somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইডিয়টস জার্নি টু আম্রিকা (চৌদ্দ)

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আগের কাহিনীর পর.........।

এরপর এন্টারটেইনমেন্টের হিন্দি সেকশনটারে উল্টাই পাল্টাই একখান মুভি দেখলাম (আংরেজি বুঝার সাহস ছিল না তখন!)! তারপর অনেকটা বিরক্ত হইয়াই ঘুমাই গেলাম। ঘুম থেইকা উইঠা দেখি আরেকবার খাবার সময় হইয়া গেছে! সেইম আইটেম আবার খাইলাম। তারপরের পিলেনের সুন্দরিগোর কাছ থেকে চাইয়া চাইয়া পানি আর অরেঞ্জ জুস খাইছিলাম বহুত। একটু মনে হয় বেশিই খাইছিলাম! সুন্দরির হাতের জিনিস বইলা কথা :P :P! বাকি রাস্তা অনেকটা ইভেন্টলেসই কাটছে।

অনেক পরে পিলেন আমাদের জন এফ কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ কইরা আমারে ধন্য কইরা দিল। সবার মতোই আমিও তাড়াহুড়া কইরা ঠেইল্লা ধাক্কাইয়া যথাসময়ে নামলাম। নাইমাই প্রথমে বড় কইরা শ্বাস নিলাম আম্রিকান বাতাসের। মাগার মন খারাপ করা ব্যাপার হইল আমি স্পেশাল কুন স্মেল পাইলাম না। খালি এসির ঠাণ্ডা বাতাসটাই টানলাম! যাইহোক আর সবার সাথে অনেকটা রাস্তা হাইটা দেখতেছি এক জাগায় লোকজন লাইনে দাড়াইতেছে। আমি তো ধন্দে পইড়া গেলাম কুন লাইনে খাড়ামু, সিটিজেনের না ভিজিটরের? আমি কি ভিজিটর? না আমি তো ডিভি! ডিভির লাইন দেখি না ক্যারে? শেষমেশ, ভিজিটরের লাইনেই দাঁড়াইলাম আরকি! কিন্তু এই ব্যাপারটা চিন্তা করতে যাইয়া কয়েকটা মূল্যবান মিনিটের অপচয় কইরা লাইলাম। এর মধ্যে লাইনটা অনেক বড় হইয়া গ্যাছে। এরপর লাইনে দাঁড়াইলাম আরকি।

একটু পরে এক বয়স্ক লোক আমারে আইসা কয়, “বাঙ্গালিনি???” আমি বেশ কস্ট কইরা বুইঝা কইলাম হ্যা। তারপর ওই লোক আমারে লাইন থেইকা টাইনা বাইর কইরা আমারে একখান কাগজ দেখাইল, সেই একই কাগজ আমার কাছেও আছিল একখান! কিন্তু উনার কাগজের উপ্রে লেখা ছিল ট্রান্সলেটর! মাগার আমি ব্যাপারটার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝি নাই। সেই লোক সিলেটি ভাষায় আমারে অনেক কিছুই কইল আমি তার শতকরা নব্বই ভাগই বুঝি নাই। কিন্তু যেইটা বুঝলাম সেইটা হইল, সেই লোক সেই লোক আম্রিকান সিটিজেন (আম্রিকান পাসপোর্ট হোল্ড করে!) মাগার ইংলিশ কইতে পারে না, তার একজন ট্রান্সলেটর লাগবে। আর এই লোক আমারে কইতেছে তাঁর ট্রান্সলেটর হইতে! আমি ইডিয়ট নিজে আইছি আম্রিকায় প্রথম, নিজেই আংরেজি বুঝি না ঠিক ঠাক মতন। আর এই সিলেটি ব্যাটা আসছে আমারে বলির পাঠা বানাইতে!!!

যাইহোক, অনুরোধে ঢেঁকিটা গিলেই ফালাইলাম শেষ পর্যন্ত! ওই লোকের সাথে সিটিজেনের লাইনে যাইয়া দাঁড়াইলাম। লাইনটা বেশ ছোট ছিল। দশ মিনিটের মধ্যেই সামনে চইলা গেলাম। ওই লোক কাগজটা তলা দিয়া পার কইরা দিল। তারপর ভিত্রের পুলিশটা (ইমিগ্রেশন অফিসার) আমারে কয় এই লোকটা কি তুমার আব্বা হয়??? আমি মাথা ডাইনে বামে কইরা কই নাহ!!! তারপরে আমারে কয়েকটা প্রশ্ন করলো সেই পুলিস, আর আমি ওইগুলা ওই লোকেরে জিগাইয়া উত্তরটা লইয়া আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা আংরেজিতে সেই পুলিস মামারে দিলাম। লাস্ট প্রশ্ন ছিল সিলেটি কাকার কাছে কোন ফলমূল আছে কি না? আমি ওই লোকেরে কইলাম আপনের কাছে কোন ফলমূল আছে? হেই ব্যাডায় হ “আছে তো! আমি কয়ডা শুকনা বরই লইয়া আইছি”!!! আমি মনে মনে কইতেছি খাইছে আমারে! বরই আংরেজি আবার কি? এখন কি কমু? ট্রান্সলেটর হিসাবে তো আমি ফেইল মাইরা দিলাম! আমি তখন পুলিস মামারে কইলাম নাইক্কা! কিচ্ছু নাই! তারপরে উনারে পার কইরা দিয়া আমি আবার অন্দরে!

