somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলভার ফলস পার্ক যেন আমেরিকার বুকে এক টুকরো স্বর্গ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঝর্ণা নিয়ে চমৎকার একটি ছন্দ মনে পড়ছে, "আমার মধ্যে ঠিক তখনই তারুণ্য আর জীবনীশক্তি অনুভব করি, যখন আমি ঝর্ণার কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে যাই"। ঝর্ণা নিয়ে আমাদের এই গ্রহে এর চেয়ে শক্তিশালী কোন কথা আছে কিনা আমার জানা নেই! ঝর্না নিয়ে আরেকটি মন মাতানো ছন্দ আছে "ঝর্ণার আবেশে হয় মন খারাপ দূর, ঝর্ণার কলতানে মাতোয়ারা সুর"। ঝর্ণা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিদর্শন, ঝর্ণা দেখলেই মানুষের মন আরো বেশী রোমান্টিক হয়ে উঠে যেমন "ঝরনা আমার ভীষণ প্রিয় জানতে কি তা তুমি? কিচ্ছু জানোনা, আমার সাথে প্রেম করো কেন শুনি?" ঝর্ণার কাছে গেলে মানুষের পেট থেকে যে শুধু প্রেম-প্রীতির কবিতাই বের হয় তেমন নয়, অনেক বিরহী কবি ঝর্ণার কাছে গিয়ে বুক চাপরে উহ-আহও করেন, " বুক চাপা কান্না গুলো ঝর্ণার জলে এসে মেশে।" বুদ্ধিমান পাঠক মাত্রই বুঝতে পারার কথা এই ধরনের কাব্য লেখা আমার কর্ম নয়! আমার পেটে বোমা মারলে পেট ফাটবে কিন্তু কবিতার "ক" ও বের হবে না!

যাইহোক ঝর্ণা নিয়ে এত কপচানোর শানেনজুল হল এই শনিবারে সিলভার ফলস স্টেইট পার্কে গিয়েছিলাম ঝর্ণা দেখতে। জায়গাটার কথা প্রথম শুনি আমার তাইওয়ানি সহ-কর্মী পোহানের কাছে। পোহান একজন ভ্রমণ প্রিয় আদম, ও যেখানেই যায় এসে আমার কাছে শেয়ার করে। আমিও কোথাও গেলে ওর কাছে এসে বলি কোন কোন জায়গায় ঘুরলাম। কয়েক সপ্তাহ আগে ও আমাকে জানালো সিলভার ফল স্টেইট পার্কের কথা, জায়গাটা নাকি ভয়াবহ ধরনের সুন্দর। ওর কাছে প্রশংসা শুনে ভাবলাম ওখানে যাওয়া আমার ফরজ বাকী সব নফল! কয়েকদিন ধরে সুযোগ খুজছিলাম, সত্যিকার অর্থে প্রতি সপ্তাহান্তের দুই দিন কেমনে যেন দেখতে দেখতেই চলে যায়, হয়ত কারো বাসায় গেলাম, নয়ত দেখা যায় বাজার ঘাট করতে বের হলাম!

এই শনিবার যাব যাব করেও যাওয়া হল না। আমি থাকি পোর্টল্যান্ডের পোর্টল্যান্ড স্টেইট ইউনিভার্সিটির সাথে, আমার বাসার সামনেই প্রতি শনিবার ফার্মাস মার্কেট বসে, বিশাল আকারের মার্কেট, আমি অন্তত এখন পর্যন্ত এত বড় ফার্স মার্কেট আমেরিকার বুকে দেখি নাই! তবে কথায় আছেনা মক্কার মানুষ হজ্জ পায়না আমার হয়েছে সেই দশা, প্রতি শনিবার এখানে সেখানে ঘুরতে যাই বলে এই মার্কেটে খুব একটা যাওয়া হয় না! গতকাল তাই এই ফার্মাস মার্কেটেই সময় কাটালাম।


পোর্টল্যান্ড থেকে স্টেইট ফলস পার্কের ম্যাপ।

এই রবিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবলাম, যাক আজ ঘুরে আসা যাক স্টেইট ফলস পার্ক থেকে। পোর্টল্যান্ড থেকে প্রায় ৫৫ মাইল দূরে এই টুরিস্ট স্পটটি অবস্থিত, গাড়ি চালিয়ে যেতে ঘণ্টা খানেক লাগে। বেরিয়ে পড়লাম আজ দুপুরে। পোর্টল্যান্ড থেকে গন্তব্যের দিকে মাইল পনের চালানর পরেই দেখলাম গ্রাম্য পরিবেশ, রাস্তার দু-দ্বারে উঁচু নিচু পাহাড়, দু-দারে ফসলের মাঠ। প্রকৃতির এই নান্দনিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলাম।


