somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজকে জানি : ০৪ "আমরা কেনো হাসি? কিভাবে হাসি?"

১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সিরিজটা শুরু করে বেশ লম্বা সময় ধরে আর লিখা হয়নি। আমি আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম। কাল একজনের অনুরোধে কিছু লিখতে ইচ্ছা হলো। তাই "নিজকে জানি" সিরিজ নিয়ে আবারও হাজির হয়ে গেলাম।)

"হাসতে নাকি জানেনা কেউ কে বলেছে ভাই?" ঠিক তাই। হাসতে জানেনা এমন মানুষ পৃথিবীতে নেই। হাসি হচ্ছে চেহারার এমন একটি অভিব্যক্তি যা যেকোনো পরিবেশে যে কাউকে খুশি করে ফেলতে পারে। হাসি নিয়ে যেমন কাব্যচর্চা হয়েছে তেমনি হয়েছে বিস্তর গবেষণাও। বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসার হাসির রহস্য আজও উদঘাটন করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। হাসি দেখে প্রেমে পড়ে যাওয়ার ঘটনা যেমন আছে, তেমনি যুদ্ধক্ষেত্রে হাসি দিয়ে শত্রুকে কাবু করে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। আমরা সবাই হাসি। কখনো আনন্দে হাসি, কখনো কষ্ট পেয়েও নকল হাসি হাসি। কখনো ভেবেছি কি হাসতে গেলে আমাদের মুখে কি পরিমাণ কাজ সংঘটিত হয়? এই সুন্দর এক্সপ্রেশন ফুটিয়ে তুলার পিছনে কারা কাজ করছে? কিভাবে আমরা হাসতে পারছি? হাসলে আমাদের কি সুবিধা হচ্ছে? যদি না ভেবে থাকেন, তাহলে এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক উত্তরটাও।




হাসি শুধুমাত্র মুড ভালো থাকার উপর নির্ভর করেনা। বরং, মুখের অনেক গুলো মাসল এর সমন্বিত কাজের ফসল হাসি। আমাদের মুখে মোট ৪৩ টা মাসল রয়েছে। যারা মুখের বিভিন্ন অভিব্যাক্তি প্রকাশে সাহায্য করে থাকে। হাসি, কান্না, রাগ, বিরক্তি, অবাক হওয়া সবই এই মাসলের কাজ। হাসতে গেলে ঠিক কতোটি মাসল কাজ করে, এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য এখনো কেউ বলতে পারেনি। কারণ হচ্ছে, এর সঠিক কোনো সংখ্যা নাই। হাসি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। মুচকি হাসি, অট্টহাসি কিংবা নকল হাসি। সুতরাং হাসির প্যাটার্নের উপর ভিত্তি করে মাসল সংখ্যারও ভিন্নতা হয়। তবে কয়েকজন বিজ্ঞানীদের মতে, ঠোটের দুই কোণ হালকা নাড়াতে গেলেও অন্তত ৫ জোড়া অর্থাৎ ১০ টি মাসল কাজ করে। আর যদি কেউ জোরে হাসে তাহলে এই সংখ্যাটা ২৫ এরও বেশি হতে পারে। স্বাভাবিক হাসতে গেলে যে মাসল গুলা কাজ করে চলুন তাদের নামগুলো জেনে নেই।

Zygimaticus Major - ২টি
Zygomaticus Minor - ২টি
Orbicularis Occuli - ২টি
Levator labii superioris - ২টি
Levator anguli oris - ২টি
Risorious - ২টি

অর্থাৎ মোট ১২ টি মাসল। এবার জেনে নেওয়া যাক হাসির মেকানিজম।

হাসি ঐচ্ছিক কিংবা অনৈচ্ছিক দুইধরনের হতে পারে। পূর্বেই আমরা জেনে গিয়েছি যে, হাসতে অনেকগুলা মাসল কাজ করে । তাই অনৈচ্ছিক হাসি কিংবা নকল হাসি লুকানো কঠিন। হাসি দমাতে হলে একটি কার্যকরি ইফোর্ট দিতে হয়।

যখন আমরা মজার বা ইন্টারেস্টিং কিছু শুনতে পাই তখন নিউরনের মাধ্যমে সিগনাল ব্রেনের কর্টেক্স থেকে ব্রেইনস্টেমে যায়। সেখান থেকে ক্রেনিয়াল নার্ভ এই সিগন্যাল বহন করে মুখের মাসলগুলোতে নিয়ে আসে। খুব সিম্পল মনে হচ্ছে তাইনা? কিন্তু, সবে তো মাত্র শুরু হলো। যখন আমাদের মুখের হাসির মাসলগুলো কন্ট্রাক্ট করবে, তখন একটি পজিটিভ ফিডব্যাক পুনরায় ব্রেইনে ফিরে যাবে এবং আমাদের আনন্দের অনুভূতি কে শক্তিশালী করবে। সংক্ষেপে, আমাদের ব্রেইনে একটি ভালোলাগার অনুভূতি তৈরী হয় এবং আমাদেরকে হাসতে বলে। আমরা হাসি এবং ব্রেইনকে আবার জানিয়ে দেই যে, ভালো লাগছে। এটাই হচ্ছে হাসির মেকানিজম।

