somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফতোয়াই আমাদের ধর্ম

১০ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঘ যদি তার থাবা ভুলে যা, বাঘ যদি তার গর্জন ভুলে যায় এবং মাংস ছেড়ে হরিণের মতো কোমল সুবাসিত ঘাস খেতে শুরু করেÑ তাহলে কি তার রাজ-সম্মান অটুট থাকবে? সম্মান কেন ঘাসে ভাগ বসানোর অপরাধে ষাড়ের গুতো খেয়ে বন ছাড়তে হবে। সভ্য ও ভদ্র-মানুষির মন্ত্র পড়িয়ে চুতর বুদ্ধিজীবীরা আমাদেরও চায় আমাদের গৌরবের আসনছাড়া করতে। শান্তি ও উদারতার বাণী শুনিয়ে চায় প্রতিবাদেরÑঅন্যায়কে রুখে দাঁড়াবার মানবতার শাশ্বত পথকে বন্ধ করে দিতে। আমরা মুসলমানরা যদি এতটাই বোকা হতাম, তাহলে এই দেড় হাজার বছরের পথ হাঁটলাম কি করে!

শুধু যে হেঁটেছি তা নয়! মনজিলও ভুলিনি আমরা। যদি কখনো অলস হয়েছি, ধূর্ত প্রতারকদের ধাঁধায় পড়েছি কিংবা বেঈমানদের লাফ-ঝাপ দেখে থমকে দাঁড়িেেয়ছিÑ আমাদের অভিভাবক আলেমগণ তখনই নড়ে ওঠেছেন। জাগিয়ে দিয়েছেন, প্রতারকদের কথার কথাগুলো ফাঁস করে দিয়েছেন। বেঈমানদের চোখ বরাবর তর্জনি তুলে বলেছেনÑ এরা বেঈমান! এদের ভেতরে বাতাস ছাড়া কিছুই নেই। সময়ের পেঠে উচ্চারিত তাদের এই বাণী সংকেত হুশিয়ারিই ফতোয়া। এই ফতোয়াই আমাদের পথ চলার শ্রেষ্ঠ পাথেয়। আমাদের অবিকৃত ধর্মÑবিশ্বাসের প্রধান সহায়িকা এই ফতোয়া।

ফতোয়া যুগ যুগ ধরে আমাদের স্বাতন্ত্রতা কিভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে তার একটি ক্ষুদ্র উপমা দেই। আমাদের ধর্মগ্রন্থ পাক কুরআন। আমাদের চিন্তা আদর্শ স্বপ্ন বিশ্বাসের মূল শেকড় এই মহাগ্রন্থ। ইসলামের শিক্ষা দাওয়াত ও বাণী এই কুরআন। তাই এই কুরআনকে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ টার্গেট। এই টার্গেট অর্জনে আমাদের সংগ্রাম ইসলামের প্রথম কাল থেকে আজ পর্যন্ত সমানভাবে চলছে। মুসলমানগণ এই দেড় হাজার বছরের ইতিহাস যখন যেখানেই গেছেন সঙ্গে বয়ে নিয়ে গেছেন আল কুরআন। ছড়িয়ে দিয়েছেন কুরআনের অপূর্ব পদ্য-ভিাব।

আমরা সকলেই জানি পবিত্র কুরআনের ভাষা আরবি। এও জানি, ঐশী-আশীর্বাদপুষ্ট এই ভাষার উচ্চারণও জলের মতো সহজ নয়। অথচ এর বাণী ও শিক্ষার আলো ছাড়া মুক্তির কোনো পথ নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই দাবী ওঠতে পারে- কুরআন কি আরবি ভাষায়ই পড়তে হবে? তাছাড়া মূলকথাগুলো যদি প্রতিটি জনপদের ভাষায় রূপান্তরিত করে ছড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে কি দীনের বাণী উপলব্ধি করা সহজ হবে না? অতীতে এমন কথা উঠেছেও।

এই দাবীর পিঠে আমাদের পূর্বসুরী আলেমগণ যে ফতোয়া দিয়েছিলেন এবং যে ফতোয়া শত শত বছর ধরে এই উম্মত আত্মার সিন্ধুকে লাল করে এসেছে তাহলো-

এক. আরবি ব্যতীত অন্য কোনো ভাষার বর্ণমালায় কুরআনের মূল্য টেক্সট লেখা যাবে না। যাকে আমরা বাঙলা উচ্চারণ বলে থাখি।

