সকলেই ইতোমধ্যে জেনে গেছেন শরতের কাশফুল গুলো আজ ডুবে যাচ্ছে অকাল বন্যায়!
বর্ষা গিয়ে শরত প্রায় শেষের পথে। আজ আশ্বিনের ১৭ তারিখ । হেমন্ত আসন্ন প্রায় । অথচ আমাদের মূখোমূখি হতে হচ্ছে ধ্বংসাত্বক অকাল বন্যার। প্রাকৃতিক হলে বলার কিছু ছিলনা বা দু:খ করার কারণ বিধির হাতে ছেড়ে দেয়া যেত!
কেন এই অকাল বন্যা?
কারণ খূঁজতে গিয়ে, বলতে গিয়ে আমাদের স্বদেশী প্রকৌশলি যখন নতজানুতায় নত হতে হতে মাটিতে সেধিয়ে যাচ্ছেন, ভারত বা ফারাক্কার কোন প্রভাবই নেই প্রমাণ করতে উঠে পড়ে চেষ্টা করছেন সেই সময়ই ভারতের বিহার রাজ্যের পানিসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী সঞ্জয় কুমার ঝা বলছেন - ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দেওয়া হোক। নইলে বন্যার পানিনিষ্কাশনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
ঘটনার শুরু রাজশাহীতে। দিনভর সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন খবর ছড়িয়েছে যে ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশে বন্যার কারণে দেশটি ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়েছে। এ জন্য রাজশাহীতে পদ্মায় পানি বাড়ছে। এবং দেখতে দেখতে পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে চারদিক। ডুবে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। প্রায় পাকা ফসল! ভাংছে ঘরবাড়ী, স্কুল, মসজিদ, অফিস !
মানুষ ক্ষুব্ধ। মানুষ বিরক্ত! কেন এ্ই অকাল বন্যা !
সামাজিক মাধ্যম সহ মেইন স্ট্রীম মিডিয়া্ও তোলপার! প্রশ্ন উঠেছে - কেন এই অকাল বন্যা?
ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার কারণে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়ছে কি না, সে ব্যাপারে গতকাল রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রতিবছরই জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খোলা থাকে। এটি নিয়মিত ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। প্রকৃতপক্ষে, কয়েক দিন ধরে গঙ্গা ও পদ্মা অববাহিকায় নিম্নচাপজনিত অতিবৃষ্টিতে পানি উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, রাজশাহীতে গত আগস্ট মাসে পদ্মার পানি দ্বিতীয়বারের মতো বেড়েছিল। তখন রাজশাহীর দরগাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৬ দশমিক ৭১ মিটার উঠেছিল। তারপর থেকে কমে যায়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ফের পানি বাড়া শুরু হয়েছে। ওই সময় পানি উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৩৯ মিটার। গত ২১ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটায় পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ২০ মিটার। তারপর ধীরে ধীরে পদ্মা পানি বাড়তে থাকে। সূত্র: প্রথম আলো
আবহাওয়া দপ্তর বলছেন, রাজশাহীতে রোববার সকাল নয়টা থেকে গতকাল সকাল নয়টা পর্যন্ত ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে হয়েছে ৫৪ মিলিমিটার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে হয়েছে ৬৮ মিলিমিটার। এই পানি নদীতে জমা হয়েছে!! সূত্র: প্রথম আলো
মানুষ হাসবে না কাঁদবে? এই টুকুন বৃষ্টিপাতে পদ্মা ডোবে?
ভাসুরের নাম মূখে নিতে যেন লজ্বা না বাঁধা? সত্য বলায় কেন এত দুর্বলতা। কেন এই লুকাছাপা!
