somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবুজের ভয়, সত্যের আনন্দ আর মহাপ্রলয়

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিতান্তই একদশক আগের কথাঃ Sting-এর মরুর বুকে Desert Rose…..হ্যাঁ এইতো সেদিন……মরক্কোর অলিগলি ধূলায় ধূসরিত হত সাইমুমে। এখনও হয়। বিচ্ছুরিত সূর্যালোকের চিকচিকে বালিতে ছুটে যেত মরুভূমির জাহাজ। এখনও যায়। পানির তীব্র হাহাকারে চাতকের মত উর্দ্ধাকাশের পানে তাকিয়ে থেকে যখন ক্লান্ত হত সীমিত দৃষ্টিসম্পন্ন মনুষ্যকূল, বিধাতার অমোঘ অমৃত বারিধারা হয়তো তখনো সিক্ত করতো না তাদের বহুদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রামকে। না। সেই সময় আজ সুদূর হতে চল্‌ল বুঝি!

North American Space Administration (NASA) এবং U.S. Geological Survey (USGS)। ১৯৮৭ সাল থেকে গত ২৯ বছরে ধরে NASA এবং USGS সৌদি আরবের শাম-মরুর বুকে উপগ্রহ থেকে ছবি তুলে আসছে। এই লিংকে গেলে দেখা যায় কিভাবে উষর মরু শ্যামল সবুজে পরিনত হচ্ছে (Click This Link)। Michael Petraglia অক্সর্ফোড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নত্বাত্তিক বিভাগের একজন প্রাগঐতিহাসিক গবেষক। তিনি দেখিয়েছেন জাজিরাতুল আরব এক সময় সবুজের প্রাণকেন্দ্র ছিল। শত শত মরা নদী আজও মরুর বুক চিরে সেই সাক্ষ্য বহন করে যাচ্ছে। মানব সভ্যতার শুরুর দিকে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে এই আরবেই মনুষ্য প্রজাতির বিস্তারও তার গবেষনায় উঠে এসেছে (Click This Link)। ঘন বনভূমির আধার ছিল এই আরব। প্রায় ১৩০,০০০ বছর আগের সবুজ আরবের কথা বলছে BBC (Click This Link)।

আনন্দ আর ভয়ের ব্যাপার হল NASA, USGS, Mr. Michael Petraglia এবং BBC ছাড়াও আরো একজন জাজিরাতুল আরব যে কোন এক সময়ে সবুজ ছিল তা বহু আগেই বলে গিয়েছেন। তিনি বিংশ শতাব্দির কোন প্রত্নত্বত্তিক ছিলেন না। মোটা মোটা বই পড়ে, মোটা ফ্রেমের চশমার উপর দিকে তাকিয়ে তিনি কথাগুলো বলেননি। মুসনাদে আহমাদ এবং সহীহ্ মুসলিম-এ, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ

“সেই সময় (কিয়ামত) ততক্ষণ পর্যন্ত আসবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না জাজিরাতুল আরব তার আগের অবস্থায় ফিরে যায় যখন তাতে ছিল উদ্যান/চারণভূমি এবং অসংখ্য নদী”।

এই হাদীসে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল ‘ফিরে যায়’ আর ‘উদ্যান/চারণভূমি এবং অসংখ্য নদী’ -এই দুটি অংশ। ১,৪০০ বছর আগে, উত্তপ্ত বালির উপর দাঁড়িয়ে, পানির জন্য তীব্র অভাবেও তিনি বললেন এই আরবই সবুজ ছিল এক সময়। কিভাবে বললেন? অসংখ্য নদী যে ছিল তাও বললেন! আবার এই সূয়ের খরতাপে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন ভবিষ্যতে এই মরুর বালুই চারণভূমিতে/উদ্যানে পরিনত হবে। কিভাবে বললেন? তিনিতো অক্ষরজ্ঞানহীন ছিলেন! ভয়ের ব্যাপার হল হাদিসটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আরবের এই সবুজ-সমারহ কিয়ামতের এক নিদর্শন। মানে হয়তো অতি নিকটেই সেই ক্ষণ। আল্লাহ ভাল জানেন।

‘সবুজ’ রঙটি কোরআনে আল্লাহ সুবানাহু ওয়া তায়া’লা বিশেষণ আকারে জান্নাতবাসীদের জন্য ব্যবহার করেছেন। যখন তিনি বলেনঃ

“তারা সবুজ আসনে হেলান দিয়ে একে অপরের মুখোমুখি হয়ে বসবে। তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?”

সবুজ সজীবতার প্রতীক। সবুজ সমৃদ্ধ স্নিগ্ধতার প্রতীক। কিন্তু আরবের এই সবুজ কি তা-ই? এই সবুজ কি আমারদের মলিনতা নয়? আমরা আজ মলিন নিজের কাছে। সমাজের কাছে। জাতির কাছে। বিশ্ব-বিবেকের কাছে। একাকী বেঁচে থাকার নিরন্তর প্রচেষ্টা করছে মলিন আমাদের আত্মিক চেতনাকে। নিজেকে কৃত্তিম রঙে রাঙিয়ে, ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে মলিন হচ্ছে আমাদের চিন্তার প্রশস্ততা। আত্মকেন্দ্রিকতার নিবিড় পরিচর্চায় মলিন হচ্ছে আমাদের উদারতা। আর কতবার নিষ্পাপ ছোট্ট দেহে রক্তের স্রোত দেখলে আমাদের ঘুম ভাঙবে? আর কত বুলেটের শব্দে রাত ভোর হলে আমাদের মননে স্থান পাবে শীতের রাতে কাঁপতে থাকা বৃদ্ধার আকুতি? আর কত বোনের কান্নার রোলে বাতাস ভারী হলে আমরা নিজের গন্ডির সীমানা পেরোতে শিখবো? আর কিভাবে ঘটনার প্ররিক্রমা আমাদের বুঝাতে পারবে যে আমরা দাঁড়িয়ে আছি একেবারে শেষ প্রান্তে?

আরব আবার সবুজ হয়ে যাচ্ছে। আমরা হচ্ছি মলিন। ধূলোয় ধূসরিত আরবের উটগুলো থেকেও হয়তো বেশী মলিন।


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×