দুই. কুরআনে কারীমের যে লিখিনপদ্ধতি হযরত উসমান রা. এর কাল থেকে চালু আছে তারমধ্যে কোনো একটি হরফেরও হেরফের করা যাবে না।

তিন. উসমান রা. এর কাল থেকে চলে আসা কপির বিন্যাসে কোনো শব্দ আয়াত কিংবা সূরাÑ কোনো ক্ষেত্রেই আরোপ করা যাবে না।

চার. মূল আরবি টেক্সট ব্যতীত শুধু তরজমা ছাপা যাবে না।

পাঁচ. যদি কেউ শুধু তরজমা ছাপে তাহলে তা বেচা যাবে না এবং কেনা যাবে।

ছয়. তরজমা প্রকাশে সহযোগিতা হয় এমন কোনো ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করা যাবে নাÑ যেমন তার বিজ্ঞাপন প্রচার, একথায় আমাদের ফতোয়ার চোখে এসবই হারামÑজঘন্য অপরাধ।

মুসলমানগণ যুগ যুগ ধরে এই ফতোয়া মেনে এসেছেন। মোটাদাগের এর যে উপকারটা হয়েছে তাহলোÑপৃথিবীর যেখানেই কুরআন শরীফ গিয়েছে সেখানে কুরআন শরীফই গিয়েছে। শুধু আরবি ভাষার কুরআন শরীফ নয়Ñ বর্ণবিন্দু ও লিপিকাভঙ্গিসহ বিস্ময়কর অভিন্নরূপের কুরআন শরীফ। উচ্চারণের তাল লয় মাত্রাসহ পৌঁছেছে। ফলে পৃথিবীর সর্বত্র এখন কুরআন পঠিত হয় একই কণ্ঠেÑ শিল্পের একই মুদ্রায়। ধর্মগ্রন্থের ইতিহাসে এ এক মহাবিষ্ময়।

পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম যেখানেই মুসলমান আছে সেখানেই এই অভিন্ন-কণ্ঠে উচারিত কুরআন পাঠের মুগ্ধকর আসর। নামাযে সকাল-সন্ধ্যায় এবং রমযান মাসের পাক প্রহরে জগৎজুড়ে বসে এই অলৌকিক গ্রন্থের অপরূপ জলসা। তাজবীদ নামক অভিনব পাঠবিধি কী যে বিস্ময়কর ছাঁচে ঢেলে গড়েছে এর পাঠ পদ্ধতিÑ তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ফলে হয়েছে কিÑ জগতের যে কোনো প্রান্তে যখন কোনো মুসলমান অপর মুসলমানের মুখোমুখি হয়Ñ ভাষা তার যাই হোকÑ নামাযের সময় হতেই তারা চিরচেনা এক অলৌকিক ভাষার মোহনায় এসে মিলিত হয়। একই ভাষায় একই নিয়মে একই মিনতি নিয়ে দাঁড়ায় পাশাপাশি। যেনো কতো কালের চেনা! বিনে সুতোর এই বন্ধনকে মাপতে পারি সেই সাধ্য কোথায় পাব।

কোথাও পড়েছিÑএক বুড়ো বাংলাদেশি গিয়েছিল হজ করতে। ফিরে আসার পর যখন জিজ্ঞেস করা হলোÑ কেমন কাটল সময়? বলল : যে আর বলো না। হাঁটাচলা নাওয়াÑখাওয়া সব আরবিতে। শুধু আযান আর নামাযটা বাঙলায় হয়েছে বলে ঈমান রক্ষা। গর্ব করে বলতে পারিÑএই যে আযান নামায বাঙলা হয়ে গেলÑএকি আরবি ভাষার কুরআনের বরকতে নয়। সাথে এও সত্যÑ কুরআনের এই স্বরূপে বিস্তারের মূলে রয়েছে আলেমগণের ফতোয়া।

