somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশান উপন্যাস: ডায়েরি (পর্ব এক )

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক.
আজগর স্যারকে দেখে কখনই স্কুল শিক্ষক মনে হয় না। ঝকঝকে পোশাক, পরনে সফেত রঙের শার্ট প্যান্টের সাথে ইন করে পরেন, যত্ন করে জুতো-মোজা পরেন, লম্বা চুলগুলো উল্টো দিকে আঁচড়ানো, স্বল্প ভাষী, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন, প্রবল ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ, পোশাক আশাকে মনে হয় ব্যাংকে চাকরি করেন। এই মফস্বল শহরে তারমত তরুণ শিক্ষক কল্পনাই করা যায় না, এই স্কুলে জয়েন করেছিল প্রায় তিন বছর হয়েছে, এর আগে নাকি স্যার আমেরিকা ছিলেন কিছুকাল, সেখান থেকে কেন এই পাড়াগাঁয়ের স্কুলে জয়েন করেছে সেটা আজও রহস্য, আজগর স্যার সাধারণত নিজের ব্যাপারে কথা বলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।

আজগর স্যার বরাবরের মত ক্লাসে ঢুকেই পুরু লেন্সের চশমাটা টেবিলে রেখে বললেন “মাল্টিভার্স বা বহু-মহাবিশ্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যেটা বলে আমাদের এই মহাবিশ্বের মত আরো বহু মহাবিশ্ব আছে। বিজ্ঞানের আরেকটি তত্ত্ব হল প্যারালাল বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব, যেটা বলে আমাদের এই মহাবিশ্বের সাথে সমান্তরাল এক বা একাধিক মহাবিশ্ব আছে। এই বহু-মহাবিশ্ব, সমান্তরাল-মহাবিশ্ব যেটাই বলি সেখানেও আমাদের মত গ্রহ নক্ষত্র, ছায়াপথ আছে” বলেই একটু থামলেন।

বিরতি দিয়ে আবার শুরু করলেন “আমাদের এই মহাবিশ্ব বা ইউনিভার্স পদার্থ বিজ্ঞানের কিছু সূত্র মেনে চলে। বাকি মহাবিশ্বগুলোও একই বা তাদের নিজস্ব পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র মেনে চলতে পারে” বলেই তিনি ক্লাসের সবার দিকে এক বার তাকালেন।

নবম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মহাবিশ্ব, বহু-মহাবিশ্ব, পদার্থ বিজ্ঞানের জটিল সব সূত্র এতকিছু জানার কথা নয় তবে আজগর স্যার ক্লাসে এসে প্রায় বিষয় বহির্ভূত পদার্থ বিজ্ঞানের কঠিন জিনিসগুলো আওড়াতে থাকেন। বেশী জ্ঞানী মানুষের এই এক সমস্যা, তারা নিজেদের জ্ঞান বিতরণ করে এক ধরনের শিহরন অনুভব করেন নয়ত নবম শ্রেণীর পদার্থ বিজ্ঞানের ক্লাসে এসে ভেক্টর, বলবিদ্যা ইত্যাদি না পড়িয়ে মহাবিশ্ব, বহু-মহাবিশ্ব নিয়ে আলাপ জুরে দিতেন না।

“স্যার সময় পরিভ্রমণ, বহু-মহাবিশ্ব, সমান্তরাল-মহাবিশ্ব এগুলো কি সত্যিই আছে নাকি এগুলো সব মানুষের অলীক কল্পনা, যেটা গল্প উপন্যাসেই সীমাবদ্ধ?” বলে উঠে টিটুন।