যখন আমরা হাসি, দুটি মাসল একটিভেট হয়। প্রথমটি হচ্ছে Zygomaticus major এটি ঠোটের কোণের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে। যখন শুধুমাত্র এই মাসলটি এক্টিভেট হবে তখনো সেটি জেনুইন হাসি না। বিজ্ঞানীরা এটাকে "সোশ্যাল মাসল"ও বলে থাকেন। দ্বিতীয় মাসলটি অর্থাৎ Orbicularis occuli যা আমাদের চোখের কোটরকে বৃত্তাকার শেইপ দেয়, এক্টিভেট হওয়ার পরেই হাসি পরিপূর্ণতা পায়।

হাসলে আবার অনেকের টোল পড়ে। গালের ছোট্ট একটা টোল। তাতেই সৌন্দর্য্য বেড়ে যায় শতগুণে। অনেকেই টোল পড়ার সাথে বংশগতীয় সম্পর্ক খোজে বেড়ান। কিন্তু, টোল পড়া আসলে এক ধরনের জন্মগত ত্রুটি। এর থেকে প্রমাণ হয় যে, সব শারীরীক অপুর্ণতাই আসলে ক্ষতিকর নয়।

টোল দু ধরনের হতে পারে। থুতনীর টোল এবং গালের টোল। থুতনীতে টোল পড়ার কারণ হিসেবে থুতনীর হাড়গুলোর অসামঞ্জস্যতাকে দায়ী করা হয়। আর গালে টোল পড়ার জন্য প্রধানত দায়ী Zygomaticus Major। মুখের পাশের এই বড় মাসলের বিভক্তির কারণে টোল পড়ে বলে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন।

এবার হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, হাসলে কেনো শব্দ হয়? চলুন, বলে দিচ্ছি।

কাশি এবং কথা বললে, যে প্রক্রিয়ায় শব্দ উৎপন্ন হয়, হাসলেও ঠিক একই প্রক্রিয়ায় শব্দ তৈরী হয়। শব্দ তৈরীর জন্য কাজ করে আমাদের দেহের ফুসফুস এবং ল্যারিংক্স। যখন আমরা স্বাভাবিক স্বাস প্রশ্বাস নেই, ফুসফুস থেকে বাতাস মুক্তভাবে একটা খোলা প্যাসেজের মধ্য দিয়ে ল্যারিংক্স হয়ে বের হয়ে যায়। যখন এই প্যাসেজটি বন্ধ হয়ে যায়, বাতাস পাস করতে পারেনা। আর যখন এটি পার্শিয়ালি ওপেন থাকে, তখন শব্দ উৎপন্ন হয়। আমরা যখন হাসি তখন শ্বাস ছেড়ে দেই, আর তখন ভোকাল কর্ড ক্লোজড থাকে, যার কারণে শব্দ তৈরী হয়। এক্ষেত্রে রেসপিরেটরি মাসলস গুলাও রিদমিক্যাল সাউন্ড তৈরীতে সাহায্য করে।

সবাই যখন হাসতে ব্যাস্ত তখন ক্যালিফোর্নিয়ার Loma Linda University -র দুইজন বিজ্ঞানী Dr. Lee Berk এবং Dr. Stanely Tan হাসির উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করে বেশ কিছু মজার তথ্য আবিষ্কার করেছেন। সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক তাহলে।

হাসি আমাদের ব্লাড প্রেশার কমায়। যাদের ব্লাড প্রেশার কম তারা হার্ট এটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকিমুক্ত। সুতরাং, প্রাকৃতিক মেডিসিন হাসি দিয়ে বেচে থাকুন দীর্ঘদিন।

হাসি স্ট্রেস হরমোনের লেভেল কমায়, কার্ডিয়াক হেলথের উন্নতি ঘটায়। যারা বিভিন্ন ইনজুরির কারনে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করতে পারেন না, তাদের জন্য হাসি একটি অন্যতম কার্যকরী ওয়ার্ক আউট। হাসি ইমিউন সিস্টেমের কার্যকরি কোষ T cell কে বুষ্ট করে। এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সাহায্য করে।

হাসি আপনার সামগ্রিক মানসিকতার উন্নতি ঘটাতে অত্যন্ত কার্যকরী। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, পজিটিভ মানসিকতা সম্পন মানুষ নেগেটিভ মানসিকতা সম্পন্নদের থেকে বেশিদিন বাচার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং, প্রাণখুলে হাসুন এবং সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×