আমেরিকার গ্রামগুলো সত্যিই সুন্দর। বেশ কয়েকদিন করে চিন্তা করছিলাম বেরী পিকআপে যাব। নিজ হাতে গাছ থেকে তাজা ফল পেরে খাওয়ার মজাই আলাদা, তার উপর তাজা ফল শরীরে শক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে, শরীরে শক্তি উৎপাদনের দরকার আছে! আমি থাকি পোর্টল্যান্ড শহরে, আমার বাসা থেকে ১৫ মাইলের-মত দুরুত্ব হবে বেরী পিক আপ স্থলে যেতে, গাড়ি গিয়ে আধা ঘণ্টার দুরুত্ব।
ভ্রমণ আমার সব সময়েই প্রিয় সেটা বাড়ীর কাছেই হোক বা দূরে কোথাও! ভ্রমণ নিয়ে একটি প্রবাদ আছে, "আপনি সুখ কিনতে পারবেন না। তবে ভ্রমণের জন্য বিমানের টিকিট কিনতে পারেন, এটা সুখ কেনার সমতুল্য।" তবে আমি দরিদ্র মানুষ, আপাতত আমার বিমানের টিকিট কেনার সামর্থ্য নেই, তবে এতে আমি হতাশ কিংবা বিচলিত নই কারণ ইউজিন ফদর সাহেব আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন, তিনি বলেছেন "ভ্রমণ করার জন্য ধনী হবার প্রয়োজনীয়তা নেই।" জাপানি একটি প্রবাদ আছে "বাঁশের নল দিয়ে পুরো আকাশ দেখা যায় না।" কথাটা আমার কাছে যথার্থ মনে হয়, তাই আমি প্রায় বেড়িয়ে পরি ভ্রমণ করতে, প্রায় প্রতিটি সপ্তাহান্তে চলে যাই বিচে অথবা কোন পাহাড় পর্বতে। আমি জীবনের একটি লম্বা সময় দক্ষিণ কোরিয়াতে ছিলাম পড়াশুনার খাতিরে, সেখানে আমি একজন প্রফেসরের আন্ডারে তার ল্যাবে কাজ করতাম, প্রফেসর সাহেব আমাদের প্রায় বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন ঘুরতে। সেই প্রফেসর ভদ্রলোক নিজেও ভ্রমণ প্রিয় আদম ছিলেন, তার সাথে জাপান, থাইল্যান্ড, লাউস এবং কোরিয়ার প্রায় বেশীর ভাগ প্রবিন্সেই আমি গিয়েছিলাম! সেই প্রফেসরকে আমি বাংলাদেশের ঢাকা ঘুরিয়েছি, কক্সবাজার নিয়ে গিয়েছিলাম, তিনি দারুণ উপভোগ করেছিলেন কক্সবাজারে।
কোরিয়ার পাঠ চুকিয়ে দেশে কিছুদিন চেষ্টা করলাম দেশে সেটেল হতে, তারপর আবার ডেনমার্ক এবং সেখানে থেকে সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ঘুরেছি। আর এখন আমেরিকায়, আমি ছুটতেই আছি! ভ্রমণ নিয়ে বিল ব্রাইসন সাহেবের একটি উক্তি আমি মনে ধরেছে, আমি তার সাথে একমত "নতুন অচেনা কোনো দেশে গেলে মানুষ শিশু বয়সের বিস্মিত হওয়ার মতো অনুভূতিটি ফিরে পায়।"
যাইহোক ধান ভাংতে শিবের গীত গাইলাম মনে হয়, নিজের আত্মজীবনী বাদ দিয়ে মূল প্রসঙ্গে আসা যাক, শনিবার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে চিন্তা করলাম কোথায় যাওয়া যায়। বাসায় একটি ফ্যামিলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি ভুরিভোজের জন্য, বিরয়ানী রান্না করলাম, আমি মোটামুটি রান্নায় খারাপ না। এবার রোজার সময় আমাদের মসজিদে বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল, আমি প্রায় একশো জনের জন্য হালিম বানিয়েছিলাম। যাইহোক সেই ফ্যামিলির সাথে এই পোর্টল্যান্ডেই পরিচয়, দুপুরে খেয়ে আমরা একত্রে বেড়িয়ে পরলাম।