টিটুন টগবগে কিশোর, বয়স পনের, চেহারায় মোছ দাড়ি এখনো গজায়নি ঠিকমত, তবে গলার ভয়েস কর্ডগুলোর পরিবর্তনের ফলে গলার স্বর ভারি হয়েছে। টিটুন এই স্কুলে ভর্তি হয়েছি প্রায় তিন বছর হল, এর আগে পরিবারসহ আমেরিকার ফ্লোরিডাতে ছিল, তবে একটি দুর্ঘটনা ঘটে যার কারণে একবারে বাংলাদেশে চলে আসে তারা, বলা ভাল বাধ্য হয়েছে। স্কুলে প্রথম দিকে ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলত বিদায় ক্লাসের সহ-পাঠিরা তাকে ক্ষ্যাপাতো বেশ, এখন অবশ্য ঝরঝরে বাংলা বলতে পারে।

আগজর স্যার একটু থামলেন তারপর জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নিয়ে বললেন “কোন বস্তুতে আলো প্রতিফলিত হয়ে যখন আমাদের চোখে আসে তখন আমরা সেই বস্তুটি দেখতে পারি। ঠিক তেমনি আমাদের এই মহাবিশ্বের ততটুকুই দেখতে পাই যতটুকু টুকু দূর থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে। আমাদের মহাবিশ্ব কি আসলেই ততটুকু আমরা খালি চোখে দেখি?”

উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলে চলেন আজগর স্যার, “কয়েক বছর আগেও মানুষ ব্ল্যাক হোলকে শুধু থিওরি হিসেবেই জানত, কিন্তু এখন বিজ্ঞান উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে ব্ল্যাক-হোল ডিটেক্ট করতে পেরেছে। আজ থেকে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাংক এর মধ্যে আমাদের এই পরিচিত মহাবিশ্বের সূচনা হয়। বিজ্ঞানের মতে শুধু আমাদের এই মহাবিশ্বই নয় আরো অনেক মহাবিশ্বই তৈরি হয়েছে সেসময়” বলেই ক্লাসের সবার দিকে এক নজর তাকালেন আজগর স্যার। নবম শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞানের কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে কচকচানি দিতে পেরে একটু তৃপ্তি অনুভব করলেন মনে মনে।

টিটুন বেশ আগ্রহ নিয়েই আজগর স্যারের কথা শুনছেন। বাকি ছাত্রছাত্রীরা বেশ উশখুশ করছে কখন ক্লাস শেষ হবে।বিকেল চারটা বাজে এখন, এটাই শেষ ক্লাস, সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে কত তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়া যায় তার জন্য।

“স্যার এটা-তো শুধু একটি তত্ত্ব, ধরেন সময় পরিভ্রমণের কথাই বলি, যদি সময় পরিভ্রমণ ব্যাপারটা সত্যিই হত, তাহলে আমাদের কাছে ব্যাপারটাকি এতদিনে প্রমাণ হয়ে যেত না? ধরুন এখন না হোক অদূর ভবিষ্যতের মানুষেরা সময় ভ্রমণের যন্ত্র আবিষ্কার করেছে, তাদের কেউ না কেউ কি এখনকার সময় ভ্রমণ করতে আসত না?” দাঁড়িয়ে ফের প্রশ্ন করে টিটুন।

ক্লাসের সবাই তখন ঈষৎ বিরক্তি নিয়ে টিটুনের দিকে তাকিয়ে আছে, বদরুলের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে, মুখ শক্ত করে পিছনের বেঞ্চ থেকে টিটুনের দিকে তাকিয়ে আছে সে। বদরুলের দাদা এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, সবাই তাকে সমীহ করে, তার ইচ্ছে করছে টিটূনকে বর্তা বানিয়ে দেয়, শুধু শুধু বকবক করে ক্লাসটাকে লম্বা বানাচ্ছে। ক্লাসটা শেষে টিটুনের বাচ্চাকে চড় ছাপ্পর মারবে নাকি একটা রাম ধোলাই দিবে সেটা নিয়ে ভাবতে থাকে বদরুল।

“সময় পরিভ্রমণ করে এখন যে কেউ আমাদের সময় আসেনি তোকে কে বলেছে?” পাল্টা প্রশ্ন স্যারের।

