কোরবাণী ইসলামে একটি অত্যাবশ্যকীয় বিধান। পবিত্র কুরআনে কোথাও পশু কুরবাণী করার ব্যাপারে নামাজ রোজার মত সরাসরি আদেশ করা হয়নি তাই এটিকে হানাফি মাজহাব অনুযায়ী ফরজ বলে ধরা হয়না। কিন্তু অন্যান্য আয়াতে এর গুরুত্ব এত বেশি বর্ণনা করা হয়েছে যে অন্যান্য মাযহাবে এটিকে ফরজ হলে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তাই বিশ্বজুড়ে মুসলিমগণ জিলহজ মাস এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে কোরবানির পশু সংগ্রহ এবং তা কোরবানি করার জন্য। বিশ্বের অন্য মুসলিম দেশগুলোতে দেশে এটি উম্মাদনার পর্যায়ে না গেলেও বাংলাদেশে এটি নিয়ে রীতিমত উৎসব শুরু হয়ে যায়। যাদের সামর্থ্য নেই, তারাও লোন করা শুরু করে নিজেদের অর্থহীন প্রেস্টিজ ধরে রাখার জন্য। কোরবাণীর ঋণ শোধ করার জন্য পরবর্তীতে তাদের পরিবারের সাধ আহ্লাদ জলাঞ্জলি দিতে হয়।
এই অর্থহীন উম্মাদনা নিয়ে কেউ যে কথা বলবে, এমন সাহসও এই কপালপোড়া দেশে কোন মুমিন মুসলিমের নেই। কেউ এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই সীমাহীন ট্রলের শিকার হয়। তথাকথিত সংস্কৃতির ধারক ও বাহকেরা তাকে কাফের বানিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনা। কিন্তু এ নিয়ে কথা তো বলতেই হবে কাউকে না কাউকে - নইলে সত্য তো চাপা পড়েই থাকবে।
১। প্রথমতঃ কুরবানির ঈদ আসে রোজার ঈদের মাত্র ২ মাস পর। রোজার ঈদে পকেটের উপর যে অত্যাচার হয়, তার রেশ কাটাতে না কাটাতেই আরেক ঈদ এসে যায়। এই ঈদের খরচ আগের ঈদের চেয়েও কয়েকগূণ বেশি।
২। কোরবানীর পশুর যে চাহিদা থাকে, সরবরাহ সাধারণ তার চেয়ে কম হয়ে থাকে। এই হাটে আনা খুব কম গরু সম্পর্কেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে যে এইসব প্রাণীর শরীরে ক্ষতিকারক কোন উপাদান নেই। বিষক্রিয়াই এখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
৩। হাটে কোরবাণীর পশু কেনা বেচার সাধারণত কোন রেকর্ড থাকেনা। তাই অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা চলে অবৈধ অর্থের একটা বড় অংশের লেনদেন এইসব হাটেই হয়ে থাকে।
৪। কোরবানির হাটে পশু আনা নেওয়া, বেচাকেনা ও পশু জবাই নিয়ে যে ধরণের নিষ্ঠুরতা চলে, তা অমানবিক। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও ধর্মের উছিলায় যেন সব জায়েজ - এরকম ভাব ধরে এড়িয়ে যাওয়া হয়।
৫। যত্রতত্র রাস্তাঘাটে কোরবানী দেবার ফলে জনস্বাস্থ্যের উপর ব্যাপকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সিটি কর্পোরেশন এজন্য আলাদা স্লটার প্লেসের ব্যবস্থা করে দিলেও জনগণ তাতে সাড়া দেবার কোন প্রয়োজন অনুভব করেনা।
৬। কোরবানীর পশুর মাংস বিতরণের সময় চরম অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা হয়। এ সময় কাড়াকাড়িতে আহত নিহত হবার ঘটনাও ঘটে।
৭। কোরবানী গরীবের মাংস খাবার সুযোগ করে দেয় - এরকম প্রচারণা চালানো হলেও প্রকৃত সত্য হল এইসব গরীবেরা খুব কমই রান্না করে খায়। বেশিরভাগই এরা সংগ্রহ করা মাংস বিক্রি করে দেয়। হোটেল মালিকেরা এসব মাংস অর্ধেক দামে কিনে নিয়ে ফ্রিজে রেখে এগুলোই সারা বছর ধরে কাস্টমারদেরকে খাওয়ায়। কোরবানি বলে কিছু না থাকলে হয়তো এ জাতীয় অনৈতিকতা মানুষের মধ্যে আসার সুযোগ পেতোনা।
৮। কোরবানীর পশু বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে ব্যাঙ্কের ভল্ট প্রায় খালি হয়ে যায়। এ সময়ে ব্যাঙ্কের তারল্যের ঘাটতি দেখা দেয়, যার নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ে। কল মানির নামে মহাজনী সুদপ্রথার ব্যাপক বিস্তার ঘটে।
৯। কোরবানী প্রান্তিক অর্থনীতির জন্য লাভজনক বলে প্রচার করা হলেই আসলে এই ব্যবসা খুবই ঝুকিপূর্ণ এবং অনেকেই এরকম ব্যবসা করে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
১০। একটা ওয়াজিব ইবাদতের এত গুরুত্ব দেয়ার ফলে ফরজ ইবাদতগুলো প্রয়োজনীয় গুরুত্ব হারায়।
সবাই ভালো থাকবেন। ঈদ মোবারক!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:২৫