somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অজানা রশ্মির ইতিকথা

১৪ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮৯৫ সালের শীতকাল। নভেম্বর এর প্রথম সপ্তাহ শেষ হয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হলো। আজ ৮ই নভেম্বর। জার্মানীতে এই সময়ে ভালোই ঠান্ডা পড়েছে। Wuerzburg University-র পঞ্চাশ বছর বয়স্ক একজন পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের প্রফেসর তার ল্যাবোরেটরিতে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে ক্যাথোড রশ্মির প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন। এই প্রভাব লক্ষ্য করতে তিনি বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে দিয়ে নিম্নচাপে তড়িৎ প্রবাহ করাচ্ছিলেন। একটু আগেই তিনি লক্ষ্য করলেন, ডিসচার্জ টিউবের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় একধরনের রশ্মি বের হচ্ছে।

তিনি অন্ধকার রুমে তার পরিক্ষাগুলো সম্পাদন করছিলেন। তার পরিক্ষার জন্য ব্যাবহৃত টিউবটি ছিলো বিশেষ ধরনের ক্রুকস টিউব। এবং তিনি টিউবটি কালো কাপড়ে ঢেকে রেখেছিলেন। টিউব থেকে যখন অজানা রস্মিটি বের হচ্ছিলো ,তখন সেই রশ্মিটি বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানিড দ্বারা তৈরী স্ক্রিনকে উদ্ভাসিত করছিলো। এই স্ক্রিনটি ডিসচার্জ টিউব থেকে ২ মিটার দূরে থাকা সত্ত্বেও প্রতিপ্রভ ছড়াচ্ছিলো।

বিষয়টি তার মনে প্রচন্ড কৌতুহলের সৃষ্টি করলো। তার ইউনিভার্সিটি এবং ছাত্রদের জন্য কিয়দাংশ সময় দিয়ে বাকি সময়টুকু তিনি ল্যাবে কাটানো শুরু করলেন। পরবর্তী ৬ সপ্তাহ তিনি টানা দিনরাত ল্যাবে কাজ করলেন। তিনি তার এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে গেলেন এবং ফটোগ্রাফিক প্লেট ব্যাবহার করে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন ঘনত্বের বস্তুর ছবি তুলতে সক্ষম হলেন। এই পুরো সময়ে তিনি এই বিষয়ে কাউকে কিছুই জানাননি। এমনকি তার স্ত্রীকেও না।

ক্রিসমাসের তিন দিন আগে প্রফসর তার স্ত্রীকে ল্যাবোরেটরিতে নিয়ে এলেন। তার মনে তখন নানা উদ্বেগ এবং চিন্তা। তিনি ভাবছিলেন এই অজানা রশ্মিটি কি মানুষের দেহ ভেদ করতে পারবে? এটা পরিক্ষার জন্যই তিনি স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন। তো যেই ভাবা সেই কাজ। স্ত্রীর হাত কে সামনে রেখে তিনি আবার পরিক্ষাটি শুরু করলেন। তার স্ত্রী তখন হাতে আংটি পরে ছিলেন।
কি আশ্চর্য! স্ক্রীনে তার হাতের সাদাকালো একটি ছবি ভেসে উঠলো। যেখানে হাতের আংটির অস্তিত্বও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো।



প্রফেসরের মনে আনন্দের ঢেউ খেলে গেলো। তিনি বুঝতে পারছিলেন টিউব থেকে একধরনের অদৃশ্য রশ্মি বের হওয়ার ফলে এরকম হচ্ছে। রশ্মিটি এতো ডীপ লেয়ারে পৌছতে পারবে তার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হছিলো। তিনি কখনো ভাবেননি একটা রেডিয়েশন কখনো ডেন্স পার্টিকেল ক্রস করে এতো ডীপ এবং ইন্টেরিয়রে পৌছতে পারবে। তিনি খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। এবং এটাকে মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন।

২৮ ডিসেম্বর, ১৯৮৫। The Wurzberg Physico-Medical Society প্রথম এমন একটি রশ্মির কথা জানতে পারলো, যা দেহ ভেদ করে হাড়ের ছবি তুলতে পারে।

১৯৮৬ সালের ১৬ জানুয়ারি “The New-york Times” পত্রিকা এই আবিস্কারকে নতুন ধরনের ফটোগ্রাফি বলে ঘোষণা করলো, যা লুকানো কঠিন বস্তুর ছবি তুলতে পারে এবং কাঠ, কাগজ, রক্ত ভেদ করতে পারে।

যখন এই আবিস্কার সম্পর্কে আরো বিশদ গবেষণা হলো আরো সমকপ্রদ কিছু তথ্য বের হয়ে আসলো। দেখা গেলো যে চৌম্বকক্ষেত্রের উপস্থিতি সত্বেও এই রিশ্মি কোনো বিচ্যুতি দেখাচ্ছে না। আরো লক্ষ্য করা গেলো এই রেডিয়েশন পার্টিকেলের ঘনত্ব নির্বিশেষে যেকোনো মেটারিয়েলকে ক্রস করতে পারে। এসব তথ্য বিজ্ঞানী সমাজ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া ফেলে দিলো। এই অদৃশ্য রশ্মির কঠিন বস্তুর ভেদ করার ক্ষমতা মানুষকে দারুণভাবে আকর্ষণ করলো। বিজ্ঞানীরা আলোর চেয়েও কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই রশ্মি নিয়েও বিমোহিত হলেন প্রচন্ডভাবে। এই আবিস্কার পদার্থবিজ্ঞানে নতুল জাগরণ তৈরী করলো।

মেডিসিন এবং সার্জারী বিভাগেও এই রশ্মির বিশাল প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলো। প্রফেসরের ঘোষণার এক মাসের মধ্যেই ইউরোপ এবং আমেরিকায় বেশ কয়েকটি মেডিকেল রেডিওগ্রাফ তৈরী করা হলো, যা সার্জনদের তাদের কাজে দারুণ সহযোগীতা করলো।

১৮৯৬ সালের জুন মাসে, আবিস্কারের ৬ মাসের মাথায়, যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের বুলেটের অবস্থান খোজার কাজে এই অদৃশ্য রশ্মির ব্যবহার পুরোদমে শুরু হয়ে গেলো।

অবাক করার বিষয় হলো, Wuerzburg University-র সেই প্রফেসর আবিস্কারটি নিজের নামে প্যাটেন্ট করাননি। তারপরেও এই মহান আবিস্কারের জন্য তিনি ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনিই ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী প্রথম পদার্থবিদ।

নিশ্চয়ই এতোক্ষনে বুঝে গেছেন কার কথা বলছি! সেই মহান ব্যাক্তিটি আর কেউ নন ,তিনি Professor Wilhelm Conrad Rontgen। রন্টজেন যেহেতু এই রশ্মির উৎস সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, তাই তিনি এর নাম দিয়েছিলেন অজানা রশ্মি বা X-Ray।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:০১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×