স্যারের প্রশ্ন-গুনে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। স্যার উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললেন “সময় ভ্রমণ করে কেউ আসলেও নিশ্চিত বলে বেড়াবে না আমি সময় ভ্রমণ করে তোমাদের কাছে এসেছি।“ স্যারের ঠোটের কোনে মৃধ হাসি।

ফের মুখে গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলে স্যার বলে চলেন “সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এন্টারটিকাতে একটি রেডিও সিগন্যাল রিসিভার বসিয়েছে, যাতে নির্ভুল ভাবে রেডিও সিগন্যাল ধরতে পারে। তারা দেখল পৃথিবীর বাইরে থেকে অনবরত কণা ধেয়ে আসে আমাদের পৃথিবীতে, তারা দেখল উচ্চ-ক্ষমতা সম্পূর্ণ কণাগুলো আমাদের পৃথিবীতে এসে আটকে যায়, কিন্তু নিম্ন ক্ষমতা সম্পূর্ণ কণাগুলো পৃথিবী বেদ করে চলে যায়” বলেই একটু থামলেন।

দম নিয়ে পুনরায় শুরু করলেন “বিজ্ঞানীরা এরপর অবাক হয়ে লক্ষ করলেন আমাদের পৃথিবী থেকেও কিছু উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ কণা ভূমি থেকে উৎক্ষেপিত হয়ে পৃথিবীর বাইরে চলে যাচ্ছে। পৃথিবী নিশ্চয়ই এই কণাগুলো তৈরি করছে না? তাহলে এই কণা গুলো কোথা থেকে আসল?”

আজগর স্যার উওরের উপেক্ষা না করেই বললেন “এর মানে কণা গুলো সময়ের বিপরীতে প্রবাহিত হচ্ছে। খুব সহজ করে বলছি ধর তোরা যখন ভিডিওতে কোন সিনেমা দেখছিস, সেখানে সিনেমার নায়ক একজন খল নায়ককে গুলি করল, গুলিটি নায়কের রিভলভার থেকে বের হয়ে খল-নায়কের শরীরে আঘাত করল। এখন এই দৃশ্যটি যদি পুনরায় রিভার্স বাটনে চেপে দেখিস, তাহলে দেখবি গুলিটি খল-নায়কের শরীর থেকে বের হয়ে নায়কের রিভলভারে ঢুকছে। খল-নায়কের শরীর নিশ্চয়ই গুলি উৎপন্ন করে না অর্থাৎ সময়ের উল্টো দিকে গুলিটি প্রভাবিত হলেই কেবল আমরা দেখতে পাব যে গুলিটি খল-নায়কের শরীর থেকে বের হয়ে নায়কের রিভলভারের দিকে ধাবিত হচ্ছে” বলেই তিনি ক্লাসের সবার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তাকালেন।

ফের বলতে শুরু করলেন “ঠিক তেমনি পৃথিবীর ভিতর থেকে যেই উচ্চ-ক্ষমতা সম্পূর্ণ কণাগুলো বের হয়ে উপরের দিকে যাচ্ছে, সেই কণাগুলোও পৃথিবী তৈরি করছে না। কণাগুলো সময়ের বিপরীতে ভ্রমণ করছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে কণাগুলো পৃথিবী থেকে উৎপন্ন হয়ে পৃথিবীর বাইরে যাচ্ছে। এতে হাইপোথেটিকাল প্রমাণিত হয় বিগ-ব্যাং এর সময় আমাদের এই মহাবিশ্বের সাথে সমান্তরাল কোন মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে যার সময় হয়ত আমাদের সময়ের বিপরীত দিকে দাবিত হচ্ছে। আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান, কন্ট্রাম ইলেক্ট্রনিক্স দিয়ে অনেক কিছুর লজিক্যাল ব্যাখ্যা করা সম্ভব, যেগুলো এখন তোদের কাছে ফ্যান্টাসি মনে হচ্ছে সেগুলোর লজিক্যাল ব্যাখ্যা আছে।“

