আমি জানতে পারবো ঠিক কাকে আমার ধন্যবাদ জানাতে হবে, সে বলল আর আমার দিকে সোজা তাকালো।
তাড়াতাড়ি করো সময় হয়ে গেছে
তোমার যদি এটা পছন্দ না হয় তাহলে তুমি এটা বাদ দিতে পারো, আমি বললাম।
তুমি না পারলে অন্যরা পছন্দমতো বেছে নিতে পারে।
তবে এ্যালবার্ট যদি চলেই যায় তাহলে তা বলার অভাবে হবে না।
আমি বললাম, এতো বুড়ি লাগছে তোমায় যে লজ্জা পাওয়া উচিৎ.
(আর তার বয়স মাত্র একত্রিশ।)
মুখটা সূচালো করে সে বলল, কিছু করার নেই আমার।
আমি যেই ঔষধগুলি খাই সেকারণেই এরকমটা হচ্ছে।
(তার প্রায় পাঁচটা হয়ে গেছে, আর জর্জ-এর জন্মের সময় সে প্রায় মারাই যাচ্ছিল।)
ঔষধের দোকানী বলেছে এটা ঠিক হয়ে যাবে তবে আমি আর কখনোই পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারবো না।
তুমি আসলেই একটা পূর্ণাঙ্গ বোকা, বললাম আমি।
আমি বললাম, ঠিক আছে, যদি এ্যালবার্ট তোমায় ছেড়ে না যা যায়, তবে এই নাও।
তুমি যদি বাচ্চা নিতে না-ই চাও তবে বিয়ে কেন করেছিলে?
তাড়াতাড়ি করো সময় হয়ে গেছে।
সেই রবিবার এ্যালবার্ট বাড়ীতেই ছিল আর তারা গরম গরম গ্যামন খেয়েছিল,
আর তারা আমাকেও ডিনার করতে বলেছিল, সেটা গরম গরম চেখে দেখার জন্য -
তাড়াতাড়ি করো সময় হয়ে গেছে।
তাড়াতাড়ি করো সময় হয়ে গেছে।
শুভরাত্রি বিল। শুভরাত্রি ল্যু। শুভরাত্রি মে। শুভরাত্রি।
টাটা। শুভরাত্রি। শুভরাত্রি।
শুভরাত্রি ভদ্রমহিলাগণ, শুভরাত্রি প্রিয় ভদ্রমহিলাগণ, শুভরাত্রি, শুভরাত্রি।


৩. আগুনের নসিহত

নদীর তাবু গেছে ভেঙে: গাছের শেষ পাতাগুলো
মাটি আকড়ে পড়ে অর্ধেক ডুবে আছে ভেজা তীরে। সবার অগোচরে
বাদামী জমির উপর দিয়ে বয়ে গেছে বাতাস। জলপরীরা বিদায় নিয়েছে।
প্রিয় টেমস, আলতো করে বয়ে চলো, যতক্ষণ না আমি আমার গান শেষ করছি।
নদীতে কোনো খালি বোতল নেই, নেই কোন স্যান্ডউইচের মোড়ক,
রেশমী রুমাল, কার্ডবোর্ডের বাক্স, সিগারেটের গোড়া
কিংবা গ্রীষ্মকালীন নৈশউৎসবের অন্যান্য চিহ্ন। জলপরীরা বিদায় নিয়েছে।
আর তাদের বন্ধু, নগর পরিচালকদের উদ্দেশ্যবিহীন উত্তরাধিকারীরাও বিদায় নিয়েছে,
কোনো ঠিকানাও রেখে যায়নি।
লিম্যান নদীর জলের ধারে বসে আমি কেঁদেছিলাম . . .
প্রিয় টেমস, আলতো করে বয়ে চলো, যতক্ষণ না আমি আমার গান শেষ করছি।
প্রিয় টেমস, আলতো করে বয়ে চলো, কারণ আমি আর বেশিক্ষণ উচ্চস্বরে কথা বলতে পারবো না।
কিন্তু আমার পিছন থেকে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাসের সাথে ভেসে আসে
হাড়ের খটখট আর কান পর্যন্ত খিলখিল হাসির শব্দ।

ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে একটি ইঁদুর নিজের স্যাঁতস্যাঁতে পেটটাকে টেনে টেনে
ভেজা মাটির ওপর দিয়ে আলতোভাবে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল
যখন এক শীতের রাতে গ্যাসহাউসের পিছনের
মজা খালটায় মাছ ধরছিলাম
আর ডুবে গিয়েছিলাম আমার ভাইয়ের জাহাজডুবির চিন্তায়
আর তারও আগে আমার রাজকীয় পিতার মৃত্যুর ঘটনার চিন্তায়।
নিচু ভেজা জমির ওপর নগ্ন শুয়ে আছে সাদা শরীরগুলো
হাড়গুলো ছড়ানো আছে ছোট্ট নিচু চিলেকোঠায়,
বছরের পর বছর শুধু ইঁদুরের পা-ই ওদের নাড়ায়।
আর আমার পিছনে সময়ে সময়ে আমি শুনতে পাই
মোটর আর ভেঁপুর শব্দ যাতে চড়ে বসন্তকালে
সুইনি আসবে মিস্টার পোর্টারের কাছে।
মিস্টার পোর্টার আর তার মেয়ের উপর উজ্জ্বল চাঁদের আলো
কি দারুণই না লাগছিল
তারা পা ধুঁয়েছিল সোডার জলে।
আর ওহ, গম্বুজের ভিতর শোনা যাচ্ছিলো শিশুদের কণ্ঠে গান!

টুইট টুইট টুইট
জাগ জাগ জাগ জাগ জাগ জাগ
কি বর্বর ভাবেই না তুমি জোর খাটালে টিরিউ

অবাস্তব নগরী
শীতের দুপুরের বাদামী কুয়াশার নিচে দাঁড়িয়ে
স্মিরনার সওদাগর মিস্টার ইউজেনাইড্‌স,
দাড়ি কামানো হয়নি তার, আর তার পকেট ভর্তি আঙুর
সিআইএফ লন্ডন: কাগজগুলো দেখা মাত্রই,
কথ্য ফরাসীতে আমায় আমন্ত্রণ জানালো
ক্যানন স্ট্রীট হোটেলে মন্ধাহ্ণভোজনে!
আর তারপর মোট্রোপোল-এ সপ্তাহান্ত কাটাতে!

বেগুনি সেই প্রহরে, যখন চোখদু'টো আর পিঠটা
উপরের দিকে ফেরানো থাকে টেবিল থেকে, যখন
ধুঁকধুঁক করে অপেক্ষা করতে থাকা ট্যাক্সির মত
অপেক্ষা করে থাকে মানুষের ইঞ্জিন,
আমি টিরেশিয়াস, যদিও অন্ধ, ধুঁকেধুঁকে অপেক্ষা করছি দু'টো জীবনের মাঝখানে,
কোঁচকানো নারীস্তনওয়ালা বৃদ্ধ, এই বেগুনি প্রহরে
দেখতে পাচ্ছি, সেই বেগুনি প্রহরে যা ঘরমুখী হতে ব্যাকুল,
যা নাবিককে ঘরে ফিরিয়ে আনে,
বিকেল বেলা চা খাবার সময় হলে ঘরে ফেরে টাইপিস্ট,
সকালের নাস্তার অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার করে, চুলা জ্বালায়,
টিন থেকে খাবার বের করে।
জানালার বাইরে সূর্যের শেষ রশ্মীর ছোঁয়া পায়
বিপজ্জনকভাবে ঝুলতে থাকা শুকোতে দেয়া অন্তর্বাস,
ডিভানের উপর সতূপিকৃত অবস্থায় পড়েই থাকে স্টকিংস্‌,
চপ্পলজোড়া, ক্যামিসোল, (রাত হলে সেগুলো চলে যায় বিছানায়)
আমি টিরেশিয়াস, কুঁচকানো স্তনের বোঁটা নিয়ে
এই দৃশ্য কল্পনা করি, আর বাকিটা ভবিষ্যতবাণী করি -
আমিও তার সাথে সাথে আহুত অতীথির জন্য প্রতীক্ষা করি।
সে আসে, মুখভর্তি ব্রণ, সেই যুবক,
সে একজন বাড়ীর দালালের কেরাণী, চোখে সাহসী দৃষ্টি,
নিচুতলার একজন মানুষ, নিশ্চয়তা যার উপর বসে থাকে
সেভাবে যেভাবে ব্র্যাডফোর্ড-এর কোটিপতির মাথার উপর রেশমী হ্যাটটি বসে থাকে।
সে অনুমান করে সময় এখন অনুকূলে,
খাবার শেষ হয়েছে, মেয়েটি বিরক্ত এবং ক্লান্ত,
আলতো ছোঁয়ায় তাকে ব্যস্ত রাখার প্রয়াসগুলো এখনো
বকুনির মুখে পড়েনি, অনাকাঙ্খিত হলেও।
উত্তেজিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝাপিয়ে পড়ে মূহুর্তে;
উৎসাহী হাতদু'টো কোনরকম প্রতিরোধের সম্মুখিন হয় না,
তার অহংকারের প্রয়োজন পড়ে না কোন প্রতিক্রিয়ার,
এক্ষেত্রে নির্লিপ্ততাকে বরং স্বাগতই জানায় সে,
(আর আমি টিরেশিয়াস, এই ডিভান কিংবা বিছানার
উপর শুয়ে এই সবকিছুই আগেই সয়েছি;
আমি থিবিস-এ বসে থেকেছি দেয়ালের নিচে
আর হেঁটে গেছি নিকৃষ্টতম মৃতদের মাঝ দিয়েও।)
শেষ একটি ভীতিকর চুম্বন এঁকে দেয় সে,
তারপর খুঁজে খুঁজে রাস্তা করে নেমে যায় অনালোকিত সিঁড়ি দিয়ে . . .