পোর্টল্যান্ড এখন দারুণ আবহাওয়া, অন্তত ঘুরে বেরানোর জন্য চমৎকার। দুপুরে বিরয়ানী খেয়ে শক্তি উৎপাদন করে বেড়িয়ে পরলাম বেরী পিক আপের উদ্দেশ্যে। আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছলাম বিকেল প্রায় চারটার দিকে। এখানে সন্ধ্যা হয় সাড়ে নয়টার দিকে, তাই মোটামুটি ভাল সময়েই গেলাম। ইট-পাথরের শহর থেকে বেড়িয়ে যত যত গন্তব্যের দিকে যাচ্ছি ততই অবাক হচ্ছি। অসাধারণ নয়নাভিরাম দৃশ্য, সবুজ পাহাড় এবং রাস্তার দু ধারে বিভিন্ন ফলের বাগান আমাকে মুগ্ধ করছে। এই পরিবেশের সাথে বাংলার গ্রামের একটি মিল পাচ্ছিলাম তবে পার্থক্য হলে এখানে মানুষজন কম এবং পাহাড় বেষ্টিত খোলা মাঠ। বিকেলের নরম রোধ মনে প্রাণে প্রশান্তি এনে দিচ্ছিল। যাবার পথে অনেকগুলো ফার্ম দেখলাম তবে আমরা যেই ফার্মে যাব বলে ঠিক করেছিলাম সেখানেই গেলাম, সেখানে গিয়ে দেখি অনেকেই এসেছি এখানে। এখানে পার্কিং এর ব্যবস্থা চমৎকার।
আমরা দুই ফ্যামিলি প্রায় একই সময়ে পৌঁছলাম, গাড়ি পার্কিং করে ফার্মে গেলাম। সেখানে ফল নেবার ঝুরি পাওয়া যায়। ফলমূল বাগান থেকে নেবার পর টাকা পরিশোধ করতে হয়। পয়েন্ট টুবি নোটেড মাই লর্ড, এখানে ফলের দাম খুবই কম, অন্তত সুপার মার্কেট থেকে অনেক সস্তা।
আমরা কিছু বাকেট নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম বেরি পিক আপ করতে, বিভিন্ন ধরনের বেরী যেমন ব্লু-বেরী, রেড-বেরী ইত্যাদি। বাগানে গিয়ে আমরা বেরী পিক আপ করতে লাগলাম।
বেরী পিক আপ শেষ করে দাম পরিশোধ করলাম। আমাদের দুই বাকেট ফল নিয়েছিল মাত্র ছয় ডলারের মত, তার উপর ফল তুলে নেবার সময় খাওয়া নিষেধ নয়, সেই হিসেবে মনে হয়েছি শায়েস্তা খার আমলে আছি বোধ হয়!
ঘুরাঘুরি শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম সেখান থেকে, তখনো সন্ধ্যা হয়নি। তাই ভাবলাম বাড়িতে না ফিরে অন্য কোথাও যাই, ম্যাপে ছয় মাইলের ভিতরে দেখি একটি বিচ আছে, বেড়িয়ে পড়লাম সেই বিচে, এটা সামুদ্রিক বিচ নয়, নদীর বিচ। পোর্টল্যান্ডে ছোট ছোট অনেক বিচ আছে, সামুদ্রিক না হলেও অনেক সুন্দর বীচ, অনেক মানুষ আসে সেই বিচ গুলোতে গোসল করতে, বোট নিয়ে, বারবিকিউ পার্টি করতে। সমুদ্রে যেতে প্রায় এক থেকে দের ঘণ্টার মত লাগে, সেই হিসেবে নদীর বিচগুলো কাছে হওয়াতে প্রচুর মানুষ আসে। যাইহোক সাথে করে খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম, বিচে ঘুরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করে বাসায় চলে এলাম।
ভ্রমন পোষ্ট ১: আমার থাই এবং লাউস ভ্রমনের গল্প
ভ্রমন পোষ্ট ২: ঘুরে এলাম আমেরিকার সানফ্রানসিসকো
ভ্রমন পোষ্ট ৩: আমেরিকার আলাবামা থেকে ওয়াশিংটন রোড ট্রিপ
ভ্রমন পোষ্ট ৪: আমেরিকার আলাবামা থেকে পোর্টল্যান্ড রোড ট্রিপ
ভ্রমন পোষ্ট ৫: অরিগনের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট-হুড
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩০