somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবেলায় কেটে যাওয়া বেলা...

১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় ছেলে,

আচ্ছা তোমার মনে আছে আমার গত বছরের আমার জন্মদিনের কথা? কফি ওয়ার্ল্ডে দেখা করলাম আমরা। তুমি যে কত সাহস করে আমার হাতটা ধরেছিলে। আমার জন্য কেক আনতে পারোনি বলে একটা পেস্ট্রি অর্ডার দিয়েছিলে। আমি তোমাকে জোর করে আমার আরও পাশে এসে বসতে বলছিলাম আর তুমি যে কত লজ্জা পাচ্ছিলে! আমার লাল লিপস্টিকের দাগ পড়ছিল কফির কাপে। আর তুমি বলছিলে এত লেগে যাচ্ছে তবুও হাল্কা হচ্ছেনা কেন লিপস্টিক?! আর আমি হেসে বলেছিলাম এটা ব্র্যান্ডের তাই।
জানো আজকে ভাগ্য আমাকে আবারো ওখানে নিয়ে গেছে। কিভাবে বলছিনা। আমি সেদিনের ঐ সিটটাই খালি পেয়েছি আজকে আবারো, জানলার পাশে। গত বছর যেখানে বসে আমি বার বার বাইরে দেখছিলাম তোমার পথ চেয়ে।তুমি আসতে একটু দেরি করেছিলে, তাই।
আমি আজকেও কফি অর্ডার করেছি, কিন্তু কেউ আমার জন্য কেক অর্ডার করেনি। কেউ খাইয়ে দেয়নি চামচ কেটে সেই কেকের একটা টুকরা। ভালবেসে সেই একই চামচ দিয়ে খায়নি নিজে আরেকটা টুকরা। আজকে আমার কফিতে চিনি ছিলোনা। শুধু তেতো কালো কফি। আজকে আমি কারো কফিতে প্যাকের পর প্যাক চিনি ঢেলে দেইনি। আদর করে গুলে দেইনি, বলিনি কাউকে ‘তোমার ডায়াবেটিস হবে’। আজকে কফির বিল নিয়ে কেউ আসেনি। কাউন্টারে বিল হয়েছে। কেউ ‘বিল আনতে এত দেরি কেন’ বলে অস্থির হয়ে যায়নি। আমাকে কেউ বলেনি ‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে’, আদর করে রিকশায় তুলে দিতে দিতে বলেনি- ‘যাও সোনা’।
আজকে রাস্তায় একটা ছোট্ট মেয়ে আমাকে ফুলের মালা নিতে সাধছিল। আমি না তাকিয়েই চলে যাচ্ছিলাম, বেলি ফুলের মালা নিয়ে আমি কি করবো?! আবার একবার কি ভেবে জানি তাকালাম, দেখি এই বৃষ্টিতে মেয়েটা ঠিক তিনটা মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার গাড়ির জানলায়। তিনটা বকুল ফুলের মালা, আমার ছেলেটার ভীষণ প্রিয় ফুলের তিনটা মালা। ততক্ষণে সিগনাল সবুজ হয়ে গেছে, পিছনের গাড়ীগুলো হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে পাগলের মত। কিন্তু আমার জন্মদিনে আমার ছেলের প্রিয় ফুলের মালা আমার জানলায় আর আমি না নিয়ে চলে যাব?! এতই সোজা?! আমার জন্মদিনের উপহার যে ওটা, নিশ্চয় আমার ছেলে মনে মনে আল্লাহর কাছে বলেছে তাই এরকম আবহাওয়াতেও পেয়ে গেছি।
রুমটা বকুল ফুলের গন্ধে ভেসে যাচ্ছে। মালাগুলো আমি হাতে পরে বসেছিলাম। মনে হচ্ছিলো আমার ছেলেটা আমার হাত ধরেছে আবারো, অনেক সাহস করে- ঠিক গত বছরের সেই দিনটার মত।
এই জন্মদিনটা খুব পচা গেছে জানো? কাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। সুবহে সাদিকের দিকে খুব খারাপ লাগছিলো, ভাবছিলাম কি দরকার ছিল আম্মু তোমার আমাকে জন্ম দেয়ার?! করবোটা কি আমি জীবন দিয়ে?! তারপর তুমি যখন বিকেলে ফোন করলে, আমার মনে হচ্ছিলো জীবনটা তো এখানেই! তোমার মত একটা মানুষকে আমি জান-প্রান দিয়ে ভালবাসার সুযোগ পেয়েছি, এখানেই তো জীবন সার্থক আমার। আর তো চাইবার কিছুই নেই। আলহামদুলিল্লাহ।
তোমার মনে হতে পারে তুমি আমার জন্য কিছু করতে পারনি। কিন্তু ছেলে, তুমি জাননা কত ছোট্ট ছোট্ট জিনিষ তুমি হয়তো অজান্তেই করেছ আমার জন্য যেগুলো আমার পৃথিবী বদলে দিয়েছে। আমার ছোট্ট ছোট্ট সুখগুলো সব তোমারি দেয়া। জানো আমি ডায়রিতে আর একটা পাতাও লিখিনি। আল্লাহ্‌ যদি তোমাকে আর না দেন আমি লিখবনা ডায়রিতে আর কখনই। কারন ওটা তোমার জন্য, তোমাকে না বলা যত কথা- তাদের জন্য।
আমি তোমার গান খুব বেশী মিস করি। হঠাৎ হঠাৎ গেয়ে ওঠা তোমার গান, মাজারে যেয়ে, কোথাও যেয়ে ফোন অন করে আমাকে শামিল করা তোমার দুনিয়ায়- বড্ড আপন কিছু অনুভূতি। আমার পাগল ছেলেটা। বড্ড অন্যরকম।
খুব ইচ্ছে হচ্ছে তোমার গান শুনতে। গাইবে ছেলে আবারো সেই ভুলে যাওয়া কথাগুলো দিয়ে নিজে বানিয়ে বানিয়ে? আমার গানের পাখিটা গান গায় মন খুলে, থোড়াই কেয়ার তার ভুল করা সুরের। আমার বড্ড ভাল লাগে।
আমি তোমার ছবি দেখিনা এখন। দরকার হয়না। চোখ বন্ধ করলেই দেখি ঐ চেহারা, ঐ চকচকে চোখজোড়া তাকিয়ে আছে আমার দিকে, ঠোঁটে ঝুলে আছে তার ভুবন ভোলানো মায়াভরা সেই হাসিটা। আমি খুব চাই ওটা সারাজীবন তার কাছেই থেকে যাক, তার কষ্টগুলো সব আমার হোক। হাজার হোক, সে আমার কত যে বুকভরা ভালবাসা, সেটা না কেউ কখনও জানবে, না কখনও বুঝবে। আমি চাইও না বুঝুক। থেকেই যাকনা ওটা আমার ভেতরে, এক মায়া কান্না হয়ে, এক বুক সুখ হয়ে, মন ভাঙ্গা দুঃখ হয়ে- আমারই একান্ত আপন যে!
আমি চাইনা কিছু বলতে, প্রভাবিত করতে। আজকে আমার বুক ফেটে কান্না আসছিলো সারাটাক্ষণ। I wish i could keep you beside me forever and ever and ever and ever. আমি সব বাজি হারতে রাজি ছিলাম, কেবল এটা ছাড়া । আমি এখনও বিশ্বাস করি সেই প্রথম রাতের কথা গুলোতে। জানিনা কি হবে, কিন্তু আমার ছেলে ভাল থাকবে ওটুক জানতে চাই। আমার ছেলে খুব ভাল থাকবে ওটাই আমার সার্থকতা। সেটা যা কিছুর বিনিময়েই হোকনা কেন। সেটা আমাকে ছাড়াই হোকনা কেন!
আমি আল্লাহর ওপর খুব বেশি বিশ্বাস করি। আমি জানি যদি তুমি আমার হয়ে থাকো, তুমি আসবে আমাকে নিয়ে যাবে যেভাবেই হোক। এই দুনিয়ার কোন কিছুই ঠেকাতে পারবেনা সে মিলন। আর আমার না হলে যত যাই করি তুমি ফসকে যাবেই, কোন কিছু দিয়েই আটকানো যাবেনা ওটা। হ্যাঁ আমার বিশ্বাস ওরকমই শক্ত। এ কারনেই আমি ভেঙ্গে যাইনি এখনও।এ কারণেই কিছু বলি না, নিরব দর্শক হয়ে কেবল দেখে যাই জীবনের নাটুকেপনা। খুব কঠিন যদিও।

আমি আল্লাহকে প্রতিদিন বলি তোমার কথা। জানিনা কবে কবুল হবে। আমি আরজি জানিয়ে যাবো কোন জবাব না আসা পর্যন্ত। কারন ছেলেটাকে যে আমার ভীষণ দরকার সেটা কেবল আল্লাহ্‌ই বোঝেন। আমাকে বানিয়ে প্রান ভোমরাটা যে ওর ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, ওটাতো কেবল উনিই জানেন!
ওহ সিগারেটটা পুড়ে শেষ! ধোঁয়া পুরো রুমে! কিন্তু বকুল ফুলগুলো এখনও তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে...
“বকুল ফুল বকুল ফুল
সোনা দিয়া হাত কানও বান্ধাইলি...।“

আমার ছেলের অনেক প্রিয় একটা গান...মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। খেয়েই যাচ্ছে...
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×