মাথাটা ঘুরিয়ে কাঁচের দিকে এক মূহুর্ত তাকায় মেয়েটি,
খেয়ালই নেই যে তার বিরহী প্রেমিক কখন বিদায় নিয়েছে;
একটি অর্ধাকৃতি চিন্তা চলে যায় তার মস্তিষ্কের ভিতর দিয়ে:
“যাক, এটা হয়ে গেল তাহলে: আমি খুশি যে এটা শেষ হল।”
আবার যখন সুন্দরী রমনী বোকার মত নিচু হয়
আর ঘুরে বেড়ায় ঘরময়, একাকী,
স্বয়ংক্রীয় হাতে সমান পরিপাটি করে নেয় চুলগুলো,
আর গ্রামোফোনে একটা রেকর্ড চাপিয়ে দেয়।

“জলের উপর আমার পাশ দিয়ে বেয়ে উঠেছিল এই সঙ্গীত”
এবং স্ট্র্যান্ড-এর পাশ দিয়ে, কুইন ভিক্টোরিয়া স্ট্রীট দিয়ে যেতে যেতে,
লোয়ার টেমস্‌ স্ট্রীট-এর একটি স্বস্তা মদের দোকানের পাশে,
ওহ্‌ নগরী, আমি শুনতে পাই কখনো কখনো
একটি ম্যান্ডোলিন-এর আওয়াজ
এবং একটি ঝন্‌ঝন্‌, একটি ঝন্‌ঝনানী উঠে আসে
যেখানে জেলেরা দুপুরে জড়ো হয়, যেখানে ম্যাগনাস
মার্টারের দেয়ালগুলো ধরে রাখে সোনালী আর সাদা
রঙের অবর্ণনীয় আয়োনিয় ঐশ্বর্য।

নদীটা ঘেমে ওঠে
তেল আর কালিতে
ঘূর্ণায়মান স্রোতের সাথে
বার্জগুলো সরে যায়
রক্তলাল পালগুলো
চওড়া হয়ে বাতাদের দিকে
ঝুলতে থাকে ভারী মাস্তুলগুলো থেকে।
ভেসে আসা কাঠের গুঁড়িগুলোকে
ধুইয়ে দেয় বার্জগুলো
আর পাঠিয়ে দেয়
গ্রীনউইচের পাশ দিয়ে
কুকুরের দ্বীপের ওপারে।
ওয়েইয়ালালা লিয়া
ওয়েইয়ালালা লিয়া

