বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে আলাদা ভাবে শনাক্ত করার কর্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে ডিএনএ এবং আঙ্গুলের ছাপ শনাক্তকরণ পদ্ধতি ।এ দুটির মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষা করা ব্যয়সাধ্য এবং সময়ের প্রয়োজন । তবে খুব সহজেই দুজন মানুষকে আলাদা করা যায় আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে । আর এরই ধারাবাহিকতায় এসেছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ।
বাংলাদেশে গত ডিসেম্বরে শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে বা আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের সীম নিবন্ধন । আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে সীম নিবন্ধন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রাধান কারণ মোবাইল ফোনে অপরাধ দমন । অথচ বাংলাদেশের মোট অপরাধের একটা ক্ষুদ্র অংশ সংগঠিত হয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে । গত ছয় মাসের আলোচিত হত্যাকান্ডের দিকে তাকালে স্পষ্ট যে সেগুলোর সাথে মোবাইল ফোনের সম্পর্ক খুবই কম বা নেই বললেও গ্রহণযোগ্য । অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সৃষ্টি করতে গিয়ে বায়োমেট্রিক নামে যে পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে তা যেমন বিশ্বে বিরল তেমনি অনেক বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বটে ।
পৃথিবীতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দেশ যারা মোবাইল ফোনের সীম নিবন্ধনে আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করছে । এর আগে ২০১৩ সালে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে পাকিস্তান । আর এর পর থেকেই বিশ্ব অপরাধে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ একের পর এক লক্ষণীয় । বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশেগুলো যখন বায়োমেট্রিক পদ্ধতির নাম শুনলে ভীত হয়, সেখানে বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী বৈ আর কি ???
বায়েমেট্রিক পদ্ধতিতে গ্রামীন সীম নিবন্ধনের মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ চলে যাবে নরওয়ে, বাংলালিংক সীম নিবন্ধনের মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ যাবে রাশিয়ার ভিমপেলকম প্রতিষ্ঠানের কাছে, এয়ারটেল অফিস হয়ে চলে যাবে ভারত আর সিটিসেল হয়ে যাবে সিংগাপুর । এভাবেই জাতীয় সর্বোচ্চ প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা চলে যাবে বিশ্ব প্রযুক্তিবীদদের হাতে । সেই সাথে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত স্বতন্ত্র্যকরণ বৈশিষ্ট্য বিশ্বের প্রযুক্তি বাজারের স্টক বা গুদামজাত পণ্যে পরিনত হবে । হয়তো সিরিয়া বোমা হামলায় কোন বাংলাদেশীর আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যাবে ।
কেবল দেশীয় অপরাধ দমনে বায়েমেট্রিক পদ্ধতি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ব্যতিত আর কী ? দেশীয় অপরাধ দমনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রই যথেষ্ট ছিল । সীম নিবন্ধনে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করলেই লেটা চুকে যেত । এমনকি বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করলে অপরাধ দমন হবে এরও কোন নিশ্চয়তা নেই । কারণ ধরা যাক জনাব করিম সাহেব বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সীম নিবন্ধন করেছেন । কিন্তু তার মোবাইল ফোনটি চুরি যাওয়ার পর সেই সীম দ্বারা কোন অচিন ব্যক্তি অপরাধ সংগঠিত করলো । তখন পুলিশ সীমের মালিক হিসেবে করিম সাহেবকেই আটক করবেন । তাহলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা অথবা মোবাইল ফোন চুরি যাওয়া ছিল তার অপরাধ । আর যদি ট্র্যাকিং করে সেই অচিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তাহলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সীম নিবন্ধন অর্থহীন, কারণ ট্র্যাকিং পদ্ধতি আগেও ছিল ।
দেশের পলিসি মেকার বা নীতি নির্ধারকগণ তাদের সৃজনশীলতা, অগ্রগামীতার প্রমান বা অস্তিত্বের জাগান দিতে গিয়ে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিশ্চিত । যে ভুল পাকিস্তান করেছে সে ভুল বাংলাদেশ করবে কিনা, আর একবার ভেবে দেখা অতীব জরুরী ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