স্যারের জটিল সব তত্ত্ব ক্লাসের সবার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, তবে চেহারায় ভাব ভঙ্গিতে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলছে মনে হয় এটা পানির মত সহজ বিষয়।

টিটুন তখনো দাঁড়িয়ে ছিল প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে বলে “আচ্ছা স্যার একজন জলজ্যান্ত মানুষের হাতে এবং পায়ের আঙ্গুল থেকে পুরো শরীর আস্ততে আসতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা আকারে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে, বিলীন হয়ে যাচ্ছে এটার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে?” বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে টিটুন, গলাটা ভীষণ ধরে আসে তার।

ততক্ষণে স্কুলের ছুটির ঘণ্টা টনটন করে বেজে উঠে, ক্লাসের মাঝে মুহূর্তেই হইহুল্লোড় শুরু হয়ে যায়, ছাত্রছাত্রীদের কারোরই যেন তর সইছে না বাড়ি যাবার জন্য। আজগর স্যার টিটুনের প্রশ্নের উওর না দিয়েই বললেন “আজকে এই পর্যন্ত” বলেই বেরিয়ে যায় স্যার।

ছাত্রছাত্রীরা যার যার সীট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। টিটুন ক্লাসের জানালার ফাঁক দিয়ে বাহিরে তাকায়, চোখ দুটি আর্দ্র হয়ে উঠে তার, বছর তিনেক আগের স্মৃতিতে ফিরে যায়, সেদিন শুক্রবার ছিল, মানুষটি তার চোখের সামনেই আসতে আসতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা আকারে মিলিয়ে গিয়েছিল কালের গহ্বরে।

দুই.
“কিরে আইনস্টাইনের বাচ্চা এত বক বক করিস কেন ক্লাসে?” বলেই পিছন থেকে বদরুল টিটুনের মাথায় সজোরে চপাটাঘাত করে, টস করে শব্দ হয়।

ক্লাস শেষে সবাই হুইহুল্লোড় করে বেরিয়ে যাচ্ছিল, চড়ের শব্দ শুনে সবাই স্থির হয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বদরুল আর টিটুনের দিকে তাকায়।

টিটুন নিজের মাথায় হাত দিয়ে ধরে আসে, ঝিম ঝিম করছে তার। বিরক্তি নিয়ে বদরুলের দিকে তাকিয়ে বলে “ক্লাসে না বুঝলে প্রশ্ন করব না? স্কুল-টাকি তোর বাপের?” মুখ শক্ত হয়ে আসে টিটুনের। চোখ দুটি বড়বড় করে বদরুলের দিকে তাকিয়ে আছে টিটুন।

বদরুল তর্জনী টিটুনের দিকে তাক করে বলে “হ্যাঁ এই স্কুল আমার দাদা প্রতিষ্ঠা করেছে, আর আমার বাপের ডোনেশনে এই স্কুলটি চলে জানিস না? চোখ নামিয়ে কথা বল বলছি হারামজাদা।“

বদরুল কয়েক কদম এগিয়ে এসে টিটুনের মুখোমুখি দাড়ায়। বদরুল কিশোর গ্যাঙয়ের প্রধান তার উপর ওর বাবা মোবারক চৌধুরী স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, তাই সবাই ওকে জমের মত ভয় পায়। গত মাসে ওদের ক্লাসেরই সহপাঠী দিপুকে বেদম পিটিয়েছিল বদরুল, দিপুর অপরাধ সে বদরুলকে ক্লাস টেস্টের সময় ওর খাতা দেখে লেখতে দেয় নাই।