এলিজাবেথ আর লিসেস্টার
বৈঠা বেয়ে যায়
তৈরী হয় নৌকোর পেছনটা
একটি গিল্টি করা খোলস
লাল আর সোনালী
দ্রুত ফুলে ফেঁপে ওঠে
দু’তীরকেই ভাসিয়ে দেয় ঢেউ
দক্ষিণ পশ্চিম থেকে আসা বাতাস
বয়ে যায় নালার উপর দিয়ে
ঘন্টার মুক্তোগুলো
সাদা টাওয়ারগুলো
ওয়েইয়ালালা লিয়া
ওয়েইয়ালালা লিয়া

“ট্রাম আর ধূলোময় রাস্তা।
হাইবারি আমাকে জন্ম দিয়েছে। রিচমন্ড আর কিউ
আমাকে নষ্ট করেছে। রিচমন্ড-এর নামে আমি আমার হাটুদু'টো তুলে
সঙ্কীর্ণ একটা ক্যান্যুর মেঝেতে শুয়েছিলাম চিৎ হয়ে।”

“আমার পা-দুটো মুরগেইট-এ, আর আমার হৃদয়
আমার পায়ের নিচে। ঘটনাটার পর
সে কেঁদেছিল। ‘একটি নতুন সূচনা’-র
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
আমি কোন মন্তব্য করিনি। আমার দুঃখ করার কি আছে?”

“মার্গেট স্যান্ড-এর উপর
আমি কোনকিছুকেই আর মেলাতে পারিনা
কোনকিছুর সাথে।
নোংরা হাতের ভাঙ্গা নখ।
আমার লোকেরা, নিরীহ লোকেরা কিছুই
আশা করে না।”
লা লা

এরপর এসেছিলাম কার্থেজ-এ

জ্বলছে জ্বলছে জ্বলছে জ্বলছে
হা ইশ্বর আমায় তুমি উঠিয়ে নাও
হা ইশ্বর উঠিয়ে নাও

জ্বলছে


৪. জলে ডুবে মৃত্যু

একপক্ষকাল আগে মারা গেছে ফিনিশিয় ফ্লিবাস,
চিলের চিৎকার ভুলে গিয়েছিল, গভীর সমুদ্র ফুলে উঠেছিল
এবং লাভ আর ক্ষতি।
সমুদ্রের নিচে এক ঢেউ
দীর্ঘশ্বাসের ফেলে হাতে তুলে নিয়েছিল তার হাড়গোড়। ওঠানামার মাঝে
জীবন আর যৌবনের বিভিন্ন পর্যায় সে পেরিয়ে এসেছিল
ঢুকে গিয়েছিল ঘূর্ণির মাঝে।
ইহুদি কিংবা অ-ইহুদি
কে তুমি যে ঘোরাও চাকা আর তাকাও বাতাসের দিকে,
ফ্লিবাসকে একটিবার বিবেচনা কর, যে কিনা একসময় তোমার মত সুদর্শন আর দীর্ঘকায় ছিল।


৫. বজ্রের কণ্ঠস্বর

ঘর্মাক্ত মুখগুলোর উপর টর্চলাইটের লাল আভার পর
বাগানের শৈত্য নিস্তব্ধতার পর
পাথুরে স্থানগুলোতে ক্রোধের পর
দূরতম পর্বতের ওপর দিয়ে বয়ে আসে
বজ্র আর বসন্তের চিৎকার আর কান্না
বন্দীশালা আর প্রাসাদ আর উচ্চকিত প্রতিধ্বনি
যে জীবিত ছিল সে এখন মৃত
আমরা যারা জীবিত ছিলাম
একটুখানি ধৈর্য নিয়ে এখন মৃত্যুপথযাত্রী