অথচ বাস্তবতা তাই -
প্রবল বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বিহার, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা। এ অবস্থায় বিহার সরকারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খুলে দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা বাঁধের সব স্লুইসগেট। ফলে প্রবল বেগে ফারাক্কার পানি গিয়ে পড়ছে বাংলাদেশে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে প্রবল বন্যা। সুত্র: প্রথম আলো
ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ প্রবল বন্যায় ডুবছে। বন্যার কারণের মৃত ব্যক্তির সংখ্যা শতাধিক। এরপরই ফারাক্কা ব্যারেজের সব কটি স্লুইসগেট খুলে দিয়েছে দেশটি। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় হু হু করে পানি ঢুকছে।
ফারাক্কার সব স্লুইসগেট খুলে দেওয়ায় প্রবল গতিতে ভাগীরথী, মহানন্দা ও পদ্মার পানি বাড়ছে। আর কপালে চিন্তার ভাঁজ ওই তিন নদীর পাড়ের মানুষের।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, হিমালয়–সন্নিহিত এলাকায়, বিশেষ করে নেপালে প্রবল বর্ষণের কারণে সেখানকার নদীগুলোর পানির স্তর বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে ভারতের উত্তর বিহার এলাকার নদীগুলোর পানি বাড়ছে। এর সঙ্গে পুরো বিহার রাজ্য ভাসছে প্রবল বন্যায়। বিহার থেকে আসা বিপুল পানি আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি ফারাক্কা ব্যারেজে।বন্যায় পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই গতকাল সোমবার রাতেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া ফারাক্কার ১১৯টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। সব স্লুইসগেট খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় হু হু করে ঢুকছে পানি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে সেখানকার বন্যা পরিস্থিতি দেখার জন্য রাজ্যের দুই মন্ত্রীকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বন্যা পরিস্থিতি দেখবেন।
ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ফারাক্কায় গঙ্গার পানি বিপৎসীমার ৭ ফুট ওপর দিয়ে বইছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাঁধের ১০৯টি স্লুইসগেট খুলে দিয়েছে তারা। স্লুইসগেট খুলে দেওয়ায় এই পানি ছুটে যাচ্ছে বাংলাদেশের দিকে।
বন্যার ভয়াবহতা সব পত্রপত্রিকায় ব্যাপক ভাবেই কাভারেজ পাচ্ছে।
“ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহারে বন্যা পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। উত্তর প্রদেশে এই বন্যায় ইতিমধ্যে ১১১ জন ও বিহারে ৪০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা।
বিহার ও উত্তর প্রদেশের পানি ঢুকে পড়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের ফুলহার, মহানন্দা ও কালিন্দী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। প্লাবিত হয়েছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। বন্যার পানির তোড়ে বর্ধমানে ভেসে গেছে একটি ফেরি। মুর্শিদাবাদে ভেসে গেছে একটি ভেসেল।
বন্যায় পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
তারা বাঁধ বাচাতে এবং নিজেদের জীবন বাঁচাতে ফারাক্কা খুলে দিয়েছে! আমাদের কি হবে দেখার কেউ নেই। ভাবার কেউ নেই।
আন্তর্জািতিক আইন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা নেই। ইচ্ছে হলো পানি আটকে মরুভূমি বানাও! ইচ্ছে হলে জল ছেড়ে ডুবিয়ে মারো।
তাই নিয়ে ফেসবুক ব্লগেও দেখছি ভারত প্রেমিকদের হাহাকার কান্না! উল্টো এটাকে ঢােকতে যারপরনাই চেষ্টা করছে! হা ইশ্বর!
ভাবটা আমরা মরছি না হয় মরি, দাদাদের দোষ দেয়া যাবে না!
বলি হারি তোদের চেতনা! উষ্টা মারি অমন মানসিকতায়!
ডুবছে দেশ! ডুবছে ফসল! ডুবছে মানুষ! আর আসছে দাদা প্রীতি দেখাতে।
সত্যকে সত্যই মানতে হবে। বলতে হবে। মিথ্যা বলা বা সত্যকে আড়াল করা কোন ধরনের দেশপ্রেম?
ফারাক্কা ভেঙ্গে দেবার দাবী বিহারের মন্ত্রী তুলতে পারলেও আমাদের মেরুদন্ডহীন বিনাভোটের বা রাতের আঁধারে চুরি করা ভোটের সরকার বা সরকারের মন্ত্রীদের সে সাহস নেই। সাহস দূরে থাক তারা এবং তাদের পোষ্যজীবিরা উল্টো কয়েক মিলিমটিার বৃষ্টিতেই দেশ ডুবে যাচ্ছে প্রমান করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ফারাক্কার কারণে এ বৎসরেই পরপর তৃতীয় বারের মতো এই অকাল বন্যায় তাদের দেশপ্রেম জাগে না। জাগে ভারত প্রেম!!!
ধিক! শতধিক!!
এই নিত্য প্লাবন থেকে বাঁচতে, অকাল প্লাবন থেকে বাঁচতে সত্য বলতে হবে। নিজের অধিকার আদায়ে দৃঢ় ভাবে রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক সকল চ্যানেলে লড়াই করে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হবে। ফারাক্কার ন্যায্য হিস্যা আদায়ে প্রয়োজনে আন্তর্জতিক আদালতে যেতে হবে। সমুদ্র জয়ের মতো পানির ন্যায্য হিস্যাও নিশ্চিত করা হোক।
এবং এরকম জরুরী অবস্থায় বিকল্প কিভাবে জল নিষ্কাশন করা যায়! তা নিয়ে যৌথ কমিশন গঠন করা হোক। বাংলাদেশকে আগে অবহিত করে স্লুইস গেট খোলা, এবং প্রয়োজনে এ কারণে সৃষ্ট ক্ষতির ক্ষতিপূরন আদায়ের জন্য চাপ দিতে হবে। কারো স্বেচ্ছাচারিতার দায়ে কেন ভূগবে পুরো দেশ ? আঠার কোটি মানুষ?
তাই অন্ধ আবেগে নয়, রঙিন মিথ্যের মোড়কে নয়, সত্যের তিক্ততায় হোক দেশপ্রেমরে জয়যাত্রা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:১৯