“চোখ না নামিয়ে কথা বললে কি করবি?” দু-হাত দিয়ে বদরুলকে ধাক্কা দিয়ে বলে টিটুন।

ততক্ষণে বদরুলের দুই সার্বক্ষণিক চামচা রিপন আর শিপন বদরুলের পাশে এসে দাঁড়ায়। তারা দুজনের বদরুলের ইশারার অপেক্ষায়, যেকোনো সময় টিটুনের উপর ঝাঁপিয়ে পরতে প্রস্তুত। এদিকে ক্লাসে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে, যুদ্ধের ঘনঘটা, সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন মরিমরি লাগে । নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে মোবাইল নিয়ে আসা মানা, তারপরও কেউ কেউ লুকিয়ে মোবাইল নিয়ে আসে, ইতিমধ্যেই কয়েকজন লুকিয়ে ভিডিও করতে প্রস্তুত, এই ধরনের দৃশ্যগুলোতে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিউ অঙ্কে বেশী।

“তোরা কি শুরু করলি, থামবি? আজকে স্কুল ছুটি যে যার বাসায় যা। সামনের সপ্তাহে যখন আবার স্কুল খুলবে তখন নব উদোম ঝগড়া করিস যত পারিস, আজ যে যার বাসায় যা।“ দুজনের মাঝখানে ক্লাস ক্যাপ্টেন সুমি এসে থামানোর ভঙ্গিতে বলে। এলোমেলো চুল, বড় বড় চোখ এবং গায়ের রঙ্গ শ্যাম বর্ণের চটপটে স্বভাবের কিশোরী সুমি। কাউকেই কখনো পরোয়া করে না।

বদরুল তখনো গর্জন করছিল। সুমি বুঝিয়ে শান্ত করছিল, ততক্ষণে টিটুনের বন্ধু দিপু টিটুনের হাত ধরে তার কান নিজের মুখের কাছে নিয়ে বলে “বাদদেতো এসব।“

সুমির মধ্যস্থতায়, আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

“আজকে সুমির জন্য বেচে গেলি।” মুখ শক্ত করে বলে বদরুল।

বদরুল পিঠের ব্যাগ ভাল করে লাগিয়ে ক্লাস থেকে চলে যায়, সাথে তার দুই চামচা রিপন এবং শিপনও তাকে অনুসরণ করে। এদিকে ক্লাসের অনেকেই আসন্ন একটি মারামারির দৃশ্য দেখার থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিদায় হতাশ হল।


“কিরে এখনো মুড ভাল হয় নাই? বদরুলেই কথায় মন খারাপ করে লাভ নাই।“ পিঠ চাপটে সান্ত্বনা দেবার সুরে বলে দিপু।

স্কুলের করিডোর ধরে তখন দিপু এবং সুমি, টিটুনকে কেন্দ্র করে হাঁটছিল। টিটুন মাঝখানে আর দুইপাশে সুমি আর দিপু, তারা তিনজনই খুব ভাল বন্ধু।

“আর মন খারাপ করিস না, তুইতো জানিসই বদরুল ওরকমই, ওকে সবাই এড়িয়ে চলে” দিপুর কথায় সমর্থনের সুরে বলে সুমি।

টিটুন গম্ভীর হয়ে হাঁটছে, মুখে কোন কথা বলছে না। নীরবতা ভেঙ্গে বলল “দেখলি আমার সাথে গায়ে পরে লাগতে এলো, হ্যাড স্যারের কাছে নালিশ করব আমি ওর নামে।“

“নালিশ করে কোন লাভ নেই, স্যাররাও কিছু বলে না ওকে” গলার স্বর নামিয়ে বলে দিপু।

“তাই বলে কি ওকে এভাবেই ছেড়ে দিব? সবাই ওর অত্যাচারে অতিষ্ঠ, ওকে যেভাবেই হোক শাস্তি দিতে হবে।“ দাতে দাঁত ঘর্ষণ করে বলে টিটুন।

“এখন এগুলো বাদদেতো, আমাদের এক্সপেরিমেন্টটাতো করা দরকার মনে আছে। ডায়েরিটা আনতে ভুলিসনা আগের বারের মতন। স্কুলের ল্যাবরেটরিতে এক্সপেরিমেন্টটা করতে হবে এবার, স্যাররা এই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করতে দিবে না, লুকিয়ে করতে হবে।“ প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে বলে সুমি।