এটা পার্কিং এড়িয়া। সামনে কয়েকজন মানুষ দেখা যাচ্ছে, তার পাশেই একটি মেশিন আছে, সেখান থেকে ডে-পার্মিট নিতে হয়। এটা সেলফ সার্ভিস।

গাড়ি দিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মাঝেই পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। জায়গাটি এমন নির্জন জায়গায় অবস্থিত যে মোবাইলে নেটওয়ার্ক নাই। এখানে ঢুকার সময় কোন টিকিট লাগে না তবে গাড়ি পার্কিং এর জন্য পাঁচ ডলার খরচ করে পার্কিং পার্মিট কিনলাম। এই পার্কের মূল আকর্ষণই হল এই ঝর্না, এই ঝর্নাকে কেন্দ্র করেই পায়ে হাটার পথ তৈরি করা হয়েছে। প্রচুর পর্যটক আসে এই জায়গাটাতে। যেসব আমেরিকানদের মালপানি বেশী, তারা এই সমস্ত জায়গায় কেম্পিং করার জন্য RV গাড়ি নিয়ে আসে ( যেই গাড়ীতে থাকা-খাওয়া, ঘুমানোর থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ মজুদ আছে)। এই পার্কে RV গাড়ী রাখারও ব্যবস্থা আছে স্বল্প মূল্যে। যাইহোক আমি দরিদ্র মানুষ এই গাড়ি কিনার দিনার নাই আমার পেকেটে!



ঝর্নাটির কাছে যেতে এই পথ ধরে হাটতে হয়। পর্যটকরা এই পথ ধরে হাটতে অনেক পছন্দ করে।

এই পর্যটক জায়গাটি সাত মাইলের মত। পর্যটকরা শুধু ঝর্ণা দেখতেই যে আসে এমন না। এখানে পাহাড়ি নিরিবিলি পরিবেশে পাহাড় হেটে বেড়াতেও প্রচুর মানুষজন আসে।



প্রায় পনের মিনিট হাটার পর চলে এলাম ঝর্ণার কাছে। সত্যকার অর্থে এই পর্যটক স্থানে আরো কয়েকটি ঝর্ণা আছে, তবে এটাই বোধহয় সব চেয়ে বেশী আকর্ষর্ণীয় ঝর্ণা। এই ঝর্ণার আকর্ষণীয় দিক হল, এর পাশেই বিশাল গুহা আছে একটি, ছবিটা গুহাড় ভেতর থেকে নেয়া!


গুহার ভেতরের একটি ছবি। পর্যটকদের জন্য এই গুহায় বসে ঝিমানোর ব্যাবস্থা আছে!




প্রকৃতির কিছু ছবি।

সারা বিকেল ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যা বেলা বের হয়েছিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। সমস্যা হল গাড়ি স্টার্ট করে দেখি মোবাইলে কোন নেটওয়ার্ক নেই। আমেরিকায় এই একটি সমস্যা, দেশ বড়, শহর থেকে এরকম গহীন কোন জায়গায় আসলে মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকে না। আর মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া ম্যাপ চলে না। কিভাবে বাসায় যাব কিছুটা চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম কারণ আসার সময় আঁকাবাঁকা রাস্তা আর কত রকমের গ্রামের ভিতর দিয়ে যে এসেছি তার কোন ইয়াত্তা নেই! ম্যাপ ছাড়া যাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। তার উপর আমি চিত্র নায়ক জলিল সাহেব নই, জলিল সাহেব হলে কোন সমস্যা ছিল না কারণ এই অসম্ভবকে সম্ভব করাই চিত্র নায়ক জলিল সাহেবের কাজ! যাইহোক কতক্ষণ চেষ্টা করে দেখলাম কোন নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় কিনা, উপায় না দেখে আন্তাজে গাড়ি চালানো শুরু করলাম। পনের-বিশ মিনিট যাবার পর দেখলাম মোবাইলে নেট ওয়ার্ক এসেছে, আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:০৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×