এখানে কোন জল নেই আছে শুধু পাথর
শুধু জলহীন পাথর আর বালুময় পথ
সেই পথ যা ওপরে ঘুরে ঘুরে শেষ হয়েছে পাহাড়গুলোর মাঝে
পাহাড়গুলো শুধুই জলহীন নিষপ্রাণ পাথরের তৈরী
যদি জল থাকতো তবে আমরা থেমে জল পান করতাম
প্রাণহীন পাথরের মাঝে আমরা পান করার জন্য থামতে পারিনা
ঘাম শুকিয়ে গেছে আর পা দেবে গেছে বালিতে
পাথরগুলোর মাঝে শুধু যদি একটুখানি জল থাকতো
মৃত পর্বতের মুখে আছে ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত যেখান থেকে লালা ঝরে না
এখানে না যায় দাঁড়ানো, না যায় শোয়া, না যায় বসা
পর্বতগুলোর ওখানে এমনকি নিস্তব্ধতাও নেই
রয়েছে শুধু শুষ্ক নপুংসক বৃষ্টিহীন বজ্র
পর্বতে এমনকি নির্জনতাও নেই
শুধু আছে রক্তাভ রাগান্বিত মুখের ক্রুর হাসি আর
মাটির ঘরগুলোর ফাটা দেয়ালের দরোজার করাল হা
যদি সেখানে জল থাকতো
আর না থাকতো কোন পাথর
যদি সেখানে পাথর থাকতো
জলও থাকতো
এবং জল
একটা ঝরণা
পাথরের মাঝে একটুখানি জমা জল
শুধু যদি জলের একটুখানি শব্দ থাকতো
ঘাসফড়িং নয়
আর শুকনো ঘাসগুলো গাইতো গান
কিন্তু পাথরের উপর জলের শব্দ
যেখানে পাইন গাছগুলোর মাঝে বসে গাইতো গান জলের পাখি ঋষি শরালি
টুপটাপ টুপটাপ টুপটাপটাপ
কিন্তু ওখানে জল নেই

এই তৃতীয় ব্যক্তিটি কে যে সবসময় তোমার পাশে পাশে হাঁটে?
আমি যখন গুনি তখন দেখি শুধু আমি আর তুমিই আছি
কিন্তু আমি যখন সাদা এই রাস্তার সামনের দিকে তাকাই
তখন সেখানে সবসময় দেখি আরও একজন তোমার পাশে পাশে হাঁটছে
বাদামী রঙের একটা চাদর গায়ে দিয়ে আর মাথায় হুড চড়িয়ে ধীরে ধীরে চলছে
আমি জানিনা সে পুরুষ না মহিলা
- কিন্তু তোমার আরেকপাশে ওটি কে?

বায়ূমন্ডলের সুউচ্চতায় ওটি কিসের শব্দ
ক্রন্দনরতা মায়ের বিড়বিড়ানী ওটা
মাথায় হুডওয়ালা সারিবদ্ধ ওরা কারা
পেরিয়ে যাচ্ছে অন্তহীন সমতলভূমি, হোঁচট খেয়ে পড়ছে পৃথিবীর ফাটলের ভেতর
শুধুমাত্র সমতল দিগন্তই পারে ওদের থামাতে
পর্বতের ওপর ওটা কোন শহর
বেগুনি বাতাসে ফাটল ধরছে আবার গড়ে উঠছে আবার বিস্ফোরিত হচ্ছে
পতনশীল মিনারগুলো
জেরুসালেম এথেন্স এ্যালেক্সান্ড্রিয়া
ভিয়েনা লন্ডন
অবাস্তব

এক নারী তার দীঘল কালো চুল ধরে রেখেছে টান টান করে
আর সেই তারে বাজিয়েছে দীর্ঘশ্বাসের সংগীত
আর শিশুর মতো মুখওয়ালা বাদুরগুলো বেগুনি আলোয় বাজিয়েছে
শিস আর ঝাপটিয়েছে ডানা
আর কালো একটা দেয়াল বেয়ে উঠেছে মাথা নিচের দিকে দিয়ে
আর মিনারগুলোও বাতাসে ঝুলে আছে মাথা নিচের দিকে দিয়ে
ঘন্টা বাজিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছে, প্রহর আর কণ্ঠস্বরগুলোকে সরিয়ে রেখেছে
শূণ্য চৌবাচ্চা আর পরিত্যক্ত কূয়া থেকে।