“হুম আমিও সেটাই বলতে চেয়েছিলাম।“ দিপুর কথায় সমর্থনের সুর।

“কালতো শুক্রবার, স্কুল বন্ধ, কিভাবে করব স্কুল ল্যাবরেটরিতে।“ হাটার গতি কমিয়ে দিয়ে বলে টিটুন।

“আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আছে, স্কুলের ল্যাবরেটরির চাবিটা চুরি করব আজ।“ সুমি এমনভাবে কথাটা বলল যেন স্কুল থেকে চাবি চুরি করা একটি মামুলি ব্যাপার। কথাটা শেষ করেই দিপু এবং টিটুনের দিকে তাকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করে সুমি।

“ল্যাবের চাবি চুরি?” সমস্বরে জিজ্ঞেস করে টিটুন এবং দিপু। দুজনই যেন আঁতকে উঠল।

“ধরা পরলে খবর আছে, মজিদ স্যার সরাসরি টিসি দিয়ে বের করে দিবে!” বলে টিটুন। মজিদ স্যার হল টিটুনদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাম।

স্কুল পিয়ন মতিন চাচা তখন ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে পিতলের বৃত্তাকার ঘন্টাটা বগল দাবা করে প্রধান শীক্ষকের রুমের দিকে যাচ্ছিল। মতিন চাচা বয়স্ক, সত্তুর উদ্ধো বয়স, বয়সের ভারে শরীরটা বাকা হয়ে আছে, প্রায় চল্লিশ বছর যাবত তিনি এই স্কুলে চাকরি করছেন, স্যারদের টেবিল পরস্কার পরিচ্ছন্ন করা, সবাইকে নিয়ম করে চা দেয়া থেকে শুরু করে স্কুলের ঘন্টা বাজানোই মূলত তার মূল দায়িত্ব।

“ভিতুর ডিম কোথাকার, এটা আমার উপর ছেড়ে দে।” বলেই সুমি মতিন চাচার দিকে এগিয়ে যায়। দিপু এবং টিটুন বুঝার চেষ্টা করছে সুমি কি করতে যাচ্ছে।

“চাচা কোথায় যাচ্ছেন?” ফাল দিয়ে মতিন চাচার পথ আগলে জিজ্ঞেস করে সুমি।

মতিন চাচা থমকে দাঁড়ায়। “এইতো মা ঘন্টাটা আর আর চাবিগুলো হ্যাড স্যারের রুমে রাখতে যাচ্ছি।“ বলেন মতিন চাচা। মতিন চাচা যখন কথা বলছিল তখন কাপছিল বয়সের ভারে। রোগে শোকে তাকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে।

“আমাকে দেন চাচা, আমি হ্যাড স্যারের রুমের দিকে যাচ্ছি, আমি এগুলো স্যারের রুমে রেখে আসব, আপনি আজ চলে যান।“

মতিন চাচা প্রথমে ইতস্থত করলেও চাবি আর ঘন্টাটা সুমির হাতে দিয়ে চলে গেল। সুমি, দিপু আর টিটুনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচাল।

টিটুনের বুকটা ধরফর করছে, দিপু আর সুমি জানে না তবে টিটুন জানে তার বাবার ডায়েরির লেখা অনুসারে এই এক্সপারিমেন্টটা ভয়ংকর, একটু এদিক সেইক হলেই ল্যাবেরেটরিটা এমনকি আস্ত এই শহরটাই উড়ে যেতে পারে।

বিদ্র: গত মাসে সাইন্স ফিকশন উপন্যাসটি লেখা শুরু করেছিলাম, সম্প্রতি উপন্যাসটি লেখা শেষ করেছি। প্রতিদিন একটি করে পর্ব দিয়ে বারটি পর্বে শেষ করে ফেলব।


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:১১
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×