জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সারা বিশ্বব্যাপি মিছিল, মিটিং, স্লোগান সবই হয়েছে। কোপেন হেগেন সম্মেলন কিছুই দিতে পারেনি। ধনী দেশগুলো কীভাবে বুঝবে জলবায়ু বিপর্যয়ের কথা ? জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে, পাল্টে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতির রুপ। তাইতো এই জানুয়ারি মাসেই লক্ষ্যনীয় ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারিদিক। হীম-শীতল হাওয়ায় যেন কাঁপতে থাকে সবকিছু।
গগনচুম্বী অট্টালিকায় যারা বাস করে তারা হয়তো কখনোই বুঝবেনা জলবায়ু পরিরর্বনের প্রভাব, শীত কিংবা গ্রীষ্মের কষ্ট। তা যদি অনুধাবন করতে হয়, তাহলে বেড়িয়ে পড়ুন ঢাকার রাজপথে। এয়ার কন্ডিশান গাড়ি হতে নেমে হাটুন ফুটপাতের ওপর দিয়ে। দেখবেন তীব্র শীতে গৃহহীন, আশ্রয়হীন ভাসমান শীতার্ত মানুষ কত কষ্টে আছে। কীভাবে কাটছে তাদের দিন? অসহায় এসব মানুষের দিকে তাকালে একটা কথাই মনের মধ্যে নাড়া দেয়, আমাদের মত এরাওতো মানুষ। সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার তো এদেরও আছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ তারা আজ গৃহহীন, ফুটপাতের বাসিন্দা। কিন্তু গৃহহীন হওয়ার পেছনে দায়ী কারা ?
প্রতিদিন চলার পথে এমন হাজারও মানুষ চোখে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার পথে প্রতিদিনই দেখি, ফনিক্স রোডে; নগর ভবনের ঠিক সামনেই ওসমানি উদ্যান ও এর আস-পাশ দিয়ে আশ্রয় নেওয়া ভাসমান লোকগুলি কীভাবে এই শীতের মধ্যে দিন যাপন করছে ? ছোট ছোট শিশুগুলি কত কষ্টে আছে। অসহায় মায়ের ম্লান মুখের ছবিই বলে দেয় অনাহার, অর্ধাহারে খোলা আকাশের নীচে তারা কতটা সুখে আছে।
এ চিত্রটি আর কোথারও নয়, খোদ ঢাকা শহরের নগর ভবনের ঠিক সামনের চিত্র। গগনচুম্বী বিশাল অট্টালিকা এই নগর ভবন। নগরের ভাল-মন্দ দেখার দায়িত্ব যাদের উপর, সেই নীতি-নির্ধারকেরাই অবস্থান করেন এখানে। তাদের চোখের সামনেই কীভাবে জীবন কাটাচ্ছে এসব অসহায় মানুষ, তা দেখার সময় নেই তাদের। সেদিন কথা হচ্ছিল এমনই একজনের সাথে; চাঁদপুর থেকে এসেছে,। যায়গা জমি যা ছিল অনেক আগেই নদীতে তা গ্রাস করেছে। শেষ সম্বল বসত ভিটাও যখন রক্ষা হয়নি, তখন নিরুপায় হয়ে আশ্রয় নিয়েছে ঢাকায়।
শুধু কি ফনিক্স রোড, এরকম হাজারও মানুষের দেখা মেলে ঢাকার প্রায় প্রতিটি যায়গায়। কারওয়ান বাজারের কথাই ধরা যাক, খেটে খাওয়া শ্রমজিবী মানুষগুলি বিশেষ করে মুটে ও কুলিরা দেখেন কিভাবে ফুটপাতের উপর, বোঁঝা বহনের ঝাঁকা মাথার নিচে দিয়ে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আছে।
আমরা মুখে অনেকেই মানবাধিকারের কথা বলি, মৌলিক অধিকারের কথা বলি, কিন্তু এদের কথা কি আমরা একবারও ভেবে দেখি ? এদের জন্য সরকারের কি কিছুই করনীয় নেই।
জীবিকার তাগিদে, বেঁচে থাকার জন্য গ্রামের সহায় সম্বলহীন মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে রাজধানীতে। যাদের আশ্রয় হচ্ছে বস্তিতে নুতবা ফুটপাতে। একদিকে যেমন বাড়ছে গগনচুম্বী অট্টালিকা, অন্যদিকে তেমনি বাড়ছে ভাসমান মানুষ ও বস্তিবাসির সংখ্যাও। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে সমস্ত ঢাকা শহরের উপরেই।
কিন্তু কেন এই ব্যবধান ? দারিদ্র্যের সংখ্যা কেন এমন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ? এর জন্য দায়ী কারা ? এ সকল দরিদ্র মানুষের সাহায্যের জন্য প্রতি বছরই বিভিন্ন উন্নত দেশ হতে সাহায্য-সহযোগীতা আসে, কিন্তু সেগুলি কোথায় যায় ? অসহায় দরিদ্র এসব মানুষের ভাগ্যের চাকা কেন ঘুরে না ? কেন তারা পায়না মাথা গোঁজার ঠাঁই ? একটু সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার কি তাদের নেই ? আসুন ওদের পাশে দাঁড়াই, ওদের কথা বলি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