পর্বতের এই ক্ষয়িষ্ণু ফাটলে
ক্ষীণ এই চাঁদের আলোতে, ঘাস গান গাইছে
গীর্জার ওখানে ক্ষয়ে যাওয়া কবরগুলোর উপরে
ওইযে সেই শূণ্য গীর্জাটি, সেখানে এখন শুধু বাতাসের বসবাস।
এর কোন জানালা নেই, দরজাগুলো নিজে নিজেই খোলে আর বন্ধ হয়,
শুকনো হাড়গুলো কারও কোন ক্ষতি করতে পারে না।
ছাদের গাছের উপর একা শুধু দাঁড়িয়ে থাকে একটি মোরগ
কু-ক্কু-রু-ক্কু কু-ক্কু-রু-ক্কু
একটি বিদ্যুৎ চমক। তারপর এক ঝলক ভেজা বাতাস
নিয়ে আসে বৃষ্টি

গঙ্গার জল নেমে গিয়েছিল এবং ঝরা পাতারা
বৃষ্টির প্রতীক্ষা করেছিল, আর ওই বহুদূরে হিমাবন্তের উপর
জমেছিল কালো মেঘ।
জঙ্গল ওঁত পেতে ছিলো, নুয়েছিলো নিস্তব্ধতায়,
তারপরই শোনা গেল বজ্রের কণ্ঠ

দত্ত: তুমি কি দিয়েছো?
বন্ধু আমার, আমার রক্ত নাড়িয়ে দিয়েছিলো আমার হৃদয়কে
এক মূহুর্তের আত্মসমর্পণের স্পর্ধা
এক জীবনের দূরদর্শিতা কখনোই পিছিয়ে যেতে পারেনা
এভাবেই, শুধুই এভাবেই ছিল আমাদের অস্তিত্ব
যাকে কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না আমাদের শোকের মাঝে
কিংবা উপকারী মাকড়সার তৈরী স্মৃতির মাঝে
কিংবা রোগা উকিলের ভাঙা সীলের মাঝে
আমাদের শূণ্য ঘরের মাঝে

দয়াধ্বম: আমি একবার শুনতে পেয়েছি চাবি ঘুরিয়ে
দরজা খোলার আওয়াজ এবং শুধু একবারই,
প্রত্যেকে আমরা আপন বন্দীত্বের মাঝে চাবিটার কথা ভাবি
প্রত্যেকে চাবিটার কথা ভেবে বন্দীত্ব নিশ্চিত করে
শুধু যখন রাত্রি হয়, স্পর্শকাতর গুজবগুলো
এক মূহুর্তের জন্য জাগিয়ে তোলে ভগ্ন ক্যারিওলাসকে

দম্যতা: খুশিমনে সাড়া দিয়েছে নৌকাটি,
সেই হাতে যে হাত সবচেয়ে ভালো সামলাতে পারে পাল আর হাল
সমুদ্র ছিল শান্ত, তোমার হৃদয়ও নিশ্চয়ই খুশিমনে সাড়া দিয়েছিল
যখন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল
নিয়ন্ত্রণকারী হাতের প্রতিই আনুগত্য প্রকাশ করেছিলে

আমি বসেছিলাম তীরেই
মাছ ধরছিলাম, পেছনে পড়ে ছিল উষর সমতলভূমি
আমার কি নিজের দেশটাকে অন্তত ঠিক করা উচিৎ নয়?
ভেঙ্গে পড়ছে লন্ডন ব্রীজ ভেঙ্গে পড়ছে ভেঙ্গে পড়ছে
এখন আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি
প্রার্থনা করছি সেই গুনের কাছে যা তোমাকে পৌছে দিয়েছে সিঁড়ির শীর্ষে
শুধু আমার ব্যথার সময় আমার কথা মনে রেখো
তারপর সে নিজেকে লুকিয়ে ফেলল সেই আগুনে যা তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে
আমার ধ্বংসসতূপের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছি আমি এই টুকরোগুলোকে
তবে কেন তোমায় আমি জায়গা দেবো। হিয়েরন্যোমো’স ম্যাড এগেইনে।
দত্ত। দয়াধ্বম। দম্যতা।
শান্তি শান্তি শান্তি
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×