পৃথিবীর প্রচলিত ধর্মগুলোর সাথে ইসলামের তুলনামূলক পার্থক্য ও ইসলামের অনন্য-স্বতন্ত্র বৈশিষ্টগুলোর কথা যারা জানেন তাদের কথা হলোÑইসলামের জীবন্ত সব বৈশিষ্ট্যের কথা যদি বাদ দিই তাহেল এই একটিমাত্র বৈশিষ্ট্যকে উজিয়ে পৃথিবীর কোনো ধর্ম কোনোদিন ইসলামের পাশে এসে দাঁড়াতে পারবে না। আর তাহলো কুরআন। এর বাইরে সম্ভব ইহুদিÑখ্রিস্টানরাই কেবল ধর্মগ্রন্থ নিয়ে আড়ালে-আবডালে সামান্য চেঁচামেচি করে। কিন্তু তারা কি পৃথিবীর সামনে বলতে পারবে তাদের নবীর প্রতি কোন ভাষায় কোন শব্দে অবর্তীণ হয়েছিল এই গ্রন্থ। দেখাতে পারবে তারা কোনো নমুনা? যা আছে, বাজারে, এনজিওর খামারে মূর্খ নারীদের মাঝে বিতরণ করা হয় তাতো অনুবাদ। তাও যুগে যুগে কৃত অনুবাদসমূহের মাঝে পার্থক্য বিস্তর। সেই পার্থক্য কোথাও কোথাও তৈরি করেছে বৈপরীত্ব। সেই বৈপরীত্বগুলো তুলে ধরে মাওলানা রহমতুল্লাহ কেরানবী রহ. যখন চ্যালেঞ্জ করেছেন ইংরেজ ধর্মগুরুরা তখন পালিয়ে গেছে। এই ইতিহাস পুরনো।

এর বিপরীতে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত চষে আসুন। দেড়শ’ কোটি মুসলমানের ভাষা শুমার করা হলে দাঁড়াবে এক দুরূহ বিষয়। কিন্তু সকলের ধর্মগ্রন্থের ভাষা এক। আরবি! ফলে ইসলাম ধর্মের মূল ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও বিশ্বাসে গলদ সৃষ্টি করা এক দুঃসাধ্য বিষয়। হোক তার বাড়ি আফ্রিকার ক্ষুধাকাতর নিরন্ন অঞ্চলে। ধর্মের প্রশ্নে সে ধনী। সে বুক উচিয়ে বলতে পারেÑআমি যে কুরআন পাঠ করছি এটা সরাসরি আল্লাহর কালাম। আমার নবী এই কালামই তেলাওয়াত করতেন। আফ্রিকার জঙ্গলে দাঁড়িয়ে আমি যে ভাষায় যে নিয়মে যে মর্মে তেলাওয়াত করছি ঠিক সেই নিয়মে সেই ভাব ও আবেদনে সেই ভাষায়ই সবার সামনে পঠিত হচ্ছে এই কুরআন। পৃথিবীময় পারমানবিক বোমা হাতে দাবড়ে বেড়াচ্ছে যে খ্রিস্টানগোষ্ঠী বুক টান করে এমন একটা কথা কি বলতে পারবে তারা?

এক কথায়Ñ কুরআনের এক অভিন্ন ভাষার ধর্ম আজ আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। কুরআন যদি বাঙলা উচ্চারণে লেখা হয় কিংবা শুধু অনুবাদটা বাঙলা ইংরেজিতে ছাপা হয়Ñ তাহলে অনেকেই পড়তে পারতো; আরো অনেকেই বুঝতে পারত। এই যে মিনতিÑ যদি এই মিনতি রাখতেন আমাদের অতীতকালের আলেমগণ তাহলে সহজতার স্রোতে করে হারিয়ে যেত কুরআনের প্রকৃতরূপ। তারাবীহ তো পরের কথাÑ সাধারণ ফরজ নামাযেই হয়তো একজনে কুরআন পড়তো নোয়াখালীর উচ্চারণে অন্যজন পড়তো বরিশালের উচ্চারণে। আর চট্টগ্রামের উচ্চারণে পঠিত কুরআন বুঝবার সাধ্য কি পৃথিবীর কারো হতো? শত বিভক্তির মাঝেও যে আজ নামাযের পথ ধরে বিশ্বমুসলিম দিনে পাঁচবার এককণ্ঠে একসুরে এক ভঙিতে ঐক্যের উপমা রচনা করে যাচ্ছেÑ ধুলোয় মিশে যেত এই অসামান্য অর্জন; গর্বের ধন। এই ধন জিইয়ে রেখেছে আমাদের ফতোয়া। এই ফতোয়ই আমাদের ধর্ম। আর ধর্ম রক্ষায় আমরা কতো সাগর রক্ত দিয়েছি তাতো বেদীনরাও জানে।
মূল লেখাটা এখানে
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×