এইবার দেখি সেই লাইনে আরও শ’খানেক লোক ঢুকছে! আর লাইন যে এত্ত বড় হইছে যে আমি তো ওই সিলোটি মনে মনে গাইল্লাইতেছি। লাইনে যাইয়া প্রথম দেকলাম আহাঃ আম্রিকান (বিদেশি) মাইয়াপাইনেরা কিরাম কাপড়-চুপড় পরে! এইডা প্রথম দেইখা বেশ শরম পাইলাম আর মনে মনে ভবিষ্যতেও সিমিলার দৃশ্যের জন্য রেডি হইলাম। অনেকক্ষণ লাইনে দাড়াই থাকতে থাকতে আমার পা ব্যাথা হইয়া গেছিল। অনেকক্ষণ পর আমার পালা আইলো! যাইয়া প্রথমেই আমার পাসপোর্টের সাথে ইয়া বড় হলুদ একখান প্যাকেট আর ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলাম। পুলিস মামা আমার এই চাঁদমুখের একখান ছবিও তুইল্লা রাইখ্যা দিল! ওইখানে অফিসিয়ালি এড্রেসটা বদল কইরা ফালাইলাম। তারপর সেই পুলিস মামা আমারে এসকর্ট কইরা সামনে এক ঘরে যাইয়া বসতে কইল। ওইখানে প্রায় তিরিশ মিনিট পর ওরা আমার ফাইলপত্র ঘাটাঘাটি কইরা সাইন লইয়া কইল ওকে তুমি এখন যাইতে পার!

আমি তো সুন্দর কইরা একমাত্র সম্বল স্যুটকেসটা আনতে যাইয়া দেখি স্যুটকেইস নাই! কই গেল? যেই ঘুরা জিনিসে (ক্যারোসল) আমার জিনিসটা থাকার কথা সেইটা দেখি বন্দ!!! আমার তো প্রায় কান্নাকাটি অবস্থা! ঐটা না পাইলে আমি তো হোমলেস হইয়া যামু। একটু পর খুঁজতে যাইয়া দেখি স্যুটকেইস পাশেই খাড়া করানো আছে। অইটা দেইখা ধড়ে জান ফিরা আইলো! কাহিনী হইছিল, আমার বাইর হইতে এত্ত দেড়ি হইছিল যে সবাই আপন আপন মালামাল লইয়া ভাগছিল। আমারটাই ওইখানে পইড়া ছিল। সো ওরা নামাইয়া রাখছে।

তারপর একটা গেট পাইয়া ওইটা দিয়া বাইর হইতেছি। ওইখানে দেখি গেটের সামনে তাপস দাদা আমার জন্য ওয়েট করতে করতে পুরাই বিরক্ত হইয়া গেছে। আমারে দেইখাই এক চিল্লানি, এই বিপ্লব! তারপর দাদা আমারে লইয়া এয়ারপোর্ট থেইকা বাইরে লইয়া আইল। এইবার একটু মুক্ত বাতাসের সাদ পাইলাম। এইবার আবারো বুকটা ভইড়া শ্বাস লইলাম যে আম্রিকার বাতাসের/মাটির কুনু স্পেশাল গন্ধ আছে নাকি? মাগার আগেরবারের মত এইবারও কিচ্ছু পাইলাম না। কাহিনীটা এপ্রিলের শেষে বলে একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। দাদা এরপর আমারে লাইনে দাঁড়ানো ট্যাক্সিতে উঠাইল। দাদা ওরে কইল কোথায় যামু। শিখ ডেরাইবার আমাদেরকে উল্কার গতিতে লইয়া ছুট লাগাইল। একটু পর দাদা ওরে রুট ডিরেকশনও দিয়া দিল। আমি ট্যাক্সির পিছনে বইসা আম্রিকা দেক্তেছি! সিটবেল্টটা নিজে নিজে লাগাইতে পাইরা আবারো একপ্রস্থ গর্ব অনুভব হইয়া গেল। একটা ব্যাপার আমার মাথায় কিছুতেই আস্তেছিল না যে বিল্ডিঙগুলা এত্ত ছোট ছোট কেনু? সব দুই তিন তলা! আমি ঢাকায় এর চাইতে ঢের বড় বিল্ডিং দেকছি! ভুল কইরা ভুল জাগায় আইসা পরি নাই তো? কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা একটা বাসায় পৌঁছাইলাম যেইটা নাকি আমার ভবিষ্যৎ বাসা! দাদা ভাড়াটা চুকাইয়া দিল। ওইদিন যদি আমি জানা পাইতাম যে দাদা কত ভাড়া দিছে তাইলে আমি নির্ঘাত স্ট্রোক কইরা সেই মুহূর্তে পরপারে পাড়ি জমাইতাম! তখন সেই টাকা আমার কাছে অনেক বেশি ছিল।

বাড়িত যাইয়া শুনলাম দাদা নাকি ওই বাসায় থাকে না। ওইখানের সব্বাই কুমিল্লার বাসিন্দা! মনটাই খারাপ হইয়া গেল। যদিও সেইসময় এইটাই একটা বেশ বড় ফেভার ছিল। আমার রুমমেট কইল ফিরিজে খাবার আছে খাইয়া লান। তারপর আচ্ছা কইরা ঘুম দেন। কালকে উইঠা কিরবেন কইরেন। আমিও বিন্দাস খাইয়া দাইয়া দাদারে বিদায় দিয়া ঘুম দিয়া লাইলাম।

(অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাইতেছি যে, আগামী কিছুদিন এই সিরিজ বন্ধ থাকবে। সেমিস্টারের মিডটারম গুলাতে খারাপ করা শুরু করছি আর ফাইনালগুলা সামনে আসতেছে, এইগুলা পার হইলে আবার শুরু করবো। আরও একটা গুপন খবর, এন ইডিয়ট ইজ ইন লাভ সিরিজটাও চাল হবে খুব তাড়াতাড়ি!!!)

(চলতে থাকপে......।)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২০
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×